–কিন্তু দেখা করেন আপনি।
–হ্যাঁ, অকারণে অভদ্রতা করতে পারিনি।
–তারপর? আপনি ওঁকে নিয়ে কোথায় গেলেন? সিনেমা না রেস্তোরাঁয়?
–না, মশাই না। দুচার কথা বলেছিলাম বাস স্টপে দাঁড়িয়ে।
–আহা হা, সুন্দরী মেয়েটির কপালে সেদিন অনেক দুর্ভোগ ছিল।
এবার বেন্টলী রেগে গেল। মঁসিয়ে পোয়ারো, কত বার বলব, আমার হাতে সেদিন মোটে টাকা পয়সা ছিল না।
হা হা। আচ্ছা, এটা তো মিসেস ম্যাগিনটি মারা যাবার কয়েকদিন আগের ঘটনা, তাই না?
মাথা নাড়ল বেন্টলী। সে হঠাৎ বলল, হ্যাঁ, সোমবারের ঘটনা এটা। বুধবার মিসেস ম্যাগিনটি মারা যান।
আমি এবার আসছি অন্য প্রসঙ্গে। বলুন তো, মিসেস ম্যাগিনটি কি সানডে কম্প্যানিয়ন পত্রিকার গ্রাহিকা ছিলেন?
-হ্যাঁ।
–আপনি কখনো পড়েছেন ঐ কাগজটা?
–পড়েছি। উনি অনেকবারই দিতে চেয়েছেন আমাকে, আমি নিইনি প্রতিবার। আমার মা ঠিক ঐ ধরনের পত্রিকাগুলো পড়তেন না।
–সেই সপ্তাহের পত্রিকাটা তাহলে আপনি পড়েননি?
-না। এবং মিসেস ম্যাগিনটি ওই কাগজ বা কাগজের কোনো খবর নিয়ে আপনাকে কিছু বলেনও নি?
-বলেছিলেন তো। অনেক কথাই বলেছিলেন।
-তাই নাকি? তাহলে অনেক কথা বলেছিলেন। একটু মনে করে কথাগুলো বলুন তো। ব্যাপারটা জরুরী।
-খুব ভালো করে তা এখন আর মনে নেই। কোনো পুরনো দিনের খুনের ঘটনা। বোধহয় ক্রেগ মামলা, আবার নাও হতে পারে। যাকগে, উনি বলেছিলেন যে, ওরকম কোনো পুরনো মামলার সঙ্গে জড়িত কেউ এখন ব্রডহিনিতেই বাস করছেন। অনেক কথা এনিয়ে উনি বলেন। যদিও ভেবে পাইনি আমি ওঁর তাতে মাথা ব্যথাটা কি?
-কি বলেছিলেন উনি, কে জড়িত ব্যক্তিটি?
–মনে হয় নাটক লেখেন যে ভদ্রমহিলাটির ছেলে, সেই মহিলাটি।
–কি নাম করে উনি বলেছিলেন?
–না….আমি…কি জানি অনেক দিনের কথা তো, মনে করতে পারছি না ঠিক।
–হাতজোড় করে আমি অনুরোধ করছি। চেষ্টা করুন মনে করতে। নিশ্চয়ই খুনের দায় থেকে আপনি মুক্তি পেতে চান, তাই না? এবার অবাক হল জেমস বেন্টলী।
-মুক্তি?
–হ্যাঁ, মুক্তি।
–আমি….হা। নিশ্চয়ই চাই।
–তাহলে ভাবুন…ঠিক কি কি কথা বলেছিলেন মিসেস ম্যাগিনটি।
-অনেকটা এই ধরনের : সব কিছু নিয়ে নিজের ব্যাপারে মহিলার এত গর্ব…এত গর্বের কিছু নেই…যদি সব জানাজানি হয়ে যায়। আরও বলেন, কেউ নাকি ভাবতেই পারবে না ফটোর মহিলা আর এই মহিলাটি এক, তবে এত বছর আগের ঘটনা ইত্যাদি।
–এ ধারণা তাহলে আপনার মনে কেন এল যে, মিসেস আপওয়ার্ডের কথাই উনি বলতে চেয়েছেন?
-সত্যিই জানি না। তবে কেন যেন ধারণাটা দাণা পাকিয়ে যায়। হয়ত উনি কিছু বলছিলেন মিসেস আপওয়ার্ডের সম্বন্ধে। মন দিয়ে আমিও শুনছিলাম না, বা এখন এতদিন বাদে বলতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলছি, এও হতে পারে। উনি যে কথা বলতেন বড্ড বেশি।
পোয়ারো দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন; আমিও মনে করি না যে, উনি মিসেস আপওয়ার্ডের কথাই বলতে চেয়েছিলেন। সম্ভবত উনি অন্য কারও কথা বলেন, ঠিকমত মনে করে আপনি কিছুই বলতে পারলেন না…প্রকৃত তদন্তের গতিও এতে বাধা পাবে। আর কে বলতে পারে, হয়ত কঁসি কাঠে আপনাকেও লটকাতে হবে হয়ত। আচ্ছা, যে সব বাড়িতে মিসেস ম্যাগিনটি কাজ করতেন, সেই সব বাড়ির মহিলাদের সম্বন্ধে উনি কিছু বলতেন?
-হ্যাঁ, কিছু কিছু। কিন্তু আমাকে সে কথা জিজ্ঞাসা করে লাভ নেই, মঁসিয়ে পোয়ারো। আমি নিজে তখন এত অশান্তির মধ্যে ছিলাম যে, কোনো কথাই আমার মনে রেখাপাত করত না।
-কিন্তু যে রকম দুশ্চিন্তায় এখন আছেন, সেই তুলনায় কিছু নয়। উনি কি মিসেস কার্পেন্টার (যিনি আগে মিসেস সেলকার্ক ছিলেন) অথবা মিসেস রেগুলের সম্বন্ধে কিছু বলেছিলেন?
–পাহাড়ের ওপরে নতুন বাড়িটার মালিক মিসেস কার্পেন্টাররাই তো? ওঁর স্বামীর তো একটা মস্ত গাড়ি আছে। তখন ভদ্রলোক ছিলেন ভদ্রমহিলার বাগদত্ত। মোটেও মিসেস কার্পেন্টারের ওপর মিসেস ম্যাগিনটির ভালো ধারণা ছিল না। খালি বলতেন, কপালের জোর।
-আর রেগুলের সম্বন্ধে?
–উনি ডাক্তার, না? মনে পড়ছে না আমার বিশেষ কিছু ওঁদের সম্বন্ধে শুনেছি বলে।
–আর ওয়েদারবিরা, বেশ খুশী খুশী দেখাল বেন্টলীকে। মনে আছে আমার ওদের সম্পর্কে কি বলেছিলেন মিসেস ম্যাগিনটি। ধৈর্য নেই ভদ্রমহিলার। যা খুশী তাই করছেন? ভদ্রলোকের কথায় বলেছিলেন, বৌয়ের আঁচল ধরা, মুখে কথাটি নেই, উনি বলেছিলেন, খুব অসুখী পরিবার।
চোখ তুলে তাকালেন পোয়ারো। তাঁর মনে হল এক মুহূর্তের জন্য এই প্রথম বেন্টলীর কথার সুরে এসেছে পরিবর্তন। সত্যিই বেন্টলী বাড়িটা সম্পর্কে চিন্তা করছিল, পরিবারের সম্বন্ধে, তাদের সুখ, অসুখ…
নরম গলায় পোয়ারো বললেন, ওদের চেনেন আপনি? ভদ্রমহিলাকে? ভদ্রলোককে? মেয়েটিকে?
-না না। বরং কুকুরটাকে বলতে পারেন। ফাঁদে আটকা পড়ে যায় একদিন কুকুরটা, একা ওটাকে মুক্ত করতে পারছিল না মেয়েটি। সাহায্য করেছিলাম আমি, এই পর্যন্ত।
পোয়ারোর কানে এ সুরটাও নতুন ঠেকল। আমি সাহায্য করেছিলাম, একটু যেন গর্বের ছোঁয়া কথাটায়। মিসেস অলিভার আর মিস হেণ্ডারসনের মধ্যে যা কথাবার্তা হয়েছিল সেগুলো মনে করার চেষ্টা করলেন পোয়ারো। মৃদুস্বরে তিনি বললেন, আপনারা কথাও বলেছিলেন?
-হ্যাঁ। উনি বলেছিলেন অনেক কষ্ট স্বীকার করেছেন ওঁর মা। উনি খুব ভালোবাসেন মাকে।