-খুব ভালো। একটা কথা মনে রাখবেন যে, একজন সুস্থ মস্তিষ্কের খুনী এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে নিরাপদে। কাজেই সাবধান।
–সতর্ক করে দিচ্ছেন আমাকে?
–ঠিক তাই।
–আত্মরক্ষায় আমি সমর্থ।
–তা ঐ টেলিগ্রাম পাঠানো দেখেই বোঝা যায়।
হেসে উঠল মড। প্রশংসার দৃষ্টিতে পোয়ারো এই মেয়েটিকে দেখতে লাগলেন। বিপজ্জনক কাজে ঝুঁকি নেবার মত মেয়েটির যথেষ্ট সাহস আছে।
-কাজটা আমাকে আপনি করতে দিয়েও কিন্তু ভয় দেখাচ্ছেন আবার।
–না, তবে চোখ কান খুলে সব বিষয়ে সতর্ক থাকাই ভালো।
–আমার তো মনে হয় না এটা খুব বিপজ্জনক কাজ।
–অবশ্য এখন পর্যন্ত আমারও মনে হয় না তা, ব্রডহিনিতে আপনি অপরিচিতা তো?
–তাই তো মনে করি আমি।
–আগে কখনো ওখানে গেছেন?
–দু-একবার অফিসের কাজে যেতে হয়েছিল। মাস পাঁচেক আগে।
–কাকে কাকে দেখেছেন? উঠেছিলেন কোথায়?
কারস্টেয়ার্স কিংবা কার্লাইল এ রকম নামের বৃদ্ধা মহিলা সম্পত্তি কেনার ব্যাপারে ডেকেছিলেন। গেস্ট হাউসে উনি উঠেছিলেন।
–লং মিডোস-এ?
-হা হা। বিশ্রী বাড়িটা একগাদা কুকুর। এখন যেখানে আছেন আপনি তার কাছাকাছিই হবে।
মাথা নাড়লেন পোয়ারো। আপনি কি মিসেস বা মেজর সামারহেসকে দেখেছিলেন?
–হ্যাঁ, মিসেস সামারহেসকে। আমাকে শোবার ঘরে উনিই নিয়ে যান। আবার বিছানায় একটা বেড়াল বসে ছিল।
-উনি কি আপনাকে দেখলে চিনতে পারবেন?
–মনে হয় না। আর পারলেই বা কি? লোকে তো চাকরি বদলায়। তবে আমার মনে হয় না আমাকে সেদিন উনি তেমন লক্ষ্য করেছেন। গলার স্বরে মডের তিক্ততা।
–ব্রডহিনিতে আর কারও সঙ্গে দেখা করেছিলেন?
–হ্যাঁ, মিঃ বেন্টলীর সঙ্গে। দেখা হয়ে যায় ঘটনাচক্রে।
না, ঠিক তা নয়, একটা চিঠিতে ওঁকে জানাই যে ওখানে আমি যাচ্ছি, উনি দেখা করতে পারবেন কি না। আমরা কোনো রেস্তোরাঁ বা সিনেমাতে যাইনি। শুধু ফেরার পথে যখন বাসস্টপে অপেক্ষা করছিলাম বাসের জন্য, দুজনের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছিল খানিকক্ষণ।
–সেটা কি মিসেস ম্যাগিনটির মৃত্যুর আগে?
–হ্যাঁ, তবে খুব বেশিদিন আগে নয়।
–বেন্টলী কি ভদ্রমহিলা সম্বন্ধে কিছু বলেছিলেন?
–না।
–আপনি সেদিন আর কারও সঙ্গে কথা বলেননি?
রেডিওতে রবিন আপওয়ার্ডের গলার স্বর শোনা যাচ্ছিল। সেখানে ওঁর সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়াতে ওঁর অটোগ্রাফ নিয়েছিলাম।
-উনি দিলেন?
-হ্যাঁ, তবে আমার কাছে কোনো নোটবই না থাকায় একটা যেমন তেমন কাগজে সই করে দেন।
–আর কারও মুখ চেনেন ওখানকার?
-হ্যাঁ, কার্পেন্টারদের। ওঁরা কিচেষ্টারে প্রায়ই আসেন। ওদের গাড়িটা খুব সুন্দর আর ভদ্রমহিলার পোশাকও। বোধহয় লোকসভার ভাবী সদস্য ভদ্রলোক।
–হ্যাঁ।
এবার পকেট থেকে পোয়ারো কতকগুলো ফটো বের করে টেবিলে রাখলেন।
–এদের মধ্যে চিনতে পারেন কাউকে? কি হল?
হঠাৎ যেন মডের মধ্যে একটু সচকিত ভাব দেখলেন তিনি।
-ভদ্রলোক, এইমাত্র যিনি বেরিয়ে গেলেন, ইনি মিঃ স্কাটল। দেখতে পাননি আমাকে। আমাকে এখানে আপনার সাথে দেখলে একটু অদ্ভুত হত ব্যাপারটা। জানেন তো, খুব আলোচনা হয় আপনাকে নিয়ে। আপনি নাকি ফরাসী?
-না, বেলজিয়ান। অবশ্য তাতে কিছু এসে যায় না। এখন বলুন আপনার কি মনে হয়। ফটোগুলো দেখে?
-খুব পুরনো ধাঁচের। সবচেয়ে পুরনোটা ত্রিশ বছর আগেকার।
ভীষণ বোকা বোকা, পুরনো আমলের পোশাক। এই পোশাকে ভদ্রমহিলাদের বিশ্রী দেখাচ্ছে।
–এদের কাউকে দেখেছেন আপনি?
সনাক্ত করতে বলছেন এদের, না এদের ছবি আর কোথাও দেখেছি কিনা জানতে চাইছেন?
–দুটোই।
–মনে হয় কোথাও দেখেছি এই ছবিটা (মডের হাতটা জেনিস কোর্টল্যাণ্ডের ছবির ওপর ন্যস্ত হল)। কোনো কাগজে বোধহয়। ঠিক মনে করতে পারছি না। একটু চেনা-চেনা লাগছে এই বাচ্চাটার ছবিও। কিন্তু কোথায় যে দেখেছি।
-এইসব ফটোগুলোই মিসেস ম্যাগিনটি মারা যাবার ঠিক আগের রবিবার সানডে কম্প্যানিয়ন এ ছাপা হয়েছিল।
তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে মতো পোয়ারোর দিকে তাকাল। এই ফটোগুলোর সংগে ঘটনাটার কোনো সম্পর্ক আছে ভাবছেন? আর সেজন্যই আপনি আমায়….
-হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, পোয়ারো এই বলে পকেট থেকে সানডে ক্যানিয়ন কাগজের কাটিংটা পড়তে দিলেন মডকে।
মড পড়া শেষ করে বলল, তাহলে এইসব মহিলাদের ছবি ওগুলো। আর আপনার ওরকম ধারণা তা দেখেই? কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। (সাগ্রহে পোয়ারো মডের দিকে তাকালেন) ….আপনি অনুমান করছেন যে, এদের মধ্যে এক বা একাধিকজন ব্রডহিনিতে আছে এখন?
হয়ত।
-হ্যাঁ। এদের যে কেউ যেখানে খুশি এখন থাকতে পারে। এই ইভা কেনের ছবিটা দেখে মনে হয় তার বয়স এখন মিসেস আপওয়ার্ডের বয়সের সাথে মিলতে পারে।
–প্রায়।
–কিন্তু এ রকম চেহারা বা বয়স তো অনেকেরই হতে পারে।
–তা পারে। আচ্ছা, ক্রেগ মামলার কথা আপনি মনে করতে পারেন?
–পারি। আমি তখন খুবই ছোট ছিলাম। ওই মামলার সঙ্গে অন্যান্য মামলার তুলনা করা হত। আমার তো মনে হয় না এই মামলার কথা কখনো কেউ ভুলবে।
মাথা তুললেন পোয়ারো। তিনি বুঝতে পারলেন না মডের কণ্ঠস্বরে এত তিক্ততা হঠাৎ এল কেন?
.
১৭.
মিসেস অলিভার বুঝে উঠতে পারছিলেন না ঠিক কি করবেন। তরুণ অভিনেতারা ড্রেসিংরুমে মেকআপ তুলতে ব্যস্ত। তাকে সবাই স্বাগত জানাচ্ছে আর খালি বীয়ারের গ্লাস খানিক পরই ভর্তি করে দিচ্ছে।