-মাস্টার্স? মানে মিঃ কোলের কর্মচারী, না?
-হ্যাঁ। আবার বিবাহিত লোকটা। ছেলেমেয়েও আছে দুটি। মেয়েদের পেছনে ঘোরাঘুরি করাই ওর স্বভাব। মোটেই ভালো না লোকটা, এডনার মতিগতি দেখে ওর বাবা চার্লির সঙ্গে একেবারে বন্ধ করে দিয়েছেন মেয়ের মেলামেশা। সেদিন এডনা বাবাকে বলেছিল সেই রাত্রে ও কুলাভনে সিনেমায় যাচ্ছে রেগের সঙ্গে। আসলে লুকিয়ে ও চার্লির সঙ্গে দেখা করতে যায় ওই রাস্তাতেই, সে রাত্রে চার্লি শেষ পর্যন্ত আসেনি। হয় ওর বৌ আটকে দিয়েছিল ওঁকে নয়তো অন্য কোনো মেয়ের পেছনে ঘুরঘুর করছিল। তাই এডনা ভয় পাচ্ছে যে সবাই জানতে পারলেও ওর বাবার কানেও কথাটা উঠতে দেরি হবে না যে ও চার্লির সঙ্গে এখনো মিশছে।
মাথা নাড়লেন মেজর। কি করে এডনার মত মেয়ে এসব করে উনি ভেবেই পেলেন না। ওর মতন মেয়ের পক্ষে দু-দুজন ছেলে বন্ধু জোটানো।
-তাই বুঝি এডনা কার্টের সঙ্গে দেখা করতে চাইছে না?
—স্যার আপনি ঠিকই ধরেছেন।
–কিন্তু এসব পুলিশকে জানানো উচিত। এ ব্যাপারে ওরা কৈফিয়ত নাও চাইতে পারে আর যদিও বা চায়, ওরা তা গোপন রাখবে অনুরোধ করলে। আমি বরং মিঃ স্পেন্সকে এখানে আসতে বলি-না থাক, গাড়ি করে আমি এডনাকে কিলচেস্টারে নিয়ে যাচ্ছি। ওখানে এডনা জবানবন্দী দিলে এখানকার কেউ তা জানতে পারবে না। আমি শুধু ফোনে জানিয়ে দিচ্ছি যে আমরা যাচ্ছি।
এর কিছুক্ষণ পরেই মিসেস সুইটিম্যানের উৎসাহ পেয়ে এডনা জনি সামারহেসের স্টেশন ওয়াগনে চেপে কিলচেস্টারের পথে রওনা দিল।
.
২০.
কিলচেস্টারে এরকুল পোয়ারো মিঃ স্পেন্সের অফিসেই ছিলেন। তিনি চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসেছিলেন, কোলের ওপর দিয়ে হাত দুটো। হাতের কাজ শেষ করে তার দিকে স্পেন্স তাকালেন।
-মঁসিয়ে পোয়ারো, কিছু আসছে কি মাথায়?
–চিন্তা করছি, চেষ্টা করছি।
–ভালো কথা। ভুলে গেছি আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে, বেন্টলীর সংগে যে আবার দেখা করলেন, কোনো নতুন তথ্য পেলেন?
মাথা নাড়লেন পোয়ারো। ভুরু কুঁচকানো তার। তিনি এই মুহূর্তে বেন্টলীর কথাই ভাবছিলেন। ভাবছিলেন তাঁর মত একজন বিখ্যাত গোয়েন্দা যেখানে বিনা পারিশ্রমিকে ব্যয় করছেন নিজের বুদ্ধি আর সময় শুধুমাত্র পুরনো বন্ধুত্বের খাতিরে, অভিযুক্ত ব্যক্তিটি সেখানে এত কাঠখোট্টা, এটা ঠিক উচিত নয়। বরং একজন অল্পবয়সী সুন্দরী যুবতী, সরল কিন্তু বেহিসাবী, বা সুশ্রী যুবক একটি যে কর্মদক্ষ, কাব্যনুরক্ত অথচ উদ্ধত চরিত্র, যেন এরকম হলেই ভালো হত। তার বদলে কি না জেমস বেন্টলী। মানসিক বিকারগ্রস্ত আত্মকেন্দ্রিক একটা ছেলে, যে শুধু নিজের সম্বন্ধে ছাড়া কিছুই আর ভাবে না, তাছাড়াও এমন অকৃতজ্ঞ আর নির্বিকার যে, তারজন্য এই যে এত চেষ্টা করা হচ্ছে সেজন্য একটা শুকনো ধন্যবাদ পর্যন্ত দেওয়া দরকার বলে মনে করে না। ভাব দেখায় এমন যেন ওর কেনো কিছুতেই কিছু এসে যায় না। শুধু এই কারণেই ফাঁসিকাঠে ওকে ঝোলালেও বোধহয় দোষ হত না।
পোয়ারোর মনে এই সব চিন্তা চলছিল, স্পেন্স তাকে উদ্দেশ্য করে যখন কথা শুরু করেছিলেন। পোয়ারো বললেন, দেখুন, আমাদের দুজনের সাক্ষাৎকারটা তেমন কিছু ফলপ্রসু হয়েছে বলে মনে করি না আমি। যেটুকু দরকারী কথা বেন্টলীর মনে করতে পারা উচিত ছিল, তাও মনে করতে পারেনি সে। ওর যা মনে পড়েছে তা এত অস্পষ্ট যে, তার থেকে কোনো যুক্তিবদ্ধ উপসংহার পাইনি আমি। তবে একথা সত্যি যে সানডে কম্প্যানিয়নর ওই ফিচারটা পড়ে যথেষ্ট উত্তেজিত হন মিসেস ম্যাগিনটি। এমন কারও কথা বেন্টলীকে উনি বলেন যে, উল্লিখিত কোনো একটা মামলার সাথে জড়িত এবং ব্রডহিনির বাসিন্দা বর্তমানে।
–কোন মামলা, মিঃ স্পেন্স জিজ্ঞাসা করলেন।
আমাদের বন্ধু বেন্টলী সেইটুকু বলতে পারছে না সঠিকভাবে। দ্বিধাগ্রস্তভাবে বলল হয়ত ক্রেগ মামলা হতে পারে। কিন্তু ঐ একটা মামলার বিষয়বস্তু সম্বন্ধে ও নিজে ওয়াকিবহাল সেইজন্য ওটা ওর আন্দাজও হতে পারে। কিন্তু বাসিন্দাটি একজন মহিলা। বেন্টলী এ প্রসঙ্গে মিসেস ম্যাগিনটির কথা উল্লেখ করেছে, এমন কেউ, সব জানাজানি হয়ে গেছে বুঝলে সে আর অত গর্ব করতে পারবে না।
–গর্ব?
–হ্যাঁ, অর্থব্যঞ্জক কথাটা, তাই না? কিন্তু গর্বিত মহিলাটি কে? কিছুই জানতে পারা যায়নি সে সম্বন্ধে?
–একবার বেন্টলী বলল মিসেস আপওয়ার্ড হয়ত, কিন্তু যতদূর মনে হয় আমার সেরকম হওয়ার কোনো কারণ নেই।
ভদ্রমহিলাকে অত্যন্ত অহংকারী এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ভেবেই হয়ত একথা বলেছিল। কিন্তু মিসেস আপওয়ার্ড হতেই পারেন না কারণ তিনি মৃতা এবং এমন একটি কারণে যে কারণে মিসেস ম্যাগিনটিও খুন হন। কারণটি একটি ফটোর সনাক্তকরণ।
পোয়ারো বিষণ্ণভাবে বললেন, ওঁকে আমি সাবধান করে দিয়েছিলাম।
বিড়বিড় করে স্পেন্স বললেন, লিলি গ্যাম্বল। বয়সের হিসেব মত দেখতে গেলে মাত্র দুটো নাম পাওয়া যাচ্ছে মিসেস রেগুল এবং মিসেস কার্পেন্টার। আমি বাদই দিচ্ছি মিসেস হেণ্ডারসনকে, ওর একটা জন্মপরিচয় আমরা জানি।
এবং একেবারেই অজ্ঞাতকুলশীল অন্য দুজন? দীর্ঘশ্বাস ফেললেন স্পেন্স। জানেনই তো কি দিনই না চলছে আজকাল। সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে যুদ্ধ। যে স্কুলে লিলি ছিল, তার আজ কোনো চিহ্নই নেই। মানুষ জনের কথাই ধরুন। অজ্ঞাতকুলশীলদের সংখ্যাই বেশি যুদ্ধের বাজারে। ব্রডহিনির ব্যাপারেই দেখুন, নিশ্চিতভাবে আমরা চিনি সামারহেসদের যারা কিনা আজ তিনশো বছর যাবৎ বংশপরম্পরায় ব্রডহিনির বাসিন্দা। আর মিঃ কার্পেন্টারকে চিনি যার বংশের অনেকে যথেষ্ট পরিচিত। ডঃ রেগুল? এইটুকুই আমরা জানি যে উনি কোথায় শিক্ষালাভ করেন বা কোথায় চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন কিন্তু আমাদের ওঁর বংশ পরিচয় অজানা। ডাবলিনের বাসিন্দা ছিলেন ওঁর স্ত্রী, ইভা সেলকার্ক। মিঃ কার্পেন্টারকে বিয়ে করার আগে যুদ্ধের কারণে ভদ্রমহিলা ছিলেন নিহত কোনো ব্যক্তির সদ্যবিধবা যুবতী স্ত্রী। যে কেউই তো সে সাজতে পারে। ওয়েদারবিদের কথাই ধরুণ–এরা তো পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত চষে বেড়িয়েছেন, কেন? হয়ত বা ওঁরা কোনো সৎ নয়তো কোনো কুকীর্তি করেছেন। এ কথা বলছি না যে, কোনো সংবাদই আমরা সংগ্রহ করতে পারবো না, কিন্তু তাতেও তো সময় লাগবে। নিজে থেকে লোকজন কেউ আপনাকে কিছু খবর দেবে না।