নতুন করে এডনা কান্না শুরু করল।–না কার্ট নয়, কার্টের কাছে আমি কি করে যাব? তাহলে সবাই জেনে যাবে।
-তাহলে সেই বিদেশী ভদ্রলোককে, দ্বিধাগ্রস্তভাবে সুইটিম্যান বললেন।
–না না। বিদেশী নয়। কোনো বিদেশীর কাছে আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে যাৰ না।
–হয়ত এ কথাটা তুমি ঠিকই বলছ।
একটা গাড়ি থামার শব্দ হল বাইরে। মিসেস সুইটিম্যানের মুখখানা উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
-ওই যে এসে গেছেন মেজর সামারহেস। তুমি বরং খুলে বল সব কিছু। উনি বাতলে দেবেন তোমার পথ।
-না, না, আমি পারব না।
ভেতরে এলেন জনি সামারহেস। তিনটে কার্ডবোর্ডের বাক্স ওঁর হাতে।
-মিসেস সুইটিম্যান সুপ্রভাত। ওজন করে এগুলো দেখুন না, নিশ্চয়ই বেশি হয়ে যায়নি ওজন।
পার্শেলের দিকে মিসেস সুইটিম্যান নজর দিলেন। যখন মেজর সামারহেস স্ট্যাম্প লাগাতে ব্যস্ত, তখন উনি বললেন, মেজর মাপ করবেন, বিশেষ একটা ব্যাপারে আপনার মতামত নিতে চাই আমি, যখন আপনি এ অঞ্চলের বাসিন্দা তখন আপনাকেই জিজ্ঞাসা করা ভালো।
সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লেন বটে মেজর কিন্তু এই সব মেয়েদের ধারণা তিনি ঠিক বুঝতে পারেন না। যেহেতু তার অধিকাংশ পূর্ব পুরুষ বংশানুক্রমে এ অঞ্চলের বাসিন্দা তাই সকলে এঁরা আশা করেন যে সব ব্যাপারে উপদেশ দেবেন তিনিই।
এডনার ব্যাপারে কথাটা। মিসেস সুইটিম্যান জানালেন।
নাক টানল এডনা। সন্দিগ্ধভাবে মেজর তাকালেন এডনার দিকে। জীবনে উনি এত নির্জীব মেয়ে কমই দেখেছেন। ঠিক যেন ছাল ছাড়ানো একটা খরগোস। পুরোপুরি বুদ্ধিও পাকেনি বলেই মনে হয়। বিপদ বলতে আক্ষরিক অর্থে যা বোঝায়, তাতে এ মেয়েটি পড়তেই পারে না।
মেজর কিঞ্চিৎ অনুকম্পা মিশ্রিত গলায় বললেন, কি ব্যাপার?
–স্যার খুনের ব্যাপারটা। খুনটা হয় যে রাত্রে, সেদিন এডনা কিছু একটা দেখেছিল।
জনি সামারহেসের তীক্ষ্ণ ও দ্রুত দৃষ্টি প্রথমে এনা, তারপর মিসেস সুইটিম্যানের ওপর পড়ল। পরে আবার সে দৃষ্টি ঘুরল এডনার দিকে।
তুমি কি দেখেছ, এনা? ফোঁপাতে শুরু করল এডনা। মিসেস সুইটিমান অবস্থা আয়ত্তে আনতে চেষ্টা করলেন।
-দেখুন মেজর, অনেক গুজবই আমরা শুনেছি। কিছু সত্যি বাকিটা মিথ্যে। কিন্তু এটা নিশ্চয়ই সত্যি যে, সেদিন রাত্রে একজন মহিলা মিসেস আপওয়ার্ডের সংগে কফি পান করেন?
–হ্যাঁ, তাই বিশ্বাস আমারও। এটা সত্যি কারণ কার্ট হেলিং এ কথা বলেছেন আমাদের।
স্থানীয় পুলিশ কনস্টেবল অ্যালবার্ট হেলিং অত্যন্ত ধীর ভাষী এবং নিজের কর্তৃত্ব সম্বন্ধে সচেতন।
মেজর বললেন, ও। কিন্তু ওরা তো জানে না কে মহিলাটি।
এডনা কিন্তু তাকে দেখেছে।
এডনার দিকে তাকালেন জনি। ঠোঁট দিয়ে তিনি শিস দেবার ভঙ্গি করলেন।
-ভদ্রমহিলাকে তুমি দেখেছ এডনা। ঢুকতে না বেরিয়ে যেতে?
–মনে তো হল ভেতরে যাচ্ছিলেন বলেই (এডনার গলায় গাম্ভীর্য)। আমি ছিলাম উল্টোদিকের রাস্তায়। ওই গাছগুলোর নিচে। রাস্তাটা যেখানে বাঁক নিয়েছে, সেখানে। অন্ধকার জায়গাটা। গেট দিয়ে ভদ্রমহিলা ভেতরে ঢুকলেন, তারপর চলে গেলেন বাড়ির দিকে।
মনের ভার কেটে গেল জনি সামারহেসের।
-ওঃ মিস হেণ্ডারসন ভদ্রমহিলা। এডনা এ কথা পুলিশ জানে। নিজেই ভদ্রমহিলা পুলিশকে জানিয়ে এসেছেন।
মাথা নাড়ল এডনা-না, মিস হেণ্ডারসন নয়।
-নয়? কে তাহলে?
–ঠিক জানি না আমি। আমি মুখ দেখতে পাইনি। আমার দিকে উনি পেছন ফিরে ছিলেন যদিও, কিন্তু উনি কখনোই মিস হেণ্ডারসন নন।
–তুমি সেটা কেমন করে জানলে? মুখটাই তো তুমি দেখনি বলছ।
–কারণ আমি ওঁর চুল দেখেছি, হালকা রংয়ের। মিস হেণ্ডারসনের চুলের রং গাঢ়।
অবিশ্বাসের গলায় মেজর সামারহেস বললেন, কিন্তু সেদিন রাত্রে তো তেমন ছিল না চাঁদের আলো। তোমার পক্ষে খুব সঠিকভাবে চুলের রং বোঝা সহজ নয়।
কিন্তু দেখেছি আমি। গাড়ি বারান্দায় ছিল আলো। বেরোবার সময় মিঃ রবিন আর লেখিকা ভদ্রমহিলা আলোটা জ্বালিয়ে রেখেই বেরিয়ে যান। আলোর ঠিক নিচেই আগন্তুক মহিলাটি দাঁড়িয়েছিলেন, তার পরনে গাঢ় রংয়ের কোট ছল, কোনো টুপি ছিল না মাথায় এবং চুলে আলো পড়ায় স্পষ্ট দেখতে পেলাম তা হালকা রংয়ের।
খুব আস্তে শিস দিলেন জনি। চোখ দুটো তার এখন গম্ভীর। জিজ্ঞাসা করলেন, কটা বাজে তখন?
নাক টানল এডনা–সঠিক আমি বলতে পারব না।
মিসেস সুইটিম্যান বললেন, তুমি তবুও আন্দাজ করতে পারো।
তখনো নটা বাজেনি, গীর্জার ঘন্টা শুনেছিলাম। তাতে মনে হয় সাড়ে আটটার পর।
তার মানে সাড়ে আটটা থেকে নটার মধ্যে। মহিলাটি কতক্ষণ ভেতরে ছিলেন?
জানি না স্যার, কারণ আর বেশিক্ষণ আমি অপেক্ষা করিনি। কোনো শব্দ শুনিনি। কান্না বা চিৎকার কোনোটাই নয়।
গম্ভীরভাবে মেজর সামারহেস বললেন, একটাই করণীয় কাজ আছে আমাদের, তা হল পুলিশকে জানানো।
সশব্দে এডনা কেঁদে উঠল। –আমায় তাহলে বাবা জ্যান্ত পুঁতে ফেলবেন।
এডনা একথা বলেই পেছনের ঘরে দ্রুতপায়ে চলে গেল।
মেজরকে মিসেস সুইটিম্যান বললেন, স্যার বড় ছেলেমানুষী এনা করছে। ব্যাপারটা কি জানেন? খুব রাশভারী আর কড়া মেজাজের মানুষ ওর বাবা। এখন খুব অসন্তুষ্ট হয়ে আছেন এডনার ওপর। কুলাভনে একজন ভদ্রলোক, মার্জিত ছেলের সাথে এডনার বাগানের কথা ঠিক হয়ে গিয়েছিল সব। ছেলেটিকে ওর বাবাও খুব পছন্দ করতেন, কিন্তু আজকালকার মেয়েদের ব্যাপার তো–এডনা ঐ রেগকে ছেড়ে এখন ঘোরাঘুরি করছে চার্লি মাস্টার্সের সঙ্গে।