-কার বলুন তো?
–তা জানি না তবে লিখে রেখেছি নম্বরটা।
–খুব ভালো। খাবার ঘরে রাখা টেলিফোনের কাছে গিয়ে পোয়ারো নম্বরটা দেখলেন কিলচেস্টার ৩৫০। তিনি টেলিফোনের রিসিভার তুলে ডায়াল করলেন নাম্বারটা। ওপাশ থেকে সঙ্গে সঙ্গে ভেসে এল নারীকণ্ঠ, ব্রিদার অ্যাণ্ড স্কাটল।
চট করে পোয়ারো বললেন, মিস মড উইলিয়ামসের সঙ্গে কি আমি কথা বলতে পারি?
–মিস উইলিয়ামস বলছি।
–আমি এরকুল পোয়ারো। আমায় আপনি ফোন করেছিলেন?
–হ্যাঁ, আমিই। আপনি যে সম্পত্তিটার কথা বলেছিলেন সে সম্বন্ধেই কিছু বলতে চাই।
অবাক হলেন পোয়ারো কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারলেন অন্য লোক ঘরে আছে বলে মডের অসুবিধে আছে খোলাখুলি কথা বলতে।
–বুঝেছি। বেন্টলী ও মিসেস ম্যাগিনটির ব্যাপারে আপনি সাহায্য করতে চান।
–হ্যাঁ। কি করব আমি?
-বেন্টলীর জন্য আপনি আমাকে সাহায্য করতে চান এবং আপনি যেখানে আছেন, তা ওই কাজের পক্ষে নিরাপদ নয়, এই তো?
-হ্যাঁ।
–বুঝেছি। শুনুন সত্যিই আপনি সাহায্য করতে ইচ্ছুক?
–নিশ্চয়ই।
–এই চাকরিটা যদি ছাড়তে হয়?
–তা হলেও।
–গৃহস্থালীর কাজকর্ম কি করবেন আপনি?
–আপত্তি নেই।
–চাকরি এখনি ছেড়ে দিতে পারবেন? আগামী কালই?
–পারব।
–বুঝতে পারছেন কি যে, হয়ত রান্নাও করতে হবে আপনাকে? আপনি রান্না করতে জানেন?
-জানি খুব ভালোই।
–শুনুন তা হলে। আমি এখুনি কিচেষ্টার যাচ্ছি। আপনার সঙ্গে সেই রেস্তোরাঁতেই দেখা করব, অবশ্যই মধ্যাহ্নভোজনের সময়।
-আচ্ছা।
পোয়ারো ফোন নামিয়ে রেখে মনে মনে মড়কে সাধুবাদ দিলেন। তিনি তারপর মিসেস ওয়েদারবিকে ফোন করলেন।
–হ্যালো, মঁসিয়ে পোয়ারো কথা বলছি। চিনতে পারছেন?
–ঠিক বুঝতে পারছি না….
–আমি এরকুল পোয়ারো।
-হা হা, বুঝেছি। চিনতে পারিনি আগে তাই ক্ষমা করবেন। বাড়ির অবস্থা যে কি তা বলে বোঝাতে পারব না আপনাকে। ঝামেলা চলছে খুব।
–তা আমি জানি। ফোন করছি সেইজন্যই।
–এত অকৃতজ্ঞ হয় এইসব কাজের লোক। আমি অকৃতজ্ঞতা দু চক্ষে দেখতে পারি না।
–আপনাকে আমিও সমর্থন করি। আচ্ছা, আমার পরিচিত একটি মেয়ে এই ধরনের কাজ খুঁজছে। তবে হয়ত সে ট্রেনিং পায়নি। বলেন তো একবার দেখতে পারি।
–আজকাল ট্রেনিং-এ কিছু কাজ হয় না। যাকগে সে রাঁধতে জানে তো?
জানে। তাহলে কি ওকে আপনার কাছে পাঠাবো? মড উইলিয়ামস ওঁর নাম।
–পাঠিয়ে দিন দয়া করে। আপনি যে আমার কত উপকার করলেন। আমার স্বামী সব ব্যাপারে এত নিয়ম মেনে চলেন যে ডীডারকে তুচ্ছ কারণে বকুনি খেয়ে মরতে হচ্ছে।
হঠাৎ কথায় ছেদ পড়ল। বোধহয় ভদ্রমহিলার ঘরে কেউ ঢুকেছে। রিসিভারে হাত চাপা দিয়ে তার সঙ্গে উনি কথা বলতে লাগলেন। পোয়ারোর কানে অস্পষ্টভাবে কথাগুলো এল : ঐ মিঃ পোয়ারো ফোন করেছেন। উনি ফ্রিডার বদলী হিসেবে এখানে একজনকে কাজ দিতে পারেন। উনি কি সত্যি ভালো লোক। না না, আপত্তি কোরো না আর। আমার মনে হয় আমাদের কপাল ভালো, আর বিদেশী নয় মেয়েটি, ইংরেজ।
মিসেস ওয়েদারবি আবার অজস্র ধন্যবাদ জানালেন পোয়ারোকে।
পোয়ারো রান্নাঘরে ঢুকে মরিনকে বললেন, আমি দুপুরে খাওয়ার সময় থাকতে পারছি না, কিলচেষ্টার যেতে হচ্ছে আমায়।
-তাই বুঝি; যাক, ভালোই হয়েছে। সময়মত উনুন থেকে পুডিংটা নামাতে ভুলে গিয়েছিলাম। কি শক্ত হয়ে গেল। র্যাম্পাবেরীর বোতলটা ভেবেছিলাম খুলব। অবশ্য একটু ছাতা পড়ে গেছে তার ওপর, তবে খুব একটা খারাপ হবে না। বিশেষন পেনিসিলিন স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব উপকারী।
পোড়া পুডিং আর পেনিসিলিনের হাত থেকে দুপুরের খাওয়াটা বাঁচল দেখে পোয়ারো ধন্যবাদ দিলেন ভগবানকে। আজ রু ক্যাট এ ভালো জমবে খাওয়াটা, তিনি বাড়ি থেকে ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে এসে হাঁটতে লাগলেন।
.
ল্যাবারনাম এ রবিন আর মিসেস আপওয়ার্ডের মধ্যে কথা হচ্ছিল।
–রবিন, যখন নাটক নিয়ে তুমি মত্ত থাকো, তোমার অন্য কিছুই মনে থাকে না।
-মা, ভীষণ দুঃখিত আমি। ভুলেই গিয়েছিলাম আমি যে, আজ রাত্রে জ্যানেট বাড়ি থাকবে না।
-কিছু এসে যায় না তার থাকা না থাকাতে।
-হ্যাঁ, এসে যায়। বরং ফোন করে আমি জানিয়ে দিই আজ রাত্রে আমরা না গিয়ে আগামীকাল যাব।
-ও সব কিছু করতে যেও না। আজকে যাবার কথা, যাবে।
–কিন্তু।
–ব্যাস্ ঠিক আছে।
–জ্যানেটকে কি আমি বলব, আজকের বদলে কাল রাত্রে ছুটি নিতে?
–না, ও অপছন্দ করে ওর প্ল্যান ভেস্তে দেওয়াটা।
–মনে হয় আমি বললে ও কিছু মনে করবে না।
–কিছুই করতে হবে না তোমাকে। কিছু বোলো না জ্যানেটকে, আমি ভাবতে চাই না যে কাউকে অসুবিধেয় ফেলে আমার বার্ধক্য, …কিন্তু মা….
-ঠিক আছে। মিসেস অলিভারকে নিয়ে তুমি বেরিয়ে পড়। ঠিক করেছি পাড়ার কাউকে গল্প করতে ডেকে নেব আমার সঙ্গে।
কাকে?
–আমার নিজস্ব ব্যাপার সেটা। ব্যাস্ আর কিছু জানতে চেও না।
–শেলাকে আমি ফোন করি?
–ফোন করার কাউকে দরকার হলে আমিই করব। বরং তুমি কফি তৈরি করে রেখে যাও বেরোবার আগে। একটা বাড়তি কাপও রেখো সঙ্গে, যদি কাউকে ডাকি।
.
১৬.
পোয়ারো ব্লু-ক্যাট রেস্তোরাঁয় লাঞ্চে বসে মডকে তার পরবর্তী কাজ সম্বন্ধে বুঝিয়ে দিলেন বিস্তারিত।
-আপনি কি কি করতে হবে বুঝতে পারলেন তো?
–হা, মিঃ পোয়ারো।
–কোনো গোলমাল হবে না আপনার অফিসে?
–মামী খুব অসুস্থ আমার এই বলে অফিসে আমার নামে একটা টেলিগ্রাম নিজেই করে দিয়েছি আমি।