-এবং তাকে আপনিও আপনার মায়ের কথা বলেন?
–হ্যাঁ। বেন্টলী সরলভাবে উত্তর দিল।
চুপ করে রইলেন পোয়ারো। বেন্টলী বলল, খুব নিষ্ঠুর জীবন, খুব নির্মম। সারা জীবনেও কেউ কেউ সুখের মুখ দেখতে পায় না।
–তা ঠিক।
–আমার মনে হয় মিস ওয়েদারবিও অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত জীবনে।
–হেণ্ডারসন।
–ও হ্যাঁ। আমায় উনি বলেছিলেন, মিঃ ওয়েদারবি ওঁর সৎপিতা।
–ডীডার হেণ্ডারসন, করুণ নাম। নামটা সুন্দর কিন্তু উনি দেখতে তত সুশ্রী নন।
–আমার মনে হয় যথেষ্ট সুন্দরী উনি।
.
১৯.
মিসেস সুইটিম্যান বললেন, আমার কথাটা তুমি মন দিয়ে শোনো, ব্যস।
নাক টানল এডনা। কিছুক্ষণ ধরেই সে শুনে যাচ্ছে মিসেস সুইটিম্যানের কথা। যত্তো সব অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা। একশোবার একই কথা বলেন। শুধু ওরই মধ্যে এডনা ফাঁক পেয়ে নিজের দুটো কথা ওঁর কানে প্রাণপণে তোলার চেষ্টা করছিল–এক, কোনোক্রমেই সে কিছু বলতে পারবে না। আর দুই, ওর বাবা ওর ছাল চামড়া তুলে ফেলবেন। জানতে পারলে।
মিসেস সুইটিম্যান বললেন, সেটা হলেও ক্ষতি নেই। তবে খুন সব সময় খুনই এবং যা তুমি দেখেছ তা অস্বীকার করতে তুমি পারো না।
আবার নাক টানল এডনা।
এবং এডনা, যা তোমার করা উচিত….
কথা থামিয়ে মিসেস সুইটিম্যান তার দোকানে সদ্য আগত মিসেস ওয়েদারবিকে বোনবার কাটা আর উলের গোলা দিতে এগিয়ে গেলেন।
–মাদাম আপনি অনেকদিন এদিকে আসেননি।
-না–বেশ কিছুদিন যাবৎ ভালো যাচ্ছে না শরীরটা, হার্টের অসুখ, বোঝেনই তো। বেশি সময় কাটে বিছানাতেই।
–শুনলাম, কাজের লোক পেয়েছেন আপনি? এই যে উলি আর কাটা আপনার।
-হ্যাঁ। যথেষ্ট করিল্কর্মা মেয়েটি। রাঁধেও মন্দ না। তবে স্বভাব, বেশভূষা আঁটসাঁট, অসহ্য একেবারে।
-ওহ, আজকাল আসলে মেয়েদের সুশিক্ষাই দেওয়া হয় না। মাত্র তের বছর বয়সে আমার মা কাজে যোগ দেন। রোজ উঠতেন ভোের পৌনে পাঁচটায়। উনি পরিচারিকাদের প্রধান ছিলেন। আরও তিনজন মেয়ে ছিল ওঁর অধীনে, যাদের উনি চমৎকার তৈরি করে নেন শিখিয়ে পড়িয়ে, কিন্তু এখন? ও সবের পাটই শুধু পুঁথিপড়া বিদ্যেটাই জানে মেয়েরা। যেমন এডনা।
এডনার দিকে দুজন মহিলাই তাকালেন। তখন এডনা কাউন্টারে হেলান দিয়ে পিপারমেন্ট চুষছিল বিমর্ষ মুখে। সত্যিই তার মধ্যে শিক্ষাগত উন্নতির কোনো পরিচয় ছিল না।
মিসেস সুইটিম্যান কথা চালিয়ে যাচ্ছিলেন–খুবই বীভৎস মিসেস আপওয়ার্ডের ব্যাপারটা না?
রঙবেরঙের কাটা বাছছিলেন মিসেস ওয়েদারবি। সায় দিলেন তিনি।
–ঠিক বলেছেন। নৃশংস ব্যাপার। ঘটনাটা বাড়ির লোকেরা আমাকে বলতে ভরসাই পায়নি। শেষ পর্যন্ত যেই না বলেছে; হার্টের অবস্থা আমার খারাপ হয়ে গেল। আমি আবার খুব নার্ভাস তো।
-হ্যাঁ, খবরটা আমাদের সকলের পক্ষেই বড় অস্বস্তিকর। বিশেষত রবিনের কথা ভাবলে বড় কষ্ট হয়। ওর পক্ষে এ শোক সামলানো খুবই কষ্টকর হয়েছিল। একেবারে ডাক্তার-টাক্তার ডেকে একাকার কাণ্ড। ও তো এখন লং মিডোস-এ পেয়িংগেস্ট হিসেবে থাকবে বলেছে। অবশ্য এজন্য ওকে দোষ দিই না। জ্যানেট, ওদের পরিচারিকাটি চলে গেছে তার ভাগিনীর কাছে। বাড়ির চাবি পুলিসের হেফাজতে। ওদের অতিথি হয়ে এসেছিলেন যে লেখিকাটি, তিনি আপাতত চলে গেছেন লন্ডনে, তবে আবার কেস চললে আসবেন।
মিসেস সুইটিম্যান অত্যন্ত আত্মপ্রসাদের সঙ্গে সমস্ত তথ্য জানিয়ে দিলেন। মিসেস ওয়েদারবি, উল কেনা ওঁর মূল উদ্দেশ্য হলেও খুব উপভোগ করছিলেন ব্যাপারটা।
–অত্যন্ত অস্বস্তিকর। সমস্ত পরিবেশটাই আমাদের এর আওতায় পড়ে। কোনো পাগলের কাণ্ড নিশ্চয়ই। যখনই ভাবি আমার নিজের মেয়েও বাইরে গিয়েছিল সে রাত্রে তখন যেন সমস্ত শরীরের রক্ত জল হয়ে যায়। আক্রান্ত হতে পারত সেও, খুনও হতে পারত….মিসেস ওয়েদারবি উত্তেজনায় দুচোখ বন্ধ করে ফেললেন–সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত এ অঞ্চলে। কোনো অল্পবয়সী যুবক বা যুবতাঁকে সন্ধ্যের পর ঘোরাঘুরি করতে দেওয়া উচিত নয়। জানেন তো, লং মিডোস-এর মিসেস সামারহেস বাড়ির একটা দরজাও বন্ধ করেন না, এমন কি রাত্রেও না। খিড়কীর দরজা, বৈঠকখানার জানলা সবই খোলা থাকে হাট করে যাতে ওর পোষা বেড়াল, কুকুর অবাধে যাতায়াত করতে পারে। এটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে পাগলামী ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না। কিন্তু মিসেস সামারহেস বলেন চুরি হবার হলে, তা হবেই, দরজা জানলা খোলা বা বন্ধ করে তা আটকানো যায় না।
মিসেস সুইটিম্যান বললেন, হয়ত তেমন কিছু সম্পত্তি নেই ওদের চুরি যাওয়ার মত।
দুঃখিতভাবে মিসেস ওয়েদারবি মাথা নেড়ে বিদায় নিলেন জিনিসপত্র গুছিয়ে।
আবার সেই পুরনো তর্ক শুরু হল এডনা আর মিসেস সুইটিম্যানের মধ্যে।
-এডনা, একথা স্বপ্নেও ভেবো না যে, সব সময় যা তুমি মনে কর সেটাই ঠিক। খুনটুন মোটেও ছেলেখেলার ব্যাপার নয়। সত্যি কথা বল এবং সৎপথে থাকো–তাতেই শায়েস্তা হবে শয়তান, আমার এটাই ব্যক্তিগত বিশ্বাস।
-আমি নিশ্চিত যে, আমার বাবা মেরেই ফেলবেন।
–তোমার বাবার সঙ্গে আমি এ ব্যাপারে কথা বলব, তা হলেও….
-মৃত মিসেস আপওয়ার্ড এবং এমন কিছু তুমি দেখেছ যা পুলিশ জানে না। ডাকঘরে তুমি কাজ কর তার মানেই একজন সরকারী কর্মচারী তুমি। তোমার কর্তব্য তোমাকেই করতে হবে। কার্ট হেলিং-এর কাছে যেতেই হবে তোমাকে।