–বেশ মৃতা মহিলাটির সম্পর্কে এবারে কিছু বলুন।
বয়েস ৬৪ এবং উনি বিধবা। স্থানীয় চাকুরে ছিলেন স্বামী–প্রায় সাত বছর আগে মারা যান নিউমোনিয়ায়। ভদ্রমহিলা সেই থেকে ব্রডহিনির স্থানীয় কয়েকটা বাড়িতে গৃহস্থালীর কাজ কর্ম দেখতেন।
একজন পেয়িং গেস্ট রাখেন তিনি।
হ্যাঁ, গ্রীষ্মকালীন অতিথি আসত স্বামী মারা যাবার আগে। বেশ কয়েক মাস জেমস বেন্টলী ওখানে ছিল। বাড়ির দালাল ছিল সে। আগে অন্যত্র থাকত পঙ্গু মায়ের সাথে। মা মারা গেলে বেচে দেয় বাড়ি। শিক্ষিত বেশ কিন্তু কোনো কাজে বিশেষ দক্ষতা নেই। সে শেষ পর্যন্ত কাজ নেয় কিচেস্টারে ও পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকে। এ যাবৎ বাড়িভাড়া বাবদ কোনো গণ্ডগোল হয়নি। চাকরীটা যাবার পর বাকি ফেলেছিলো দুমাসের বাড়িভাড়া। তাকে উঠে যাবার জন্য মিসেস ম্যাগনটি চাপ দিতে শুরু করেন।
-সে কি জানত যে, ত্রিশ পাউণ্ড রাখা ছিল বাড়িতে? মিসেস ম্যাগিনটি ব্যাঙ্ক থাকা সত্ত্বেও ওই অর্থ বাড়িতে রাখতেন কেন?
-ওর বিশেষ আস্থা ছিল না ব্যাঙ্কের ওপর। একটা আলগা তক্তার নিচে বাড়িতেই রাখা ছিল ওটা, অবশ্য তা বেন্টলী জানত বলে স্বীকার করেছে।
-ওর ভাইঝিও তা জানত কি?
–হ্যাঁ।
–আচ্ছা, যেদিন উনি মারা যান, সেদিন কি কি ঘটেছিল ঠিক বলতে পারেন?
-বাইশে নভেম্বর সন্ধ্যে সাড়ে ছটা আন্দাজ নৈশভোজ সারেন। উনি মারা যান পুলিশ সার্জেনের মতানুযায়ী সাতটা থেকে দশটার মধ্যে। যে ভুক্তাবশেষ পাওয়া যায় ওর পাকস্থলীতে তা পরীক্ষা করে মৃত্যুর সময় নির্দেশিত হয় আন্দাজ সাড়ে আটটা থেকে নটার মধ্যে। বেন্টলী সন্ধ্যে সাতটা পনেরোতে বাড়ির বাইরে বেড়াতে বের হয়। অন্ধকার গাঢ় হবার পর তার অভ্যেস ছিল বেড়াতে যাওয়ার। বাড়ির চাবি ছিল বেন্টলীর কাছে। যদি সত্যি বলে ধরা হয় তার কথা তবে সে আন্দাজ রাত নটা বেড়িয়ে ফিরে আসে এবং তার নিজের ঘরে সোজা চলে যায়। আধঘন্টার মত বই পড়ে শুয়ে পড়ে সে। সে রাত্রে কোনো অস্বাভাবিক শব্দ শোনেনি বা তেমন কিছু চোখে পড়েনি। রান্নাঘরে সকালে কাউকে দেখতে না পেয়ে সে ধাক্কা দেয় মিসেস ম্যাগিনটির শোবার ঘরের দরজায়। প্রথমে ভেবেছিল, বোধহয় ভদ্রমহিলা ঘুমোচ্ছেন। তারপর আসে রুটিওয়ালা। আপনাকে তো পরের ঘটনা আগেই বলেছি। পাশের বাড়ি থেকে রুটিওয়ালা মিসেস এলিয়টকে ডেকে আনে। আর পারলারে তিনি মৃতাবস্থায় মিসেস ম্যাগিনটিকে আবিষ্কার করেন। মাংস কাটার বড় ছুরির মত কোনো অস্ত্র দিয়ে মাথার পেছনে ওকে আঘাত করা হয়েছিল। উনি আঘাত করার সাথে সাথেই মারা যান। ঘরের আলগা তক্তার নিচে রাখা টাকাকড়িও বেপাত্তা।
সুতরাং :- হয় ওকে বেন্টলী খুন করেছে, নয় তো বেন্টলী বেরোবার পর মিসেস ম্যাগিনটি নিজেই দরজা খুলে দেন হত্যাকারীকে।
–ঠিক কথা কাজটা ছিঁচকে চোরের নয়। কিন্তু উনি কাকে আমন্ত্রণ জানাবেন?
–হতে পারে কোনো একজন প্রতিবেশীকে বা ওঁর ভাইঝি বা ভাইঝির স্বামীকে। কিন্তু তারা নাকি ওই সময় সিনেমায় গিয়েছিল শেষের দুজনে বলেছে। এমন হতে পারে সিনেমা দেখার মাঝে হল থেকে উঠে গিয়ে তারা কেউ সাইকেলে করে ঘটনাস্থলে আসে। কিন্তু তাই বা কি করে হবে? তাহলে বাড়ির বাইরে কেন টাকাটা লুকিয়ে রেখে গেল?
–বেন্টলীর সুযোগই এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি।
–হ্যাঁ, বেন্টলীর বিরুদ্ধে সব সময়ই প্রমাণ থেকে যাচ্ছে। এমন কি তার কোটের হাতায় আবার রক্তও পাওয়া গেছে।
-সে কি কৈফিয়ত দিয়েছে এর জন্য?
–সে বলেছে ওটা মাংসের দোকানে জন্তুর রক্ত। কিন্তু দেখা গেছে পরীক্ষা করে ওটা কোনো জন্তুর রক্ত নয়।
–নিজের বক্তব্যে সে কি অবিচল ছিল?
-না, তার কোটের হাতায় রক্তের সাথে যে চুল ছিল ওই মৃতা মহিলার তাও বেন্টলী বলেছে, মৃতদেহ আবিষ্কারের পর নিচু হয়ে তা দেখার সময় লেগে থাকবে ওটা, পরে ভয়ে তার মনে ছিল না কিছুই।
-খুবই অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
–হ্যাঁ কিন্তু হতেও পারে তা। অবশ্য সাধারণ লোক তা বিশ্বাস করে না। বিশেষত মৃতদেহ দেখে ভয় পাবার ব্যাপারটা কিন্তু সেটা হতে পারে। সে বলছে, সে কল্পনাও করেনি সকালে ভদ্রমহিলার খুন হবার কথা।
–হয়ত সত্যিই বলেছে।
-এও হতে পারে যে, তার বুদ্ধিটা উকিলের দেওয়া। কিন্তু যে হোটেলে মাঝে মাঝে সে লাঞ্চ করতে যায় সেখানকার লোকও বলেছে সে বরাবর দেওয়ালের দিকের নিরিবিলি টেবিলই পছন্দ করে। একটু ভীরু প্রকৃতির নাকি।
একটানা স্পেন্স এতক্ষণ কথা বলার পর তাকালেন পোয়ারোর দিকে। কোনো উত্তর দিলেন না পোয়ারো শেষ কথার, ভুরু দুটো তার কোঁচকানো।
এরপর তারা দুজনেই কিছুক্ষণ নীরবে বসে রইলেন।
.
০৩.
দীর্ঘশ্বাস ফেলে পোয়ারো উঠে দাঁড়ালেন।
-মিঃ স্পেন্স, অর্থের কথা ছেড়ে দিয়ে খুনের অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করা যাক এবার। মিসেস ম্যাগিনটির কি শত্রু ছিল?
–সে রকম কোনো প্রমাণ নেই।
–কি বলেন ওঁর প্রতিবেশীরা।
–তেমন কিছু নয়। মনে হয় না তো আমার কিছু তারা গোপন করেছেন। প্রতিবেশীদের মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠতা নেই।
–ওখানে মিসেস ম্যাগিনটি কতদিন ছিলেন?
–প্রায় কুড়ি বছর।
–আর তার আগের চল্লিশ বছর?
-উত্তর ডেভেনের এক চাষীর মেয়ে ছিলেন উনি। স্বামীর সঙ্গে বিয়ের পর প্রথমে ইলফ্রাবেগম্ব-এ ছিলেন। এখানে পরে আসেন। মানুষ হিসেবে ওর স্বামী ভালোই ছিলেন।