-কিন্তু কি হবে টাকাটার শুনি? খুনের ঘটনা ঘটে গেলেই যে আমার টাকাটা চাই?
–হ্যাঁ, সে ঠিক কথা। তবে এর থেকে বেশি আমি আর কি বলতে পারি? যাতে ভালোভাবে নাটক ওতরায় শুধু সেই চিন্তা রবিনের। অসন্তুষ্ট ভাবে সে মিসেস অলিভারের দিকে তাকাল।
মিসেস অলিভার সেদিন সকালবেলা খুব মনোযোগ দিয়ে চুলে কলপ লাগাচ্ছিলেন। উঁচু কপাল তাঁর, বিশাল চশমা এবং গম্ভীর ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিল রবিনের স্কুলের দিদিমণির কথা।
রবিন বলে উঠল, আমার কাজে মন লাগছে না। বরং ঠিক করে ফেলা যাক কাকে কোন চরিত্রে অভিনয় করতে দেওয়া যায়। ডেনিস ক্যালরিকে যদি পাওয়া যায়, ও আবার ব্যস্ত সিনেমা নিয়ে, আর তার সাথে জীন বেলিউসকে তাহলে ভালো হয় সবচেয়ে। আমরা আজ রাত্রে একবার সিসিলের সঙ্গে দেখা করব। কেমন মানাবে ওকে, ভালো করে একবার খেয়াল করে দেখবেন কিন্তু।
সম্মতি নিয়ে মিসেস অলিভারের টেলিফোনে রবিন সব বন্দোবস্ত করে রাখল।
.
সকালটা দেখে যেমন মনে হয়েছিল সারাদিন আবহাওয়া ভালোই যাবে। তা কার্যক্ষেত্রে হল না। আকাশ খানিক বাদেই মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে গেল। বৃষ্টি নামবে মনে হল।
লতা পাতার একগাদা ঝাড় সরিয়ে হান্টাস ক্লোস এ ঢুকতে ঢুকতে মনে হল পোয়ারোর, তার এরকম জায়গায় থাকা পোষায় না। বাড়ি ঘিরে গাছপালা, দেওয়াল থেকে আইভিলতা।
বাপরে বাপ। একটা গাছ কাটার কুঠার সঙ্গে থাকলে ভালো হয়। (কুঠার? চিনি গুঁড়োবার যন্ত্র?) ঐ ধারালো বাটালিটার কথা হঠাৎ মনে পড়ল তার।
ওয়েদরবিদের দরজায় এসে দাঁড়ালেন পোয়ারো। ডীডার বেল শুনে খুলে দিল দরজা।
–আপনি?
–হ্যাঁ, কথা বলতে পারি আপনার সঙ্গে?
নিশ্চয়ই। আসুন।
পোয়ারো বসার ঘরে প্রবেশ করলেন।
মরিনের কেনা কফির পটের মত হুবহু এক রকম কফি পট তাকের ওপর দেখতে পেলেন। এটা অবশ্য একটু বড়। প্রাচ্যদেশীয় আবহাওয়া ঘরের সর্বত্রই।
-একটু ব্যস্ত ছিলাম আমরা। ফ্রিডা, এখানে যে কাজ করত, চলে যাচ্ছে আজ। এক মাস ছিল মোটে। আমার মনে হয় ও যে কাজটা ছেড়ে অন্যত্র যাচ্ছে তার একমাত্র কারণ ও যাকে বিয়ে করবে সে থাকে সেখানে। ঠিকঠাক সব হয়ে যাওয়াতে ও আজই চলে যাচ্ছে।
–এ খুব অন্যায়।
–ঠিক বলেছেন। আমার সৎপিতাও তাই বলছেন। কিন্তু আমার মনে হয় ওর একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার এটা। আমাদের কিছু বলার নেই। ও জামাকাপড় গুছোবার সময় দেখে ফেলেছি আমি তাই। নইলে আমাদের না জানিয়েই ও চলে যেত। টেরও পেতাম না কেউ।
-ন্যায়সঙ্গত নয় কাজটা। তবে অত বিবেচনা থাকার কথা নয় এ বয়সে।
–হ্যাঁ। আমি আজ খুব ক্লান্ত।
–দেখে তাই মনে হচ্ছে বটে।
–কি জানতে চান আমার কাছে?
–চিনি গুঁড়ো করবার একটা হাতুড়ি সম্পর্কে।
–চিনি গুঁড়ো করার হাতুড়ি?
-পেতলের তৈরী। একটা পাখি বসানো হাতলে। গোটা জিনিসের গায়ে লাল নীল পাথর আছে।
–ও হা মনে পড়েছে। মিস হেণ্ডারসন নিরুৎসুক স্বরে বলল। বোধহয় ওটা এককালে এ বাড়িতেই ছিল?
–হ্যাঁ। ওটা বাগদাদ থেকে আমার মা কিনেছিলেন। ওটা পরে বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়া হয়।
–ওই ব্রিং অ্যাণ্ড বাই সেলে না?
–হ্যাঁ, ওটা বেশ সুবিধাজনক।
বড়দিনের আগে পর্যন্ত জিনিসটা এখানেই ছিল তাহলে?
–না। ওটা বিক্রি করা হয় ফসল কাটা উৎসবের সময়।
কবে হয় ঐ উৎসব? অক্টোবর না সেপ্টেম্বরে?
সেপ্টেম্বরের শেষে। মিস হেণ্ডারসনের দিকে তাকালেন। ডীডারও তার দিকে তাকিয়ে ছিল। মুখ তার নির্বিকার, ভাবলেশহীন।
মিস হেণ্ডারসন, আপনি কি নিশ্চিত যে ওটা সেপ্টেম্বরেই বিক্রি করা হয়, বড়দিনে নয়?
নিশ্চিত আমি। ডীডার স্থির নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইল।
পোয়ারো আরও কিছু শোনার আশায় ছিলেন। কিন্তু তার পূরণ হল না সে আশা।
–তাহলে এবার উঠি, মাদমোয়াজেল।
তাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এল ডীডার। যেতে যেতে পোয়ারো ভাবছিলেন কার কথা ঠিক? মরিনের না ভীডারের? অস্ত্রটা ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ পর্যন্ত কার জিম্মায় ছিল? বাইশে নভেম্বর খুন হন মিসেস ম্যাগিনটি
পোস্ট অফিসে গেলেন পোয়ারো। মিসেস সুইটিম্যান ছোটখাটো দরকারে তাঁকে চমৎকার সাহায্য করেন। উনি কিন্তু বর্ণনা শুনে অস্ত্রটির কথা মনে করতে পারলেন না। উনিও নিয়মিত ব্রিং অ্যাণ্ড বাই সেলে যান। তবে কফি পটের সাথে একটা কিছু ছিল তা মনে পড়ছে। বোধহয় দাম আন্দাজ পঁচিশ শিলিং। শুধুই ঘর সাজানোর জন্য কফি পট কারণ ওর তলায় একটা ফুটো ছিল। উনি সময়টা সঠিক বলতে পারলেন না কিছুতেই, বড়দিনে না তার আগে।
উনি পোয়ারোর অস্ত্রের প্যাকেটটা রেজিস্ট্রি করার দায়িত্ব নিলেন।
ওঁর চোখে পোয়ারো কৌতূহলের ছোঁয়া লক্ষ্য করলেন।
পোয়ারো ওখান থেকে বেরিয়ে এসে পাহাড়ের গা বেয়ে ধীরে ধীরে উঠতে লাগলেন।
ডীডার আর মরিনের মধ্যে সরল মরিন। কিন্তু তার স্মৃতিশক্তি দুর্বল। তাই ভুল হবার সম্ভাবনা তার বেশি। আবার একটু অদ্ভুত প্রকৃতির বলে ডীডারের কথাও সম্পূর্ণ ঠিক তাও বলা চলে না। তবে একটা কথা এর মধ্যে থেকেই যাচ্ছে। ডাডারের প্রশ্ন করা উচিত ছিল পোয়ারোকে, কেন তিনি জিজ্ঞাসা করছেন অস্ত্রটার কথা। তার পক্ষে প্রশ্নটা করা খুবই স্বাভাবিক ছিল অথচ সে করেনি।
.
১৫.
মরিন বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই বলল, মিঃ পোয়ারো একটা ফোন এসেছিল আপনার।