— আপনি ফিরে আসবেন। আমি জানতাম। হারমিয়োন স্যার চার্লসকে লক্ষ্য করে বললো। এবার আর কোনো চিন্তা নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে।
ওর কথা বলার ভঙ্গীমা দেখে স্যাটার্থওয়েট স্পষ্ট বুঝে নিলেন যে হারমিয়োন স্যার চার্লসকে গভীরভাবে ভালোবেসেছে। আর চার্লসও হারমিয়োনকে ভালোবেসেছেন। একটি অপরাধ, না দুটি অপরাধ মাঝখানে সেতুবন্ধনের কাজ করে চলেছে।
দক্ষিণ ফ্রান্সের সমুদ্রতীরের কথা, বার্থালমউয়ের মৃত্যু সংবাদের কথা, ইয়র্কশায়ারে তাদের অভিজ্ঞতার কথা সবিস্তারে বললেন স্যার চার্লস।
সব শুনে হারমিয়োন মাথা নেড়ে বললো, আপনারা আসল কথাটাই বুঝতে পারেননি।
ঘরের বাকি দুজন তার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে রইলেন।
–এলিস আর বেঁচে নেই। সে অনেক কিছু জেনে ফেলেছিল। তাই তাকে খুন করা হয়েছে। হত্যাকারী তাকে নিরাপদ মনে করেনি। তার মানে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা হলো তিন।
একটু চুপ করে থেকে স্যার চার্লস বললেন, তোমার কথা হয়তো মেনে নিলাম, কিন্তু এলিসের মৃতদেহটা কোথায় যাবে?
– আছে, ঐ বাড়িরই কোথাও। ঐরকম প্রাসাদের মত বাড়িতে তো চোরাকুঠুরির অভাব নেই। ভালো করে খুঁজলে নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে।
শ্ৰীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট ভাবলেন, হারমিয়োনের কথা যদি সত্যি হয় তাহলে হত্যাকারী যে ভীষণ সাংঘাতিক সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তার মানে তিনিও বিপদে পড়েছেন। কেবল তিনি নন, স্যার চার্লস, হারমিয়োনও তার সঙ্গে আছে। প্রয়োজন মনে করলে খুনী আর একটা খুন…..
–আপনাকে এই তিনটি মৃত্যুর রহস্য খুঁজে বের করতেই হবে। হারমিয়োনের কণ্ঠে দৃঢ়তার ছাপ স্পষ্ট। এ কাজ অন্য কাউকে দিয়ে হবে না, আমি জানি। আপনি নিশ্চয় ভয় পেয়ে পেছিয়ে যাবেন না। রহস্যের আড়ালে যে সত্য লুকিয়ে আছে সেটা আমরা, মানে আমি আর আপনি খুঁজে বের করবোই।
— আর স্যাটার্থওয়েট?
— হ্যাঁ।
শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট মনে মনে হেসে উঠলো, হারমিয়োন না চাইলেও তিনি ওদের সঙ্গে থাকবেন। কারণ তিনি রহস্য ভালোবাসেন। ভালোবাসেন মনুষ্য প্রকৃতির সমীক্ষা। এই সুবর্ণ সুযোগ তিনি কখনোই ছাড়বেন না।
অনেকক্ষণ ধরে চুপ করে বসে কি যেন ভাবলেন স্যার চার্লস। বোঝা যাচ্ছে, তিনি এখন পরিচালকের ভূমিকা গ্রহণ করবেন।
–আমরা বিশ্বাস করি যে দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ডটি প্রথম হত্যাকাণ্ডটির থেকেই উদ্ভূত। অর্থাৎ ব্যারিংটনের মৃত্যু রহস্য সম্পর্কে বার্থালমিউ যা জেনেছিলেন, সেটা যেন আর কেউ না জানতে পারে সেইজন্য হত্যাকারীটি চিরদিনের জন্যে তার মুখ বন্ধ করে দিয়েছিল, তাই তো?
হারমিয়োন ও স্যাটার্থওয়েট ঘাড় কাত করে তাদের মত জানালো।
— অতএব হত্যাকারীর উদ্দেশ্য কি ছিল সেটা জানতে হবে? প্রথমতঃ ব্যারিংটনকে হত্যা করে কেউ আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হবে এমন কোনো সম্ভাবনা কি আছে?
–মনে তো হয় না। স্যাটার্থওয়েট বললেন।
–তিনি তার অজ্ঞাতসারে কোনো ক্ষতি কারো করেছিলেন কিনা সেটা জানতে হবে। তৃতীয় কারণ ধরা যেতে পারে জিঘাংসাবৃত্তি। এটাও একধরনের পাগলামি। এক্ষেত্রে সেটাও প্রযোজ্য নয়।
একটু থেমে স্যার চার্লস আবার বলতে থাকেন– ভয়ও আর একটি কারণ হতে পারে। মনে করুন, ব্যারিংটন কোনো একটি লোককে কোনো এক বিশেষ সময়ে কোনো একটি জায়গায় দেখেছিলেন। হয়তো লোকটি এমন একটি অ্যালিবাই সৃষ্টি করে রেখেছে যে সেই সময়ে সে সেখান থেকে শখানেক মাইল দূরে আছে। যদি ব্যারিংটন সরল, মনে লোকটির সঙ্গে তার দেখা হওয়ার কথা কারোকে বলে ফেলেন তাহলে?
– হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি। স্যাটার্থওয়েথ বললেন।
শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো, দুই পার্টিতে যাঁরা নিমন্ত্রিত ছিলেন তাদের নামের একটি তালিকা তৈরি করে কাকে কি কারণে সন্দেহ করা যায় সে বিষয়ে বিবেচনা করে দেখা।
তালিকা লিখতে বসলো হারমিয়োন, কার নাম আগে লিখবে, কার নাম লিখবে না এসব নিয়ে স্যার চার্লসের সঙ্গে প্রায় তর্ক লেগে গেল। একটা খণ্ড প্রলয় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা করে শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট বেল বাজিয়ে কফির হুকুম দিলেন। স্যার চার্লস উঠে দাঁড়ালেন। এগিয়ে গেলেন একটা নিগ্রো-ভাস্কর্যের সামনে। গম্ভীর মুখে বসে রইলো হারমিয়োন।
কফি পান করার পর সবার মেজাজ স্বাভাবিক হলো। এবার ঠিক হলো –স্যার চার্লস কুলায় ফিরে যাবেন আর হারমিয়োন তার মাকে নিয়ে লুমাউথের ব্যারিংটনের সঙ্গে কথাবার্তা বলবে।
৩. তৃতীয় অঙ্ক–আবিষ্কার
তৃতীয় অঙ্ক–আবিষ্কার
০১.
শ্রীযুক্তা ব্যারিংটন
গির্জার লাগোয়া যাজকের বাড়িটিতে সতেরো বছর ধরে বাস করছিলেন ব্যারিংটন দম্পতি। স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে শ্ৰীমতী ব্যারিংটন মনে মনে ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়লেন। ঠিক করলেন, এই বাড়ি ছেড়ে সমুদ্রের কাছাকাছি একটি ছোট বাড়ি কিনে নেবেন, এবং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাগান সমেত একটি বাড়ি কিনে ফেললেন।
স্যার চার্লস আর হারমিয়োন যখন ঐ বাড়িতে প্রবেশ করলেন তখন শ্ৰীমতী ব্যারিংটন বাগানে কাজ করছিলেন। ওদেরকে নিয়ে তিনি বসার ঘরে এলেন।
–আপনাকে এ অবস্থায় বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। স্যার চার্লস বললেন, পুলিসের কাছ থেকে কোনো রিপোর্ট বা চিঠিপত্র পেয়েছেন শ্রীযুক্ত ব্যারিংটনের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে।