–আগেই শুনেছি সেটা।
–পোয়ারো, সবই জানেন আপনি, না?
এ কথায় পোয়ারো কর্ণপাত করলেন না।
-স্পেন্স, তার মানে একদিকে আমরা দেখছি অষ্ট্রেলিয়ায় মিসেস হোপ মারা গেছেন। আর অন্যদিকে?
অন্যদিকে আমরা জনৈকা মিসেস আপওয়ার্ডকে পাচ্ছি যিনি বিত্তশালী বিধবা, এক পুত্রের জননী। ওঁর স্বামী মারা যান ছেলের জন্মের পরই। শৈশবে ছেলেটির যক্ষারোগ থাকায় বেশির ভাগ সময় ভদ্রমহিলা বিদেশেই থাকতেন।
-এটা কবেকার কথা?
ইভা কেন ইংল্যাণ্ড ছেড়ে যাবার চার বছর পরে। এই ভদ্রমহিলার সাথে মিঃ আপওয়ার্ড পরিচিত হল এবং বিয়ে করেন ওঁকে।
–মিসেস আপওয়ার্ড আসলে ইভা কেন হলেও হতে পারেন। ওঁর কুমারী জীবনের পদবী কি ছিল?
–যতদূর শুনেছি হারগ্রেভস, কিন্তু কি এসে যায় তাতে?
-হ্যাঁ, তা ঠিক। হয়ত ইভা কেন বা ইভলিন হোপ দীর্ঘকাল রোগভোগের পর সুস্থ হয়ে হারগ্রেভস পদবী ধারণ করে।
-আসলে সবই এতদিন আগেরকার ব্যাপার। ওঁকে হয়ত মিসেস ম্যাগিনটি ছবি দেখে সনাক্ত করেছিলেন। তারপর এ সন্দেহ হতেই পারে যে, মিসেস ম্যাগিনটিকে খুন করেন মিসেস আপওয়ার্ড।
হতেও পারে। এমন হতে পারে সে রাত্রে রেডিও বা টি.ভি. প্রোগ্রাম ছিল রবিনের। মনে করে দেখুন, সেই রাতে মিসেস রেগুল মিসেস আপওয়ার্ডের খোঁজে গিয়েও সাড়াশব্দ পাননি কোনো। জ্যানেট তো মিসেস সুইটিম্যানকে বলেছে যে, পঙ্গু দেখায় যতটা, সত্যি করে ততটা পঙ্গু নন মিসেস আপওয়ার্ড।
এ পর্যন্ত বুঝলাম। কিন্তু এরপর তো নিজেই উনি খুন হলেন–ছবি একটা সনাক্তকরণের পর। তাহলে তো এই সিদ্ধান্তে আবার আসতে হয় যে দুটো খুনের মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই।
-না, তা নয়। যোগসূত্র আছে যথেষ্ট।
–আমি মশাই হাল ছেড়ে দিচ্ছি। ইভলিন হোপ। এটাই রহস্যের চাবিকাঠি।
-ইভ কার্পেন্টার, তার কথাই কি বলতে চাইছেন আপনি? আসলে উনি লিলি গ্যাম্বল নন, ইভা কেনের মেয়ে। কিন্তু এবার তাহলে বলতে হয় নিজের মাকে উনি খুন করেছেন।
-না না। মাতৃহত্যার ব্যাপার না এটা।
–মঁসিয়ে পোয়ারো কি হচ্ছেটা কি? এরপর আপনি বলবেন যে ইভা কেন, লিলি গ্যাম্বল, জেনিস কোর্টল্যাণ্ড আর ভেরা ব্লেক–এরা চারজনই ব্রডহিনির বাসিন্দা।
–হিসেবে চারজনের বেশি আসছে। ইভা কেন মনে রাখবেন মিঃ ক্রেগের বাড়িতে তার বাচ্চার দেখাশুনো করত।
–তাতে কি?
-তার মানে এক বা একাধিক বাচ্চাও সেই বাড়িতে নিশ্চয়ই ছিল? তার বা তাদের কি হল?
-একটি ছেলে আর একটি মেয়ে ছিল। তাদের কোনো আত্মীয় নেই।
তাহলে আরো দুজন আসছে হিসেবে। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এই দুজন ছবিটা রাখতে পারে।
–তা বিশ্বাস হয় না আমার।
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন পোয়ারো। তিনি বললেন, মিঃ স্পেন্স এটা আমাদের হিসেবে ধরতেই হবে। মনে হচ্ছে আমার রহস্য আমি উদঘাটন করতে পেরেছি। শুধু একটা খটকা….
-ওঃ, আমার কি আনন্দ হচ্ছে। তাহলে আপনারও খটকা লাগে?
–শুধু আমায় একটা কথা আপনি বলুন, মিঃ স্পেন্স। যখন ইভা কেন দেশত্যাগ করে, তখনো মিঃ ক্রেগ-এর মামলার রায় বেরোয়নি, তাই না?
-না। এবং সন্তানসম্ভবা ছিল ইভা?
–হ্যাঁ।
-ওঃ, কি বোকা আমি। জলের মত তো পুরো ব্যাপারটাই সোজা। এ কথা বলার পর তৃতীয় খুনটা অল্পের জন্য হল না। মিঃ স্পেন্স, করতেন এই খুনটা, পোয়ারোকে, পুলিশ হেড কোয়ার্টারে বসে।
.
এরকুল পোয়ারো বললেন, টেলিফোনে আমি মিসেস অলিভারের সাথে একটু ব্যক্তিগত কথাবার্তা বলতে চাই।
যদিও খুব ব্যস্ত ছিলেন মিসেস অলিভার, তবু এসে ফোন ধরলেন। উনি রাগতস্বরে বললেন, আঃ আপনি কি আর ফোন করার সময় পেলেন না? আমি খুনের একটা চমৎকার পরিকল্পনা করছিলাম আমার পরের বইটার জন্য। সব ভেস্তে দিলেন তো।
-এঃ হে। মাদাম বুঝতে পারিনি আমি, তবে আমি যে জন্য ফোন করেছি, তা বেশি জরুরী।
-না। আমার কাছে নয়। অন্তত আমি যতক্ষণ না আমার পরিকল্পনাটার খসড়া শেষ করে ফেলছি….হা, কি বলছেন? ….হ্যাঁ, একটা ছোট্ট থিয়েটার….. লোকেরা? হ্যাঁ, একজনের নাম সিসিল। আর যার সঙ্গে আমি কথা বলছিলাম তার নাম মাইকেল।
–ঠিক আছে। এটাই আমি জানতে চাইছিলাম।
–কিন্তু সিসিল আর মাইকেল কেন?
-মাদাম প্রায় গুটিয়েই এনেছি জাল।
কিছুতেই তো আমি বুঝতে পারছি না কেন ডঃ রেগুলকে আপনারা এখনো ধরছেন না। যদি স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের কী হতাম আমি তাহলে কবেই…..
-হ্যাঁ, মাদাম বুঝেছি। ছাড়ছি এবার।
–ছকটা যেটা কেঁদেছিলাম, তার বারোটা বাজিয়ে দিলেন।
–মাদাম অত্যন্ত দুঃখিত আমি। ফোন নামিয়ে রেখে পোয়ারো মিঃ স্পেন্সের দিকে তাকিয়ে হাসলেন।
-স্পেন্স, এবার আমাদের কালেন কোয়েতে মাইকেল নামে একজন অভিনেতার খোঁজে যেতে হবে। ওখানে সে খুচরো পার্ট করে। ঈশ্বর করুন, সেই যেন আসল মাইকেল হয়।
কিন্তু কি আশ্চর্য…. স্পেন্সকে আর কিছু বলার সময় দিলেন না পোয়ারো।
–আপনি কি জানেন স্পেন্স যে ফরাসী ভাষায় সিক্রেট দ্য পলিসিল কাকে বলে? না
-এটা এক ধরনের এমন গোপন কথা যা জানতে পারে সকলেই। যারা এজন্য একথা জানে না, তারা কোনোদিনই জানতে পারে না। তাদের কেউ বলেও না, কারণ সকলেই ভাবে নিশ্চয়ই একথা অন্যদের জানা আছে।
–পোয়ারো, সত্যিই পারা যায় না আপনাকে নিয়ে।
.
২৫.
শেষ হল মামলার শুনানি। বের হল রায়-এক বা একাধিক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির দ্বারা খুন হয়েছেন মিসেস আপওয়ার্ড।