–এ বিষয়ে তার মানে খুনীর জ্ঞান আছে।
হতে পারে। আবার এটা জানা একান্ত প্রয়োজনীয় নয় কাজ হাসিল করার জন্য। এভাবে যদি আক্রমণ করাই উদ্দেশ্য হয়, দু-চারটে বই পড়েই তা জানা যাবে। বিশেষত সেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি অসন্দিগ্ধ এবং সেজন্য যথেষ্ট অসতর্ক থাকে আর এক্ষেত্রে ভদ্রমহিলাটি তাই-ই ছিলেন।
ঘাড় নেড়ে পোয়ারো সমর্থন জানালেন। হা–ওঁর পরিচিত কেউ।
–একঘরে ওরা দুজন কফি পান করেন–দুটো কাপ ছিল ওঁর আর অতিথিটির জন্য। সব চিহ্ন রয়ে গিয়েছে এখনো।
–তাহলে একজন মহিলা?
–আপনি তো একজন মহিলার কথাই ভাবছেন?
–ও হা, তাই তো পাচ্ছি দেখছি।
স্পেন্স বললেন, মিসেস আপওয়ার্ড চারখানা ছবির যে একটিকে সনাক্ত করেন তা লিলি গ্যাম্বলের ছবি। সুতরাং এটা ম্যাগিনটি হত্যারই পরবর্তী অধ্যায়।
–ঠিক। একসূত্রে গাথা দুটোই। মনে পড়ে গেল পোয়ারোর মিসেস আপওয়ার্ডের কৌতুকময় হাসিমাখা মুখ, ছড়া কেটে তিনি যখন বলেছিলেন
মিসেস ম্যাগিনটি অক্কা পেলেন। কেমনে তো জানি, হাঁটু ভেঙে, ঘাড় মটকে যেমনি আছি আমি।
মিঃ স্পেন্স বললেন, একটা সুযোগ নিয়েছিলেন ভদ্রমহিলা, ওঁর ছেলে আর মিসেস অলিভারকে পাঠিয়ে দিয়ে থিয়েটারে। সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা মহিলাটিকে উনি ফোন করে ডাকেন ওঁর সাথে দেখা করার জন্য। মিঃ পোয়ারো ব্যাপারটাকে কি আপনি অনুধাবন করতে পারছেন? নিজেই উনি গোয়েন্দা সাজতে গিয়েছিলেন–
-হ্যাঁ, ওইরকমই কিছু। নিজে যা জানতেন উনি, তা গোপন রেখেছিলেন এবং উনি আরও বেশি জানতে চেয়েছিলেন। স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি যে উনি যা করতে চলেছেন, সেটা ডেকে আনতে পারে ভয়ংকর বিপদ। সকলে খুনটুনগুলো এত খেলার ছলে দেখে যে, কি বলব। আদপেই যে এটা খেলা নয়–এ কথা আমি ওঁকে বলেছিলাম। উনি শুনলেন না। পোয়ারো দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
-না, ঠিকই বলেছেন আপনি। তা আমরাও বলেছি, যাই হোক, স্পষ্ট ব্যাপারটা। যখন মিসেস অলিভারের সঙ্গে রবিন রওনা হয়েও আবার ফিরে দেখতে আসেন মাকে তখন ওঁর মা সবেমাত্র টেলিফোন করা শেষ করেছেন। তিনি বলেননি ফোন করেছিলেন কাকে। উনি সেটা রহস্য হিসেবেই রাখতে চেয়েছিলেন। রবিন আর মিসেস অলিভার তো ভেবেছিলেন ব্যক্তিটি আপনি।
-তাই হলে তো ভালোই হত। তাহলে কোনো ধারণাই নেই আপনাদের কাকে ফোনটা করা হয়েছিল?
–নাঃ। সবই স্বয়ংক্রিয় ব্যাপার এখানে, আপনি তো তা জানেন।
–পরিচারিকাটিও সাহায্য করতে পারবে না?
–না। সে প্রায় সাড়ে দশটার সময় ফিরে আসে। তার কাছে একটা খিড়কির দরজার চাবি ছিল। এসে সোজা সে নিজের ঘরে চলে যায় এবং শুয়ে পড়ে। সে বাড়ি অন্ধকার থাকায় ধরেই নেয় যে ঘুমিয়ে পড়েছেন মিসেস আপওয়ার্ড। এবং তখনো অন্যরা ফেরেনি।
আরও যোগ করলেন স্পেন্স, কানে আবার সে কম শোনে আর কি ঘটছে না ঘটছে সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। আমার তো ধারণা, যতটা সম্ভব ও মেয়েটি বেশি কথা বলে, ততটা সম্ভব কম কাজ করার ধান্দা করে।
–তার মানে ও তেমন বিশ্বাসী না?
–ওহ, তা নয়। ও তো মোটে দু বছর মিসেস আপওয়ার্ডের কাছে আছে।
দরজায় উঁকি দিয়ে একজন কনস্টেবল বলল, স্যার আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন একজন অল্পবয়সী মহিলা। বলছেন, কাল রাত্রের ঘটনা সম্বন্ধে উনি নাকি আপনাদের কিছু বলবেন। জরুরী ব্যাপারটা।
কাল রাত্রের ব্যাপারে? ভেতরে পাঠিয়ে দাও ওকে।
ডীডার হেণ্ডারসন এল। কেমন ফ্যাকাসে এবং সেই সাথে ওকে যথরীতি একটু অদ্ভুত দেখাচ্ছিল।
সে বলল, আমার মনে হয় আমার আসাটা একান্তই দরকার। আমি নিশ্চয়ই আপনাদের বিরক্ত করছি না?
–না মিস হেণ্ডারসন, একেবারেই না।
উঠে দাঁড়িয়ে মিঃ স্পেন্স চেয়ার এগিয়ে দিলেন। ডীডার স্কুলের বাচ্চা মেয়ের মত চেয়ারে বসলে বেশ উৎসাহ ভরে স্পেন্স বললেন, কাল রাত্রের ব্যাপারে তো? মিসেস আপওয়ার্ড তাই না?
–হ্যাঁ। এটা তো সত্যি যে খুন হয়েছেন উনি? পিওন, রুটিওয়ালা সে কথা সবাই বলছে। অবশ্য মা বলছেন সবটাই গুজব, সত্যি হতে পারে না কখনো…
থেমে গেল ডীডার। এটা আপনার মা সঠিক বলেননি। সত্যি ঘটনাটা। তাহলে আপনি আমাদের কিছু বলতে চান?
-হ্যাঁ। মানে ওখানে যে আমি গিয়েছিলাম।
কিঞ্চিৎ সরকারী অফিসারের সুর স্পেন্সের আচরণে।
-কি, ওখানে আপনি গিয়েছিলেন? ল্যাবারনাম-এ কটার সময়?
-দেখুন সঠিক আমি বলতে পারব না। আমার ধারণা সাড়ে আটটা থেকে নটার মধ্যে হবে। সম্ভবত নটার কাছাকাছি। মোটমাট খাওয়া দাওয়ার পর। আমাকে উনি ফোন করেছিলেন কিনা।
–আপনাকে মিসেস আপওয়ার্ড টেলিফোন করেছিলেন?
–হ্যাঁ। উনি বলেন যে রবিন আর মিসেস অলিভার কালেনকোয়েত-এ যাচ্ছেন থিয়েটারে। একলাই থাকবেন উনি, আমি যদি গিয়ে ওঁর সঙ্গে কফি পান করি…. মানে একটু সঙ্গ দিই আর কি।
–এবং তাই আপনি সেখানে যান?
–হ্যাঁ।
–এবং কফিও পান করেন ওঁর সঙ্গে বসে?
ডীডার বলল, না। ওখানে যাই আমি। ধাক্কা দিই দরজায় কিন্তু কোনো সাড়া পাই না। আমি তখন নিজেই দরজা খুলে হলঘরের মধ্যেই যাই। বড় অন্ধকার ছিল ঘরটা। আর বুঝতেই পারছিলাম না যে, একটুও আলো নেই কেন বসার ঘরে। হতভম্ব হয়ে যাই একেবারে। মিসেস আপওয়ার্ডকে দু-একবার ডেকেও ছিলাম। ভাবলাম সাড়া না পেয়ে হয়ত আমারই কোথাও কোনো গণ্ডগোল হয়েছে।