প্রতিবেশী স্ত্রীলোকের সাহায্য নেয়। দরজা ভেঙে ফেলার পর দেখা যায় সারা ঘর লণ্ডভণ্ড, বিছানাতেও নেই তিনি। পারলারে গিয়ে দেখতে পাওয়া গেল মাটিতে পড়ে আছেন ভদ্রমহিলা মৃতাবস্থায়। তখন স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
পোয়ারো বললেন, এরপর হত্যাপরাধে বেন্টলী জেলে যায়, কেমন?
মাথা নেড়ে স্পেন্স বললেন, হ্যাঁ বিচারে জুরীরা মাত্র কুড়ি মিনিট সময় নেয় তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে। বেন্টলীকে হত্যাপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
–তারপর ট্রেন ধরে আপনি সোজা আমার এখানে চলে আসেন কিন্তু কেন?
–হ্যাঁ ঠিক তাই। সোজা আপনার এখানেই আমি এসেছি, কারণ আমি কখনই বিশ্বাস করি না যে, এ কাজ জেমস বেন্টলী করেছে। সে……নির্দোষ।
.
০২.
চুপচাপ কাটল দু-এক মুহূর্ত।
–আমার কাছে এসেছেন আপনি…
অর্ধসমাপ্ত রাখলেন পোয়ারো মুখের কথা।
মুখ তুললেন সুপারিন্টেন্টে স্পেন্স। সাধারণ একজন গ্রামবাসী ভদ্রলোকের মত তার মুখভাব আর চোখ দুটোতে ঐকান্তিক আগ্রহ আশ্চর্য রকমের। তিনি যেন খুব ভালো করেই জানেন, কোনটা সত্যি আর কোনটা নয়।
তিনি গম্ভীর ভাবে বললেন, দেখুন, আমি বহুদিন পুলিশে কাজ করেছি। আমি সহজেই মানুষের চরিত্র বুঝতে পারি। নিশ্চয়ই আপনার মনে পড়ে সেই বিখ্যাত বিখ্যাত সব মামলার কথা?….. অনেক কিছুই দেখেছি জীবনে আমি। কিন্তু….. কিছুতেই আমি ভাবতে পারছি না যে, কেন দোষী সাব্যস্ত হয়ে একজন নির্দোষ ব্যক্তি ফাঁসি কাঠে ঝুলবে। এ দৃশ্য দেখতে কিছুতেই রাজী নই আমি মঁসিয়ে পোয়ারো।
স্থির দৃষ্টিতে পোয়ারো তার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
বলে চললেন স্পেন্স, আমি জানি আমার কাছে আপনি এরপর কি জানতে চাইবেন। তাই আপনাকে সব খুলে বলছি। সাধারণ ভাবেই আমাকে প্রথমদিকে বলা হয়েছিল এ ব্যাপারে তদন্ত করতে। আমি ঘটনাপঞ্জী সংগ্রহ করেছিলাম তদন্তের শুরুতে। আর সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ছিল ওই জেমস বেন্টলীর বিরুদ্ধে। সুতরাং সে জেলে যায় দোষী প্রমাণিত হয়ে। এটুকু ধারণা আমি করতে পেরেছি যে বেন্টলীকে সব্বাই দোষী জেনে খুশী।
পোয়ারো বললেন, কিন্তু আপনি নন।
ছোট্ট জবাব দিলেন। স্পেন্স, নিশ্চয়ই না।
-কিন্তু কেন? জিজ্ঞাসা করলেন পোয়ারো।
স্পেন্স দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
–আমি তা সত্যিই জানি না। এর কোনো যথাযথ কারণ আমি দেখাতে পারব না আপনাকে। তবে বেন্টলীর মুখ দেখে বুঝতে পেরেছি সে নির্দোষ, সাধারণ বিচারে যা চোখে পড়েনি জুরীদের এবং সেটা সম্ভবও নয়। কিন্তু সাধারণ হত্যাকারীদের মত তার হাবভাব নয়। বড় বেশি চুপচাপ সে, বড় বেশি মনমরা। আমি কি বলতে চাইছি, মঁসিয়ে পোয়ারো বুঝতে পারছেন?
–হ্যাঁ, মিঃ স্পেন্স, জেমস বেন্টলীর কত বয়স, আর কেমনই বা তার চেহারা?
–বয়স তেত্রিশ। সাধারণ উচ্চতা, মাঝারি গায়ের রং, আর চশমা আছে চোখে।
–তার ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধেও আমি কিছু জানতে চাই।
–সে বড্ড ভীতু আর বিষণ্ণ প্রকৃতির। আসলে লাজুক, বড় এক আত্মীয় আছে তার সেও ওরকম।
তার মানে সে খুব অকর্ষণীয় নয় সব মিলিয়ে।
–নিশ্চয়ই নয়। কিন্তু আমি তাই বলে কখনো চাই না যে, তার ফাঁসি হোক এই সব তুচ্ছ কারণে।
–আপনার কি মনে হয় সত্যিই শেষ পর্যন্ত ওর ফাঁসি হবে?
–কেন হবে না বলুন? সবকিছুই যে তার বিরুদ্ধে। যিনি তার পক্ষের উকিল তিনিও খুব উঁদে নন।
–সব কিছুই ওর বিরোধিতা করায় স্বপক্ষে ওর বলার মত কিছু নেই। এই তো?
–যখন কেউ সত্যিই কোনো অপরাধ করে, তার আত্মপক্ষ সমর্থনের তখনই প্রশ্ন ওঠে, তাই নয় কি?
ঠিকই বলেছেন। আমার ওপর ছিল সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহের সব দায়িত্ব। আরও অস্বস্তিতে পড়েছি তাতে।
–কিন্তু আপনি কি চান আমার কাছে?
আমি চাই আমার হয়ে আপনি পূর্ণতদন্ত করুন এই হত্যাকাণ্ডের, ঠিক পারবেন আপনি। যদি খুনী না হয় বেন্টলী তবে স্পষ্টতই অন্য কেউ খুনী। আমার বিশ্বাস প্রকৃত দোষীকে নিশ্চয়ই আপনি খুঁজে বের করতে পারবেন।
–আমি আপনার অনুরোধ অবশ্যই রাখব। এই অখণ্ড অবসর বড় বেশি ক্লান্তিকর। আর কেউ যদি সত্যিই নির্দোষ হয়, তবে তার শাস্তি পাওয়াটা নিশ্চয়ই অন্যায়। মিসেস ম্যাগিনটি কবে মারা যান?
–গত বাইশে নভেম্বর।
–তবে শুরু করা যাক এখান থেকেই কি বলেন?
–নিশ্চয়ই, আপনার জন্য সব কিছু নোট করে এনেছি আমি।
–ভালো কথা। আচ্ছা প্রথম প্রশ্ন হল–যদি খুন বেন্টলী না করে থাকে তবে কে করতে পারে?
সত্যি কথা বলতে কি, কিছুই আমি বুঝতে পারছি না।
–কিন্তু মিঃ স্পেন্স, এটা ভাববার কথা। একটা না একটা উদ্দেশ্য থাকে প্রত্যেক খুনের পেছনে। এর পেছনে কি উদ্দেশ্য ছিল?
হিংসা, প্রতিশোধ, পূর্ব শত্রুতা ভয় না অর্থ? আপাতত ধরা যাক অর্থের কথাটাই। কে কে উপকৃত হবে ওই ভদ্রমহিলাটির মৃত্যুতে।
–কেউই খুব একটা উপকৃত হবে না। ওঁর যাবতীয় অর্থ মোট দুশো পাউণ্ড পাবে ওঁর ভাইঝি।
–দুশো পাউণ্ড খুব বেশি নয়। কিন্তু এটাই প্রয়োজনের সময় অনেক বেশি হতে পারে।
-ওই ভাইঝির কথাও আমরা ভেবেছি। এখন তার বয়স আটত্রিশ এবং বিবাহিতা সে। টুকিটাকি বাড়ি মেরামত এবং বাড়ি সাজানোর কাজ করে তার স্বামী। একটু বেশি কথা বললেও ভদ্রমহিলা এমনিতে তাকে বেশ সুখী বলেই মনে হয়।
-কি হল মৃতা ভদ্রমহিলার বাড়িটার?
–ভাঙা বাড়ি ওটা। উনি এখন মারা যাবার পর আর ওটা ভাড়া নিতে চায় না ওঁর ভাইঝি। নিজেদের বাড়ি আছে তাদের।