এরপর মামলার শুনানিতে যারা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের সবাইকে লং মিডোস-এ এরকুল পোয়ারো আমন্ত্রণ জানালেন।
অর্ধচন্দ্রাকারে বৈঠকখানায় চেয়ার সাজানো হয়েছে, বক্তার আসন পোয়ারো এসে অলংকৃত করলেন।
–সমবেত ভদ্রমহোদয় ও ভদ্রমহিলাগণ, প্রথমেই আপনাদের বহুল প্রচলিত একটি ছড়ার কথা বলছি আপনাদের।
মিসেস ম্যাগিনটি অক্কা পেলে, কেমনে তা জানি, হাঁটু ভেঙে ঘাড় মুটকে যেমনি আছি আমি।
আমাকে এটা মিসেস আপওয়ার্ড শুনিয়েছিলেন। আর ঠিক এমনি ভাবে নিজেও মারা যান তিনি।
কথা শুরু করার আগে আবার গোড়ার দিকে আমাদের ফিরে যাওয়া ভালো।
বৃদ্ধা মিসেস ম্যাগিনটি, যিনি টুকটাক কাজকর্ম করতেন অন্যের বাড়িতে শেষ পর্যন্ত তিনি খুন হলেন। আর সেই খুনের দায় বর্তালো তার ভাড়াটে জেমস বেন্টলীর ওপর। কিন্তু কেন জানি না মিঃ স্পেন্সের মনে বেন্টলীর অপরাধ সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। তাই ওঁরই অনুরোধে পূর্ণতদন্তের জন্য আমাকে এখানে আসতে হয়। আমি দীর্ঘ গল্প কাঁদতে চাই না খুনের ব্যাপারে।
আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রথমে এক বোতল কালি। যেদিন মারা যান মিসেস ম্যাগিনটি তার আগের রবিবার সানডে কম্প্যানিয়ন এ চারজন মহিলার ছবি ছাপা হয়, আপনাদের এ পর্যন্ত সকলেরই জানা আছে। তার থেকে একটা ছবির চেহারা মিসেস ম্যাগিনটি সনাক্ত করতে পারেন। অনুমান ছিল তার–তিনি যে যে বাড়িতে কাজ করতে যেতেন, তারই কোন একটিতে ঐ একই ফটো তিনি দেখে থাকবেন। বেন্টলীকেও কথায় কথায় তা বলেছিলেন। কিন্তু সে বিশেষ মনোযোগ দেয়নি তার কথায়। তবুও বেন্টলীর অস্পষ্টভাবে এটুকু মনে পড়ছে যে, ছবিটি মিসেস ম্যাগিনটি মিসেস আপওয়ার্ডের বাড়িতে দেখেছেন–এ রকম একটা ইঙ্গিত যেন দিয়েছিলেন। কারণ তিনি একথাও বলেছিলেন যে, সব জানাজানি হয়ে গেলে সেই মহিলার অহংকার চুর্ণ হবে।
আমি মিসেস আপওয়ার্ডের বাড়িতে চারখানা ফটোই নিয়ে গিয়েছিলাম। নিশ্চিতভাবে উনিও সেগুলোর মধ্যে চিনতে পারেন একজনের মুখ। সে কথা প্রকাশ পেয়েছিলো ওঁর মুখের ভাবে। আমি বারবার অনুরোধ করায় উনি বলেন যে এর কোনো একটির মত ছবি কোথাও তিনি দেখেছেন তবে কোথায় তা স্পষ্ট মনে করতে পারছেন না।
ওঁর এরকম চেনাচেনা মনে হচ্ছে কোন ছবি দেখে তা জিজ্ঞাসা করা হলে তার জবাবেউনি দেখান লিলি গ্যাম্বলের ছবিটি। কিন্তু আপনাদের আমি বলছি উনি সত্যি কথা বলেননি সেদিন। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কোনো কারণে সত্য গোপন করেন আমার কাছে। কিন্তু একজনের চোখকে ফাঁকি দিতে পারেননি উনি–সে চোখ খুনীর।
পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিল একজন; আসলে মিসেস আপওয়ার্ডের কোন ছবিটা চেনা লেগেছে। ইভা কেনের ছবিখানা, যে ক্রেগ হত্যা মামলায় সর্বপ্রধান চরিত্র ছিল। ঠিক পরের দিন রাত্রে নিহত হন মিসেস আপওয়ার্ড। যে কারণে মিসেস ম্যাগিনটি খুন হন, ঠিক একই কারণে।
মিসেস আপওয়ার্ড মারা যাবার আগে টেলিফোনে তিনজন ভদ্রমহিলা ওঁর নিমন্ত্রণ পান –মিসেস কার্পেন্টার, মিসেস রেগুল আর মিস হেণ্ডারসন। তিনটি আমন্ত্রণেরই এক সারাংশ মিসেস আপওয়ার্ডকে সন্ধ্যের পর সঙ্গ দান করা। সেই রাতে ওঁর পরিচারিকাটি ছুটি নিয়েছিল। ওঁর ছেলে এবং মিসেস অলিভার কালেনকোয়েতে নাটকের ব্যাপারে থিয়েটারে গিয়েছিলেন। তার মানে ব্যাপারটা এই রকমই দাঁড়াচ্ছে অনেকটা যে উক্ত তিনজন মহিলার সঙ্গেই মিসেস আপওয়ার্ড আলাদা আলাদা ভাবে কিছু ব্যক্তিগত কথাবার্তা বলতে চান।
কিন্তু মহিলা তিনজন কেন? তাহলে কি উনি জানতেন যে, কোথায় ইভা কেনের ছবিটা দেখেছেন? নাকি ঠিক কোথায় দেখেছেন তা মনে করতে পারছিলেন না? এই তিনজনের মধ্যে কিছুই আপাতত সাদৃশ্য নেই, শুধুমাত্র তাদের বয়স ছাড়া। এদের সকলেরই বয়স ত্রিশের কাছাকাছি।
আপনারা সকলেই কাগজে পড়েছেন ইভা কেনের দুর্ভাগা মেয়েটির কথা। সেই মেয়ের বয়সও হিসেব করলে ত্রিশের কাছাকাছি দাঁড়ায় এখন। তাই এরকম ধারণা করা খুবই স্বাভাবিক যে ব্রডহিনিতে এমন একজন মহিলা আছেন যিনি মিঃ ক্রেগ এবং ইভা কেনের কন্যা। এবং মেয়েটিও নিশ্চয়ই সেক্ষেত্রে সর্বতোভাবে চেষ্টা করবে তার এই পরিচয় গোপন রাখার, এর জন্য সে দরকার বুঝলে শেষ পর্যন্ত যেতেও প্রস্তুত থাকবে।
যখন মিসেস আপওয়ার্ডকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায় তখন দুটো কফির কাপ ছিল টেবিলে। তারই একটাতে তখনো লেগে ছিল হালকা দাগ লিপষ্টিকের।
আসুন, আবার আমরা ফিরে যাই ফোনের প্রসঙ্গে। আমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও মিসেস কার্পেন্টার সেই রাতে ল্যাবারনাম-এ যাননি। উনি সেইরকমই জানিয়েছেন আমাদের। ভেবেছিলাম মিসেস রেগুল যাবেন কিন্তু চেয়ারেই শেষ পর্যন্ত ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু মিস হেণ্ডারসন গিয়েছিলেন। সেই সময় বাড়িটা সম্পূর্ণ অন্ধকার ছিল এবং অনেক ডাকাডাকি করে সাড়াশব্দ না পেয়ে ফিরে আসেন উনি।
ওই তিনজনের কাছে এইরকম জবানবন্দী পেয়েছি। কিন্তু তখনো সেই সম্পর্কে আমাদের মনে সন্দেহের অবকাশ ছিল। দ্বিতীয় কফির কাপে লিপষ্টিকের দাগ দেখা গেছে এবং একজন সাক্ষী এডনাকে আমরা পেলাম। সে নাকি হলফ করে বলে যে, একজন মহিলাকে সে ল্যাবারনামের ভেতরে ঢুকতে দেখেছে যার চুলের রং হালকা এর ওপর ঘরের ভেতর দামী সেন্টের গন্ধও পাওয়া গেল। সেন্টের বিশেষ ব্র্যাণ্ড আবার আমাদের মিসেস কার্পেন্টারের কথা মনে করিয়ে দেয়।