–আপনার কি ব্যাপারে গণ্ডগোল হতে পারে বলে মনে হয়েছিল?
–আমার মনে হয়েছিল হয়ত উনি শেষ পর্যন্ত থিয়েটারেই চলে গেছেন রবিনদের সঙ্গে।
–আপনাকেই না জানিয়েই?
–অবশ্য সেটা একটু অদ্ভুত। আর কোনো ধারণা হয়নি আপনার?
—আমি পরে ভেবেছিলাম যে ফ্রিডাই হয়ত আসল খবরটা গোলমাল করে ফেলেছিল। ওর তাড়াতাড়ি কাল রাতে ছুটি পাবার কথা থাকায় ও বোধহয় নিজে খুব উত্তেজিত ছিল।
-আপনি তারপর কি করলেন?
চলে এলাম।
–সোজা বাড়ি?
–না। হাঁটলাম একটুক্ষণ। কাল বেশ চমৎকার ছিল আবহাওয়া।
দু-একমুহূর্ত স্পেন্স চুপ করে থাকলেন। উনি মেয়েটির ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তা লক্ষ্য করলেন পোয়ারো। একটুক্ষণ বাদে উঠে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, মিস হেণ্ডারসন ধন্যবাদ। একথা আপনি আমাদের জানিয়ে ভালো করেছেন। আপনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
ডীডারের করমর্দন করলেন তিনি।
ডীডার বলল, আমার আসাই উচিত আমি ভেবেছিলাম। অবশ্য মা চাননি যে আমি আসি।
-তাই বুঝি?
–ঠিকই বলেছেন আপনি। মিস হেণ্ডারসনকে বিদায় জানালেন স্পেন্স। তিনি ফিরে এসে পোয়ারোর দিকে টেবিল চাপড়িয়ে তাকালেন।
–মঁসিয়ে পোয়ারো, কোনো লিপষ্টিক ছিল না ঠোঁটে। কিংবা আজ সকালে হয়ত মেয়েটি লিপষ্টিক ব্যবহারই করেনি।
-না না, আজ সকালে বলে নয়, ও কোনোদিনই ব্যবহার করে না।
–আজকালকার মেয়েদের পক্ষে এটা একটু অস্বাভাবিক, কি বলেন?
–আসলে একটু অদ্ভুত মেয়েটি, বলতে পারেন অপরিণতও।
–এবং কোনো সুগন্ধিও ব্যবহার করেননি, অন্তত টের পায়নি তো আমার নাক, কিন্তু মিসেস অলিভার বলেছিলেন একটা সেন্টের গন্ধ তিনি পেয়েছিলেন, ও বাড়িতে কাল রাত্রে দামী সেন্ট। সেকথাও রবিনও সমর্থন করেছে। সে বলেছে ওটা তার মায়ের ব্যবহৃত সেন্টের গন্ধ নয়।
–সেন্ট ব্যবহার করে না বলেই তো মনে হয় এ মেয়েটি।
–ঠিক তাই আমার মতও। দেখলেই মনে হয় সাবেকী চাল চলনের কোনো স্কুলে হকির খেলার ক্যাপ্টেন কিন্তু বোধহয় বয়স ত্রিশ ছুঁই ছুঁই, কি বলেন?
–হ্যাঁ, তা হবে। কিন্তু সে অনুপাতে পরিণত নয়।
চিন্তা করলেন পোয়ারো এটা কিন্তু বলা যায় না এত সহজেই।
ভুরু কুঁচকে গেল স্পেন্সের। ঠিক কিন্তু মিলছে না। সেন্ট নেই, লিপস্টিক নেই এবং যথেষ্ট বুদ্ধিমতী মেয়েটির মা। মদ্যপ ছিল লিলির মা এবং মাত্র লিলির ন বছর বয়সেই সে জড়িত নানান ঝামেলায়। এই মেয়েটি সেক্ষেত্রে কি করেই বা লিলি হয়। আবার মিসেস আপওয়ার্ড একে কাল রাত্রে টেলিফোনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, মোটেও ব্যাপারটা সোজা নয়।
কি বলছে ডাক্তারের সাক্ষ্য, সেখানেও বিশেষ কোন সাহায্য পাচ্ছি না। ভদ্রমহিলা মারা যান মোটামুটি আন্দাজ সাড়ে নটা হবে তা সব ডাক্তারই বলছে।
মিস হেণ্ডারসন আসার ঠিক আগেই মারা যান উনি, তাহলে এমনও হতে পারে, হতে পারে অবশ্য যদি সত্যি কথা বলে থাকে মেয়েটি। হয় সে বলছে সত্যি কথা, নয় গভীর জলের মাছ সে, ওকে ওর মা আসতে দিতে চাইছিলেন না। আপনার কি মত সেই ব্যাপারে?
–ঠিক বলা যাচ্ছে না। মা-টি মেয়েকে আসতে নাও দিতে চাইতে পারেন। অকারণ ঝামেলা তিনি অপছন্দ করেন।
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন স্পেন্স। তার মানে আমরা অকুস্থলে মিস হেণ্ডারসনকে পাচ্ছি, অথবা এমন একজনকে যে, মিস হেণ্ডারসন আসার আগে ওখানে যায়, একজন মহিলা। একজন মহিলা যিনি ব্যবহার করেন লিপষ্টিক আর দামী সেন্ট। নিশ্চয়ই আপনি তদন্ত করবেন? স্পেন্স পোয়ারোকে বললেন, তদন্ত করছি আমি, এই মুহূর্তে অত্যন্ত সতর্কভাবে। ইভ কার্পেন্টার কাল রাতে কি করছিলেন? গত রাত্রে শেলা রেগুল কোথায় ছিলেন? ওরা নাকি বাড়িতেই ছিলেন মিঃ কার্পেন্টার, অবশ্য যতদূর জানি আমি, একটা রাজনৈতিক সভায় ব্যস্ত ছিলেন।
চিন্তান্বিত গলায় পোয়ারো বললেন, ইভ। তাড়াতাড়ি কি নামের ফ্যাশান বদলায়। আজকাল ইভা নামটা শোনাই যায় না, না? এটা হয়ে গেছে সেকেলে নাম। বরং ইভ নামটা অনেক বেশি আধুনিক।
নিজের চিন্তায় কিন্তু স্পেন্স অটল। বেশ দামী সেন্ট উনি ব্যবহার করতে পারেন। ওঁর সে সঙ্গতি আছে।
আমাদের আরও কিছু জানা দরকার এই মহিলাটির অতীত সম্বন্ধে। কারণ যুদ্ধের সময় থেকে বিধবা এরকম সাজা খুব সাধারণ ব্যাপার। একজন দুঃখী বিধবা সেজে যেখানে সেখানে আপনি সহানুভূতি পেতে পারেন। কেউ কিছু জানতে চাইবে না।
চিনি গুঁড়ো করার হাতুড়ি, আপনি সেটা অস্ত্র সন্দেহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন আমাদের কাছে, আমরাও সন্দেহ করছি ওটাই মিসেস ম্যাগিনটির হত্যার জন্য দায়ী। ডাক্তার বলছেন, এ ধরনের আঘাত করার জন্য খুবই সুবিধাজনক ওটা। ওতে আছে রক্তের দাগও। যদিও ওটা এখন পরিষ্কার করার পর আমাদের হাতে এসেছে তবুও সাধারণ লোক বোঝেই না যে কত সূক্ষ্ম জিনিসও অনুবীক্ষণ যন্ত্রে সহজেই ধরা পড়ে। যা পাওয়া গেছে ওতে তা মানুষেরই রক্ত। আবারও বোধহয় ঘটনায় ওয়েদারবিদের আর ডীডারকে জড়িয়ে ফেলা হল, তাই না?
মিস হেণ্ডারসন কিন্তু জোর দিয়েই বলেছেন যে, ওটাকে ফসল কাটা উৎসব উপলক্ষ্যে একজিবিশনে দেওয়া হয়েছিল বিক্রির জন্য।
–এবং মিসেস সামারহেসও আবার নিশ্চিত যে, বড়দিনের একজিবিশনে ওটা ছিল। কোনোদিনই মিসেস সামারহেস কোনো ব্যাপারে নিশ্চিত নন। উনি খুব ভালো কিন্তু কোনো বাঁধুনী নেই কাজকর্মে। তবে আমি আপনাকে এটুকু বলতে পারি–আমি লং মিডোস-এ এতদিন আছি, সর্বদাই দরজা, জানলা ও বাড়ি হাট করে ভোলা থাকে। ইচ্ছে করলে যে কেউ কোনো সময়ে ঢুকে যে কোনো জিনিস ওখান থেকে নিয়ে যেতে পারে আবার পরে এসে তা রেখে দিলে লক্ষ্যও করবে না বাড়ির লোক। ধরুন যদি একদিন মহিলা ঐ যন্ত্রটাই না দেখতে পান, ভাববেন স্বামী ওটা খরগোস মারতে বা মাঠ কাটতে নিয়েছেন। আর যদি ওটা দেখতে না পান, স্বামী তবে ভাববেন কুকুরদের জন্য মাংস কাটবেন বলে ওটা নিয়েছেন স্ত্রী। যে যার খুশিমত জিনিস নেয় ও বাড়িতে, কাজ হয়ে গেলে যেখানে খুশি রাখে। কেউ কিছু মনে রাখতে পর্যন্ত পারে না। ও বাড়ির বাসিন্দা হতে হলে আমার তো মশাই মাথা খারাপ হয়ে যেত। ওরা কিন্তু কিছু পরোয়াই করেন না এ সবের।