–কে লোকটা? বর্ণনা দিতে পারেন কোনো?
এক পলক মাত্র আমি দেখেছি। আমাকে দেখা মাত্র পালিয়ে যায় লোকটা। মুখ দেখতে পাইনি।
-আপনি কি নিশ্চিত যে, যাকে দেখেছেন সে একজন পুরুষ?
চিন্তা করল মড।
–মানে সেই রকম সাজপোশাক। মাথায় একটা পুরনো ফেল্টের টুপি ছিল। অবশ্য পুরুষের ছদ্মবেশে কোনো মহিলাও হতে পারে।
-খুব চমকপ্রদ ব্যাপার। আর কিছু?
-এখন পর্যন্ত নয়। খুব জাঁহাবাজ ভদ্রমহিলা, ওর ঘরে ঢুকেছিলাম। হাতে নাতে ধরে ফেলে গঞ্জনা দিয়েছেন মা। হয়ত ওঁকে আমি এবার খুনই করে বসব। খুনই হওয়াই উচিত ওঁর। কি দজ্জাল, বাস্।
পোয়ারো মৃদুস্বরে বললেন, ইভলিন হোপ।
–কি বললেন? বিদ্যুৎগতিতে মড ফিরে তাকালো।
–তাহলে আপনি নামটার সঙ্গে পরিচিত?
–কেন? ও হ্যাঁ, ইভা কি যেন নামটা? সে এই নামটা অষ্ট্রেলিয়া যাবার আগেই নিয়েছিল। এ খবর তো সানডে কম্প্যানিয়নে ছিল।
অন্যের কথা সানডে কম্প্যানিয়ন লিখলেও একথাটা কিন্তু লেখেনি। মিসেস আপওয়ার্ডের বাড়িতে পুলিশ একটা বইয়ের মধ্যে পেয়েছে এই নামটা।
চেঁচিয়ে উঠল মড। তাহলে ওই ভদ্রমহিলাই। তাহলে উনি মারা যাননি অষ্ট্রেলিয়ায় ঠিকই বলেছিল মাইকেল….
–মাইকেল?
অচমকা মড বলে উঠল, আর আমি অপেক্ষা করতে পারছি না। আমাকে মধ্যাহ্নভোজে পরিবেশন করতে হবে। ওভেনে রান্না বসিয়ে এসেছি, নষ্ট হয়ে যাবে সব।
প্রায় দৌড়ে চলে গেল মড।
মডের গমন পথের দিকে পোয়ারো একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন।
এদিকে ডাকঘরের জানলায় মুখ রেখে মিসেস সুইটিম্যান তখন পোয়ারোর চরিত্রের ভালোমন্দ বিচার করছিলেন।
.
পোয়ারো লং মিডোস-এ ফিরে নিজের চিন্তায় ডুবে গেলেন।
কয়েকটা ছোটোখাটো জিনিস তার চোখ এড়িয়ে গেছে। নকশার আদলটা বুঝতে পারছেন,শুধু সাজিয়ে নেওয়ার অপেক্ষা…..
মরিন গ্লাস হাতে স্বপ্নবিষ্ট স্বরে কথা বলছে–কি যেন জিজ্ঞেস করল…মিসেস অলিভারের রেপ-এ সন্ধ্যা কাটানোর গল্প।….সিসিল? মাইকেল?
পোয়ারো নিশ্চিত যে, মিসেস অলিভার একটা নাম উল্লেখ করেছিলেন, ইভা ক্রেন, মিঃ ক্রেগের বাড়ির গভর্নেস…. ইভলিন হোপ….
নিশ্চিতভাবে ইভলিন হোপ।
.
২৩.
পোয়ারোর খোঁজে ইভ কার্পেন্টার সামারহেসদের বাড়িতে এলেন।
পোয়ারোকে ভদ্রমহিলা বললেন, আমি শুনেছি আপনি একজন নামী গোয়েন্দা। আমি ভাড়া করতে চাই আপনাকে।
–মাদাম দেখুন, আমি ট্যাক্সি নই যে আমাকে ভাড়া নেবেন আপনি।
–আপনি তো বেসরকারী গোয়েন্দা। শুনেছি ইচ্ছেমত নাকি তাদের নিয়োগ করা যায়।
–সেই রকম বলা যায় বটে।
-তা আমি তো সেই কথাই বলছি। আমার প্রয়োজনে আপনাকে নিয়োগ করতে চাই। এ জন্যে যত টাকা লাগে দেব আমি।
-কিন্তু কেন? আপনার জন্য আমি কি করতে পারি? ইভ কার্পেন্টার রাগে ফেটে পড়লেন।
-আমাকে আপনি পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। যত্রতত্র ওরা আমার পিছু নিচ্ছে। ওদের ধারণা বোধহয় মিসেস আপওয়ার্ডকে আমিই খুন করেছি। যখন তখন ধরে যা তা প্রশ্ন করছে। আমি এ সব অত্যন্ত অপছন্দ করি। আমার মাথাটাই খারাপ হয়ে যাবে এবার।
পোয়ারো মহিলাটির দিকে তাকালেন। উনি এ কথাটা সত্যি বলেছেন। দেখে মনে হয় কদিনের মধ্যে অনেক বেড়ে গেছে ওঁর বয়স। চোখের নিচে কালি, মনে হয় অনেক রাত দুশ্চিন্তায় ঘুমোননি। যে হাতে ধরে আছেন সিগারেট, সেটাও অল্প অল্প কাঁপছে।
মঁসিয়ে পোয়ারো, এসব আপনাকে বন্ধ করতে হবে।
–এতে কি করার আছে আমার বলুন?
–যে ভাবেই হোক, এ সব আটকান। যেমন মানুষ আমার স্বামী, উনি নিজের হাতে ব্যাপারটা নিলে কবেই শায়েস্তা করে দিতেন ওদের।
–অথচ কিছুই করছেন না উনি?
না, ওঁকে আমি কিছুই বলিনি। শুধু পুলিশকে উনি আমার নিরাপত্তার কথাই বলবেন। উনি সেই রাতে একটা রাজনৈতিক সভায় উপস্থিত ছিলেন।
–আর আপনি?
–একলা বাড়িতে বসে আমি রেডিও শুনছিলাম।
–সে কথার প্রমাণ আপনি দিলেই পারেন।
–কিন্তু কেমন করে? আমাদের পরিচারক ক্রফটকে আমি একরাশ টাকা দিয়ে হাত করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে আহাম্মকটা প্রত্যাখ্যান করল।
–এঃ হে, আপনি এটা ঠিক করেননি।
–কেন?
-এতে আপনার চাকরবাকর ভাববে আপনি খুন করে এখন ধামাচাপা দিতে চাইছেন ব্যাপারটা।
-কিন্তু ক্রফটকে তো আমি টাকা দিয়েছি…
–কিসের জন্য?
–না, কিছু না।
–মাদাম, ভুলে যাচ্ছেন আপনি; আমার সাহায্য চাইতে এসেছেন আপনি।
–না না, তেমন কিছু নয়। ভদ্রমহিলার কাছ থেকে খবরটা ক্রফটই এনেছিল কিনা।
–মিসেস আপওয়ার্ডের কাছ থেকে?
–হ্যাঁ। সেই রাতে উনি ওঁর কাছে আমাকে যেতে বলেছিলেন।
–আপনি যাননি?
–কেনই বা যাব? ওই বৃদ্ধাকে অসহ্য লাগে। শুধু শুধু বকে বাজে সময় নষ্ট।
–কখন এসেছিল খবরটা?
–তখন আমি বাড়ি ছিলাম না। পাঁচটা থেকে ছটার মধ্যে হবে। ক্রফটই খবরটা নেয়।
–আর টাকা দিয়ে আপনি তার মুখ বন্ধ করলেন? কিন্তু কেন?
–আঃ বুঝতে কেন পারছেন না, এ সবের মধ্যে আমি নিজেকে জড়াতে চাইনি।
-আপনি তার ওপর আরও টাকা দিলেন যাতে আপনার অ্যালিবাই ওরা সমর্থন করে? স্বামী স্ত্রী ওরা কি ভাবল বলুন তো?
-তাতে কি এসে যায় কার?
–আদালতের এসে যায়।
–সত্যি কি আপনি সেরকম মনে করেন নাকি?
–হ্যাঁ।
–শেষ পর্যন্ত ওরা চাকরবাকরের কথাই শুনবে, আমার কথা নয়?
মিসেস কার্পেন্টারের দীঘল নীল চোখের দিকে পোয়ারো তাকালেন। এত কম ভদ্রমহিলার দূরদর্শিতা।