-মাদাম, চশমা পরেন না কেন আপনি?
–মাঝে মাঝে পরি তো। ছোটবেলাতেও পরতাম।
–আর রিং পরতেন দাঁতে, না?
–হ্যাঁ, কেন বলুন তো?
–নাঃ সেই একদা কুৎসিত হাঁসের রাজহাঁসে পরিণত হওয়ার মত।
–সত্যি। জানেন, ছোটবেলায় আমি বেশ বিশ্রী দেখতে ছিলাম।
–আপনার মাও কি তাই মনে করতেন আপনাকে?
-মায়ের কথা আমার মনে নেই। আপনি ঠিক কি বলতে চান বলুন তো? আমার প্রস্তাব আপনি গ্রহণ করবেন কি করবেন না?
–দুঃখিত আমি। আমি পারব না।
কারণ?
কারণ আমি জেমস বেন্টলীর হয়ে কাজ করছি।
–বেন্টলী? মানে সেই বুদ্বুটা যে মিসেস ম্যাগিনটিকে খুন করেছে? মিসেস আপওয়ার্ডের কি সম্পর্ক তার সঙ্গে?
–হয়ত কিছুই নয়।
–তবে? টাকা পয়সা? চান কত?
–আপনি এখানেই মাদাম বড় ভুল করছেন। আপনি সবকিছুই মাপতে শিখেছেন টাকা দিয়ে। অনেক টাকা আছে আপনার তাই বলে এই রকম আপনি।
–এক সময় আর্থিক সাচ্ছল্য একেবারেই ছিল না আমার।
–হ্যাঁ, সেই রকমই ভেবেছিলাম আমিও। যাক গে…..
.
চলে গেলেন ইভ কার্পেন্টার। নিজের মনে পোয়ারো বললেন, ইভলিন হোপ…।
তার মানে সেই রাত্রে মিসেস আপওয়ার্ড ডীডার হেণ্ডারসন আর ইভ কার্পেন্টার আমন্ত্রণ জানান এই দুজনকেই। হয়ত আরও কাউকে ফোন করেছিলেন তিনি…শশব্যস্ত ফিরে এলেন মরিন।
-মঁসিয়ে, আমি আবার কাচিটা এখন খুঁজে পাচ্ছি না। আপনার বড্ড দেরি হয়ে গেল দুপুরে খেতে। এত বিরক্ত লাগে। তিনটে কঁচির একটাও পাচ্ছি না এখন।
মরিন যথারীতি দেরাজ ঘাঁটতে লাগলেন।
পাওয়া গেল কাঁচিটা। মরিন ছুটে বেরিয়ে গেলেন।
পোয়ারো দেরাজের ছড়িয়ে থাকা জিনিসগুলোর দিকে এগিয়ে গেলেন–মোম, ছোট কাগজ, ঝুড়ি, ছবির গোছা–ছবি
একদৃষ্টে নিজের হাতে ধরা ছবিটির দিকে তাকিয়ে রইলেন পোয়ারো। হঠাৎ পায়ের শব্দ পাওয়া গেল করিডোরে। তিনি ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে গেলেন সোফার দিকে। সোফায় ছবিটা রেখে তার ওপর চেপে বসলেন।
ঘরে ঢুকে মরিন বললেন, শাকের বাটিটা যে কোথায় ফেললাম।
-এই যে মাদাম। বাটিটা পোয়ারো এগিয়ে দিতে তাকে ধন্যবাদ জানালেন মরিন।
–ইস। আপনি ওই ভাঙা সোফাটায় কেন বসেছেন?
–মাদাম, ঠিক আছে ঠিক আছে। ওই ছবিটা আমি দেখছি।
পোয়ারোর নির্দেশিত ছবির দিকে তাকিয়ে মরিন বললেন, হ্যাঁ মঁসিয়ে, চমৎকার ছবিটা। ওটা জনির পূর্বপুরুষের ছবি। কিছুতেই দেবে না বিক্রি করতে। খুব গর্ব ওর এটা নিয়ে।
–হ্যাঁ, আপনার স্বামীর গর্ব করার মত সত্যিই কিছু আছে।
.
পোয়ারো প্রায় তিনটের সময় ডঃ রেগুলের বাড়ি এলেন। মিসেস স্কট প্রবীণা পরিচারিকা দরজা খুলে দিল।
মিসেস রেগুলের খোঁজ করলেন পোয়ারো।
প্রথম দিনই মিসেস রেগুলকে ভীরু, স্বামীর একান্ত অনুগত বলে মনে হয়েছিল পোয়ারোর। তাকে আজ আরো ফ্যাকাশে আর রুগ্ন বলে মনে হল।
–মাদাম, আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই আপনাকে।
–নিশ্চয়ই, বলুন।
–মিসেস আপওয়ার্ড কি মারা যাবার দিন আপনাকে টেলিফোন করেছিলেন?
–হ্যাঁ। ফোন ধরেন মিসেস স্কটই, তা প্রায় দুটো আন্দাজ।
–ফোনে উনি কি বলেছিলেন? আপনাকে যেতে?
–হ্যাঁ। আমাকে নাকি উনি জানাতে বলেন যে, রবিন আর মিসেস অলিভার বাড়ি থাকবেন না। বেরোবে পরিচারিকাও। তাই আমি যেন ওঁর সঙ্গে একটু গল্পগুজব করতে যাই।
–যেতে বলেন কটা আন্দাজ?
–নটা বা তারপর।
–গিয়েছিলেন আপনি?
–ভেবেছিলাম যাব। কিন্তু রাতের খাওয়া সারার পর ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যখন ঘুম ভাঙল, প্রায় দশটা তখন, মনে হল দেরি হয়ে গেছে। আর গেলাম না।
–এ কথা পুলিশকে আপনি জানিয়েছেন?
মিসেস রেগুল শিশুর মত সরল চোখ তুলে তাকালেন।
–আমার কি জানানো উচিত ছিল? যাইনি বলে, না জানালেও ভেবেছিলাম চলবে, আসলে একটু অপরাধী বলে এখন মনে হয় নিজেকে আমার, আমি সেই রাত্রে গেলে উনি হয়ত খুন হতেন না।
–ও সব ভেবে মন খারাপ করবেন না। আচ্ছা মাদাম, কিসের এত ভয় আপনার?
–ভয়, কই না তো?
–কিন্তু ভয় পেয়েছেন আপনি।
–কি বলছেন যা তা। ভয় পেতে যাব কেন আমি?
জবাব দেবার আগে পোয়ারো এক মুহূর্ত থামলেন।
মাদাম, আমি ভেবেছিলাম হয়ত আমাকে আপনি ভয় পান…
কোনো উত্তর দিলেন না মিসেস রেগুল। কিন্তু তার চোখ বিস্ফারিত হল। তিনি আস্তে আস্তে মাথা নাড়লেন।
.
২৪.
কথাবার্তা চলছিল স্পেন্স আর পোয়ারোর মধ্যে।
-মঁসিয়ে পোয়ারো, যত শুনছি আপনার কথা ততই সব গুলিয়ে যাচ্ছে। আপনি বলছেন যে, মিসেস আপওয়ার্ড সেই রাতে তিন তিন জন মহিলাকে ফোন করে ওঁর কাছে আসতে বলেছিলেন। কেন তিন জন? উনিও কি নিশ্চিত ছিলেন না যে, কে লিলি গ্যাম্বল? নাকি এটা লিলি সংক্রান্ত কোনো ব্যাপারই নয়? আবার ইভলিন নাম লেখা বইটার কথা ভাবুন। এ থেকে মনে হয় মিসেস আপওয়ার্ড আর ইভা কেন একই মহিলা।
মিসেস ম্যাগিনটির কথা থেকে বেন্টলীও এরকম একটা আন্দাজ করেছিল।
–আবার আমি ভেবেছিলাম নিশ্চিত হয়ে বেন্টলী কিছু বলেনি।
–তা তো বলেইনি। যা চরিত্র ওর তাতে কোনো কিছুই ও তেমন নিশ্চিত করে বলতে পারে না। ও বিশেষ কানও দেয় না মিসেস ম্যাগিনটির কথায়। তা স্বত্ত্বেও যখন ওর মনে হয়েছে মিসেস ম্যাগিনটি মিসেস আপওয়ার্ডের সম্বন্ধেই বলতে চেয়েছিলেন কিছু, তখন তা সত্যি হলেও হতে পারে।
সর্বশেষ খবরে অষ্ট্রেলিয়া থেকে জানা গেছে (যদি অবশ্য, মিসেস আপওয়ার্ড ওখানেই গিয়ে থাকেন, আমেরিকায় নয়) মিসেস হোপ প্রায় কুড়ি বছর আগে মারা যান।