-মিসেস ম্যাগিনটি এসব সত্বেও নিহত হন। আচ্ছা পূর্বশত্রু হিসেবে ওর ভাইঝি কাউকে চেনে কিনা জানেন?
–সে তো বলেছে তার তেমন কেউ আছে বলে জানা নেই।
–খুব ভালো হত যদি মিসেস ম্যাগিনটি প্রকৃতই এমন ধরনের মহিলা হতেন যার রহস্যময় কোনো অতীত আছে। অর্থাৎ বলতে চাইছি অন্য প্রকৃতির মহিলা যদি উনি হতেন।
-সেরকম কোনো সম্ভাবনা নেই। সত্যিই উনি মিসেস ম্যাগিনটি–হাজার হাজার সাধারণ মহিলাদের একজন।
–কিন্তু সকলেই তারা নিহত হন।
–না, অবশ্য তা নয়।
–তবে কেন নিহত হলেন উনি? আর কেনই বা সাধারণ একজন তরুণের ঘাড়ে দোষ পড়ল সব।
–আপনাকে তো আমি আগেই বলেছি যে, সব প্রমাণ ওই বেন্টলীর বিরুদ্ধে যাচ্ছে।
–কিন্তু সেগুলো কি সত্যি প্রমাণ না সাজানো?
–সাজানো?
-হ্যাঁ, তাই যদি নিশ্চয়ই নির্দোষ হয় বেন্টলী তবে ব্যাপারটা সাজানো হয়েছিল এমনভাবে যাতে তার বিপক্ষে যায় সব কিছুই!
–হ্যাঁ, এবার আমি আপনার কথা বুঝতে পেরেছি।
–তার কোটে হয়ত রক্ত আর চুল লাগার কথায় যা বলেছে সেটাই ঠিক। মানে, ইচ্ছে করে কেউ তা করেছে। এবার বেড়াতে যায় বেন্টলী এবং যখন সে বেড়াতে বেরিয়েছিল সেই সময়ই খুন হন ভদ্রমহিলা।
-আমার মনে হয় একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে এটা।
–হয়ত। কিন্তু ব্যাপারটা সব দিক থেকেই ভেবে দেখতে হবে। একজন সাধারণ মহিলা ছিলেন মিসেস ম্যাগিনটি এবং ওঁর মধ্যে এমন কিছু আমরা খুঁজে পাচ্ছি না, যে কারণে ওকে এরকম অস্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করতে হবে। আমার মনে হয় হত্যাকারীর চরিত্রগত বৈশিষ্টই এই হত্যার কারণ। আমাকে এই ধরনের হত্যাই বেশি নাড়া দেয়। মৃতের পছন্দ অপছন্দ, ভালোবাসা, কার্যকলাপ ইত্যাদি এসব ক্ষেত্রে চারিত্রিক বৈশিষ্ট অনেক সাহায্য করে থাকে রহস্য উদঘাটনে। যদি একবার মৃতের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের দিকটা জানা হয়ে যায় তবেই বলা যেতে পারে রহস্যের সূত্র হাতে এসে গেল।
তখন মনে হবে, মৃত ব্যক্তির ঠোঁট থেকে এক অত নাম উচ্চারিত হচ্ছে তা হত্যাকারীর নাম।
একটু যেন দ্বিধাগ্রস্ত বলে মনে হল মিঃ স্পেন্সকে।
–ওই সব ব্যক্তিরা যারা বাইরে থেকে আসেন….
তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে পোয়ারো বলে চললেন, কিন্তু আমরা এখানে কি দেখছি ঠিক বিপরীত। এক আবছা ব্যক্তিত্বের আভাস পাচ্ছি আমরা, এখনো রহস্যাবৃত যার অস্তিত্ব। উনি কেমনভাবে মারা গেলেন? কেন মারা গেলেন? সে রহস্যের চাবিকাঠির খোঁজ আমরা পাব না মৃতার জীবন কাহিনীর মধ্যে। হত্যাকারীর চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যর মধ্যে তার সূত্র লুকিয়ে আছে। আপনি কি আমার সাথে একমত?
–আমরাও তাই ধারণা। পোয়ারোর বক্তব্য সতর্ক স্পেন্স সমর্থন করেন।
–কেউ চেয়েছিল হয় মিসেস ম্যাগিনটি নয় ওই জেমস বেন্টলীকে হত্যা করতে। কিন্তু কাকে?
-সত্যিই কি আপনি মনে করেন কাউকে ফাঁসিকাঠে ঝোলাবার উদ্দেশ্যেই মিসেস ম্যাগিনটির মত একজন নির্দোষ মহিলাকে হত্যা করা হয়েছে?
–হয়তো বেন্টলীকে শাস্তি দিতেই হত্যা করেছে সে ওই ভদ্রমহিলাকে। অতীত সম্বন্ধে ছেলেটির কিছু কি জানতে পেরেছেন?
–বিশেষ কিছু নয়। ন বছর বয়সে মারা যান বাবা। ডাক্তার ছিলেন তিনি। ছেলেটি তারপর পড়াশুনা করে। সেনাবাহিনীতে প্রবশোধিকার পায় না দুর্বল স্বাস্থ্যের জন্য। কর্তৃত্ব প্রিয় মায়ের সঙ্গে থাকত। রাষ্ট্রদপ্তরের কোনো একটা বিভাগে যুদ্ধের সময় চাকরী করেছিল।
–আমার মনে হয় বেন্টলীর অতীত সম্বন্ধে ভালো করে আরও খোঁজ খবর নিন। হয়ত তাতে বেশি ফল হবে।
-সত্যিই কি আপনি তাই মনে করেন?
–এখনো আমি কিছুই বিশ্বাস করি না। দুটো পথ আছে। তার মধ্যে কোনটাকে অনুসরণ করা হবে, আমাদের খুব তাড়াতাড়ি তা স্থির করা দরকার।
–কোন পদ্ধতিতে আপনি এগোতে চান? আপনার কোনো কাজে কি আমি লাগতে পারি?
–আমি প্রথমে ব্রেন্টুলীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। –সেটা সম্ভব। ওর সলিসিটারের সাহায্য নেব আমি।
-তারপর ঘটনার তদন্ত করতে চাই–যদি কোনো তথ্য পাওয়া যায় পরিবেশ থেকে। ব্রডহিনির ঘটনাস্থল দেখা দরকার আমার।
হ্যাঁ, বলা যায় না, কোনো সূত্র হয়ত আমার নজর এড়িয়ে গিয়েছে।
-আসলে তা নয়। মানুষের মানসিক প্রতিক্রিয়া এক রকম হয় না সকলের। অভিজ্ঞতাও তাই। হয়ত ঘটনার পরিবেশ বিশেষ কোনো ইঙ্গিত দেবে আমাকে, যেদিকে নজর ছিল না আমাদের। যাক অনুমান আর সম্বাবনার তালিকাটি ধীরে ধীরে আমি ছোট করে ফেলতে চাই। আচ্ছা, ওখানে আপনাদের কোনো সস্তা অথচ ভালো হোটেল আছে?
–গেস্ট হাউস আছে একটা মানে ওইরকম আর কি অনেকটা। সেটার দেখা শুননা করে এক তরুণ দম্পতি যদিও মনে হয় না ওটা খুব ভালো।
-আর কি করা যায়। অসুবিধে হলেও সইতে হবে।
ওখানে কি আপনি মিথ্যা পরিচয়ে যাবেন? যেমন ধরুণ একজন অপেরা গায়ক হিসেবে নিজের পরিচয় দিলেন বা বিশ্রামের জন্য গেছেন?
-কখনই না।
-কিন্তু!
—-কোনো কিন্তু নেই এর মধ্যে। যথেষ্ট দেরি হয়ে গেছে অথচ আমরা বিশেষ কিছুই জানি না। কিন্তু ভান করতে হবে এমন যেন অনেকটাই আমাদের জানা এ ব্যাপারটার রহস্য। সেই—সত্যান্বেষী এরকুল পোয়ারো যে মোটেই সন্তুষ্ট নয় বিচারের রায়ে এবং আগ্রহী প্রকৃত রহস্যে ভেদে। তদন্ত করব আমি।
-তারপর?
–লক্ষ্য করব তদন্তের প্রতিক্রিয়া। নিশ্চয়ই কিছু সূত্র পাব। অস্বস্তিবোধ করছিলেন মিঃ স্পেন্স। তিনি পোয়ারোকে সর্তক করলেন।