মোদ্দা ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এই যে, আপনার হিসেব মত ওর ফটো কারও কাছে থাকার কথা নয়।
–ঠিক ধরেছেন। আমার চিন্তার ফল এটাই।
–কিন্তু কেউ রেখেছিল। এবং সেই ফটো মিসেস আপওয়ার্ড দেখেন।
–সত্যি উনি কি, দেখেছিলেন?
–ধৎ। আরে মশাই, সে কথা তো আপনিই বলেছিলেন আপনাকে নাকি উনি বলেছেন, হ্যাঁ, তাই বলেছিলেন স্বগতা মিসেস আপওয়ার্ড। কিন্তু কোনো কোনো ব্যাপারে উনি গোপনীয়তা পছন্দ করতেন। নিজের ব্যাপার নিজেই দেখা পছন্দ করতেন। আমি ছবিগুলো ওঁকে দেখিয়েছিলাম এবং সেগুলোর মধ্যে থেকে উনি একটা ছবি সনাক্ত করেন। কিন্তু কোনো বিশেষ কারণে গোপন করেন সেটা। ব্যাপারটা নিয়ে নিজেই অনুসন্ধান করবেন ঠিক করেছিলেন। ইচ্ছে করেই তাই অন্য ফটো সনাক্ত করে ভুল পথে আমাদের চালিত করেন।
–কিন্তু কেন? আগেই তো আমি বললাম উনি নিজের হাতে নিতে চেয়েছিলেন।
ব্ল্যাকমেলের কোনো ব্যাপার নয় তো এটা? অনেক টাকার মালিক কিন্তু ভদ্রমহিলা। সব টাকাই নাকি ওনার স্বামীর।
-ওঃ না। ব্ল্যাকমেল নয়। হয়ত ছবি দেখে সনাক্ত করতে পেরেছিলেন যাকে তাকে উনি পছন্দ করতেন। এবং সেজন্যই চাননি যে, তাকে আমরা খুঁজে পাই। সে যাই হোক না কেন অত্যন্ত বেশি ছিল ওঁর কৌতূহল। গোপনে তার সাথে উনি কথা বলতে চান এবং সেই সময় জানবার চেষ্টায় ছিলেন যে, সে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কিনা ম্যাগিনটি হত্যার ব্যাপারে।
–তা হলে তো বাকি তিনখানা ফটোর ব্যাপারে মাথা ঘামানো উচিত আমাদের।
-হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। মিসেস আপওয়ার্ড প্রথম সুযোগেই ফটোর মহিলার সঙ্গে কথা বলতে চান। ওঁর ছেলে আর মিসেস অলিভার যখন থিয়েটারে গেলেন সেই সময়টারই সুযোগ নেন উনি।
–এবং উনি ফোন করেন মিস হেণ্ডারসনকে। আবার মিস হেণ্ডারসন তাহলে ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়লেন দেখছি এবং তাঁর মা ও।
স্পেন্স বিষণ্ণ গলায় আরও বললেন, মঁসিয়ে পোয়ারো, জাল যতই গুটিয়ে আনতে চাই, আপনি ততই ব্যাপারটা কঠিন করে দেন, তাই না?
৬. মিসেস ওয়েদারবি
২১.
মিসেস ওয়েদারবি ডাকঘর থেকে অস্বাভাবিক দ্রুতবেগে বাড়ি ফিরে এলেন। নিজেকে উনি যতটা অসুস্থ বলে দাবী করেন সেই অনুপাতে ওঁর তৎপরতা অস্বাভাবিক বেশি এখন। কিন্তু বাড়ির দরজায় পা দেওয়া মাত্র হাঁপানো শুরু হল ওঁর এবং সোজা এসে বসবার ঘরে সোফায় গা এলিয়ে দিলেন। যে ঘন্টাটা পরিচারিকাকে ডাকার জন্য, সেটা ছিল হাতের কাছেই। জোরে জোরে সেটা উনি বাজালেন। কিন্তু এল না কেউ। অধৈর্য হাতে মিসেস ওয়েদারবি একটানা ঘন্টা বাজাতে শুরু করলেন। মড উইলিয়ামস এবার ঘরে ঢুকল। সে পরেছিল ফুলকাটা ছাপের একটা ঢোলা জামা। হাতে ঝাড়ন।
-মাদাম আমায় ডাকছিলেন?
–আমি দু-দুবার ঘন্টা বাজিয়েছি। ঘন্টাটা যখন বাজাই তখন এটুকু আশা আমি করি যে, কেউ না কেউ সঙ্গে সঙ্গে আসবে। সাংঘাতিক অসুস্থ হয়ে পড়তে পারতাম আমি।
–অত্যন্ত দুঃখিত আমি মাদাম। একটু ব্যস্ত ছিলাম ওপরে।
–জানি, ওপরে তুমি ছিলে। আমার ঘরে। তোমার পায়ের শব্দ আমি শুনতে পেয়েছি। সব দেরাজগুলো টেনে টেনে তুমি খুলে দেখছিলে। কেন যে তা জানেন ঈশ্বরই, জিনিসপত্র সব আমার ঘাঁটাঘাঁটি করা নিশ্চয়ই তোমার কাজ নয়?
-মাদাম এ সব আমি লুকিয়ে করছিলাম। ছড়ানো ছিটানো জিনিসগুলো আপনার গুছিয়ে রাখছিলাম।
বাজে বোকো না। তোমাদের মত প্রতিটি কাজের লোকের এরকম বদভ্যাস আছে। আমি বরদাস্ত করব না এসব। ভীষণ শরীরটা খারাপ লাগছে আমার। বাড়িতে কি ডীডার আছে?
-কুকুটাকে নিয়ে উনি একটু হাঁটতে বেরিয়েছেন।
-যত্তো সব মূখের ব্যাপার। খেয়াল রাখা ওর উচিত যে, আমার ওকে দরকার হতে পারে। একটা ডিম দুধে গুলে তাতে একটু ব্র্যাণ্ডি দিয়ে নিয়ে এস। খাবার ঘরের পাশের দিকের তাকে একটা ব্র্যাণ্ডির বোতল আছে দেখ।
-কিন্তু ডিম মাত্র তিনটে আছে, কাল লাগবে প্রাতঃরাশে।
–একজন কেউ ডিম খাবে না কাল। নাও, তাড়াতাড়ি কর। হাঁ করে ওখানে দাঁড়িয়ে আমায় কি দেখছ? তুমি বড় বেশি সাজগোজ কর। এটা ঠিক না।
কুকুরের ডাক শোনা গেল হলঘরে। কুকুর নিয়ে ডীডার বসবার ঘরে ঢুকল। ঘর থেকে মড বেরিয়ে গেল।
ডীডার দ্রুত নিঃশ্বাসে বলল, তোমার গলা শুনলাম আমি। ওকে তুমি কি বলছিলে?
–কিছু না।
–ওকে খুব রাগী রাগী দেখাচ্ছিল।
–শুধু ওকে আমি সামান্য শায়েস্তা করে দিয়েছি। অবাধ্য মেয়ে।
-মামণি, খুব কি বকুনি দেবার দরকার ছিল? আজকাল তোক পাওয়া কি মুশকিলের ব্যাপার জানোই তো। আর ও বেশ রান্না করতে পারে ভালো।
–আর ও যে দুর্ব্যবহার করল আমার সাথে তাতে বুঝি কিছু এসে যায় না? আমি খুব অসুস্থবোধ করছি। বোধহয় হাঁটাটা বড্ড বেশি হয়ে গেল।
-মামণি তোমার বেরোনো উচিত হয়নি। আমায় তো বলনি যে, তুমি বেরোবে?
–ভাবলাম বাইরের হাওয়া লাগলে হয়ত ভালো লাগবে একটু। যা গুমোট ভেতরে। যাকগে, কিছু এসে যায় না। যদি আর পাঁচজনের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়াই, তাহলে কোনো মানেই হয় না বেঁচে থাকার।
–আমাদের কাছে তুমি তো মামণি বোকা নও। তুমি না থাকলে আমি তো মরেই যাব।
-লক্ষ্মী মেয়ে তুমি, সোনা আমার। কিন্তু আমি তো জানি কারণে অকারণে কত উৎপাত করি তোমাকে।
-না না। কক্ষনো মুখে আনবে না এসব বাজে কথা।
মিসেস ওয়েদারবি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে চোখ বুজলেন।