গম্ভীর সুরে স্পেন্স বললেন, ভালো কথা। ভালো খবর একটাই যে পুরো তদন্ত ভালোভাবে না মিটলে, বেন্টলীর শাস্তির কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা একটা চিঠিও দিয়েছি মন্ত্রীকে। উত্তরে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় সময় আমাদের তিনি দিয়েছেন।
–আমার মনে হয় একবার বেন্টলীর সঙ্গে দেখা করা দরকার, বিশেষত যখন আমরা কিছুটা এগিয়েছি। পোয়ারো বললেন।
.
বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয়নি জেমস বেন্টলীর। অবশ্য শরীর আগের চেয়ে খারাপই হয়েছে একটু রোগা। হাত নাড়ার ভঙ্গি দেখে মনে হয় সে কিছুটা অশান্ত। এছাড়া মোটামুটি আগের মতই চুপচাপ নিরাশ।
খুব সাবধানে পোয়ারো কথাবার্তা শুরু করলেন।
-নতুন করে তদন্তের একটা দিক শুরু হয়েছে। আশা জেগেছে যে…..
কোনো আশাই নেই বেন্টলীর মনে। সে বলল, কোনো লাভ নেই। আর নতুন করে কিই বা তদন্ত হবে।
-আপনার বন্ধুরা কিন্তু খুব আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
–আমার বন্ধুরা, কোনো বন্ধু নেই আমার। কাঁধ ঝাঁকালো বেন্টলী।
–এ আপনি বলতে পারেন না। অন্তত দুজন শুভাকাঙ্খী বন্ধু আছে আপনার।
–দুজন বন্ধু? জানতে ইচ্ছা করছে আমার তারা কে? অবিশ্বাসের সুর বেন্টলীর গলায়।
–প্রথম, সুপারিন্টেন্টে স্পেন্স।
–স্পেন্স? আমার বিরুদ্ধে যে পুলিশ সুপার মামলা সাজিয়েছেন? আপনি হাসালেন।
–না আপনার সৌভাগ্য। যথার্থ বুদ্ধিমান স্পেন্স এবং ন্যায়পরায়ণ। সব ব্যাপারেই উনি সন্দেহমুক্ত হতে চান।
–তা উনি তো নিঃসন্দেহ আমার অপরাধের ব্যাপারে।
–না–সেটাই আশ্চর্য যে নিঃসন্দেহ নন উনি। সেজন্যই তো বলছি আপনার বন্ধু উনি।
ওঃ, সেইরকম বন্ধু, পরবর্তী প্রশ্নের অপেক্ষায় পোয়ারো চুপ করে রইলেন। তিনি জানেন। যে, সাধারণ মানুষের মত বেন্টলীরও কৌতূহল থাকবে। ঠিক হল তার অনুমান।
জিজ্ঞেস করল বেন্টলী, আর অন্য জন?
–মড উইলিয়ামস।
বেন্টলীর মুখে কোনো রেখাপাত হল না। নিস্পৃহভাবে সে বলল, তিনি আবার কে?
–উনি, বিদ্রার অ্যাণ্ড স্কাটল এর অফিসে কাজ করেন।
–ওঃ, সেই মিস উইলিয়ামস?
–হ্যাঁ, তিনিই। কিন্তু এ ব্যাপারে তার মাথা ঘামানোর কি প্রয়োজন?
এমন এক একটা সময় আসে যে, পোয়ারোরও বিরক্তি ধরে যায় বেন্টলীর এই অনাবশ্যক নিরসক্তিতে। তখন তাঁর সত্যি সত্যিই মনে হয় এরকম চরিত্রের ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলেই খুশি হতেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, বেন্টলী যতই তাকে রাগিয়ে দেয় তার ব্যবহারে, ততই বেন্টলীকে তার অপরাধী ভাবতে কোথায় যেন দ্বিধা জাগে, মিঃ স্পেন্সের মত। তার মনে হতে থাকে যে কাউকে হত্যা করার ব্যাপারে বেন্টলীর মত মানুষ নিতান্তই নিরাসক্ত। আর, কাউকে হত্যা করতে চাইলেও সেরকম ক্ষমতা বেন্টলীর আছে বলেও তো মনে হয় না। যা বলেছেন স্পেন্স তাতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে যে অন্যতম গুণ তৎপরতা তা একেবারেই বেন্টলীর নেই।
পোয়ারো ফিরে এলেন পুরনো কথায়, পূর্ণ তদন্তের ব্যাপারে মিস উইলিয়ামস খুব উৎসাহী। উনি স্থির নিশ্চিত যে আপনি নির্দোষ।
-আমি তো ভেবে পাচ্ছি না একথা উনি কি করে ধরে নেন?
–কারণ আপনাকে উনি যথেষ্ট জানেন।
চোখ পিটপিট করল বেন্টলী। তারপর একগুঁয়ে ভাবে বলল। হ্যাঁ, হয়ত কিছুটা জানেন। কিন্তু সবটা নয়।
একই অফিসে আপনারা কাজ করতেন, তাই নয় কি? একসঙ্গে কখনো কখনো খেতেও যেতেন।
–ও হা। সে মাত্র একবার কি দুবার। ব্লু-ক্যাট কাফেতে ওই রাস্তাটা পেরোলেই।
–ওর সঙ্গে কি কখনো বেড়াতে যাননি?
–আমরা একসঙ্গে হেঁটেছিলাম একদিন, খানিকক্ষণ।
চেঁচিয়ে উঠলেন পোয়ারো, আপনি মশাই কি? কোনো মহিলার সাথে মিশে কি কোনো অপরাধ করেছেন আপনি নাকি সে সব কথা আপনার পেট থেকে টেনে বার করতে হবে? এটাই তো আপনার বয়সে স্বাভাবিক। আপনার এসব ভালো লাগে না?
–তা কেনই বা লাগতে যাবে?
–কি বলছেন যা তা। এই সবই তো করে আপনার বয়সের ছেলেমেয়েরা।
–বেশি মেয়েকে আমি চিনি না।
–সে কথা হচ্ছে না। কিন্তু আপনার লজ্জিত হওয়া উচিত। মিস উইলিয়ামসকে আপনি চেনেন, ওঁর সহকর্মী ছিলেন, কথা বলতেন ওঁর সঙ্গে, বেড়াতেও গিয়েছিলেন একবার। ওঁর কথা এসব সত্ত্বেও আমি যখন আপনাকে বললাম, আপনি কিন্তু ওঁকে চিনতেও পারলেন না। এবার লজ্জায় লাল হল বেন্টলী।
–মঁসিয়ে পোয়ারো দেখুন, মেয়েদের সঙ্গে ওভাবে কোনোদিনই আমি মিশিনি। রীতিমাফিক অভিজাত মহিলা বলতে যা বোঝায়, ঠিক তাই ছিলেন মিস উইলিয়ামস। উনি এমনিতে খুব ভালো সত্যি আমার মনে হয় আমার মায়ের বিচারে উনি খুবই সাধারণ মেয়ের পর্যায়ে পড়তেন।
–ওঁর সঙ্গে মেলামেশা না করার এটাই কি একমাত্র কারণ? আবারও লাল হল বেন্টলী।
— ওঁর চুল, পোশাক কিছুই নয় আমার মায়ের মত। মা খুব সেকেলে ধাঁচের মহিলা।….
বেন্টলী চুপ করে গেল। জিজ্ঞাসা করলেন পোয়ারো, খুব সহানুভূতিশীল মহিলা মিস উইলিয়ামস। তাই না?
হ্যাঁ, খুব দয়ালু উনি কিন্তু…. অবুঝ একেবারে। বুঝতে চান না সব কথা। খুব ছেলে বেলায় অবশ্য ওঁর মা মারা গেছেন বলে শুনেছি।
–তারপর, চাকরিটি খোয়া যায় আপনার। অন্য চাকরি পাচ্ছিলেন না। ব্রডহিনিতে মিস উইলিয়ামসের সঙ্গে সম্ভবত দেখা হয় আপনার?
হতাশাগ্রস্ত দেখালো বেন্টলীকে।
-ওখানে উনি বৈষয়িক কাজে এসেছিলেন। সে কথা আমায় একটা চিঠিতে জানান। ওঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। কিন্তু কেন, অনেক ভেবে তার কোনো কারণ আমি খুঁজে পাইনি। ওঁকে আমি বিশেষ ভালোভাবে জানতামও না।