- বইয়ের নামঃ ডেথ ইন দ্য ক্লাউডস
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ চন্দ্রছাপ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর
ডেথ ইন দ্য ক্লাউডস
০১. প্যারিস থেকে ক্রয়ডন
০১.
প্যারিস থেকে ক্রয়ডন
লা বুর্জেতে বিমানবন্দরের সেপ্টেম্বরের প্রখর রোদে পুড়তে পুড়তে যাত্রীরা ক্রয়ডনগামী বিমান প্রমিথিউস-এ উঠেছে। জেনে গ্রে তার জন্য নির্দিষ্ট ১৬ নম্বর আসনে এসে বসলো। কয়েকজন যাত্রী মাঝের দরজা দিয়ে সামনের কামরায় চলে গেছে। পেছনের কামরাও প্রায় ভর্তি। এক মহিলার তীক্ষ্ণ কণ্ঠ ভেসে আসছে মাঝখানের যাতায়াতের ওপাশ থেকে। জেনের ঠোঁট দুটো একটু বেঁকে গেল। ওই বিশেষ গলা ওর অচেনা নয়। আরে দারুণ। কোথায় চললে? চুয়ান লে পিনস? হ্যাঁ, লা পিনেতা-হা, সব সেই পুরানো লোক। এখানে এসো না। আঁতা হয় না। কে? ও আচ্ছা। তারপরই একজন বিদেশী নম্র পুরুষের গলা–আনন্দে মাদাম। জেন একপলক দেখলোবেঁটে মতো, ডিমের মতো মাথা আর একজোড়া গোঁফ বিশিষ্ট এক বিদেশী ভদ্রলোক মালপত্র গুছিয়ে আসন ছেড়ে উঠে যাচ্ছে। জেনের কাছে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেলো যে ওই মহিলা দুটিকে একসঙ্গে বসার সুযোগ দিতে ভদ্রলোক অন্য আসনে চলে গেলেন। জেনের কৌতূহল বেড়ে গেছে লা পিনেত-এর উল্লেখে কারণ সেও ওখান থেকেই ফিরছে। একজন মহিলাকে ও স্পষ্ট চিনতে পারলো তাকে শেষবার দেখেছিলেন জুয়ার টেবিলে। ক্ষুদে হাতদুটো মুঠো হচ্ছে, খুলছে–প্ৰসাধন করা নিপুণ চীনা পুতুলের মতো মুখটা পর্যায়ক্রমে হর্ষবিষাদে জ্বলছে নিভছে। একটু চেষ্টা করলেই ওর নামটা জেনের মনে এসে যাবে–ম্যাগী না কি যেন নাম। জেন ভাবলো অন্য মহিলাটি গেঁয়ো ঘোড়ার মতো দেখতে। একেবারে আসলী চিজ। ভাবতে ভাবতে জেন ওদের কথা ভুলে গিয়ে বিমান বন্দরের ছায়া দেখতে লাগল। জেন পণ করে রইলো মুখোমুখি বসা নীল সোয়েটার পরা যুবকটির দিকে ও তাকাবে না যাতে চোখাচোখি না হয়। প্লেন গড়াতে শুরু করলো। এই দ্বিতীয়বার জেন আকাশে উড়ছে, তাই দমবন্ধ করে বসে রইলো। ক্রয়ডনের পথে মধ্য দিনের যাত্রা শুরু হলো। সামনের কামরায় দশজন। পেছনে এগারোজন, দুজন বৈমানিক ও দুজন পরিচারক–মোট একুশজন যাত্রী প্লেনে। প্রমিথিউস ইংলিশ চ্যানেলের দিকে উড়ে চলল। জেন গ্রে ভাবছিল কোনো বিশেষ ঘটনা নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করি যাতে ওর দিকে না তাকাতে হয়। একটি রোমাঞ্চকর ঘটনা, সেই আইরিস লটারীর একটা টিকিট কেনা থেকেই শুরু। যে কেশবিন্যাস সংস্থায় জেন ও আরো পাঁচটি মেয়ে কাজ করতো সেখানে অনেক হাসাহাসি, ঠাট্টা তামাশা হয়েছিল এটা নিয়ে। অনেক টাকার পুরস্কারের বদলে একশো পাউণ্ড পুরস্কার ও পেয়েছিল। এই দিয়ে জেন লা পিনেত যাচ্ছে বা সবেমাত্র সেখান থেকে ফিরছে। ওদের মুখে শুনে শুনে ওরও ওখানে যাওয়ার সাধ ছিল বহুদিনের। জেন ওখানে পৌঁছে একটু আনন্দ করার জন্য প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় জুয়াখেলায় মাপা কয়েকটা টাকা খরচ করতো। কিন্তু প্রথমে খেলতে এসে তার কপাল মার খেল। এতদিন মিতব্যয়ীর মতো খরচ করে চারদিন খেলার পর সেই বাজিটাই সেদিনের শেষ বাজি ছিল। সামান্য জিতেছে কিন্তু অনেক বেশি হেরেছে। পাঁচ আর ছয়–সে নম্বর দুটোর ওপর এখনও কেউ বাজি ধরেনি–ভাবতে ভাবতে জেন ছয় নম্বরের ঘরের দিকে হাত বাড়ালো এবং তার উল্টোদিকে বসা একজন খেলোয়াড় পাঁচের ঘরে বাজি রাখলো। পাঁচ নম্বরে গিয়ে ঘুটি স্থির হলো। জেন তাই বাজির টাকায় হাত না বাড়ানোয় তার উল্টোদিকের লোকটি জেনকে টাকাগুলো নিতে বললো। জেনকে অবাক হতে দেখে লোকটি জানাল সে ছয় ধরেছিল আর জেন পাঁচ। এই অপরূপ সুন্দর যুবকের কথায় একটু ভেবে জেন বাজি জেতার টাকাটা নিল। ভাবলো ওই হয়তো পাঁচ নম্বরটা ধরেছিল। লোকটি সহজভাবে হেসে তখনকার মতো বিদায় জানালো। এই বিমানে জেনের উল্টোদিকে বসা সেই লোকটিকেই দেখে জেনের ভালো মনে হয়েছিল কারণ সে তাকে টাকাটা নিতে দিয়েছিল। এরপর শেষ দুটো দিন সে প্যারিসে কাটিয়ে এখন ফিরতি প্লেনে বাড়ি ফিরছে। বিমানে বসে জেন লক্ষ্য করলো চীনা পুতুলের মতো মহিলাটি একজন পরিচারককে ডাকলো এবং অন্য কামরা থেকে তার দিকে পাঠিয়ে দিতে বললো। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতে ছোটো গয়নার বাক্স নিয়ে একটি ফরাসি মেয়ের আবির্ভাব ঘটলো। ম্যাডেলিন নামক এই মেয়েটিকে লেডি হরবেরিল ফরাসি ভাষায় নির্দেশ দিলেন তার লাল মরক্কো চামড়া-মোড়া বাক্সটা আনতে এবং মেয়েটি সেই প্রসাধন বাক্সটি নিয়ে এলো শেষপ্রান্তে উঁই করা বাক্স কম্বল থেকে। মিসিলি হরবেরিল তাকে বিদায় দিলেন। লেডি হরবেরিল এরপর সাজগোজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। যা দেখে জেন বিরক্ত বোধ করলো। মহিলা দুটির পেছনে সেই ক্ষুদেবিদেশী লোকটা প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিল। তার পাশে বসা একজন লম্বা মতো লোক বাঁশির বাক্স খুলে বাক্স বাঁশি ঘষে চকচকে করছিলো যাকে দেখে জেনের মনে হল উকিল বা ডাক্তার। ওই দুজনের পেছনে দুজন ফরাসি বোধহয় বাবা ও ছেলে হবে বলেছিল। এদিকে জেন কোনো অজ্ঞাত কারণে তার উল্টোদিকে বসা সেই লোকটার দিকে তাকাবে না বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নরম্যান গেল নামে এই সুন্দর যুবকটি জেনকে চিনতে পেরে তাকে দেখছিল এবং জেনের সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। জেনকে ওখানে বাজিতে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য নিজেকে বাহবা দিচ্ছিল। ভীষণ উত্তেজিত হয়ে যুবকটি এক পরিচারককে গলা ভেজাবার মতো কিছু দিতে বললো। হরবেরিলর কাউন্টেস তার পাশে বসা ভেনেসিয়া কার ও ভাবছিল তার পাশে বসা মহিলাটি ক্ষুদে ডাইনীর মতো জঘন্য। এরা দুজনেই স্টিফেন নামক একজনের প্রতি অনুরক্ত। এরপর এরা দুজনেই সিগারেট খেতে ব্যস্ত হয়ে উঠল কিন্তু পরিচারকের বাধা পেয়ে বিরক্ত বোধ করলো। ওদিকে বসা সেই ক্ষুদে বিদেশী মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো ভাবছিল জেন এত সুন্দরী হওয়া সত্ত্বেও উল্টোদিকে বসা সুন্দর যুবকটি সম্পর্কে এত সচেতন নয় কেন? ডাঃ ব্রায়ান এরপর গান করে চিন্তামুক্তি কাটালেন। মঁসিয়ে দ্যুপ যাকে বাবা বলে মনে হয়েছিল তিনি তার ছেলেকে ধমকাচ্ছিলেন। তিনি জার্মান ইংরেজ আমেরিকান ও প্রাগৈতিহাসিক সব কিছুকে ভুল বলে প্রতিপক্ষ করতে চাইছিলেন। মঁসিয়ে দূপ প্রমাণের মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে চায়। আরম্যন্ত ট্রুপ পুরানো বাক্স খুলে একটি ফরাসি নল দেখিয়ে তা খৃষ্ট পূর্ব ৫০০০ সালের মাটির কাজের মতো বললেন। রহস্য কাহিনীকার মিঃ ক্ল্যান্সি মহাদেশীয় রেলের টাইম টেবিল নিয়ে এলেন যা থেকে তার রহস্য গল্পের জন্য অজুহাত তৈরি করতে হবে। মিঃ রাইজ্যার ভাবছিলেন যে তার নিজের লভ্যাংশ ঠিক রেখে কি করে অন্যদের বেশি দেবেন। মাদাম গিজেল সামনে ঝুঁকে পড়লেন, সবাই ভাবল যে তিনি ঘুমোচ্ছেন, আসলে তিনি মারা গেছেন।
.
০২.
আবিষ্কার
হেনরি মিচেল নামক পরিচারক সবার কাছ থেকে বকশিশ নিচ্ছিল। সে সবার কাছ থেকে বকশিশ নিয়ে গোঁফওয়ালা বেঁটে লোকটি ও পিছনের বৃদ্ধা মহিলার কাছ থেকে সে বকশিশ আশা করে ছিল। কিন্তু ক্রয়ডন পৌঁছাবার আগে সে মাথা ঝুঁকিয়ে বৃদ্ধা মহিলাকে বলল, মাফ করবেন ম্যাডাম, আপনার বিল। সে কাঁধে হাত রাখার পর আস্তে নাড়া দেওয়ায় মাদামের দেহটা ধপ করে পড়ে গেল-খড়ির মতো সাদা দেহটা ছিল মৃতদেহ।
দ্বিতীয় পরিচারক অ্যালবার্ট ডেভিস বলল, তাই কখনো হয় নাকি? হেনরি বললো যে, সে ভদ্রমহিলাকে অজ্ঞান হতে দেখেছে। মিনিট খানেক তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারলো না– তারপর পরবর্তী কর্মসূচী ঠিক করে ফেলল। সকল যাত্রীর কানের কাছে তিনি ডাক্তার কিনা জিজ্ঞাসা করল। নরম্যান গেল দাঁতের ডাক্তার বলে কিছু করতে পারলেন না। ডাঃ ব্রায়ান নিজের পরিচয় দিয়ে পরিচারকের পেছনে পেছনে চললেন। ডাঃ ব্রায়ান আসনের সামনে ঝুঁকে পড়লেন এবং স্বাস্থ্যবতী মহিলাকে পরীক্ষা করে উনি মরে গেছেন বললেন, তিনি মিচেলকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন কখন তাকে শেষ দেখেছে সে?
মিচেল ভেবে বলল, সে প্রায় ৪৫ মিনিট হবে। দুজনের আলোচনায় কৌতূহল জাগাতে লাগল। মিচেলের মতে তার স্বামীর মতো ভদ্রমহিলার তড়কা রোগ আছে। ডাক্তার ব্রায়ান হতবুদ্ধির মতো মাথা নাড়লেন।
গোঁফওয়ালা মাফলার জড়ানো লোক দুটি ভদ্রমহিলার গলায় একটা দাগ দেখতে পেলেন। সত্যিই তার মাথা একপাশে হেলে পড়ায় সূক্ষ্ম দুটি দাগ দেখা যাচ্ছিল। দা দ্যুপ নামে ছেলেটিকে বলল যে ভদ্রমহিলা ভীমরুলের কামড়ে মারা গেছেন। ডাঃ ব্রায়ান এ বিষয়ে তার সম্মতি জানালেন। পরিচারিকা জিজ্ঞাসা করল মিনিট খানেকের মধ্যে তারা ক্রয়ডন পৌঁছে যাবে, তার কিছু করার আছে কিনা, ডাক্তার দেহটা ওখান থেকে সরাতে বারণ করলেন।
ডাঃ ব্রায়ান সকলকে নিজের জায়গায় বসতে অনুরোধ করলেন। পরিচারক তার কথায় সম্মতি জানালেন। ক্ষুদে লোকটি কী যেন একটা পড়ে থাকতে দেখলেন। হলুদ আর কালো একটা জিনিস স্কার্টের কোণার আড়ালে মেঝেতে পড়ে রয়েছে। এরকুল পোয়ারো পকেট থেকে চিমটে বের করে মূল্যবান বস্তুটি আবিষ্কার করলেন। কমলালেবু আর কালো রঙের সিল্কের সেসা দিয়ে পাকানো একটা ছোট্ট আঁটির মতো জিনিস সঙ্গে একটা অদ্ভুত ধরনের কাটা লাগানো। কাটার ডগাটার রঙ চটে গেছে।
মিঃ ক্ল্যান্সির গলা দিয়ে বিস্ময়ের প্রকাশ হল। তিনি জিনিসটির অসাধারণত্ব স্বীকার করলেন। তিনি বললেন যে এটি এক ধরনের দেশী কাটা। বাঁকা নল থেকে ছোঁড়া হয় যার মুখের সামনে বিষ লাগানো থাকে। এটা যে একটা ছোটো বর্শা থেকে ছোঁড়া হয়েছে তা সন্দেহাতীত। মিঃ ক্ল্যান্সি নিজে জীবনে এটা প্রথম দেখলেন। প্লেনটা তখন ক্রয়ডন বিমান বন্দরে মাথার ওপর নামার জন্য চক্কর দিচ্ছে।
.
০৩.
ক্রয়ডন
ক্ষুদে লোকটি বিজ্ঞের মতো কথা বলছিল, তার হুকুম সকলে মানবে এরকম নিশ্চিন্ত ভাব দেখাচ্ছিল। মিচেলের কানে কানে সে কি বলল।
মিচেল সকলকে নিজের সামনে বসতে বলল, এবং বেশিক্ষণ তাদের আটকানো হবে না বলা হল। লেডি হরবেরিল, সিসিলি মড়া আটকে রাখতে চাইলেন না। ভেনেসিয়া কারও তাদের কথায় সম্মতি জানালেন এবং সিগারেট খেতে চাইলেন। ব্যতিব্যস্ত মিচেল তাতে সাড়া দিলেন। ডেভিস জরুরী অবস্থায় দরজা দিয়ে ওপরওয়ালার আদেশ আনতে গেছিল।
একটু পরেই একটা সাদা চেহারার লোক মিচেল ও ডাঃ ব্রায়ানের মন্তব্য শুনে মৃতদেহটার উপর চোখ বুলিয়ে নিয়ে সকল যাত্রীকে নামতে অনুরোধ করলেন। বিমানবন্দরের একটা নির্জন ঘরে তাদের বসানো হল।
মিঃ জেমস রাইজ্যার লন্ডনে ব্যবসায়িক জরুরী কাজ আছে বলে বসতে চাইছিলেন না। লেডি হরবেরিলও না। কিন্তু খুনের ঘটনা বলে ইনসপেক্টর তাদের বসতে বললেন। মিঃ ক্ল্যান্সির। সন্দেহ মিলল বলে তিনি খুশী হলেন।
ভেনেসিয়া কার শুধু বসতে সম্মতি জানালেন। ডাক্তার ব্রায়ানের সঙ্গে ইন্সপেক্টার কথা বললেন। ছোটোখাটো গোঁফওয়ালা লোকটিও সাহায্য করতে চাইল। মঁসিয়ে পোয়ারোকে নিয়ে ব্রায়ান ও তিনি দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন যা ঘরে সন্দেহের সৃষ্টি করল।
সিসিলি হরবেরিল আটকে থাকতে চাইছিলেন না। ভেনেসিয়া কার লোকটিকে ফরাসি পুলিশের চর বা শুল্ক বিভাগের চর বলে মনে করলেন। নরম্যান গেল জেনকে লা-পিনেত-এ দেখেছিলেন বলে দাবী করল। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা হচ্ছিল। দুপরা নিজেদের মধ্যে ফরাসিতে আলোচনা করছিল। সিসিলি হরবেরিল বলে অত্যন্ত রেগে গিয়ে ছিলেন, মিঃ রাইজ্যার ছোটো ছোটো বইয়ের হিসাব করছিলেন।
কাছের একটি ঘরে ইনসপেক্টার জ্যাপ ডাঃ ব্রায়ান এবং এরকুল পোয়ারোর সঙ্গে কথা বলছিলেন। এরকুল পোয়ারো বললেন, সে আশাতীত জায়গায় তিনি পৌঁছে যান, পোয়ারো জবাব চাইলেন ক্রয়ডন বিমান ঘাঁটি, আপনার ঠিক পথে পড়ে নাকি বন্ধু।
প্রথমে ইন্সপেক্টর পরে ডাঃ ব্রায়ান নাম ঠিকানা চাইলেন। নাক, কান, গলার বিশেষজ্ঞ ডাঃ রজার জেমস্ ব্রায়ান–৩২৯ নং হার্লে স্ট্রিটে তার ঠিকানা জানালেন। তাকে তিনি মৃত্যুর সময় জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি জানালেন যে মৃত্যুর প্রায় আধঘণ্টা পর তিনি যে মারা গেছেন ডাক্তার ধরতে পেরেছিলেন। তার পরিচারকটির কথা শুনেছিলেন যে তিনি প্রায় আধঘণ্টা খানেক আগে মারা গেছেন। ইন্সপেক্টার তিনি কোনো সন্দেহজনক কিছু জেনেছেন কিনা জিজ্ঞাসা করা উচিত মনে করলেন না। ডাক্তার সম্মতি জানালেন। এরকুল পোয়ারো তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বললেন। তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ওটা পোস্টমর্টেমে পরীক্ষা বিশ্লেষণের ব্যাপার।
মিঃ জ্যাপ বিধিমতো সকলকে নিয়ে কয়েকটা কাজ করতে চান। ডাঃ ব্রায়ান বললেন যে, তার কাছে বাঁকানল বা অন্য কোনো অস্ত্র লুকানো ছিল না। রজার্স সেটা দেখবে, বললেন তিনি। ছোটো বাক্সে রাখা সেই কাটাটাকে দেখিয়ে তার সম্পর্কে ডাক্তারকে ঢপ জিজ্ঞাসা করলেন।
ব্রায়ান বললেন, আদিবাসীরা কিউবার বিষ ব্যবহার করে। উটকো লোকের কাছে বিষ পাওয়া যেতে পারে। জ্যাপ ইয়ার্কি করে ডাক্তারকে ভালো করে খুঁজতে বললেন।
তারা দুজন মানে রজার্স এবং জ্যাপ ঘর থেকে বেরোলেন। জ্যাপ ও পোয়ারো প্লেনের মধ্যে তার ঘোড়াকে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বললেন। হাতের ছাপ নেবার জন্য একজন লোক ও ফটোগ্রাফার এখুনি এসে পড়বে তা বললেন। এরপর দুজন পরিচারক পাসপোর্ট নিয়ে এলেন। মেরী মরিসো ফরাসি–পাসপোর্ট নিয়ে এলেন। মেরী মরিসো ফরাসি-পাসপোর্ট দেখে জ্যাপ তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তারা মাদামের কি ব্যবসা তা বলতে পারল না। ছোটো পরিচারক বলল, কদিন আগে সকালের প্লেনে তাকে দেখেছিল। সেটা প্যারিস থেকে আটটায় ছাড়ে। মিচেল জানালো সে সম্ভবত দুটোর সময় চ্যানেলের উপর দিয়ে উড়বার সময় তাকে কফি দেওয়ার সময় তার সঙ্গে জীবিত অবস্থায় দেখা হয়েছিল। মিচেলকে জিজ্ঞাসা করায় সে বলল কফি দেওয়ার প্রায় ১৫ মিনিট পর শেষ তার সঙ্গে মিচেলের দেখা হয়েছিল। তিনি তখন বোধহয় মারা গেছিলেন। জ্যাপ তীরটি দেখালে সে তা দেখেনি বলল।
জ্যাপ তাদের কিভাবে খাবার দেয় জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বলল তারা পিছন দিক থেকে সামনের দিকে খাবার দেয়। পোয়ারো মাথা নাড়লেন। জ্যাপ মহিলা প্লেনে কারো সাথে কথা বা সম্মতিসূচক ঘাড় নেড়েছিলেন কিনা জিজ্ঞাসা করায় তারা না বলল। হেনরি মিচেল ব্যাপারটি তার বিশ্রী লেগেছে জানাল। জ্যাপ বললেন এটা ঠিক, কিন্তু তিনি তার জন্য মিচেলকে দোষী করতে চান না। তিনি তাদের চলে যেতে বললেন।
মঁসিয়ে পোয়ারো একটি প্রশ্ন করার অনুরোধ জানাল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তারা দুজন (পরিচারক) প্লেনের মধ্যে একটা ভীমরুল দেখতে পেয়েছিল কিনা। পোয়ারোকে তারা জানাল তারা ভীমরুল দেখতে পায়নি। একি ভুল বলে তিনি বললেন যে একটা ভীমরুল ছিল যা এখন কোনো যাত্রীর ডিসে পড়ে রয়েছে। তারা বলল যে তা হতে পারে, তবে তারা দেখেনি। পরিচারকরা ঘর থেকে বেরোতে প্লেনে এক ভদ্রমহিলা কাউন্টেস ছিলেন তাকে ডাকার কথা জ্যাপ বললেন।
মঁসিয়ে পোয়ারো জ্যাপকে বললেন যে তিনি সকল যাত্রীর মালপত্র খুঁটিয়ে তল্লাশি করবেন। এটা তার মনে হয়। জ্যাপ বাঁকা নল খুঁজবার জন্য এই কথা বলেছিলেন। তার ধারণা লেখক দুষ্কর্ম করার জন্য তীর ছুঁড়েছেন। জ্যাপ সকলকে তল্লাশি করবেন এই মনস্থ করলেন।
একটা সঠিক তালিকা করা যেতে পারে–পোয়ারো একটা আভাস দিলেন। যাত্রীদের মালপত্র থেকে কি খোঁজা হচ্ছে সে বিষয়ে সঠিক হতে জ্যাপ পোয়ারোকে বললেন এবং পোয়ারো সঠিক জিনিসটি কি তা জানেন না বলায় জ্যাপ তাকে সবকিছুকে কঠিন করে দেখতে একথা বললেন। লেডি হরবেরিলকে ডেকে পাঠানো হল।
হরবেরিল নিজেকে আর্যের পত্নী পরিচয় দিলেন। ঠিকানা জানালেন হরবেরিল চেজ, সাসেক্স, এবং ৩১৫ লন্ডন। তিনি লা পিনেত থেকে প্যারিস হয়ে লন্ডন যাচ্ছেন, মৃতা মহিলা সম্পূর্ণ তার অপরিচিত। তিনি সামনে মুখ করে বসে থাকায় পেছনের ঘটনা দেখার সুযোগ তার হয়নি। যিনি পরিচারক দুজন ছাড়া কাউকে যেতে দেখেননি। দুজন ব্যক্তিকে তিনি প্রসাধন করে যেতে দেখেছেন। তিনি ভীমরুল দেখেননি।
এরপর মিসেস ভেনেসিয়া অন্যকার সাক্ষ্য হুবহু তার বন্ধুর মতোই। ঠিকানা লিটল প্যডক্স হরবেরিল সাসেক্স। তিনি পিছনের কয়েকজন যাত্রীর মধ্যে একটি ভীমরুল মারার চেষ্টা করতে করতে একজনকে খাবার দিয়ে যাবার পর ভীমরুল মারতে দেখেন।
জ্যাপ মঁসিয়ে পোয়ারোকে ভীমরুল সম্পর্কে বেশি উৎসাহ বলে দাবী করলেন। তার মতে ফরাসি লোকদুটো যারা বিদেশী ছাপমারা ঝরঝরে স্যুটকেস নিয়ে এসেছে তাদের প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করলেন। তিনি প্যারিসের সেরা গোয়েন্দা দপ্তরের সাহায্য নিতে চান। কিন্তু পোয়ারো বললেন এই জ্যাপ পদবীযুক্ত লোকদুটি প্রত্নতত্ত্ববিদ। পিতা ও পুত্র যারা পারস্যে একটা খননকার্য সেরে মাত্র কয়েকদিন আগে দেশে ফিরেছেন। জ্যাপ কিছুটা অবিশ্বাসী তাদের প্রতি। তার তাদের গুণ্ডা মনে হয়। কিন্তু পোয়ালরা তার যুক্তি খণ্ডন করেন। পিতা আরল্যান্ড জ্যাপ সম্পূর্ণ অপরিচিতা মহিলাটির মৃত্যুর সম্পর্কে কিছুই জানেন না। কারণ তিনি তার পুত্রের সঙ্গে দরকারী আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। পুত্র বলল যে ভীমরুলের অত্যাচারে বিরক্ত হয়ে তাকে মেরে ফেলে।
শেষে এলেন মিঃ ফ্যান্সি। তিনি বাঁকানল সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন। তার নিজের কাছে ছিল এ কথা জানার সাথে সাথে তাকে আক্রমণ করলেন জ্যাপ। এ বিষয়ে তিনি যে কথাটা বললেন তা হল তিনি বই লিখছেন যাতে এরকমভাবে খুন করা হয়। তিনি আঙুলের ছাপ বাঁকানলের উপর কিভাবে পড়ে তা দেখার জন্য চ্যারিং ক্রস রোডে বাঁকানল কিনেছিলেন। তার এক চিত্রশিল্পী বন্ধু লাল পিঁপড়ের রহস্য বলে একটা বই-এর যথেষ্ট অনুগ্রহ করে এর একটা ছবি এঁকে দিয়েছিল। আঙুলের ছাপ সমেত অত্যন্ত অসংলগ্নভাবে তিনি এই কথাগুলো বললেন।মিঃ ফ্যান্সির কাছে যেতে বইটা যখন চাওয়া হল তখন তিনি বললেন ওটা সঙ্গে নেই। তিনি বললেন যে ঘটনা ঘটার অনেক আগে মহিলার পাশ দিয়ে গেলেন বর্ষাতির পকেট থেকে টাইম টেবিল আনতে। বাকি প্রশ্নের নেতিবাচক উত্তর মিলল। তিনি ভীমরুল দেখেছিলেন। কিন্তু সেটিকে তিনি মারতে পারেননি। তারও নাম-ঠিকানা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হল।
তোতলামি করে কথা বলায় জ্যাপের একটু সন্দেহ হল। এরপর নরম্যান গেলকে ভাবা হল। যিনি দন্ত চিকিৎসক। তিনি প্লেনের মধ্যে সন্দেহজনক কিছু পাননি। কোনো ভীমরুল তার চোখে পড়েনি।
এরপর জেমস্ রাইজার রেগে সবার শেষে এলেন। তিনি কোনো চিৎকার শোনেননি। দুজন পরিচারক ছাড়া কাউকে আসতে দেখেননি। বাঁকানল তিনি চেনেন না। একজন কনস্টেবল ঘরে ঢুকে বললেন যে তিনি বাঁকানল খুঁজে পেয়েছেন যাতে কোনো আঙুলের ছাপ নেই, তবে সার্জেন্ট তাকে এটা সাবধানে মুড়ে রাখতে বলেছেন।মিঃ রাইজ্যার উৎসাহভরে দেখলেন এবং জিনিসটার অভিনবত্ব স্বীকার করলেন।
এটি কোথা থেকে পাওয়া গেছে এ প্রসঙ্গে জানা গেল ৯ নম্বর আসনের পিছনের থেকে এটি পাওয়া গেছে। পোয়ারো বললেন ৯ নম্বর আসনটা তার ছিল। মিঃ রাইজ্যার জ্যাপকে বললেন এটা জ্যাপের পক্ষে একটু অস্বাভাবিক। জ্যাপ মনে করলেন যে এটা দিয়ে কাজ সারা হয়েছে।
এরপর জেন গ্রে নামক একজন সুন্দরী তরুণীকে জেরা করা হল। সে বলল যে, তার বাড়ি বাটন স্ট্রিটে–ঠিকানা ২০ নং হারগেট স্ট্রিট, নর্থ ওয়েস্ট ৫, সে লা পিনেত থেকে ইংল্যান্ডে ফিরছে। পরের প্রশ্ন, সেই লটারীর টিকিট কেনার কথা ক্রমে মনে পড়লো, বাঁকানল মেয়েটি চেনে না। সেই মহিলাও তার অপরিচিত। তাকে লা বুর্জেত-এ লক্ষ্য করেছে। জেনের কাছ থেকে কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য বের করতে পারা গেল না। জ্যাপ বাঁকানলের চিন্তায় মন দিলেন। এ ব্যাপারে তিনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ চাইবেন বলে ঠিক করলেন। পোয়ারো বললেন, ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় এক টুকরো ছোটো কাগজ ওই নলটির গায়ে আটকানো আছে। দেখে মনে হয় নলটার দাম লেখা টিকিটের একটা ছেঁড়া অংশ। তার ধারণা এই বিশেষ জিনিসটা কোনো গ্রামাঞ্চল থেকে কোনো দুর্লভ শিল্পসংগ্রহকারী দোকান থেকে ঘুরে এসেছে। পোয়ারো মালপত্রের তালিকার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। জ্যাপ তার প্রয়োজন নেই বললেন। দাম লেখা ছেঁড়া টিকিটটা ছিঁড়তে বলছিলেন। এই খুনের ব্যাপারটা এতই সোজা যে কোনো রদ্দিমার্কা লেখকও এটার সমাধান করে দিতে পারে।
.
০৪.
বিচার তদন্ত
চারদিন পর, মেরী মরিসের হত্যা সম্পর্কে বিচার বিভাগীয় তদন্ত বসলো। মৃত্যুর ধরন জনসাধারণের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করল।
প্রথম সাক্ষী মেত্র আলেকজাণ্ডার নিয়ো, ফরাসি ভদ্রলোক ইংরেজিতে উত্তর দিচ্ছিলেন। বিচারক জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি মৃতদেহ চেনেন কিনা। তিনি বললেন যে সেটি তার মক্কেল, মেরী অ্যাঞ্জেলিক মরিসোর। উনি আর কোনো নামে পরিচিত কিনা জানার জন্য তিনি বললেন, মাদাম গিজেল নামে যা তার ব্যবসায়িক নাম ছিল। তিনি একজন নামকরা মহাজন ছিলেন। তিনি ব্যবসা চালাতেন তিন নম্বর জুলিয়েন স্ট্রিটে, তার বাসভবনে। বিচারকের ধারণা তিনি প্রায়ই লন্ডনে যেতেন। জের আলেকজান্ডারের মতে তিনি ইংরেজদের উচ্চ পেশার মহিলাদের সঙ্গে বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যাবসা করতেন। তিনি বললেন যে, তিনি নিজেই ব্যবসা-বাণিজ্য চালাতেন, শুধু আইনগত দিকটাই আলেকজাণ্ডার নিজে দেখাশোনা করতেন। বিভিন্ন প্রশ্নের রেশ ধরে তিনি বললেন, তিনি ধনী মহিলা ছিলেন, তিনি শত্রহীনা ছিলেন কিনা তা তিনি বলতে পারেননি।
এরপর হেনরি মিচেল বললেন যে সে ইউনিভার্সাল এয়ারলাইন্স লিমিটেডে কাজ করে। সে বলল যে ছমাস আগে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের প্লেনে নিযুক্ত ছিল। তখন সে দু-একবার তাকে প্লেনে দেখেছে। মাদাম গিজেল নাম সে আগে শোনেনি। সে মারা যাওয়ার দিনের ঘটনা বলল সে কি কি দেখেছে।
এরপর তাকে (হেনরি) বাঁকা নল দেখানো হলে সে বলল, এ জিনিস সে দেখেনি। অ্যালবার্ট ডেভিস নামে পরিচারককে জেরা করতে গিয়ে জানতে চাইলেন সে কিভাবে মৃত্যু সংবাদ জানতে পারল। সে বলল, সে মিচেলের কাছ থেকে একজন যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছিল এটা শুনেছিল। সেও বাঁকানল নামক যন্ত্রটা দেখেনি এটা বলল।
রজার ব্রায়ান এরপর সাক্ষী দিলেন। তিনি বললেন যে, তিনি মৃত্যুর আধঘণ্টা পর পরীক্ষা করে দেখেছিলেন। তিনি গলার কাছে ফুটো লক্ষ্য করেছিলেন।
এরপর ডাঃ হুইগলার বলেন, গত মঙ্গলবার বিকাল তিনটার একটু পরে মাঝবয়সী মহিলার মৃত দেহ দেখানো হয়। ঘাড়ের পাশে এটা গোল ফুটো তার চোখে পড়ে। ঠিক গলার পাশে ধমনীর উপর ফুটোর সঙ্গে ভীমরুলের কাটা ফোঁটানোর দাগ অথবা যে কাটাটা দেখানো হয়েছিল সেই কাঁটা ফোঁটানোর দাগ ছিল। তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন রক্তের সঙ্গে ফীব বা গাছের কড়া বিষ মেশানোর ফলেই মৃত্যু হয়েছে। এই বিষ সম্পূর্ণ তার অজ্ঞাত।
এরপর মিস্টার উইন্টারশুন বললেন যে তিনি বিশ্লেষণ করে দেখেছেন মূলতঃ এই তীর একটা দেশীয় কিউবার বিষের মধ্যে ডোবানো হয়েছিল–যে বিষ কোনো কোনো উপজাতি তীরের বিষ হিসাবে ব্যবহার করে। দক্ষিণ আফ্রিকার বুম্মত নামে এক বিষাক্ত সাপের বিষ দেওয়া হয়েছে। এই বিষ চামড়ার নিচে সাংঘাতিকভাবে রক্তক্ষরণ করে। হৃৎপিণ্ডের প্রতিক্রিয়া হয়। মিঃ উইন্টারস্পুন বললেন, এইভাবে তিনি কাউকে খুন করতে দেখেননি।
ডিটেকটিভ সার্জেন্ট উইলসন তার সাক্ষ্যে বললেন, একটা আগুনের গণ্ডির পিছনে ওই বাঁকানল তিনি দেখতে পান, দেখা গেছে ওটা ছুঁড়লে প্রায় দশগজ পর্যন্ত যায়।
হরবেরিল কাউন্টেস-এর বক্তব্য থেকেও কিছু পাওয়া গেল না, মাদাম ভেনেসিয়া কারো বক্তব্য থেকেও কিছু পাওয়া গেল না।
এরপর জেমস বেল রাইজার নামক এলিস ভেন সিমেন্ট কোম্পানির ম্যানেজিং ডাইরেক্টার তিনি বাঁকানল দেখেননি, তিনি আসন উঁচু বলে কারোকে দেখতে পাননি। তিনি কারোকে বাঁকা নল তাক করতে দেখেননি। তিনি দুজনকে উঠে সামনে প্রসাধন ঘরের দিকে যেতে দেখেছেন কিন্তু তাদের হাতে কিছু ছিল না। দাঁতের ডাক্তার নরম্যান গেল নেতিবাচক সাক্ষ্য দিল, মিঃ ফ্ল্যান্সি সাড়া জাগাতে পারলেন না।
মিঃ ফ্ল্যান্সি তার নিজস্ব বাঁকানল আদালতে দেখালেন, তিনি যে খুন করেননি বা খুনে তার বাঁকানল ব্যবহার করা হয়নি এটা প্রমাণ করতে। কিন্তু তাতে তিনি বিচারকের কাছ থেকে নাস্তানাবুদ হলেন। তাকে ন্যায় বিচারে সাহায্য করার জন্য আনা হয়েছে। নিজের প্রতি সন্দেহের জবাবদিহির জন্য নয়।
জেন গ্রে সাংবাদিকদের কলমে কিছু বলতে পারলেন না। মঁসিয়ে আরম্যন্ত জ্যাপ মৃত মহিলাটির অপরিচিত এবং তিনি প্যারিসে খুব যান বলে মহিলার নাম জানেন না। তিনি পৃথিবীর অনেক জায়গায় ঘুরলেও তিনি বিষ বা ওই ধরনের কোনো জিনিস লক্ষ্য করেননি। দুপ-এর পুত্র বলেন, ভীমরুলটা তিনি মেরেছিলেন।
বিচারক এরপর রায় দিলেন যে, ঘটনাটি যখন প্লেনে ঘটেছে অতএব কোনো যাত্রীর দ্বারা হয়েছে। কেউ কিছু দেখতে না পেলেও এটা প্রমাণ হয় বাঁকা নলের মধ্যে বিষ তীর দিয়ে ভদ্রমহিলাকে খুন করা হয়েছে। পুলিশের কাজ এখন কোথায় খুনের সূত্র আছে তা খুঁজে বের করা, যেহেতু খুনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
একজন সদস্য বিচারককে জিজ্ঞাসা করলেন বাঁকানল কোথায় পড়েছিল। মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারোর সিটের তলা থেকে তা পাওয়া যায়। যিনি একজন সুপরিচিত ও শ্রদ্ধেয় গোয়েন্দা। বেসরকারী গোয়েন্দা শুনে অবিশ্বাসী নজর তার উপর স্থির হয়ে রইল। একজন আদালী বিচারকের হাতে কাগজ ঢুকিয়ে দিলেন যার ফলে রায় হল, বিষের প্রভাবে মহিলার মৃত্যু হয়েছে কিন্তু কে এই বিষ ঢুকিয়েছিল তা প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ হাতে নেই।
.
০৫.
খবর নিয়ে
নরম্যান গেল আদালীর কাগজে কি লেখা ছিল তাতে উৎসাহ প্রকাশ করতে এরকুল পোয়ারো বললেন ওটাতে তাকে খুনী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। জেন ও পোয়ারো দুজনে হেসে ফেললেন এবং পোয়ারো নিজেকে কালিমামুক্ত করবেন বলে আশ্বাস দিলেন। গেল পোয়ারো যে গোয়েন্দা সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করল। তিনি আশা করলেন ছদ্মবেশ পড়লেও তাকে চেনা যাবে। এ বিষয়ে জেন জানাল যে এখন গোয়েন্দারা আর ছদ্মবেশ ধরে না, এক জায়গায় বসে মনস্তাত্ত্বিক দিক চিন্তা করেন। কিন্তু মার্কফার মোড়া ভদ্রলোককে তারা দুজনেই ধর্তব্যের মধ্যে ধরলো না। এরপর দুজনে একসঙ্গে চা খেতে গেলেন।
জেনকে গেলের বেশ পছন্দ হয়েছিল। সে বলল যে খুনটুন যাচ্ছেতাই ব্যাপার। জেন তার এই সাক্ষ্য দেওয়ায় তার চাকরিতে অসুবিধে আসতে পারে, একথা বলল নরম্যান গেল। ব্যাপারটাতে তার কোনো দোষ নেই, তিনি খুবই চটে গেলেন। জেন বললেন, তাতে রাগ করার কিছু হয়নি, জেনের বক্তব্য যে তিনিও খুন করতে পারেন কারণ তিনিও সন্দেহের উর্ধ্বে নয়। গেল বললেন তিনি খুন করতেই পারেন না। জেন বললেন, তিনি এ ব্যাপারে এত নিশ্চিত নন কারণ তার একজন ঘ্যানঘেনে গলার খদ্দের আছে যাকে তার খুন করতে ইচ্ছে করে। মনে হয় এটা করলে তার সকাজ করা হবে। কিন্তু খুনটা তিনি করেননি এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। জেন বলল যে, দাঁতের ডাক্তার গেল খুন করেছেন। যদি রোগীরা ভেবে নেয় তাতে এতে কোনো সুরাহা হবে না। গেল বলেন, ওতে তার ভবিষ্যত ক্ষতিগ্রস্থ হবে। দাঁতের ডাক্তার বলে জেন তাকে অপছন্দ করেছেন এটা জানতে চাওয়ায় গেলকে জেন বললো, নিঃসন্দেহে সে একজন সহকারী, চুল বাঁধনেওয়ালীর থেকে অনেক উপরে। গেল জেনকে একদিন ডিনারে নিমন্ত্রণ করলেন, তিনি জেনের লা পিনেত কেমন লাগল জিজ্ঞাসা করায় জেন তাকে লটারী জেতার কথা জানাল। তাদের দুজনের কথাবার্তার মাঝে একজন লোক এসে দাঁড়াল, তিনি সাপ্তাহিক হাউস পত্রিকা থেকে আসছেন। তিনি টাকার বিনিময়ে খুনের ঘটনা লিখতে চান, পঞ্চাশ বা ষাট ডলারের বিনিময়ে। এই কাজে জেন আগ্রহী হল না। সে বলল, সে পারবে না। ভদ্রলোক তাকে অনুলিখনের আশ্বাস দিল। কিন্তু জেন তা করতে না চাওয়ায় ব্যক্তিটি গেলকে একশো ডলার দিতে চাইল। কিন্তু জেন তা করতে না চাওয়ায় ব্যক্তিটির অভিজ্ঞতা জানতে চাইল। কিন্তু তিনি সম্মত হলেন না। ব্যক্তিটি বলেন যে এই প্রচারের যুগে এতে তার পরিচিতি বাড়বে কিন্তু গেল তাতে ভয় পেলেন এবং তিনি তার রোগীদের কথা ভেবে একাজে রাজি হলেন না। তার মতে তার রোগীরা ভাববেন তিনিও খুনের মামলায় জড়িত। এরপর তিনি লোকটিকে যেতে বললেন।
বেশ খুশী মনে ব্যক্তিটি দোকান থেকে বেরিয়ে গেল। যাবার আগে সে তার উক্তিটি দিয়ে গেল।
সাপ্তাহিক হাউসের পরের সংখ্যাতেই মাঝ আকাশে হত্যা রহস্য শিরোনামে দুই সাক্ষীর বক্তব্য বেশ ফলাও করে ছাপা হলো। মিস্ জেন গ্রে কিছু বলেননি। নরম্যান গেল তার পেশার ক্ষতির জন্য কিছু বলতে চাননি। জেন ঘটনাটি পড়ে বলল যে, ওই লোকটা নামী লোকের কাছে কেন গেল না। গেলের বক্তব্য যে সম্ভবতঃ তার কাছে তারাই (জেন ও গেল) নামী লোক। জেনকে গেল জিজ্ঞাসা করলেন যে প্লেনের মধ্যে অন্য কেউ এটা করতে পারে, কিন্তু বিচারকের কথায় ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়। কিন্তু তার মতে গেল খুন করেননি। তবে অবশ্যই সে নিজেও করেনি। তবে তার কোনো ধারণা নেই।
এ বিষয়ে নরম্যান গেলের ধারণা জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলল, যে সে কিছুই দেখেননি এবং তার মনে হল কিছু দেখা উচিত ছিল। কিন্তু সে ব্যস্ত ছিল জেনকে দেখতে যাকে সে বিয়ে করতে চায়। তার মনে হল যে সাংবাদিকদের কথায় রাজি হলে ভালো হত। জেনেরও গেলকে খুব পছন্দ হয়েছিল। সেও মুগ্ধ চোখে তাকে দেখায় অন্য কিছু দেখার সুযোগ পাননি।
জেনকে জিজ্ঞাসা করায় কে খুন করতে পারে সে বলল, তার মনে হয় পরিচারক নয় আসলে গেল দুই ভদ্রমহিলাকে সন্দেহ করলেও মিস হরবেরিল জেনের মতে খুনী হতে পারেন না এবং মিস কার একেবারে গেঁয়ো, তিনি খুন করতে পারেন না। এ বিষয়ে গেল একমত, তার মতে গেঁয়ো লোক সন্দেহের উর্ধ্বে নয়। ডাক্তারটিকে তারা সন্দেহ করলেও সঠিক প্রমাণের অভাবে সেও ঠিক সন্ধিগ্ধ হল না।
জেন বলল, উনি যদি মহিলাটিকে খুন করতে চাইতেন, তাহলে এমন কিছু ব্যবহার করতেন, যার নাম পর্যন্ত কেউ কোনোদিন কানেও শোনেনি। নরম্যান এটা ঠিক একটু খুঁতখুঁতে ভাবে বলল, বেঁটে মতো ভদ্রলোক মিঃ ফ্ল্যান্সিকে সন্দেহ করেননি গেল। কিন্তু জেন মনে করেন যে তিনি যদি সত্যিই খুনী হতেন তাহলে তিনি বাঁকানলটি দেখাতেন না। এই কথায় গেল সম্মতি দিলেন। জেনের সন্দেহের তীর এবার রাইজ্যার এবং ফরাসি পিতাপুত্রের দিকে। তার মতে ফরাসি দুজনের মধ্যে যে ছোটো তাকে চিন্তিত দেখাচ্ছিল। গেলের মতে তারা দুজনে পৃথিবীর বিদঘুঁটে জায়গা ঘুরে এসেছেন যার জন্য তাদের প্রতি সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক এবং কেউ যদি কাউকে খুন করে তাহলে অবশ্যই তাকে চিন্তিত দেখাবে। জেন বলল যে তারা দুজনে যেন খুনী না হন তাহলে সে খুশী হবে।
গেল বলল, কাজটা সহজ হবে না। জেনের মতে মৃত মহিলার সম্পর্কে সবকিছু ভালোভাবে জানতে হবে। জেনের মতে আন্দাজে ঢিল ছোঁড়া হচ্ছে। জেনের মতে এর প্রয়োজন আছে। গেল বললো, এই খুন তাদের জীবনকে জড়িয়ে ধরেছে। এর কালো ছায়া তাদের ভবিষ্যত জীবনের ওপর কী প্রভাব বিস্তার করতে চলেছে তা অজ্ঞাত। জেন এটা শুনে অত্যন্ত ভীত হল। এবং এ কথা বলতে বারণ করল।
গেল বলল যে, সে নিজের সম্পর্কে ভীত হয়ে পড়েছে।
.
০৬.
শলাপরামর্শ
এরকুল পোয়ারো আবার বন্ধু ইনসপেক্টার জ্যাপের সাথে মিশলেন। পোয়ারোকে বললেন, যে অল্পের জন্য তিনি জেলে ঢোকার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। পোয়ারো নিজের পেশার প্রতি খুব চিন্তিত।
রোগা লম্বা মতন লোকটি ফরাসি গোয়েন্দা দপ্তরের একজন লোক, মঁসিয়ে ফার্মে এই খুনের মামলার সাহায্য করার জন্য এসেছেন।
ফার্নে করমর্দন করে বললেন যে বেশ কয়েকবছর আগে তার এরকুল পোয়ারোর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। মঁসিয়ে গিরাদের কাছে তার অনেক কথা শুনেছেন। পোয়ারো তাদের দুজনকে তার বন্ধু মেত্র নিয়োর সঙ্গে নৈশাহারের নিমন্ত্রণ করলেন। পোয়ারো বললেন একজন মহিলাকে তিনি বলেছেন তার চরিত্রের কলঙ্ক মোছর জন্য খুব উদ্বিগ্ন। জ্যাপ বললেন যে জুরী ভদ্রলোকের পোয়ারোর চেহারাটা পছন্দ হয়নি।
ফার্নে, থিবো, জ্যাপকে এরকুল পোয়ারো বেশ লোভনীয় খাবার খাওয়ালেন, তাতে সকলেই বেশ খুশী মনে হল। ইনসপেক্টার জ্যাপের সঙ্গে থিবো আলোচনা করে খুব তাড়াতাড়ি যে সিদ্ধান্তে এসেছিলেন তাতে তিনি মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যাপারগুলি শুধু জানতে পেরেছিলেন। থিবো বললেন যে, মাদাম গিজেল সম্পর্কে তিনি খুব সামান্য জানেন, সারা দুনিয়া তাকে যেভাবে জানে, তাকে সেইসব সাধারণ মানুষ হিসাবেই জানেন, মঁসিয়ে ফার্নে বেশির ভাগ জানেন বলে তিনি বলেন যে, তার (গিজেল) এই চরিত্রের জুড়ি মেলা ভার, বয়সকালে তাকে দেখতে ভালোই ছিল। জলবসন্তের ফলে তার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। তিনি ছিলেন এমন একজন মহিলা, যিনি ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করেছেন, অগাধ ক্ষমতাও ধরতেন। ব্যাবসার ক্ষেত্রে তিনি খুবই বিচক্ষণ ছিলেন, তিনি ক্রমশই একজন কঠিন মনের ফরাসী মহিলা যিনি আবেগের বশবর্তী হয়ে কখনোই ব্যাবসার ক্ষতি হতে দিতেন না। কিন্তু যথাযথ সতোর সঙ্গে ব্যাবসা চালাবার বিরাট সুনাম তার ছিল।
ফার্মে বললেন, মাদাম গিজেল খুব সৎ ছিলেন অবশ্য তার সামর্থ্য অনুযায়ী যদিও সাক্ষ্য প্রমাণ পেলে অদূর ভবিষ্যতেই হয়তো আদালতে তার ডাক পড়তো। তিনি ব্ল্যাকমেল করে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতেন, মাদাম গিজেলের টাকা ধার দেওয়ার একটি বিশেষ রীতি ছিল, যাকে খালি হাতে টাকা ধার দেওয়া বলে তাই। অবশ্য কত টাকা ধার দেবেন এবং সেটা কি ভাবে শোধ দিতে হবে, সেটা তার ইচ্ছে অনুযায়ী ঠিক হতো, কিন্তু তার কর্মপদ্ধতি এমনই ছিল যে টাকা তিনি নিশ্চয়ই ঠিক ফেরত পেতেন।
মাদাম গিজেলের নিজস্ব একটা গোয়েন্দা দপ্তর ছিল। তার মক্কেলরা ছিল সমাজের উঁচুতলার লোক। যারা কুৎসা রটার ভয়ে ভীত থাকেন। তার দপ্তরের লোকজন তার মক্কেল সম্পর্কে খবর রাখত। মাদাম বিশ্বাসী লোকেদের প্রতি বিশ্বাস রাখতেন। টাকা উপায় করার জন্য কখনই গোপন অস্ত্র ব্যবহার করতেন না। যদি না আগে সেই টাকাটা কেউ তার কাছ থেকে ধার নিয়ে থাকতো। যদি টাকা না পাওয়া যেত তখন তিনি যে সমস্ত খবরাখবর জোগাড় করতেন সেগুলো ফাস করে দিতেন কিংবা এ ব্যাপারে জড়িত কোনো লোককে খবরটা জানিয়ে দিতেন। এর ফলে তার সরাসরি লাভ হত না বটে পরোক্ষভাবে হত, এতে অন্যরা ভয় পেয়ে ঠিকমতো টাকা মিটিয়ে দিত। জ্যাপ বললেন যে এর ফলে খুনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটা ধারণা পেতে পারি। তার পরই প্রশ্ন ওঠে টাকাকড়ি কে পাবে।
থিবো বললেন তার মেযে মাদমোয়াজেল অ্যান মরিসে টাকাটা পাবেন। সে তার মায়ের কাছে থাকতেন না। তার মা তাকে একেবারে ছোট্টবেলার পর দেখেননি, কিন্তু বেশ কয়েক বছর আগের উইলে তিনি সমস্ত সম্পত্তি তার মেয়েকে দিয়ে যান। তার টাকার পরিমাণ আশি নব্বই লক্ষ ফ্রা হবে–যা এক লক্ষ পাউণ্ডের থেকে বেশি। উনি যদি প্লেনের মধ্যে না থাকতেন টাকার লোভে মাকে খুন করার জন্য ওই মেয়েকেই সন্দেহ করা যেত, জ্যাপ বললেন। মেয়েটির বয়স চব্বিশ-পঁচিশ হবে। মেয়েটিকে খুনের ব্যাপারে জড়ানোর কোনো কারণ আছে বলে মনে হচ্ছে না।
জ্যাপের মতে প্লেনের কেউ মিথ্যা কথা বলেছে। সেই লোকটাকে খুঁজে বার করতে হলে মাদাম গিজেলের গোপন নথিপত্র দেখলেই হবে। কিন্তু থিবো বললেন, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে জানা গেছে তার সমস্ত নথিপত্র সিন্দুকে থাকত, সব কাগজপত্র পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। তার মৃত্যুর আগে তিনি তার সহকারিণী এলিসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তার কত্রীর কোনে বিপদ-আপদ ঘটলে সে সিন্দুক খুলবে এবং সিন্দুকের সমস্ত জিনিস পুড়িয়ে ফেলবে। লানের বললেন যে মাদাম থিবো অত্যন্ত ক্রুর ছিলেন কিন্তু অবিশ্বাসের কাজ যারা করত তাদের কাছে। তিনি নিষ্ঠুর ব্যবহার করতেন অবিশ্বাসীদের প্রতি। মেত্র থিবো চলে যাচ্ছিলেন এবং যাবার আগে তিনি আশ্বাস দিলেন যদি আর কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায় তাহলে তার ঠিকানা অন্যদের জানাই আছে। এই বলে তিনি চলে গেলেন।
.
০৭.
সম্ভাবনা
মেত্র থিবো চলে যাবার পর অন্য তিনজনের মধ্যে আলোচনা চলতে থাকল। জ্যাপ বললেন, প্রমিথিউস বিমানে ১১ জন যাত্রী ছিলো শুধু পেছনের কামরায়। এই ১১ জন ছাড়া ২ জন পরিচারক। তার মধ্যে একজন নিশ্চয়ই খুন করেছে। ইংরেজের ব্যাপারটা উনি নিজেই দেখবেন। কিন্তু ফরাসি অনুসন্ধান করার কাজ ফার্নের, ফার্নের মতে গ্রীষ্মকালে মাদাম গিজেল ফ্রান্সের উপকূলের নানা জায়গায় যেমন দোভিশ, ল্যাপিনেত, উইমারো প্রভৃতি জায়গায় এলাহি কারবার খুলে বসতেন। দক্ষিণ দিকে অ্যালিটবগ, নাইস এসব জায়গায়। জ্যাপের মতে আসল খুনের ব্যাপারটা জানতে হবে, প্রমাণ করতে হবে বাঁকানল ব্যবহার করার মতো সুবিধাজনক জায়গায় কি ছিলো। প্রথমে একজন যাত্রীকে আলাদাভাবে বেছে নিয়ে যুক্তি প্রমাণ দিয়ে বিচার করা আরও প্রয়োজন–সম্ভাবনার দিকগুলো বিচার করে পোয়ারো মনে করেন তাকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হোক; জ্যাপও এতে গভীরভাবে অসম্মতি জানালেন। পরিচারক দুজনকে সন্দেহের উর্ধে রাখা হল। কারণ তারা দুজন মোটা টাকা ধার নিয়েছিল, তা বিচার্য নয়। কিন্তু সম্ভাবনার কথা বিচার করলে তারা খুন করেছে এটা হতে পারে। এদের পক্ষে এমন জায়গা ঠিক করে বাঁকানল ছোঁড়া যেতেই পারে। ডানদিকের এই কোণটা থেকে। কিন্তু এটা অসম্ভব, কামরাভর্তি সকলের চোখ এড়িয়ে এটা করা সম্ভব নয়। খুনীর পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়। এইরকম ঘটনা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়, খুনীকে আমরা ইতিমধ্যে চার-পাঁচবার ধরে ফেলেছি।
পোয়ারোর মতে এটা পাগলামি হলেও এটা ঠিক যে আর তিনজন যে আলোচনা করছে যে কে খুন করেছে। এটাতে খুনী সফল। তার যুক্তি হল সেই প্রবাদ ফলেন পরিচয়তে, অর্থাৎ খুনী এ ব্যাপারে সফল। পোয়ারো বললেন, আমরা ডাক্তারী প্রমাণ পেয়েছি, অস্ত্রটা আমাদের হাতে রয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন আগে ওটা এটা হাস্যস্পদ ব্যাপার হত।
ফার্নের মতে মনস্তত্ব বিচার করতে হবে খুনীর মনস্তত্ব বিষয়ে। জ্যাপের নাম দিয়ে ভোস ভোস শব্দ করলেন অর্থাৎ এ বিষয়ে তার পছন্দ নয় জ্যাপ বললেন, ফার্নের যা সন্দেহবাতিক তাতে এই ঘটনা হওয়া সম্ভব যে ভদ্রমহিলা এইভাবে খুন হননি, কিন্তু ফার্নে এতে অসম্মতি দিলেন, বললেন খুন যে বাঁকা নলের মাধ্যমে হয়েছে এটা ঠিক। জেন গ্রে-কে এরপর সবাই খুন করেছিল বাঁচাকে খুন করার জন্য সাপেরতে খরচ করেছে, তার মানে হতে শতকরা দুজনের আছে কিনা যায় না। এছাড়া সাপের বিষ রহে বুড়াটাকে সন্দেহ করেন। যে মেয়েটি লটারীতে টাকা পেয়ে লা পিনেতে খরচ করেছে, তার মানে মেয়েটি জুয়ারী। কিন্তু মেয়েটি বুড়ীকে খুন করার জন্য সাপের বিষ পাবে কোথা থেকে। সে যে বুড়ীটাকে খুন করেছিল বা টাকা ধার করেছিল তা জানা যায় না। এছাড়া সাপের বিষ ব্যবহার করার জ্ঞান পৃথিবীতে শতকরা দুজনের আছে কিনা সন্দেহ। পোয়ারো বললেন, অমি জিনিসটা এইভাবে দেখছি, খুনী নিশ্চয়ই এই দুই শ্রেণীর যেকোনো এক শ্রেণীতে পড়বে। হয় সে এমন লোক, যে পৃথিবীর সমস্ত বিদঘুঁটে জায়গায় ঘুরে এসেছে, এমন লোক যে সাপখোপ সম্পর্কে কিছু অন্তত জানে এবং অসভ্য উপজাতি লোকেরা তাদের শত্রুদের খতম করার জন্য কতো রকমের সাংঘাতিক বিষ ব্যবহার করে সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, অন্য শ্রেণী হল বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলে গেছোসাপের বিষ যা নিয়ে ভয়ানক উঁচু শ্রেণীর গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। যা উইন্টারশূনের থেকে জানা গেছে। সাপের বিষ, মানে কেউটে সাপের বিষ ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়, তবে দুটো শ্ৰেণীই গ্রে মেয়েটির সঙ্গে মেলে না। ওর সঙ্গে এ ব্যাপারে যেটুকু সম্পর্ক তাতে খুনের উদ্দেশ্য অবাস্তব বলে মনে হচ্ছে। বিষ জোগাড় করার সম্ভাবনাও খুবই কম এবং বাঁকানল ব্যবহার করা অসম্ভব!
জ্যাপ বললেন যদি মেয়েটি তার জায়গায় থেকে না উঠে থাকে তাহলে মাদাম গিজেলের ঘাড় তাক করে কাটাটা ছোঁড়া সম্ভব নয়। তাহলে তাকে সন্দেহ থেকে বাদ দেওয়া যেতেই পারে।
নরম্যান গেল উল্টোদিকে ১২ নম্বর আসনে বসেছিল। ওর পক্ষে সাপের বিষ জোগাড় করার সম্ভাবনা বেশি। জ্যাপ বলে চললেন, তার ধারণা নরম্যান এমন জায়গায় যাতায়াত করে যেখান থেকে এই ওষুধপত্র জোগাড় করা সম্ভব, তার হয়তো কোনো বিজ্ঞানী বন্ধু আছে। কিন্তু যুক্তি প্রমাণের কথা বিচার করলে ওকে বাদ দেওয়া যায়। প্রসাধন কক্ষে ফেরার সময় সে মাঝখানে এই পর্যন্ত এই যে দেখুন এর বেশি এগোতে পারে না। আর ওখান থেকে বাঁকানল ছুঁড়ে মহিলার ঘাড়ে কাটা ফুটিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। এবং কাটা তার পোষমানা নয় সেটা বললেই সমকোণে ঘুরে গিয়ে বিধতে পারে না, তিনজন নকশার উপর এটি ঝুঁকে পড়ে দেখছিলেন।
এরপর ১৭ নম্বর আসনে মিসেস ভেনেসিয়ার প্রতি নজর পড়ল। এর পক্ষে মাদাম গিজেলের কাছ থেকে টাকা ধার নেওয়া অসম্ভব নয়। এর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া উচিত জ্যাপ বললেন, এর আগা থেকে তীর ছোঁড়া সম্ভব। তাহলে মাননীয়া ভেনেসিয়ার পক্ষে কোণাকুণি তীর ছোঁড়া সম্ভব, অবশ্য এতে সফল হওয়া অসম্ভব। কারণ তিনি একজন মহিলা যিনি বন্দুক ছুঁড়তে পারেন, অভ্যাস ঠিক থাকলে খুন করতে পারা যায়। পৃথিবীর অদ্ভুত জায়গায় বিরাট শিকার করার ফলে তার যেসব বন্ধু আছে তাদের থেকে সন্দেহজনক বলে জিনিস জোগাড় করেছেন। ব্যাপারটা আজগুবি মনে হচ্ছে এর পেছনে কোনো যুক্তি নেই। ফার্নে এতে সহমত। তবে তাকে ফার্নে খুনী মানতে রাজী নয়।
লেডি হরবেলি লা পিনেতে জুয়া খেলতে গিয়ে অগাধ টাকা খুইয়েছেন। তিনিও মাদাম গিজেলের মতো ঘুঘু মেরেছিলেন। ফার্নে এই খবর দিলেন। যাতে সকলেই একমত। তিনি নিশ্চয়ই তার সামনের ওপর হাঁটু গেড়ে বসে ২৩ নম্বর আসন থেকে এই কাজ করেননি। অতএব সন্দেহের তালিকা থেকে ইনিও বাদ।
নয় ও দশ নং আসনে মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো ও ব্রায়ান বসেছিলেন। এরকুল পোয়ারো বললেন, তার পেট ব্যথা করছিল।
এবার সন্দেহ হল ডাঃ ব্রায়ানের উপর। তিনি একজন হোমরাচোমরা ডাক্তার, তিনি ফরাসি মহিলার কাছ থেকে টাকা ধার করবেন এটা মনে হয় না। ডাঃ ব্রায়ানের পক্ষে এ কাজ করা অসম্ভব কিছু নয়। তার বড়ো বড়ো গবেষকদের সঙ্গে চেনাজানা খুব স্বাভাবিক। সেই সূত্রেই তিনি হয়তো সহজেই এক শিশি সাপের বিষ পাচার করেছেন।
পোয়ারো প্রতিবাদ করলেন, বাগানের ঝুমকো ফুল ভোলার মতো নয় এইসব জিনিস! তারা মিলিয়ে রাখেন।
জ্যাপ বললেন মিলিয়ে দেখলেও ক্ষতি নেই। যে কোনো চালাক লোকই ওই শিশির বদলে অন্য একটা ক্ষতিকারক বিষের শিশি রেখে আসতে পারে। একাজ সম্ভব শুধু একটি মাত্র কারণে। কারণ ডাঃ ব্রায়ান একটি মাত্র লোক যাকে কেউ সন্দেহ করতে পারে না, কিন্তু একটা খোচ থেকে যাচ্ছে, তিনি কেন বললেন না যে ব্যক্তির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি।
পোয়ারোর ধারণা ওটা ছিল ডাক্তারের প্রথম অনুমান। সত্যি কথা বলতে গেলে মনে হয় ব্যাপারটা স্বাভাবিক। সম্ভবতঃ ভীমরুলের কামড়ে…।
না, এই ভীমরুলের কথা আর ভুলবেনা দেখছি। প্রথম থেকে ভীমরুল ভীমরুল করে গেল। পোয়ারো বললেন ঘটনাচক্রে তিনি মেঝে থেকে কাটা কুড়িয়ে পেয়ে বুঝতে পারেন ঘটনাটা খুন। যেভাবেই হোক ঘটনাটা চোখে পড়তেই জ্যাপ বললেন। পোয়ারো বললেন, না এ সম্ভাবনাও ছিলো যে কেউ দেখার আগে কাটাটা তুলে নিত। সে ব্রায়ান বা অন্য কেউ হোক। ওটা দুষ্কর কাজ।
ফার্নে বললেন যে, খুন বলে ঘটনাটা যদি জানতে না পারা যায়, তাহলে কোনো ভদ্রমহিলার হার্ট ফেল হলে, সেই সময়ে কোনো লোক তার গায়ের পাশে একটা রুমাল ফেলে দিয়ে নিচু হয়ে সেটা কুড়িয়ে নেয়, তা কেউ লক্ষ্য করেছে কী।
জ্যাপ এটা মেনে নিলও। তার ধারণা ব্রায়ান সন্দেহজনক ব্যক্তি। একটু চেষ্টা করলেই তিনি মাথা ঘুরিয়ে খুব সহজেই কোণাকুণিভাবে বাঁকানল থেকে তীর ছুঁড়তে পারতেন।
ফার্নে বললেন, এর মধ্যে মনস্তাত্বিক কারণ আছে। যার মতানুযায়ী একটা ঘরে আছেন বলে কেউ যদি সেই সময়ে ছুরি বের করে কাউকে খুন করে, তখন কেউ তাকে লক্ষ্য করবে না।
পোয়ারো বললেন, বিষ খাইয়ে মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এই প্রশ্নটাই উঠেছিল। সেখানেও একটা মনস্তাত্বিক মুহূর্ত ছিল। আমরা যদি আবিষ্কার করতে পারি যে এমিথিউসের প্যারিস থেকে ক্রয়ডন আসার সময়টুকুর মধ্যে এমন কোনো মুহূর্ত এসেছিলো যাতে খুনীর হাত ছিলো, নিশ্চয়ই সে সঠিক চেষ্টার ফলে মুহূর্তটা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।
জ্যাপ বললেন ৮ নম্বর আসনে ড্যানয়েল মিচেল ক্ল্যাইন্স, যাকে সবচেয়ে সন্দেহ করা যায়। একজন রহস্য কাহিনীকারের চেয়ে আর কার পক্ষেই বা সাপের বিষ নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার, আর কার পক্ষেই বা একজন রসায়নবিদের সঙ্গে জানাশোনা থাকতে পারে, যে সমস্ত সাংঘাতিক জিনিস নিয়ে নাড়াচাড়া করে। ভুলে গেলে চলবে না উনি মাদাম গিজেলের সামনের পাশ দিয়ে একবার পেছনের দিকে গেছিলেন, অতগুলো যাত্রীর মধ্যে একমাত্র ইনিই।
পোয়ারো এটা ভোলেননি বললেন, জ্যাপ বললেন তিনি কাছ থেকে বাঁকানলটা খুঁজতে পারতেন। আর এ ব্যাপারে রেহাই পাবারও যথেষ্ট সুযোগ তার ছিলো, বাঁকানল সম্পর্কে সবকিছুই তিনি জানেন তাই বলেছিলেন তিনি।
একেবারে নির্ভেজাল চতুরতার কাজ, জ্যাপ বললেন, তার সন্দেহ আদালতে যে বাঁকানলটা দেখানো হয়েছে সেটা দু-বছরের পুরানো। একজন মানুষ যে সর্বক্ষণ কেবল খুন-খারাপির কথা ও গোয়েন্দা গল্প নিয়ে জাবর কাটবে এটা আমার ঠিক স্বাস্থ্যকর বলে মনে হয় না। ৪ নম্বর আসনে রাইজ্যার, আসনটা মৃত মহিলার আসনের ঠিক সামনেই, তাকে ছেড়ে দেওয়া যায় না। তিনি একবার প্রসাধন ঘরে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় হয়তো খুব কাছ থেকে বাঁকা নলে ফুঁ দিয়েছিলেন। তেমন কোনো অসুবিধা নেই। এই কাজ করার সময় শুধু তাকে এই প্রত্নতত্ত্ববিদদের কাছে পর্যন্ত এলেই চলবে। তারা হয়তো ব্যাপারটা দেখেও থাকবেন কিন্তু কিছু করতে পারেননি।
পোয়ারো বেশ চিন্তিতভাবে মাথা নেড়ে বললেন, প্রত্নতত্ত্ববিদরা যদি নিজেদের মধ্যে মগ্ন থাকবেন তাদের কোনো জ্ঞানই থাকবে না। তারা হয়তো খৃষ্টপূর্ব ৫০০০ বা তারও আগের কোনো সময়ের জগতে চলে গিয়েছিলেন যাদের কাছ ১৯৩৫ সালের অস্তিত্ব ছিল না।
জ্যাপ বলতে চাইলেন তারা সারা পৃথিবীর যতসব বিদঘুঁটে জায়গা চষে নানারকম জিনিস খুঁজে বের করেছেন। তাদের কাছে সাপের বিষ বের করা খুবই সহজ। সন্দেহজনকভাবে মাথা নাড়লেন এবং বললেন তারা আগে প্রাচীন নিদর্শন বিক্রয় করতেন। শুধুমাত্র প্রত্নতত্ত্বের নেশায় ওইরকম একটা জমজমাট ব্যাবসা তুলে দেন। তারা খুন করতে পারেন এটা অসম্ভব তবে মামলার পর সবই বিশ্বাস করা।
জ্যাপ একটা কাগজ টেনে নিলেন যাতে তিনি লিখছেন, জেন গ্রের যুক্তি-প্রমাণ খুব কম, সম্ভাবনা একেবারে নেই। গেল-এর যুক্তি-প্রমাণ খুব কম। সম্ভাবনা একেবারেই নেই। মিস বার বার যুক্তি-প্রমাণ খুব কম, সম্ভাবনা এক্ষেত্রে একেবারেই নেই। লেডি হরবেরিল যুক্তি এখন ভালই-সম্ভাবনা–একেবারেই নেই। ব্রায়ান যুক্তি-প্রমাণ এবং সম্ভাবনা দুটোই বেশ ভালো, রাইজ্যার যুক্তি-প্রমাণ অনিশ্চিত। সম্ভাবনা খুবই ভালা, দুপরা কি উদ্দেশ্য সম্পর্কিত যুক্তি-প্রমাণ, সম্ভাবনা ভালোই।
তিনি বললেন ফ্ল্যানিস ও ব্রায়ানের সম্পর্কে অনুসন্ধান করবেন। রাইজ্যারের ক্ষেত্রেও তাই। উইলসনকে তাদের পেছনে লাগিয়ে দেবো। মঁসিয়ে ফার্নেকে দুপদের দায়িত্ব দেবেন।
ফার্নে বললেন মাদাম গিজেলের সহকারিণী এলিসের কাছ থেকে আর কিছু খোঁজ খবর পাওয়া যায় কিনা তিনি দেখবেন। তিনি লা পিনেত গত গ্রীষ্মে গিয়েছিলেন কিনা তা খবর নেবেন, তার প্রতিটি কাজকর্ম পরীক্ষা করে দেখবেন।
পোয়ারো মঁসিয়ে ফার্নের সঙ্গে প্যারিসে যাবেন বলে ঠিক করেছেন। পোয়ারো একটা কিছু চিন্তা করছিলেন, এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে তিনি বললেন তার আসনের পিছনে যে বাঁকানল লুকিয়ে রাখতেন। কিন্তু পোয়ারোর বক্তব্য–হাওয়া চলাচলের জন্য যে একটা ছোট্ট গর্ত তাতে পাতলা কাঁচ টেনে খোলা-বন্ধ করা যায়। ওই পথ দিয়ে বাঁকানল ফেলে দিয়ে ওর হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় তা ভালোই। এক্ষেত্রে খুনী ভয় পেয়েছিল বোধ হয়। জ্যাপ বললেন যে কারণেই হোক বাঁকানল তার আসনের পেছনে লুকানো হয়েছিল। পোয়ারো বললেন, ভালো কথা যাত্রীদের মালপত্রের তালিকা করতে বলেছেন, তা মনে আছে? সেটা করেছেন।
.
০৮.
তালিকা
জ্যাপ মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে বললেন, তিনি যা বলেন তাই করেন। তিনি টাইপ করা একটা কাগজ বার করে বললেন, এই যে আপনার মালপত্র, পোয়ারো কাগজগুলো টেবিলের উপর বিছিয়ে পড়তে শুরু করলেন।
জেমস রাইজ্যার–নাম লেখা লিনেনের রুমাল। মানিব্যাগ–সাতটা এক পাউন্ডের নোট, তিনটে ব্যবসায়িক কার্ড। একটা চিঠি তাতে অংশীদার জাগ এবার ম্যান আশা করেছেন। ধারের টাকার ব্যবস্থা…না হলে আমরা ডুবে যাব, মাও নামে কেউ টেকাভোরের সঙ্গে পরের দিন সন্ধ্যায় দেখা করার কথা লিখেছে। (সাক্ষী কাগজ)। রূপার সিগারেট কেস মোড়া দেশলাই, কলম, একগোছা চাবি, দরজার চাবি, ফরাসি ইংরেজি মুদ্রার কিছু খুচরো পয়সা।
অ্যাটাচি কেস-সিমেন্ট কেনাবেচার কাগজ, একটা কাফ সিরাপ।
ডাঃ ব্রায়ান পকেটে–দুটো লিনেন রুমাল, মানি ব্যাগ, বিশ পাউন্ড এবং ৫০০ গ্রাঃ। কিছু মুদ্রা, সাক্ষাত বই, সিগারেট কেস, কলম, দরজার দাবি আর একগোছ চাবি। বাক্সের মধ্যে বাকি ও স্মৃতিবাহক স্মারক পত্র। নরম্যান গেল–পকেটে সিল্কের রুমাল, মানিব্যাগে একটা ইংরেজি এক পাউন্ডের নোট দুশো ফ্রাঁ, খুচরো পয়সা, দুটো ফরাসি ব্যবসায়িক সংস্থার কার্ড, দুটো দাঁতের যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারকের ব্রায়ান এন্ড যে কোম্পানির দেশলাই বাক্স। লাইটার বনগোলাপ ডালের পাইন, রবারের তৈরি তামাকের ফলে, দরজার চাবি, অ্যাটাচিতে সাদা লিনেনের কোট, দুটো ছোটো ডাক্তারী আয়না, তুলোর বান্ডিল, একটি পত্রিকা স্ট্যান্ড, ম্যাগাজিন, একখানা অটোকার পত্রিকা।
আরম্যান্ড দ্যুপ
পকেটে মানিব্যাগ একটা, এক হাজার ফ্লা এবং ইংরেজি দশ পাউন্ড। খাপে ভরা চশমা, কিছু ফরাসি খুচরো পয়সা, সুতির রুমাল, সিগারেটের প্যাকেট, মোড়া দেশলাই, এক প্যাকেট তাস, দাঁত খোঁচার কাঠি, অ্যাটাচিতে বয়গলি এশিয়াটিক সোসাইটির ঠিকানা লেখা পাণ্ডুলিপি, জার্মান প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক বই, মৃৎশিল্পের নকশা আঁকা দুটো খসড়া কাগজ, কারুকার্য করা একটা বেকের থালা। ন-খানা আলোকচিত্র, সবই মৃৎশিল্পের।
জ্যাঁ দ্যুপ
পকেটে মানিব্যাগে ইংরেজি পাঁচ পাউন্ড ও তিনশো ফ্রা, সিগারেট কেস, সিগারেট হোল্ডার, লাইটার, কলম, পেন্সিল (২), ছোটো নোটবই লেখায় ভর্তি, ইংরেজিতে লেখা চিঠি, তাতে ম্যারিয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছে টোটোহান কাছাকাছি একটা রেস্তরাঁয়, ফরাসি খুচরো পয়সা।
ড্যানিয়েল ক্ল্যান্সি– রুমাল, কলম, মানিব্যাগে চার পাউন্ড, একশো ফ্রা, সাম্প্রতিক কয়েকটি অপরাধ বিষয়ক কাগজ থেকে কেটে নেওয়া অংশ থেকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে। দেশের জমিজমা সংক্রান্ত দুটো চিঠি। সাক্ষাৎ বই, চারটে পেনসিল, পেনসিল কাটা ছুরি, তিনটে রসিদ আর চারখানা বিল, গর্ডন-পত্রিকা থেকে একখানা চিঠি–মাথায় লেখা এম. এস. সিনোটের। অসম্পূর্ণ ক্রসওয়াল পাজল-টাইমস পত্রিকা থেকে কাটা, নোট বইয়ের কতগুলো গল্পের বিষয়বস্তুর খসড়া, ইতালি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ডের কিছু খুচরো পয়সা। কেপলাস–কোনো হোটেলের রসিদ, বিরাট একজোড়া চাবি, ওভারকোটের পকেটে-ভিসুভিয়াস হত্যার রহস্য বইয়ের পাণ্ডুলিপি, আন্তর্দেশীয় রেলের টাইম টেবিল, একটা একজোড়া সোজা টুথব্রাশ, প্যারিসের হোটেলের রসিদ।
মিসকার-হাতব্যাগে লিপস্টিক, পাউডার, দুটি সিগারেট হোল্ডার, সিগারেট কেস, এক জোড়া দেশলাই, রুমাল, দুপাউন্ড খুচরো পয়সা, একটা চাবি।
সাজগোছের বাক্সটা ঘোড়ার চামড়ায় মোড়া। নানারকম শিশি, বোতল, তুলি, বুরুশ, চিরুনি ইত্যাদি নখ পালিশ করার সরঞ্জাম, একটা ছোটো টুথ ব্রাশ, শক্ত, দাঁতের মাজন, সাবান একটা কচি। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের লেখা পাঁচখানা ইংরেজি চিঠি। দুখানা উপন্যাস, দুটো ড্যানিয়েল কুকুরের ছবি। মিস গ্রে-হাতব্যাগে লিপস্টিক, ব্রোজ, পাউডার, একটা দরজার চাবি, তোরঙ্গের চাবি পেনসিল, সিগারেট কেস হোল্ডার, মোড়া দেশলাই, ফরাসি প্রবাদবাক্যের একটা ছোট্ট বই, ছোটো একটা ব্যাগে একশো ফ্রা ও দশ শিলিং ফরাসি এবং ইংরেজি মিলিয়ে কিছু খুচরো পয়সা, নাচের আসরের টিকিট।
কোটের পকেটে–প্যারিসের পোস্ট কার্ড, দুটো রুমাল, সিল্কের মাথায় বাঁধার রুমাল, গ্ল্যাডির একটা চিঠি, এক শিশি অ্যাসপিরিন।
লেডি হরবেরিল-হাতব্যাগে দুটো লিপস্টিক, রুজ, পাউডার, রুমাল, তিনটে নোট, ইংরেজি ছ-পাউন্ড খুচরো পয়সা, একটা হীরের আংটি, ফরাসি ডাকটিকিট, দুটো সিগারেট হোল্ডার বাক্সে জোড়া লাইটার।
সাজগোছের বাক্সে-সাজসজ্জার এলাহি সরঞ্জাম, নখ রং করার হাজারো উপকরণ। ছোট্ট একটা শিশিতে বোরিক পাউডার।
পোয়ায়োর পড়া শেষ হওয়া মাত্র জ্যাপ বললেন, বোরিক পাউডার না ছাই, এই বোতলের সাদা বোরিক পাউডার নয়–কোকেন।
জ্যাপ বললেন যে একজন মহিলা যদি কোকেন নিয়ে ঘুরে বেড়ান তার মানসিক অবস্থা নিয়ে চিন্তা আছে। পোয়ারো বললেন যে এগুলো পড়ে বোঝা যায় কে খুনী? জ্যাপ বললেন কে খুনী পোয়ারো তা বলতে পারবেন? পোয়ারো বললেন, হ্যাঁ। জ্যাপ বললেন, যে পোয়ারো তাকে বোকা বানাচ্ছেন।
ফার্নের মতে এই তালিকা থেকে বেশি দূর এগোনো যাবে না।
পোয়ারো বললেন যে এই আমলার কিছু বিশেষ জিনিস সঙ্গে মিলিয়ে কিছু বোঝা যাচ্ছে। তিনি বললেন এগুলোর মধ্যে থেকে তিনি কিছু খুঁজে পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনাটির অনেক কিছু আছে যা তার কাছে অন্ধকারাচ্ছন্ন। কিন্তু তার একটা বিশেষ সন্দেহ আছে।
জ্যাপ বললেন, তিনি লন্ডনের ওদিকে কাজ করবেন। ফার্নেকে প্যারিসে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হলো যেখানে তার সাথে পোয়ারো থাকবেন।
ফার্নে কাল সকালে ক্রয়ডনে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদায় নিলেন।
পোয়ারো একটা পত্রিকায় লা পিনেত-এ হরবেরিলর কাউন্টেস এবং মিঃ রেমন্ড ক্যাবেলসা দুটো ছবি দেখলেন। এই সেই পথ ধরে এগোনোর কথা ভাবলেন।
.
০৯.
এলিস গ্রেঞ্জার
সকাল ৮-৪৫ মিনিটে বিমানে পোয়ারো ও ফার্নে প্যারিস চলেছেন। ফার্নে ও পোয়ারো ছাড়া কামরাটায় আরো মাত্র পাঁচ-সাতজন যাত্রী। ফার্নে পকেট থেকে একটা ছোট্ট বাঁশের টুকরো বের করে, বার তিনেক সেটাকে ঠোঁটের কাছে তুলে যে কোনো একটা নিশানা করে বললেন, তার বিভিন্ন ভঙ্গিমা সবসময়েই কোনো না কোনো যাত্রীর মনোযোগ আকর্ষণ করল। শেষবার সত্য বলতে কি, প্লেনের সব লোকের দৃষ্টি যেন তার উপর আটকে গেলো।
ফার্নে নিরুৎসাহ হয়ে ধপ করে বসে পড়লেন। আর পোয়ারোকে বললেন যে, পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া ভালো, পোয়ারো এতে একমত। তার এই হাতেকলমের পরীক্ষার ফল হল প্রতিবার কেউ না কেউ তাকে দেখে ফেলেছে। সবাই না হলেও কিন্তু একটা সফল খুনের ব্যাপারে যেখানে সেখানে এটা কার্য নয়। সেক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত ভাবেই নিশ্চিত হতে হবে কেউ আপনাকে দেখতে পাবে না, পোয়ারো বললেন।
ফার্নে বললেন, সেটা সাধারণ অবস্থায় অসম্ভব।
এরকুল পোয়ারো বললেন যে এমন কোনো মনস্তাত্বিক মুহূর্তের সৃষ্টি হয়েছিল যাতে প্রত্যেকের দৃষ্টি অঙ্ক কষে সেদিকে পড়েছিলো।
ইনসপেক্টার জ্যাপ এই বিষয়ে অনুসন্ধান করছেন। মঁসিয়ে পোয়ারো বললেন যে, তার মনে হয় এই ঘটনায় চাক্ষুষ অন্যপথে চালিত হতে পারে, তাই মনের চক্ষু খোলা থোক। মাথার ভেতর ক্ষুদ্র কোষকে কাজের সুযোগ দেওয়া হোক।
ফার্নেকে তিনি বোঝালেন যে আপনার বন্ধু গিরাদ থাকলে আমার পাগলামিতে কান দিত না। এই বলে তিনি কতগুলো অসংলগ্ন কথা বললেন। মিনিট কয়েক পর জানা গেল তিনি চোখ বুজে চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছেন।
প্যারিসে পৌঁছে তারা মাদাম গিজেলের অফিসে এসে পৌঁছলেন। দ্বাররক্ষী পুলিশ দেখে খুব বিরক্ত হলো। ফার্নে গিজেলের অফিসের ঘরে গেলেন। তিনি পোয়ারোকে বুঝিয়ে দিলেন যে ফরাসি পুলিশ প্রথম থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করেছেন। এখানে আমাদের কাজে লাগাতে পারে এটা মনে করে তারা সিলমোহর খুলে মাদামের ঘরে ঢুকলেন।
মাদাম গিজেলের অফিসের ঘরটি ছোটো গুমোট, এর কোণে একটা পুরানো আমলের সিন্দুক, বেশ বড়ো গোছের একটা টেবিল আর অনেকগুলো ছোবড়া বের করা গদি আঁটা চেয়ার। একটিমাত্র জানলা তাও মনে হয় কোনদিন ভোলা হয়নি।
পোয়ারোর টেবিলের তলা থেকে একটা থলি বার করলেন যেটা দারোয়ানদের ডাকার জন্য ব্যবহার করা হয়। সেই ঘর থেকে কোনো ব্যক্তিগত জিনিস পাওয়া গেল না।
সিন্দুকটার দিকে নজর দিয়ে বোঝা গেল ওটা ঠিক শক্তসামর্থ নয়। ফার্নে রায় দিলেন ওটা খুব পুরানো আমলের। ওটা যে খালি এবং যেটা তার ঝি করেছে এ সম্পর্কে দুজনে নিশ্চিত। তারা দুজনে ওই সহকারিণীর সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছুক। ফার্নের মতে তিনি কোনো সাহায্য করবেন না। এই ঘরের একটা জিনিস খুব অর্থপূর্ণ।
মিঃ পোয়ারো বললেন, এই ঘরে ব্যক্তিগত কোনো জিনিসের চিহ্নমাত্র নেই। আমার কাছে এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। মাদাম গিজেলের ভাবালুতা বলে কোনো জিনিস ছিল না।
এলিস গ্রেঞ্জার নামক সহকারিণীর সঙ্গে দুজন দেখা করলেন। তিনি খুব দুঃখপ্রকাশ করলেন এই বলে মাদামকে বিষ দিয়ে খুন করা হয়েছে। তিনি বললেন যতখানি সম্ভব পুলিশকে অবশ্যই সাহায্য করবে। মাদামের কোনো শত্রু আছে যে এ বিষয়ে সে সন্ধিগ্ধ। এলিস রায় দিল টাকা সুদে খাটাবার সূত্রে মাদামের মক্কেলরা মাঝে মাঝে খুব অযৌক্তিক ব্যবহার করত। তারা মাদামকে শাসাত না। তারা গজগজ করে অনুযোগ করে অত টাকা দিতে পারবে না বলে অভিযোগ জানাত। পোয়ারো বললেন মাঝে মাঝে তারা হয়তো টাকা ফেরত দিতে পারত না। এলিস গ্রেঞ্জার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল তারা শেষ পর্যন্ত টাকা দিয়ে দিত। মাদাম গিজেল খুব কড়া লোক নয় ন্যায়কার্য করতেন, এটা এলিসের মত। এলিস অধৈর্য হয়ে উঠল। এখন বলা হল প্রভাবিত মানুষদের তার দুঃখ হয় কিনা। তার মতে নিজের সামর্থ্যের বাইরে যদি কেউ দেনা করে এবং শোধ না দেয় তাতে মাদামের কোনো দোষ নেই। মাদাম নিজের দেনা সসম্মানে মিটিয়ে দিতেন। তাহলে তার পাওনা আশা করাটা বিচিত্র নয়। তার অনেক দয়ামায়া ছিল। তিনি অনেক দাঁতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করেছেন। তার মতে, মাদামকে তিনি বোঝেননি।
ফার্নে বললেন যে, মাদাম টাকা আদায়ের কি ব্যবস্থা করেছিলেন তা কি জানেন না। এলিস কিছু বলতে অস্বীকার করায় ফার্নে বললেন যে, তাহলে তিনি ব্যাবসার কাগজপত্র কেন পুড়িয়ে ফেলেছেন। এলিস বলল, মাদামের সেরকম নির্দেশ ছিল যে তিনি দুর্ঘটনায় পড়লে এবং যদি অসুখে পড়ে তাহলে যেন কাগজপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পোয়ারো বললেন, নিজের ঘরের সিন্দুকের কাগজপত্র কোথায় গেল। এলিস বোঝাতে চাইলেন ওখানেই কাগজপত্র আছে। কিন্তু সেখানে মোটেই কাগজপত্র ছিল না। সিন্দুকটা বড়ো পুরানো কাঠের কোনো নবীশ ওটা অনায়াসে খুলে ফেলবে। কাগজপত্র বোধহয় মাদামের শোবার ঘরে ছিল।
এলিস বললেন যে হ্যাঁ মাদামের শোবার ঘরে কাগজপত্র থাকত। এলিস শোবার ঘরে গিয়ে একটা তরঙ্গ খুলে একটা পুরানো আমলের পশমের পোশাকের বিরাট পকেটের মধ্যে থেকে বের করে সেখানে কাগজপত্র ছিলো এটা বললেন। ওগুলো একটা বড়ো খামে সীলমোহর করা ছিল।
ফার্নে বললেন, তিন দিন আগে তিনি অন্য সুরে কথা বলেছিলেন কেন।
তিনি বললেন, কাগজগুলো কোথায় ছিল তখন প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়নি।
ফানে বললেন, তার কাগজপত্র পুড়িয়ে দেওয়া উচিত ছিল না। তিনি তাকে বোঝালেন মাদামকে খুন করার পেছনে যারা ছিলেন তাদের কারো সম্বন্ধে ওই কাগজে লেখা ছিল। এলিস নিশ্চয় কাগজগুলো পোড়ানোর সময় চোখ বুলিয়েছে। তিনি যেন আদালতকে সেটা জানান। পুলিশকে যথেষ্ট সাহায্য করবে, হয়তো এর থেকে খুনীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর মতো প্রয়োজনীয় তথ্যও পাওয়া যেতে পারে। তাহলে কি ধরে নেবোকাগজপত্রগুলো হারিয়ে ফেলার আগে সেগুলোয় আপনি একবার চোখ বুলিয়ে নিয়েছিলেন। এলিস বললেন, তিনি কিছু না দেখে সীলমোহর পর্যন্ত না খুলে সেটা পুড়িয়ে দিয়েছেন।
.
১০.
একটি ছোট্ট কালো মলাটের বই
ফার্নে একমুহূর্ত তার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। তারপর সে মিথ্যে কথা বলছে না বুঝে হতাশভাবে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। তিনি খুব বিশ্বস্ততার কাজ করেছেন এটা বললেও এটা দুঃখের বিষয় জানাতে দ্বিধা করলেন না। ফার্নে মাদাম গিজেলদের মক্কেলদের নাম জিজ্ঞাসা করায় এলিস বললেন, মাদাম কখনো তার মক্কেলদের নাম উচ্চারণ করতেন না। তবে মাঝে মাঝে তার মুখ থেকে বেরিয়ে পড়ত। তিনি নিজের ব্যাবসা নিয়ে নিজে থাকতেন।
এলিস বললেন…একটা চিঠি এসেছে। মাদাম চিঠিটা খুললেন। একটুকরো হাসি হেসে বললেন, কী বোকা! কী বোকা! ভেবেছে বিনা জামিনেই আমি ওদের টাকা ধার দিয়ে দেব। সঠিক তথ্যই হচ্ছে জামিন বুঝলে এলিস। এরকম কিছু কথা তিনি বলতেন।
মাদামের মক্কেলরা এ বাড়িতে আসতেন তাদের কাউকে তিনি দেখেছেন কি না তা এলিসকে প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেন যে মাদামের মক্কেলরা সন্ধ্যাবেলায় আসায় তাদের কাউকে তিনি কখনো দেখেননি, তিনি বললেন ইংল্যান্ড যাবার আগে তিনি প্যারিসেই ছিলেন না, তিনি প্রতিবার সেপ্টেম্বরের মত দোভিল, লা পিনেত, প্যারিস প্লেজ আর উইমারা গিয়েছিলেন। এলিস বললেন যে এবছর মাদামের ব্যাবসা ভালোই যাচ্ছিল। তিনি সকালের টিকিট না পাওয়ায় বেলা ১২টার প্লেনে আসন মিলল। তিনি বললেন অন্যবারের মতো যাবার আগের দিনই তিনি জানতে পারেন মাদাম ইংল্যান্ডে যাচ্ছেন। ফার্নে তার পকেট থেকে সাক্ষীদের ছবি বার করলেন; জিজ্ঞাসা করলেন এদের কাউকে সে চেনে কিনা। এলিস বলল, না, তবে তিনি জর্জেসকে দেখতে বললেন। জর্জেস আবার চোখে দেখতে পায় না। এলিসকে তারা দুজনে কিছু বলতে ভুলে গেছেন কিনা জিজ্ঞাসা করাতে সে বলল, সে সবকিছুই বলেছেন।
মঁসিয়ে পোয়ারো বললেন যে, তিনি কি কিছু খুঁজেছেন, মাদাম গিজেল বা তার পরিবারের কোনো ছবি।
এলিস বললেন, তার কোনো পরিবার ছিল না। পোয়ারো তার মেয়ের কথা জানতে চাইলে তিনি বললেন একটা মেয়ে ছিল। তাকে তিনি খুব ছোটো বয়সে দেখেছিলেন। তারপর আর দেখেননি। এর কারণ হিসেবে তিনি জানান মেয়েটি তার বিবাহের পূর্বের সন্তান। তিনি খুব সন্দরী ছিলেন। বাচ্চাটার একটা বন্দোবস্ত হবার পর, মাদামের জলবসন্ত হয়। তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও বেঁচে ওঠেন এবং সমস্ত ব্যবস্থা করে মাদাম ব্যাবসা নিজে দেখতে থাকেন। তিনি তার সমস্ত সম্পত্তি তার মেয়েকে দিয়ে গেছেন। মাদাম নিঃসঙ্গ ছিলেন। তিনি তার টাকার থেকে খুব কম খরচ করতেন। তিনি বিলাসী ছিলেন না। মাদাম যে তাকেও দয়া করে টাকাপয়সা দিতেন।
ফার্নে যাবার আগে জর্জেস-এর সঙ্গে কিছু কথা বলে যেতে চান। পোয়ারো তখন এলিসকে জিজ্ঞাসা করলেন কে তার কত্রীকে খুন করেছে বলে মনে হয়। তার মনে হয় না কে খুন করেছে বা তার ধারণা নেই, একথা তিনি বললেন। এলিস পুলিশের লোককে অন্য কথা বলতে পারেন এটা বলতে তিনি খুব রেগে যান। পোয়ারো বললেন পুলিশকে খবর দেওয়া এক জিনিস আর কোনো বেসরকারী ব্যক্তিকে বলা এক জিনিস। পোয়ারো বললেন যে তিনি একজনকে যখন সন্দেহ করছেন যতক্ষণ না সন্দেহের অবকাশ হচ্ছে ততক্ষণ সে অপরাধী।
এলিস গ্রেঞ্জার, তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে ভেবে ভীষণ রেগে গেলেন। পোয়ারো বললেন মাদামের খুনের ব্যাপারে আপনি প্রত্যক্ষভাবে না হোক, পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছেন। আপনি হয়তো মাদামের ভ্রমণসূচীর যথাযথ বিবরণ কাউকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বললেন তিনি তা করেননি। পোয়ারো বললেন তাকে বিশ্বাস করলেও, তার মতে অপরাধমূলক মামলায় আমরা দেখেছি সাক্ষীদের জেরা করার সময় প্রত্যেকেই কিছু না কিছু গোপন করে।
মঁসিয়ে ফার্নে বললেন যে তিনি একটু মুশকিলে পড়েছেন। তিনি জানেন না কি করলে মাদাম খুশী হতেন। মাদামের বিশ্বস্ততাকে তিনি হারাতে চান না। তার পরলোকগতা কত্রীর পক্ষে বিশ্বাস রেখে বললেন। তিনি বললেন যে মাদাম তার প্রতি খুব সদয় ছিলেন। একথা স্বীকার করতে লজ্জা নেই যে তিনি নিঃসহায় এক মহিলা ছিলেন, যার একটি সন্তান ছিলো, তিনি বাচ্চাটাকে ভালো খামারে মানুষ করতে পাঠান। তখন তিনি মাদাম যে সন্তানের মা সেটা বলেন, এবং আরো বলেন যে ছোট্ট মেয়েটির জন্য তিনি ভালো ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সে হয়তো কোনো ভালো ব্যাবসা বা পেশায় লেগে যাবে। তাছাড়া মাদামের মৃত্যুর পর সব টাকাকড়ি সেই পাবে। তার ধারণা মতো শিশুটির বাবা একজন ইংরাজ নির্দিষ্ট কিছু নয়। তবে এলিস মনে করেন মাদামের ব্যবসায়িক লেনদেনে তিনি ইংরাজ সমাজের উঁচুতলার লোকদের বেশি শোষণ করতেন।
এলিস বললেন তার মেয়ে পাঁচবছর হলো মারা গেছে। তিনি কয়েক মিনিট পর একটা ছোটো নোটবই দিলেন। যেটা মাদামের একান্ত দরকারী ছিল। তিনি চলে যাবার পর এলিস সেটা খুঁজে পান। মাদামের কোন নির্দেশ না থাকায় সেটাকে তিনি পুড়িয়ে ফেলতে পারেননি। এলিস যখন মাদামের মৃত্যু সংবাদ শুনলেন এটা জানতে চাইলে। এলিসকে বললেন যে তিনি মারা যাবার পর পুলিশের কাছে তিনি কাগজ পোড়ানোর কথা স্বীকার করলেও তিনি অনেক পরে ওগুলো পোড়ান। তিনি বললেন যে পোয়ারো, যেন একথা পুলিশকে না বলেন। এলিসকে পোয়ারো বললেন যে মাদামের কাগজ পুড়িয়ে তিনি ভালো মন নিয়েই কাজ করেছেন।
সেই নোটবইটা মাদামের ব্যক্তিগত স্মারকলিপি, ওতে মাত্র কয়েকটা সংখ্যা লেখা আছে। উপযুক্ত দলিল ও ফাইলপত্র ছাড়া সংখ্যাগুলো একেবারে অর্থহীন–এটা, এলিস বললেন।
নোটবইতে সময়, স্থান, যোগাযোগ করার কথা লেখা ছিল। এলিসের মত ছিল এটা প্রয়োজনীয় নয়। কিন্তু এটা খুব মূল্যবান জিনিস মনে হল মিঃ পোয়ারোর কাছে। এলিসের অভিমত নিয়ে তিনি এই ডায়েরিটা পুলিশের হাতে তুলে দিতে বলেন এবং এটাও বলেন যে তাকে যেন পুলিশ কোনো দোষারোপ না করেন এটা যেন তিনি দেখেন।
মাদামের আসন সংরক্ষণের জন্য তখন এলিস যে ইউনিভার্সাল এয়ারলাইন্সের অফিসে ফোন করেছিলেন সেটা যে ২৪ ক্যপুনিকাস বুলেভার্ডে তার ছোট্ট নম্বরটা পোয়ারো লিখে রাখেন।
১১. কে ওই আমেরিকান
১১.
কে ওই আমেরিকান
বুড়ো জর্জেসকে জেরা করায় সে খুব রেগে গেল। বুড়ো দেখল যে সত্যি জানার জন্য এই লোকটি অত্যন্ত উদগ্রীব এবং কথাটি মিথ্যে হলেও তার মনের মতো হওয়া চাই। জর্জেস বললেন, মাদাম যেদিন ইংল্যাণ্ড যান তার আগের দিন একজন মহিলা তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এই ভদ্রমহিলাকে আমি ছবি দেখলে চিনতে পারব এমন কথাও দিতে পারছি না। কারণ চোখে আমি ভালো দেখি না।
পোয়ারো ও ফার্নের এই জেরার ফলে বৃদ্ধ খুব রেগে যাচ্ছেন এটা বুঝতে পেরে বললেন যে তার খুব ক্ষিদে পেয়েছে। জর্জেস খুব রেগে গেছিল, তার মনে হল, মাদাম যদি প্লেনে খুন না হতেন তাহলে জর্জেসকেই খুনী বলে মনে করা হত।
জর্জেসকে জিজ্ঞাসা করা হল ভদ্রমহিলা কি খুব সুন্দরী। জর্জেস একটা ঢোক গিললো। পোয়ারোর ধারণা সাঁতারের পোশাকে তাকে খুব সুন্দর দেখাবে। এই বলে স্কেচ পত্রিকায় সাঁতারের পোশাক পরা দুজন মহিলার ছবি দেখালেন। জর্জেস ছবি দেখে কিছুটা চমকে উঠলেন। পোয়ারো বললেন আমি উত্তর পেয়ে গেছি।
পোয়ারো জর্জেসের কাছে জেরা শেষ করে কালো রং-এর নোটবইটা বের করলেন। ফার্নে পুলিশের দেখা নাই, সকলের গায়ে জ্বর আসে। এই জন্য বেসরকারী গোয়েন্দা পুলিশের চেয়ে অনেক বেশি খবর জোগাড় করতে পারে। আমাদের হাতে সরকারী নথিপত্র আছে, এই বিরাট কর্মকাণ্ডের আসল চাবিকাঠি কিন্তু আমাদের হাতে।
ফার্নে নোটবই বের করে লিখছেন যা সেটা পোয়ারোকে দেখালেন।
C.Z. ৫২। ইংরেজ লর্ডের পত্নী। স্বামী।
R.T. ৩৬২। ডাক্তার, হার্নে কীট।
M.R. ২৪। নকল দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন বস্তু বিক্রেতা।
x.v.B. ৭২৪। ইংরেজ। তহবিল তছরুপকারী।
G.F. ৪৫। খুনের চেষ্টা করেছিলেন। ইংরেজ।
পোয়ারো বললেন ফার্নের সঙ্গে তার মনও একদিকে এগিয়ে চলেছে।
তাদের নোটবই-এ দেখে তার গতিবিধি নির্ধারণ করলেন। প্রথম সন্দেহ ইংরেজ লর্ডের পত্নী। ইনি হলেন লেডি হরবেরিল। তিনি যে গিজেলের কাছ থেকে টাকা নেবেন এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। গিজেলের মক্কেলরা সাধারণত ওই ধরনের। কিংবা তার স্বামীর দেনা তিনি শোধ করবেন এটা হতে পারে সংক্ষেপে বলতে গেলে এই দুটোর যে কোনো একটা অবশ্যই প্রযোজ্য হবে। ফার্নের মতে ইংল্যান্ডে সবার আগে রাত্রে লেডি হরবেরিলর সাথে গিজেল দেখা করেছিলেন। পোয়ারো তার সাথে এ ব্যাপারে একমত। তারা মনে করছেন জর্জেস স্কেচ পত্রিকায় যে ছবি দেখে চমকে উঠেছিলেন তা থেকে এটাই প্রমাণ হয় সেদিন ভদ্রমহিলা লেডি হরবেরিল ছিলেন।
লা পিনেত থেকে প্যারিস পর্যন্ত মাদাম গিজেলের পিছু নিয়েছেন-এর থেকে প্রমাণ হয় তিনি খুব বেপরোয়া। পোয়ারো বললেন, এটা সত্যি হতে পারে।
ফার্নে বললেন যে বেসরকারী চিন্তাভাবনার সঙ্গে এটা খাপ খায় না। তাই তারা দুজনেই আলাদাভাবে চিন্তা করলে এটাই ঠিক হবে। কারণ কোনো কিছু ভুল সূত্র হলে তা বারবার ভুল দিকে নিয়ে যাবে।
ডাক্তার ব্রায়ান সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ পড়লেন। তবে তিনি ইনসপেক্টর জ্যাপের তালিকা থেকে বাদ পড়লেন না।
মঁসিয়ে দ্যুপ–দুজনের সৎচরিত্রের কথা স্বীকার করলেও উভয়েই এটা মানতে রাজি নয়। একজন জালিয়াতের এক নম্বর পুঁজি হচ্ছে সুনাম, সেক্ষেত্রে এরা দুজন সন্দেহের উর্ধ্বে নয়।
x.V.B. ৭২৪ এটা খুবই অনিশ্চিত ইংরেজ। তছরুপকারী–ফার্নে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আস্থাভাজন যে কেউই তছরুপ করতে পারে। যে কেউই চুরি ঢাকার জন্য মাদাম গিজেলের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে পারে।
শেষের নামটি নিয়ে তারা ব্যাপক সুযোগ পাচ্ছেন–সাহিত্যিক, দাঁতের ডাক্তার, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী চুল বাঁধার সহকারিণী, পরিচারক যে কোনো লোক হতে পারে, কারণ তারা সকলেই ইংরেজ, উঁপ দুজনে ফরাসি হবার জন্য এই তালিকা থেকে বাদ।
এরপর তারা দুজন গোয়েন্দা দপ্তরে এলেন। তাদের সামনে ছিলেন সঁসিয়ে গিলস যিনি গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান। তিনি পোয়ারোকে সেই মামলায় রুচি আছে জেনে অত্যন্ত প্রীত হলেন।
একটা প্রবাদ আছে, পেট ঠিক থাকলেই সেনারা দৌড়াতে পারে। তারা গিরাদ নামক একজন গোয়েন্দার কথা বললেন। উদ্যমে গিরাদের মতন আর কেউ নেই।
মঁসিয়ে পোয়ারো বললেন, ফার্নের মতো একজন মনস্তত্ব বিশারদ থাকার জন্য খুশী হওয়া উচিত।
গিলস বললেন যে প্লেনের মধ্যে বাঁকানল ছুঁড়ে হত্যা তাও আবার মাদাম গিজেলের মতো পরিচিতা মহিলার এও কি সম্ভব। পোয়ারো হৈ-হৈ করে উঠলেন, এটা ঠিক বলেছেন। ফার্নেকে দেখে পোয়ারো বললেন, তার কাছে নিশ্চয়ই কোনো সংবাদ আছে। ফার্নে বললেন জেরোপুলাস নামে একজন প্রাচীন গ্রীক বস্তুবিক্রেতা জানিয়েছে খুনের তিন দিন আগে সে একটা বাঁকানল আর কটা তীর বিক্রি করেছে। তার প্রস্তাব যে সেই ভদ্রলোককে একবার জেরা করা হোক।
জেরোপুলাসের দোকানটা সেন্ট টলার স্ট্রিটে। খুবই উঁচু মানের দোকান। নানান দেশের মৃৎপাত্র, ব্রোঞ্জের দু-একটা জিনিস, নানারকম পুলিপাথর-গয়না প্রভৃতি হাজারো জিনিসে দোকানটা ঠাসা। জেরোপুলাস নিজে থেকেই বলতে শুরু করলেন, যে সে একটা বাঁকানল আর কটা তীর বিক্রি করেছে যা দক্ষিণ আমেরিকায় দুর্লভ। ওসব জিনিস তিনি কমই বিক্রি করেন। শ্রদ্ধেয় মঁসিয়ে দ্যুপ সব কথা জানেন। তিনি নানারকম জিনিস (সেগুলিকে তিনি বিদেশী জঞ্জাল বলেছেন) নাবিকদের কাছ থেকে একেবারে জলের দরে কেনে।
জেরোপুলাস বললেন যে, এই বাঁকানলটা আর তীরগুলো অনেকদিন ধরে আমার কাছে ছিলোতা ধরুন বছর দুয়েক আছে। ওই যে ওই থালাটার উপর ছিলো–ওর সঙ্গে ছিলো একটি কড়ির মালা, একটা লাল রং-এর ভারতীয় পাগড়ি, দু-একটা কাঠের তৈরি আস্ত হস্তি আর কটা সস্তা জেড পাথর। এই আমেরিকান ভদ্রলোকটি ছাড়া কেউ কখনো জিজ্ঞাসা করেনি ও জিনিসটা কি? ফার্নে ভদ্রলোক আমেরিকান, মানতে চাইলেন না। আমেরিকান সেই ভদ্রলোকটিকে এটা খুব প্রাচীন জিনিস এবং এরকম জিনিস বাজারে না মেলালেই চলে। তিনি দাম জিজ্ঞাসা করতে একটা বড়ো দাম, হাঁকেন। তাতে ভদ্রলোক দরদস্তুর না করে এটা নিয়ে নেন। যখন খুনের কথা তিনি পড়েন তখন তিনি নিজে সন্দিগ্ধ হয়ে পুলিশকে একথা জানান।
ফার্নে নম্রভাবে বললেন, তিনি তার কাছে কৃতজ্ঞ, সেই বাঁকানল এবং তীরটা আপনি চিনতে পারবেন। এখন সেগুলো লন্ডনে রয়েছে, কিন্তু ওগুলো শনাক্ত করার সুযোগ তাকে দেওয়া হবে।
জেরোপুলাস বললেন ডেস্কের ওপর একাট মাপ করে দেখলেন এইরকম মোটা, হালকা রং-এর চারটে তীর ছিলো। যাতে লম্বা লম্বা তীক্ষ্ণ কাটা, ডগাগুলোর একটু রং চটে গেছিল যাতে লাল সিল্কের ফেঁসো জড়ানো ছিলো। ফার্নে বললেন, ওই তীরগুলোর একটাতে কালো ও হলদে রং-এর ফেঁসো জড়ানো ছিল না–আপনি ঠিক বললেন, না মঁসিয়ে, এটা জেরোপুলাস জানালেন। ফার্নে একপলক তাকিয়ে হাসলেন, পোয়ারো হাসির কারণ খুঁজে পেলেন না।
তিনি একটু দোনামনা করে বললেন, খুব সম্ভবত আমাদের মামলার সঙ্গে এই বাঁকানল আর তীরের কোনো সম্পর্ক নেই। পঞ্চাশ ভাগের এক ভাগ সম্ভাবনা বোধহয় নেই। তবুও ওই আমেরিকান সম্পর্কে যতদূর সম্ভব খোঁজখবর নেওয়া প্রয়োজন।
জেরোপুলাস বললেন, অনেক আমেরিকান আসে যায়। তাই তাকে ভালো করে দেখেননি। এবং বললেন সে নাকে কথা বলে। ফরাসি বলতে পারে না। চিউইংগাম চিবোচ্ছিল। কচ্ছপের খোলার চশমা বেশ লম্বা আর বয়স বেশি বলে মনে হল না।
তবে কোনো আসবাবপত্র পাওয়া না গেলে ফার্নে বললেন, আমরা বুনো হাঁসের পেছনে ঘুরে মরছি।
মঁসিয়ে জেরোপুলাসের বক্তব্য থেকে দু-একটা মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়। তারা দুজনে ক্যপুনিকাস বুলেভার্ডে যাওয়া ঠিক করেন। পোয়ারোর মত মেনে নিয়ে ফার্নে বলেন যে ইউনিভার্সাল এয়ারলাইন্সের অফিস থেকে তারা কিছু কিছু তদন্তের কাজ সেরে রেখেছে। দরকারী কোনো খবরই ওরা দিতে পারেনি।
পোয়ারো ফার্নেকে বললেন, তা বেশ কিন্তু কোনো কিছুর জবাব নির্ভর করে তার প্রশ্নের উপর। কী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে হবে তা নিশ্চয়ই জানেন না।
আপনি জানেন কি?
তা–আমার একটা নির্দিষ্ট চিন্তা আছে। ফার্নে বললেন–এর বেশি আর কিছু বলতে তিনি রাজি নন।
যথাসময়ে তারা ক্যপুনিকাস বুলেভার্ডে পৌঁছে গেলেন। এই অফিসটি ছোটো। একজন ছোটো ছেলে বসে টাইপ করছে ও একজন চটপটে লোক বসে কাজ করছে। ফার্নে পরিচয় দিলে সেই ভদ্রলোক, জ্বলে পরো উঠে দাঁড়ালেন। ছেলেটিকে সরিয়ে দেওয়া হল। পোয়ারো তার কাছে কিছু গোপনীয় কথা জিজ্ঞাসা করলেন। জ্বলেপোরোকে মাদামের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন এ প্রশ্নের জবাব তিনি দিয়েছেন। কিন্তু তবুও তিনি বললেন যে মাদাম ১৭ তারিখ টেলিফোন করে আসন সংরক্ষণ করেন। তিনি সকাল ৮-৪৫ মিনিটের প্লেনের টিকিট চেয়েছিলেন কিন্তু প্লেনে আর জায়গা ছিল না বলে তাকে ১২ টার প্লেনের টিকিট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাপারটা রহস্যজনক মনে হয়।
আমার এক বন্ধু কয়েক মিনিটের সিদ্ধান্তে ইংল্যান্ড যাওয়া মনস্থ করেছিল। আর ওই ৮-৪৫ মিনিটের প্লেনেই সে ইংল্যান্ডে গিয়েছিল। প্লেনের অর্ধেক আসন খালি ছিলো সেদিন। মিঃ পোয়ারো খাতাপত্র ঘেঁটে বললেন, সম্ভবতঃ আপনার বন্ধু দিনটা ভুল করেছেন। আগের দিন বা তার আগের দিন হলে
মোটেই না। এটা ওই খুনের দিনই। কারণ আমার বন্ধু বলেছিল যে, সে যদি সকালের প্লেনে জায়গা না পেত, তাহলে সেই প্রমিথিউস বিমানের একজন যাত্রী হতে পারত।
এটা শুনে মিঃ পোরোর রহস্যময় মনে হয়। তিনি এটা জানার জন্য লা বুর্জেতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান কারণ তার মতে ওরা সবসময় নির্ভুল কাজ করে না।
পোয়ারোর সন্ধানী দৃষ্টিতে পোরো বেশ অস্বস্তি বোধ করতে লাগল। তার কথা পোয়ারোর বিশ্বাস হল না।
পোয়ারো তাকে পরিষ্কার ভোলাখুলি বলতে বললেন। তিনি বললেন, তার কথা তিনি ঠিকমতো বুঝতে পারছে না। মিঃ পোয়রাকে বলা হল তিনি যদি কোনো কথা চেপে যান বা মিথ্যে বলেন তাহলে তিনি ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছেন তা ধরা হবে।
এটা শুনে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। পোয়ারো বললেন যে, কত টাকা আপনি পেয়েছেন। কে দিয়েছে। কোনো ক্ষতি হবে ভাবিনি-মানে আমার ধারণাই ছিলো না–একবারও বুঝতে পারিনি যে–কত টাকা এবং কে দিয়েছে, ও পা-পাঁচ হাজার ফ্রা। লোকটাকে আগে কখনও দেখিনি। আমি…আমার জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেল।…মিঃ পোরো বললো।
পোয়ারো বলল, একজন লোক ভেতরে এসে বলল যে সে ইংল্যান্ডে যাবে। সে মাদাম গিজেলের কাছে ধার নিতে যায়। সে কিছু না জানিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে চায়। তার বক্তব্য এতে সে ভালো ফল পাবে। সে বলল সে জানে যে মাদাম পরের দিন ইংল্যান্ডে যাচ্ছেন। তাকে শুধু এটুকু কাজ করতে হবে মাদামকে জানাতে হবে যে সকালের সব আসন ভর্তি এবং প্রমিথিউস বিমানের দু-নম্বর আসনটা তাকে দিতে হবে। সে শপথ করে বলছে, মঁসিয়ে এতে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে সে বোঝেনি। এতে আর অসুবিধে কি? এই কথা সে ভেবেছিল। আমেরিকানরা ওইরকম হয় এরকম উদ্ভট কাজের রীতি ওদের।
আমেরিকান ভদ্রলোকের চেহারার বর্ণনা জানালেন–লম্বা, একটু কোল কুঁজো, পশুর শিং এর ফ্রেমওয়ালা চশমা আর অল্প ছাগলদাড়ি।
তার আসনটা মাদামের আসনের পাশে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। ভদ্রলোকের নাম ছিল সাইলাস হারলার।
কাগজে দেখা গেছিল ওই নামে কোনো লোক প্লেনে ছিল না। তাই মিঃ পোয়রা আর এই কথাটা পুলিশকে বলেনি।
মঁসিয়ে পোয়ারো জানালেন যে তিনি যে এই তথ্যটা পেয়েছেন কিভাবে। প্রথমতঃ তিনি আজ সকালে শুনেছেন একজন লোক খুনের দিন প্রায় ফাঁকা প্লেনে লন্ডন গেছেন আবার এলিস বলেছিলো সকালের প্লেনে কোনো জায়গা নেই। এই পরস্পর বিরোধী মন্তব্য তার মনে আছে। প্রমিথিউস বিমানের পরিচারিকাটি বলেছিলো যে এর আগে মাদাম গিজেলকে সকালের প্লেনে যেতে দেখেছে–সুতরাং সকাল ৮-৪৫ মিনিটের প্লেনে যাওয়াই তার অভ্যাস ছিল। কিন্তু কেউ একজন চেয়েছিলো তিনি, ১২টার প্লেনে যান। এমন কেউ যে আগে প্রমিথিউস যাবার ঠিক করে রেখেছিল। কেন ওই কেরানীটি বললেন যে, সকালেই সব আসন ভর্তি হয়ে গেছে? ভুল না ইচ্ছাকৃত মিথ্যে? আমি শেষেরটাকে বেছে নিয়েছিলাম আর সম্পূর্ণ সঠিক আমি।
ফার্নে বললেন মামলাটা ক্রমশই ঘোরালো হয়ে উঠেছে। একজন মহিলার পিছনে ধাওয়া করতে গিয়ে এক আমেরিকানকে পাওয়া গেল। পোয়ারো বললেন, এখানে আমেরিকান সাজা খুব সোজা।
সাঁতারের পোশাক পরা ছবিটা পোয়ারো বারবার দেখতে লাগলেন এবং বললেন যে তিনি অভিনয় করতেন বটে–তবে এইরকম ভূমিকায় একজন মহিলার অভিনয় করা সম্ভব নয়।
.
১২.
হরবেরিল চেজ-এ
লর্ড হরবেরিল খাবার টেবিল আঁকড়ে ধরে আত্মসংবরণ করার চেষ্টা করছিল। তার বয়স সাতাশ। দেখলে মনে হয় তেমন বুদ্ধি নেই, দরদী মন, রুচিজ্ঞানের কিছুটা বাড়াবাড়ি আছে, দারুণ কর্তব্য পরায়ণ আর ভীষণ একগুঁয়ে। তার খাওয়া হয়ে গেলে তিনি মিনিট খানেক দাঁড়িয়ে চিন্তা করে ওপরে উঠে গেলেন। তারপর তিনি ওপরে একটা ঘরের সামনে অপেক্ষা করতে লাগলেন। যতক্ষণ না ঘরের ভিতর থেকে সিসিলি হরবেরী তাকে ঢুকতে বললেন।
সিসিলি হরবেরিল বসে বসে সকালের জলখাবার খাচ্ছিলেন। তিনি শুয়ে শুয়ে চিঠির খাম খুলছিলেন। লর্ড স্টিফেন তার স্ত্রীর সঙ্গে একান্তে কথা বলতে চাইলেন। লেডি তার পরিচারিকা ম্যাডেলিনকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন। লর্ড হরবেরিল তাঁর স্বামী, তিন বছর আগে তিনি তার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করেছিলেন। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন এখানে আবার কেন সে ফিরে এসেছে, কেননা তার পেছনে কোনো কারণ আছে। লর্ডের স্ত্রী বললেন যে ও-কারণ। লর্ড হরবেরিল মনে করেন তাদের দুজনের যা সম্পর্ক দাঁড়িয়েছে তাতে একসঙ্গে থাকার কোনো মানে হয় না। শহরের বাড়িটা আর প্রচুর অর্থ সে পাবে। একটা নির্দিষ্ট পর্যন্ত সে তার ইচ্ছামতো চলতে পারবে তাহলে হঠাৎ সে ফিরল কেন?
সিসিলি বলল, তার মনে হয়েছে এটাই ভালো। তার মানে আমার ধারণা তুমি টাকার কথা বলতে চাইছো। হায় ভগবান তোমাকে কি বলে ঘৃণা দেখাবো। তোমার মতো নীচ লোক দুনিয়ায় দুটো নেই। নীচকর..তা ঠিক তুমি আর তোমার কাণ্ডজ্ঞানহীন অপচয়ের ফলে হরবেরিলর জমিদারী যখন বাঁধা রাখতে হয়েছে, তখন নীচ তো আমায় বলবেই।
সিসিলি বলেছেন যে হরবেরিলর চাষীদের নিয়ে তার যত মাথা ব্যথা। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীতে খুব ঝগড়া হল। এ থেকে এ জানা গেল সিসিলি হরবেরিল বাজে খরচায় বিরক্ত হলে লর্ড হরবেরিল তাকে সহ্য করতে পারেন না। লর্ড হরবেরিল তার থেকে মুক্তি পেতে চান। কিন্তু সিসিলি তা দিতে চান না। সিসিলির ব্যাবসা তার ধারদেনার জন্য লর্ড যে দায়ী থাকবেন না এটা কেন তিনি খবরের কাগজে জানিয়েছেন। এটা ঠিক হয়নি স্বীকার করে লর্ড বললেন যে, তিনি কেন আবার হরবেরিলতে ফিরে এলেন। সিসিলে মনে করেন এই মুহূর্তে এটাই ভালো বলে মনে হয়েছে।
লর্ড হরবেরিল তার স্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন তিনি মাদাম গিজেলের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন কিনা? মাদাম সিসিলি এটা অস্বীকার করতে চান এবং বললেন যে এটা ঠিক না। লর্ড বললেন, সত্যিই তিনি যদি টাকা নিয়ে থাকেন তাহলে যেন স্বীকার করেন–তদন্ত হচ্ছে। মহিলাটি লেনদেনের নথিপত্র থেকে যদি বেরিয়ে পড়ে যাতে তুমি জড়িয়ে পড়। তার জন্য আগে থেকে আইনী পরামর্শ নিতে হবে।
সিসিলি বললেন, আমি কি আদালতে দাঁড়িয়ে বলিনি যে, ওই মহিলাটির নামও আমি কখনও কানে শুনিনি। তাতে বেশি কিছু প্রমাণ হয় বলে আমি মনে করি না। যদি তুমি এই গিজেলের সঙ্গে লেনদেন করে থাকো, পুলিশ তা খুঁজে বার করবেই, এ বিষয়ে তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো।
সিসিলি ভয়ানক রেগে গেল এবং সে যে খুন করেনি এটা বলল। লর্ড বললেন যে, তিনি পারিবারিক সুনাম নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত তাই সিসিলি হরবেরিল যদি এরকম কোনো কাজ করেন তাহলে তার পারিবারিক সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে। লেডি মনে করেন যে, এই ভদ্রলোক তিনি মারা গেলে খুব খুশীই হবেন।
লর্ড হরবেরিলর মাথায় চিন্তা ঘুরতে লাগল, তিনি মনে করেন…ও যদি কালকেই মারা যায় আমি খুশী হবো? হ্যাঁ, তবেই তো জেল থেকে বেরোনো লোকের মতো স্বস্তি পাবো আমি। প্রথম যখন লেডির সঙ্গে তার দেখা হয় তিনি তার শিশুর মতো পবিত্রতায় ভুলে গেছিলেন আর…এখন…ও একটা ইতর, দুশ্চরিত্র, বদমাইশ, মাথামোটা…যে রূপ আমার চোখে পড়ে না।
তিনি রাস্তায় বেরোলেন। একটি সরু গলির মধ্যে ভেনেসিয়ার সঙ্গে দেখা। ভেনেসিয়াকে তিনি বললেন যে, সিসিলি এখানে আছে। শুনে ভেনেসিয়া আশ্চর্য হলেন। লর্ড স্টিফেন হরবেরিল তার কাছে মামলার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। ভেনেসিয়া বলল, না কেউ তেমন মুখ খুলছে না। আশাকরি আমি কি বলছি বুঝতে পারছ।
ভেনেসিয়া একটু হেসে স্টিফেনের প্রশ্নের উত্তরে জানালো আর যেই হোক সিসিলি খুনী নয় কারণ উভয়ে উভয়ের দিকে নজর রেখেছিল। স্টিফেন ভেনেসিয়াকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার সঙ্গে তো অনেক কালের চেনা পরিচয় তাই না?
–হু! সেই ছোটোবেলায় আমরা নাচের স্কুলে যেতাম, তোমার মনে আছে!
মনে আবার নেই, ভেনেসিয়া, তোমাকে কটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে
বল–সিসিলি সম্পর্কে তাই না?
হা। আচ্ছা ভেনেসিয়া, সিসিলির কি ওই গিজেল মহিলাটির সঙ্গে কোনো জানাশোনা ছিলো। ভেনেসিয়া বললেন, তিনি জানেন না। তিনি ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলে ছিলেন। তিনি এখনও লা পিনেতের গল্প শোনেননি।
ভেনেসিয়া বললেন, যে স্ত্রী-হারা স্টিফেন একা একা জীবন কাটিয়েছে, তাহলে এ ব্যাপারে সে কেন আগ্রহী?
আসলে স্টিফেন তার বিবাহিতা স্ত্রীকে এখনও বিচ্ছেদ দেয়নি বলেই তার চিন্তা।
ভেনেসিয়া জিজ্ঞাসা করল, কেন সে বিচ্ছেদে রাজি নয়।
আসলে সিসিলি তাকে বিচ্ছেদ দিতে চায় না, সে কিন্তু কারণ থাকলে বিচ্ছেদে রাজি। যদি বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাহলে ভেনেসিয়া স্টিফেনকে বিয়ে করতে চায়। স্টিফেন জানে তারা দুজনে সুখী জীবন কাটাতে পারবে।
স্টিফেন একটা সুখী জীবনের স্বপ্ন দেখেছিল। ভেনেসিয়া তাকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যেতে চাইল। স্টিফেন তীব্র প্রতিবাদ করে উঠল।
ভেনেসিয়া বিদায় নিল। মুখ ঘুরিয়ে স্টিফেনকে বিদায় জানাতে গিয়ে দুজনের দৃষ্টিতে অনেক না বলা কথা বলা হয়ে গেল।
গলি থেকে বেরোনোর মুখে তার হাত থেকে চাবুকটা পড়ে যেতে একটা লোক তাকে তা তুলে দিল। সে একটু আনমনা ছিল কিন্তু বাড়িতে গিয়ে মনে হল লোকটাকে সে চেনে। ওই বেঁটে লোকটাই প্লেনে তাকে তার আসনটা ছেড়ে দিয়েছিলো। আদালতে ওরা বলাবলি করছিল–ও নাকি গোয়েন্দা। এই চিন্তার সঙ্গে সঙ্গেই তার একটা চিন্তা মাথায় আছড়ে পড়লো। ওই লোকটা এখানে কি করতে এসেছে।
.
১৩.
অ্যান্টোয়েনের দোকানে
বিচারবিভাগীয় তদন্তের পরের দিন সকালে জেন বেশ ভীতভাবে দোকানে ঢুকল যিনি নিজেকে অ্যান্টোয়েন বলে পরিচয় দেন, তার নাম আর্নল্ড লীচ। তিনি জেনকে অত্যন্ত ভৎর্সনা করলেন। অনেক বকুনি খেয়ে জেন রেহাই পেল। বাইরে এসে দেখল তার বন্ধু গ্ল্যাডিস তাকে ডাকছে।
গ্ল্যাডিস তাকে ভরসা দিল। সে ঘরে ঢুকতেই একজন মেহেদী রং-এর চুলওয়ালা মহিলা তার নিজের মুখটা কুৎসিত দেখাচ্ছে এটা বারবার বলছিলেন। মহিলাটির চুল বাঁধার জন্য জেন এলো এবং তিনি কি করতে চান। ভদ্রমহিলা জেনের কাছে তার প্লেনের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলেন। জেন কে নানারকম প্রশ্ন করে ভদ্রমহিলা জানালেন সেটা কি ঘটেছিল।
এরপর সেই আসত জেনের কাছে গল্প শোনার জন্য উদ্যোগী হয়ে চুল বাঁধতে আসত। একসপ্তাহে ধরে এই গল্প বলে জেন হাঁফিয়ে উঠেছিল। মাঝে মাঝে মনে হত কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে তাকে কয়েক ঘা কষিয়ে দেবে।
শান্তি পাবার উপায় খুঁজে না পেয়ে জেন তার প্রভুর কাছে মাইনে বাড়ানোর কথা বলল। তিনি বললেন খুনের ব্যাপারে জড়িয়ে পড়ার পরেও তাকে যে কাজে রাখা হয়েছে এটাই বড়ো কথা। জেন এত রেগে গেল এবং বলল যে সে অন্য জায়গাতে কাজ পেতে পারে। তার প্রভু বলল, তুমি যে ওখানে আছ তা লোকে জানবে কি করে, এমন কিছু তালেবর তুমি নও। সে বলল, আদালতে কিছু সাংবাদিকের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে, তাদের একবার বললে তারা খবরটা ছাপিয়ে দেবে।
জেনের দাবী মানা হল, জেনে এরপর ঘটনাটিতে রং চড়িয়ে বলল। নরম্যান গেলের সঙ্গে তার আলাপ বাড়তে লাগল। তাদের দুজনের মধ্যে অনেক মিলই একরকম মনে হতে লাগল। তার বন্ধু গ্ল্যাডিস একদিন তার ব্যাগ থেকে গেলের একটা চিঠি উদ্ধার করল। জেন বলতে বাধ্য হল সে একটা দাঁতের ডাক্তার, যার সঙ্গে তার লা পিনেতে দেখা হয়েছিল। গ্ল্যাডিস জেনের সঙ্গে গেলের সম্পর্ক জেনে খুব আনন্দ পেল, নানারকম ঠাট্টা তামাশা করল।
ওই চিঠিটার মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় ডিনার খাবার অনুরোধ করেছিলো। জেন হোটেলে খেতে গিয়ে তার একজন ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। প্রথমে জেন তাকে চিনতে পারেনি। তারপর জানা গেল যে ওটি জ্যা জ্যাপ। গ্ল্যাডিস একটা নীতিবাক্য তাকে শুনিয়েছিল–যদি তোমার পিছনে একজন ঘোরে দেখবে নিশ্চিত আরো একজন আসছে। জেন ফরাসিদের একবারে বিশ্বাস করে না।
আপনি এখনও ইংল্যান্ডে আছেন তাহলে, জেন বললো, তার নিজের বিশ্রী ধারণার কথা ভেবে নিজেকেই অভিসম্পাত দিতে লাগলো। হ্যাঁ, বাবা এডিনবরায় গিয়েছেন একটা বক্তৃতা দিতে তাই বন্ধুবাবন্ধবদের সঙ্গে আমাকেও থাকতে হলো। কিন্তু আগামীকাল আমরা ফ্রান্সে ফিরে যাবো।
ও আচ্ছা।
আচ্ছা পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি, তাই না। জা জ্যাপ বললো।
না কাগজে তো কিছু লেখেনি। হয়তো ওরা হাল ছেড়ে দিয়েছে। জ্যা জ্যাপ বললো, না, না, ওরা এতো সহজে ছাড়বে না। নিঃশব্দে কাজ করে ওরা অন্ধকারে কাজ সারে। জা দুপ বললেন, যে খুনের কথা ভাবলে খারাপ লাগে। জ্যাঁ জ্যাপ বললেন কে এই কাজ করেছে সেটা তিনি ভাবেননি কারণ ভদ্রমহিলাকে কুৎসিত বললে কম বলা হয়।
জেন বললো, আপনি একজন সুন্দরী মেয়ের চেয়ে একজন কুৎসিত মহিলাকে খুন করতেই বেশি ভালোবাসেন। মোটেই না, একজন মহিলা যদি সুন্দর হয়–আপনার তাকে ভালো লাগবে– সে আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে–হিংসেয় পাগল করে তুলবে। আপনি তখন হয়তো বলবেন, দাঁড়াও ওকে আমি খুন করবো, তবে শান্তি।
এতে শান্তি পাওয়া যাবে? তা তো আমি জানি না, মাদমোয়াজেল কোনদিন কুৎসিত বুড়ীকে কে খুন করতে যাবে।
মেয়েদের নিয়ে জ্যাঁ জ্যাপ আলোচনা করছিলেন। তার মতে ইংরেজরা তার স্ত্রীর প্রতি নজর কম দেয়। এই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে করতে তিনি বললেন যে লেডি হরবেরিল তার ধাত আমাদের জানা আছে। যেমন সুন্দর–তেমন খরচসাপেক্ষ। জুয়ার টেবিলে এদের বেশি দেখা যায়–উত্তেজনা ভালোবাসেন এরা। যাই হোক, ওঁকে দেখে আমার খুব ভালো লাগেনি। মিয়কার একেবারে পাক্কা ইংরেজ। সুন্দর ছাঁটের পোশাক অবশ্য একটু পুরুষালি ঢঙের। এমনভাবে হাঁটেন, যেন তারা দুনিয়াটাকে কিনে রেখেছেন। ইংল্যান্ডের কে কোথায় থাকে সব নখদর্পণে। আর জেনকে তার খুব ভালো লেগেছে। তার মনে হয় যে ভগবান মাঝে মাঝেই এইরকম যোগাযোগ ঘটিয়ে দেন।
জেনের সঙ্গে নানা দেশের প্রত্নতত্ত্ববিদ আলোচনা করতে লাগল। জা জ্যাপ যখন ডিনারের ব্যবস্থা করলেন তখন জেনের অন্য লোকের সঙ্গে কথা দেওয়া আছে এটা বললেন। তিনি আবার জেন কবে প্যারিসে যাবেন জিজ্ঞাসা করলেন। জেন বলল, খুব শীঘ্রই যাওয়া হবে না। জা জ্যাপ বললেন যে তিনি যে কবে লন্ডন আসবেন জানি না। আশা করবো খুব শীঘ্রই আবার আমাদের দেখা হবে, শেষ কথাটা এমনভাবে বললো যেন দেখা হওয়ার কথা ঠিক হয়েই আছে।
.
১৪.
মাসওয়াল পাহাড়ে
ঠিক যে সময়ে জেন অ্যান্টোয়ানের দোকান থেকে বেরোচ্ছে এদিকে নরম্যান গেল তার রোগীদের চিকিৎসা করছেন। নরম্যান গোলের সহকারিণী বলেছেন (মিস রগ) লেডি হিগিনসন ফোন করেছিলেন–আসছে সপ্তায় আসতে পারবেন না। পরে একসময় আসবেন; আর হ্যাঁ, কর্ণেল ব্লান্ট বৃহস্পতিবার আসতে পারছেন না, জানিয়েছেন।
নরম্যান গেল মাথা নাড়লো। প্রতিদিন এক ব্যাপার। এক একজন রোগী ফোন করছে আর বলছে, আসতে পারবে না। এছাড়া নানা কারণ। ওরা যাই বলুক, আসল কারণটা কিন্তু নরম্যান গেল নির্ভুলভাবে বুঝেছে। আসলে খুনের ঘটনায় সবাই তার প্রতি ভীত হয়ে পড়েছে।
তাই তার সহকারিণী বললেন, ভালোই হয়েছে আপনি একটু বিশ্রাম নিতে পারবেন।
এই গ্রীষ্মের গোড়ার দিকটা যা খাটুনি খেটেছেন।
নরম্যান কতগুলো যন্ত্রপাতি গরমজলে ফেলে গভীর চিন্তায় ডুবে গেলো। তার মনে হয় সে যেন ডুবতে বসেছে। পুলিস যদি হরবেরিল নামের রোগীকে গ্রেপ্তার করে তাহলে কি হবে? তার রোগীরা আবার দলে দলে ফিরে আসবে। সে কিছুই পরোয়া করে না কিন্তু জেনের জন্য তার চিন্তা হয়। গেলের মনে হয় সে কানাডায় চলে যাবে এবং সেখানেই রোজগার করবে।
মিস লাবী ফোন করেছিলেন, এটা বললেন, মিস বস তিনি আসতে পারছেন না। খুব বিরক্ত হলেন মিঃ গেল। তিনি তার ব্যাবসার পাট হঠাতে দিন। কিন্তু বস তাকে একা ফেলে যেতে চান না।
মিঃ বস বলতে চান পুলিশ চেষ্টা করছেন খুনীকে ধরার। নরম্যান গোলের পুলিশের প্রতি আস্থা নেই তাই তিনি নিজে চেষ্টা করতে চান।
সন্ধেবেলা ডিনার খাবার সময় জেন গেলের অন্যমনস্কতা ধরে ফেলল। নরম্যানকে জিজ্ঞাসা করল তার কাজকর্ম ঠিকঠাক ভাবে চলছে কি? গেল বলল যে, বছরের এ সময়টা ভালো যায় না। জেন তা মানতে চাইল না। জেন বলল, এটা ঠিক যে জেন খুনের ব্যাপারে চিন্তিত। গেল বলল, যে সে খুনের জন্য বিরক্ত। আসলে তার মনে হয় তার রোগীরা তাকে খুনী ভাবছে।
জেন মনে করেন ওটা ওদের বদমায়েশী। এর জন্য একটা কিছু করা উচিত। গেল বলল যে মিস বসও তাই বললেন। তিনি যদি সম্ভাব্য খুনী না হতেন তাহলে একটা সূত্র খুঁজে বের করতেন। জেন হঠাৎ ক্ল্যান্সিকে দেওয়ালের ধারে বসে থাকতে দেখলেন। গেলেরি অমত সত্ত্বেও তাকে রাজি করিয়ে তাকে অনুসরণ করতে লাগল।
তারা তাড়াতাড়ি মিঃ ক্ল্যান্সিকে অনুসরণ করার জন্য আগ্রহী হলেন।
মিঃ ক্ল্যান্সি লন্ডনের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। তিনি অসংলগ্নভাবে ঘুরছিলেন। তার পিছনে তারা দুজনে ঘুরছিলেন। জেন বলল, যে পাছে কেউ অনুসরণ করে তাই তিনি এভাবে হাঁটছেন। তাদের পথ গুলিয়ে দিতে চেষ্টা করছেন। মিঃ ক্ল্যান্সি একটা জিনিসের দোকানের সামনে দাঁড়ালেন, সেটা বন্ধ ছিল। তারপর তিনি ছোটো বই বার করে কি লিখলেন। তারপর আবার পথ চলতে লাগলেন।– তিনি আনমনা হয়ে হাঁটছিলেন। রাস্তা পার হবার জন্য তিনি যখন এলেন তখন জেন গেল তার পাশাপাশি হয়ে গেল। দেখা গেল ভদ্রলোক একা একা কথা বলছেন। মিঃ ক্ল্যান্সি তার ওভারকোট লুটোতে লুটোতে একটা বাড়ির সামনে এসে পৌঁছলেন। ওটা তার নিজের বাড়ি ছিল। তিনি বলেছিলেন যে একজন মহিলা যে কথা বলে না। এটা তিনি আনমনে বলেছিলেন–এটা জেন গেলের কাছে রহস্য মনে হল।
পেছনে অন্ধকার থেকে কে যেন বলে উঠল, শুভ সন্ধ্যা। এটা এরকুল পোয়ারো ছিলেন। পেছু নেওয়ার পক্ষে সন্ধেটা চমৎকার, তাই না?
.
১৫.
লুমসংবেরীতে
দারুণ চমকে ওঠা যুবক-যুবতীদের মধ্যে প্রথম নরম্যান গেল কথা বললেন যে, পোয়ারো এখনও চরিত্র সংশোধনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ও আমাদের সেই কথাবার্তা এখনও মনে করে রেখেছেন? আর তাই এই বেচারা মিঃ ক্ল্যান্সিকে সন্দেহ করে ঘুরছেন।
জেন বলল যে তিনিও নিশ্চয়ই তাই করছেন না হলে এখানে আসতেন না। পোয়ারোর কথার প্রসঙ্গে জেন জানালেন খুন সম্পর্কে উনি একেবারেই আগ্রহী নয় কিন্তু এটা পোয়ারো জানতে চাইলেন না। তিনি বললেন, এখন এ নিয়ে তিনি মাথা ঘামাচ্ছেন এই খুন তাকেও স্পর্শ করেছে। তিনি জেনকে জিজ্ঞাসা করছেন তিনি খুনের মামলায় কি সবার আগে প্রয়োজনীয় মনে করবেন। জেন বললো, খুনীকে খুঁজে বের করা। নরম্যাল গেল চাইল ন্যায়বিচার।
পোয়ারো বললেন, খুনীকে খুঁজে বের করার চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজনীয় জিনিস আছে। আর ন্যায়বিচার কথাটা চমৎকার কিন্তু এটা অধিক মানে কি বোঝাতে চাইছে, সেটা বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে। সবার থেকে প্রয়োজনীয় হল নিরপরাধকে মুক্ত করা।
পোয়ারোর মতে যতক্ষণ না মামলা শেষ হচ্ছে অভিযুক্তদের বিভিন্নভাবে পীড়ন সহ্য করতে হয়। নরম্যান গেল জোর গলায় সেটা স্বীকার করলে। পোয়ারো জেন ও গেলের সঙ্গে হাত মেলালেন এবং বললেন, আমি সবেমাত্র আমাদের বন্ধু মিঃ ক্ল্যান্সিকে ডাকতে যাচ্ছি। তিনি প্রস্তাব করবেন মাদমোয়াজেল তার সেক্রেটারির ছদ্মবেশে তার সাথে আসবেন। তিনি জেনকে একটা নোট বইও পেনসিল দিলেন।
জেন শর্টহ্যান্ড লিখতে পারে না বলে তিনি বললেন যে, তার সাহস আছে বুদ্ধি করে নোটবইয়ে কিছু আঁকজোঁক নিশ্চয় করতে পারবেন। আর আপনি ঘণ্টাখানেক পর তার সঙ্গে দেখা করবেন। প্রিন্স হোটেলের দোতালায়, ঠিক আছে, তখন আমরা নোটবই মিলিয়ে দেখব।
জেন তাকে অনুসরণ করলে গেল প্রতিবাদ করতে গিয়েও একঘণ্টা পরে প্রিন্স হোটেলে দেখা করার প্রতিশ্রুতি দিল।
মিঃ ক্ল্যান্সির বাড়িতে তারা দেখলে তার ঘর প্রচণ্ড অগোছালো। মিঃ ক্ল্যান্সি একটা ক্যামেরা ও ফিল্ম নিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন। অতিথির নাম শুনে তিনি চোখ তুলে তাকালেন এবং চট করে ক্যামেরা আর না পরানো ফিল্মটা মেঝেয় ফেলে দুহাত বাড়িয়ে সাদর অভ্যর্থনা জানান।
তিনি জেনকে তার সেক্রেটারি মিস গ্রে বলে পরিচয় দিলেন। এতে খানিকটা অবাক হলেন ক্ল্যান্সি। তার মনে হয় তিনি একজন চুলবাছার দোকানের সঙ্গে যুক্ত। পোয়ারো বললেন একজন দক্ষ সেক্রেটারি হিসেবে মিস গ্রেকে অমায়িকভাবে নানা ধরনের কাজ করতে হয়।
মিঃ ক্ল্যান্সি তার ভুল স্বীকার করে নিলেন এবং তিনি যে একজন বেসরকারী গোয়েন্দা তাই তার তারিফ করলেন।
তিনি তার রচনায় গোয়েন্দা উইলব্রাহাম রাইসের কথা বললেন। তিনি বললেন এই ঘটনায় তিনি রোমাঞ্চিত। তিনি মামলাটা নিয়ে অনেক ভেবেছেন। যদিও এই ঘটনাটা খুব দুঃখের, তবুও তার কাছে স্বীকার করতে বাধা নেই এটি তার পেশায় সাহায্য করেছে। তার কপালে শুধু সন্দেহ জুটেছে, যে ইনসপেক্টর বা বিচার যার কাছেই হোক, তিনি তদন্তে সাহায্য করতে চান, তাহলে ওরা তাকে সন্দেহ করবে।
এতে এরকুল পোয়ারো বললেন তাতে ওর কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হয় না। ক্ল্যান্সি বলে চললো যে, ইনসপেক্টরকে তিনি তার পরের বইতে নাকানিচোবানি খাওয়াবেন। এই খুন তার কাছে ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে তিনি ভাবতে শুরু করেছেন। তিনি এই বিষয় নিয়ে লিখতে শুরু করেছেন। গল্পের নাম দিয়েছেন আকাশযানে হত্যা রহস্য। জেন বললো, মানহানি বা ওইরকম কোনো মামলায় পড়বেন না তো?
মিঃ ক্ল্যান্সি বললেন, সেটা বইয়ের কঠিন অধ্যায় সম্পূর্ণ অভাবিত সমাধান থাকবে একেবারে শেষ অধ্যায়ে।
পোয়ারোর উৎসুকতার জবাবে মিঃ ক্ল্যান্সি বললেন, প্লেনের চালক সেজে একটি মেয়ে লা বুর্জেত থেকে বিমানে উঠবে আর সাফল্যের সঙ্গে মাদাম গিজেলের আসনের নিচে লুকিয়ে থাকবে। তার সঙ্গে থাকবে এক শিশি অতি আধুনিক গ্যাস। এই শিশিটা খোলার সঙ্গে সঙ্গে সব যাত্রী অচেতন হয়ে পড়বে মাত্র তিন মিনিটের জন্যে সেই সময়ে সে আসনের নীচ থেকে বেরিয়ে আসবে, আর বিষাক্ত তীরটা ছুঁড়ে দেবে, তারপর প্যারাসুট খুলে পেছনের দরজা দিয়ে লাফিয়ে পড়বে। জেন বললো, কোনো আসনের নিচে কেউ বসতে পারে না। জায়গায় কুলোবে না যে।
মিঃ ক্ল্যান্সি বললেন, আমার প্লেনে জায়গা থাকবে। চমৎকার–পোয়ারো বললেন। আচ্ছা মহিলাটির উদ্দেশ্য কি? এখনও পুরোপুরি ঠিক করিনি। সম্ভবতঃ গিজেলও ওই মেয়েটির প্রেমিককে সর্বস্বান্ত করলো।
মিঃ ক্ল্যান্সি বললেন, মেয়েটি সাপুড়ে, সে তার পোষা পাইথনের বিষ নিংড়ে নিয়েছিলো।
পোয়ারো বললেন যে, মিঃ ক্ল্যান্সি, পুলিশ তাকে সন্দেহভাজন মনে করলেও তার সঙ্গে পোয়ারো আলোচনা করতে চান। মিঃ ক্ল্যান্সিকে জিজ্ঞাসা করা হল, তার মতে কে এই অপরাধ করেছে। তিনি বললেন, গল্প লেখার সময় যাকে খুশী অপরাধী করা যায় কিন্তু যখন ব্যাপারটা বাস্তবে ঘটে তখন সত্যিকারের একজন কেউ তা করেছে। পোয়ারো দুজনে একসঙ্গে কাজ করতে চান। তবে তার মতে ফরাসি দুজনের একজন খুনী কারণ ওরা মহিলাটির মতো ফরাসি এবং তারা মহিলাটির কাছে এসে বসেছিলো।
এটা খুনের উদ্দেশ্যের ওপর অনেকখানি নির্ভর করছে, পোয়ারো নিশ্চিতভাবে বললেন। নিশ্চয়ই। আমার ধারণা, সমস্ত উদ্দেশ্যগুলোই বৈজ্ঞানিকভাবে নথিভুক্ত করেছেন?
আমার পদ্ধতি সেকেলে। আমি পুরানো প্রবচন মেনে চলি। অপরাধ করে কে লাভবান হচ্ছে খুঁজে বের করো। মিঃ ক্ল্যান্সি বলেন, খুব দামী কথা এটা কিন্তু এক্ষেত্রে এটা ঠিকমতো প্রয়োগ করা শক্ত। আমি শুনেছি মহিলাটির এক মেয়ে আছে, যে তার টাকাকড়ি পাবে। কিন্তু আরও অনেকেই হয়তো আরও লাভবান হবে, কারণ এটুকু আমরা জানি তাতে হয়তো এমন কেউ ছিলো যে তার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলো এবং সেই টাকা শোধ দিতে চাইছিলো না। পোয়ারো মনে করেন যে তাকে কেউ খুনের চেষ্টা করেছিল এটা তিনি জানতেন। ক্ল্যান্সির মনে হয় এখন দেখতে হবে, যদি কেউ খুনের চেষ্টা করেছিল যদি হয় তাহলে আমাদের সবদিক চিন্তা করতে হবে তবে নিশ্চিতভাবে কিছু না জানা পর্যন্ত এই চিন্তাটা সুবিধার নয়।
মিঃ ক্ল্যান্সি বললেন, যে তিনি চ্যারিং ক্রশ রোজের থেকে বাঁকানল কিনেছিলেন, সেটা স্যরসোলেম দোকান বা মিচেল অ্যান্ডে স্মিথও হতে পারে, তবে সেটা তিনি ইনসপেক্টরকে বলেছেন।
পোয়ারো বাঁকানল কিনে দেখতে চাইলেন সেই দোকান থেকে। ক্ল্যান্সি বললেন, যে এটা পাওয়া শক্ত কারণ জিনিসটি দুর্লভ, পোয়ারো দোকানের নাম দুটো লিখতে বললো। মিস গ্রে তার খাতায় লেখার ভান করে নাম দুটো লিখে রাখলেন। পোয়ারো ও মিঃ ক্লান্সি অতিথিপরায়ণতায় খুশী হয়ে বিদায় গ্রহণ করতে চাইলেন।
মিঃ ক্ল্যান্সি যাবার আগে তাকে লাল পাগড়ির রহস্য বলে একটি বই দিলেন যাতে তীরের বিষ আর আদিবাসীদের তীর সম্পর্কে লেখা ছিল। তিনি জেনকে বললেন যে তিনি পিটম্যানের শর্টহ্যাণ্ডের নিয়ম মানেন না, জেনকে পোয়ারো বাঁচিয়ে দিলেন এই বলে তিনি চেকোশ্লোভাকিয়ার নিয়ম মেনে চলেন।
.
১৬.
প্রচারের কৌশল
মিঃ ক্ল্যান্সি বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি নিয়ে প্রিন্স হোটেলে এলেন। নরম্যান জিজ্ঞাসা করলেন, কেমন কাজ হল।
মিস গ্রে বললেন যে, তার লেখা মিঃ ক্ল্যান্সি দেখেছেন। যতটা ভালোমানুষ ও ভুললামন মনে করা হয় ততটা নয়।
আপনি কি সত্যিসত্যিই ওই ঠিকানাগুলো চেয়েছিলেন। হ্যাঁ, মিঃ পোয়ারোর ধারণাগুলো কাজে লাগিয়ে, পুলিশ ওইগুলো সম্পর্কে খবর নেবেন না। আসলে ওই প্লেনে যে একজন আমেরিকান ভদ্রলোক ছিলেন সে সম্পর্কে পুলিশ অন্ধকারে। আসলে জেন ও গেল এই সম্পর্কে জানে না, তার জন্য আর একজন আমেরিকান এসে পড়ায় ব্যাপারটা আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পোয়ারোর মতে বাঁকানল নতুন করে আর মিঃ ক্ল্যান্সি কেনেননি। তাই তার খুনের সন্দেহ থেকে যায়। আসলে তিনি অনেককেই সন্দেহ করছেন। খুনের উদ্দেশ্যের উপর এটা নির্ভর করছে। এ বিষয়ে গেল জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন যে তিনি সরকারী গোপনীয়তার মধ্যে হাত দিতে চান না। কারণ ভদ্রমহিলার লেনদেনের সমস্ত কাগজপত্র পুড়ে গেছে।
তার মতে গিজেল কারও কোনো সাংঘাতিক অপরাধের কথা জানতেন, ধরুন–কোনো লোক হয়তো খুনের চেষ্টা করেছিলো বা এইরকম কিছু জানতেন। পোয়ারোর মতে এটি একটি যুক্তিসঙ্গত কারণ, কারণ ওর কাছে প্রমাণ আছে। এই খুনের ঘটনা দুজনের মধ্যে কি প্রভাব ফেলেছে। আসলে পোয়ারোর মতে জেনের কথা অনুযায়ী উত্তেজনা খুবই তাড়াতাড়িই নিভে যায়, কিন্তু ভয় অনেকদিন টিকে থাকে।
আপনি কি ভাবছেন, এই নিয়ে আমাকে লেগে পড়ে থাকতে হবে। আর কোনো পরিকল্পনা আছে নাকি আপনার। হ্যাঁ আছে, সবকিছুই আমি ছুঁড়ে ফেলে দেবো। তারপর কানাডা আর কোথাও গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করবো। আমি নিশ্চিত সেটা দুঃখের কারণ-ই হবে–জেন দৃঢ়স্বরে বলল।
পোয়ারো নিজের কাজের প্রতি বিশ্বাস রাখেনি। তিনি মনে করেন তিনি রহস্য সমাধান করবেন। পোয়ারো বললেন যে ঠিকমতো সাহায্য পেলে খুব চটপট সমস্যা সমাধান করতে পারেন। পোয়ারো কয়েক দিন মিঃ গেলের সাহায্যে কাজ করতে চান। তিনি চান এমন লোক যিনি ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতে পারবে, এজন্য তিনি মিঃ গেলের সাহায্য চান। গেল হতবুদ্ধি হতে চান কিন্তু তাকে কেন এটা বললেন। তিনি চুপ করে রইলেন। তারপর পোয়ারো বললেন, তিনি তার জন্য একটা নক্সা তৈরি করবেন। তার মানে উনি একটা চিঠি লিখবেন। আর সেটা নকল করে মিঃ গেল মিঃ হরবেরিলর কাছে পাঠাবেন। যার ওপর লেখা থাকবে ব্যক্তিগত। চিঠিতে সাক্ষাৎকারের কথা লেখা থাকবে। তিনি তাকে এক বিশেষ উপলক্ষ্যে প্লেনে করে ইংল্যান্ডে আমার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। মাদাম গিজেলের কিছু কিছু লেনদেন যে তার হাত দিয়ে হয়েছে একথা উনি উল্লেখ করবেন।
তারপর মিঃ গেল সেই আমন্ত্রণ পাবেন, তিনি যাবেন এবং নির্দিষ্ট কতগুলো কথা বলবেন। কথাগুলো আমি আপনাকে শিখিয়ে দেব। কিন্তু মিঃ গেল ভয় পেলেন যদি হরবেরিল পুলিশে খবর দেন, মিঃ পোয়ারো তাকে ভরসা দিলেন যে, তিনি তা করবেন না। আসলে দশ হাজার পাউন্ড যদি হরবেরিলর কাছে ধার চাইতে যাওয়া হয় সেটা খুবই অদ্ভুত ব্যাপার হবে। এতে পোয়ারো বললেন, লেডি হরবেরিল পুলিশের কাছে যাবেন না এবং স্বামীকে কিছু বলবেন না। পোয়ারো বলতে চান, তার স্বভাবজাত বিরোধিতা হয়েছে এবং সেটা খুবই স্বাভাবিক। আবার অন্যদিকে অন্যকে সাহায্য করার মনোভাব রয়েছে। লেডি হরবেরিল একজন জঘন্য চীজ।
গেলের ভাষায় হরবেরিল খুনী নন। কেননা জেন ও তিনি তার উল্টোদিকে বসেছিলেন। পোয়ারো সব কিছু ভোলা চেখে দেখতে চান। এবং সেজন্য সব কিছু তাকে বলতে হবে।
গেল বললেন যে একজন মহিলাকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করার চিন্তা ভালো লাগছে না। আসলে পোয়ারো তাকে ব্ল্যাকমেল করতে বলছেন না। একটা সঠিক প্রভাব সৃষ্টি করতে বলছেন। সেটা তৈরি হলে তিনি গিয়ে হাজির হবেন। নরম্যান গেল নিমরাজী হলেও এই অভিনয় করতে বাধ্য হলেন।
জেনকে নিয়ে পোয়ারো কোনোদিন থিয়েটারে গিয়েছেন কিনা জিজ্ঞাসা করলেন।
জেন অনেকবার গেছেন। বললেন। অতলতলে নাটকের হ্যারির চরিত্র যে মিঃ রেমন্ড ব্যারাক্লো অভিনয় করেছিলেন, তার অভিনয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। পোয়ারো সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ করতে চান। জেনকে এই অস্থিরচিত্ত মানুষের সঙ্গে কেমন যেন লাগছিল।
পোয়ারো তা বুঝতে পারলেন এবং বললেন, আমি আমার কর্মপন্থায় যথাযথ নিয়ম এবং পদ্ধতি যুক্তিযুক্তভাবে করতে চেষ্টা করি। তিনি কিছু কিছু সিদ্ধান্ত বাদ দিতে চান।
জেন বললেন, এজন্য তিনি মিঃ ক্ল্যান্সি, হরবেরিল, জেন ও গেলকে বাদ দিয়েছেন। জেনের হঠাৎ খুন করার চেষ্টা মনে পড়ে গেল।
আপনি খুব চটপট বুঝে ফেললেন মাদাম, হ্যাঁ ওটা আমার পদ্ধতির একটা অংশ। খুন করার চেষ্টা কথাটির সাথে সাথে আমি মিঃ ক্ল্যান্সি, গেল ও আপনাকে লক্ষ্য করেছি কিন্তু চোখের পাতার কোণ কাঁপান। কিন্তু আমি আপনাকে বলছি খুনী যখন আগে থেকে বুঝতে পারে, তখন সে আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্য তৈরি হতে পারে। কিন্তু ছোটো একটা নোট বই-এর এই কথাটা আপনাদের কারোর জানা কথা নয়। সুতরাং বুঝতেই পারছেন আমি সন্তুষ্ট। জেন তার চুতরতার প্রশংসা করল এবং বলল যে কোনো জিনিস খোঁজার জন্য তিনি চতুরতম পন্থা অবলম্বন করেন। পোয়ারো তার জন্য লোকজনদের মন খুলে কথা বলাকে মনে করেন।
জেন কথা প্রসঙ্গে জানালেন, তিনি অনাথআশ্রমে মানুষ হয়েছেন। তিনি আয়ারল্যান্ডে ডাবলিনের কাছে বাস করতেন।
পোয়ারো বাড়ি ফিরে এগারোজনের নামের একটা তালিকা বের করে চারজনের নামের পাশে দাগ দিলেন এবং বিড়বিড় করে বললেন তিনি জানতে পেরেছেন কিন্তু নিশ্চিত হতে হবে।
.
১৭.
ওয়ার্ডসওয়ার্থে
মিঃ হরবেরিল মিচেল নৈশাহারে বসতে যাবে এমন সময় এক অতিথি তার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তিনি মিঃ পোয়ারো। মিচেল বললেন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বোধহয় মামলা নিয়ে এগোতে পারছে না। এই মামলা নিয়ে মিচেল খুবই চিন্তিত। আসলে মিচেল মনে করে তার কোম্পানি ভালো বলেই, নইলে তার চারকি চলে যাবে। আসলে হেনরি ব্যাপারটি নিয়ে নিজেকে অপরাধী মনে করছে।
মিচেলের মত তার আগেই তার লক্ষ্য করা উচিত ছিল ভদ্রমহিলা মারা গেছেন। এতে কিছু হেরফের হত না পোয়ারো মনে করেন। আসলে মিসেস মিচেল মনে করেন ব্রিটিশ প্লেনে একটা নোংরা কেলেঙ্কারী করার জন্য এটা করেছে। মাদাম গিজেলের কথা প্রসঙ্গে জানালেন যে তিনি ডরমেন্টে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেখানে তার পূর্ব পুরুষরা প্রায় ২০ বছর ধরে বাস করছে।
মিচেলকে পোয়রো একটা কথা জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন যে মারা যাবার আগে মাদাম গিজেলের টেবিলে কাঁটা চামচ, নুন বাটি কি দেখেছেন। সে বলল, ওরকম কিছু সে দেখেনি তবে পুলিশ এ বিষয়ে বলতে পারে। তিনি এ বিষয়ে ডেভিসের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন।
মিচেল মনে করেন যে ডেভিসের সঙ্গী তার এই খুনে জড়িয়ে পড়াকে সমর্থন করবে না।
ডেভিসকে যখন জিজ্ঞাসা করা হল, সে বলল, যে সেরকম কিছু দেখেনি। তার দুটি কফির চামচ ছিল। একটি ডিসে দুটো চামচ থাকা মানে নাকি বিয়ের সম্ভাবনা।
পোয়ারো তাকে ফরাসি মেয়েদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। ডেভিস বললো, তার পক্ষে ইংরেজ মেয়েরাই ভালো। এটা তামাশা ছিল।
.
১৮.
রাণী ভিক্টোরিয়া স্ট্রিটে
মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো মিঃ রাইজারের সঙ্গে দেখা করল। তিনি বললেন যে, তিনি জানতেন না মাদাম ওই প্লেনে খুন হবেন নইলে তিনি ও প্লেনে যেতেন না। তিনি বলেন যে, তিনি এমনিই জ্বলে পুড়ে মরছেন। কেন পুলিশ ডাঃ হার্বার্ড বা ব্রায়ানকে জ্বালাতন করতে যাচ্ছে না। তার মনে হয় ডাক্তাররা সাংঘাতিক বিষ জোগাড় করতেন।
মিঃ পোয়ারোকে তিনি বললেন যে এর একটাই সুবিধে তিনি খবরের কাগজ থেকে কিছু টাকা পাচ্ছেন প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ হিসাবে। তবে তার দেখার থেকে সাংবাদিকের ভাবনা বেশি স্থান পচ্ছে।
পোয়ারো বললেন যে, এতে তিনি বেশ কিছু টাকা পেয়ে গেলেন। এতে তার সুবিধে হল কারণ এতে তিনি তার ধারের টাকাটা পেলেন।
এটা শুনে রাইজার রেগে উঠলেন। তিনি কি করে জানলেন এটা জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন যে যেমন করেই পান না কেন এটা ঠিক যে তিনি ব্যাপারটা গোপন রাখবেন। রাইজার পোয়ারো কেন দেখা করতে এসেছিলেন তাই জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন যে পেশার খাতিরে অনিচ্ছাসত্ত্বেও মাদাম গিজেলের সঙ্গে লেনদেন করতে হয়েছে। রাইজার তা জানতে চাইলেন না। তিনি বললেন মহিলার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। এটা একটা জঘন্য কুৎসা।
পোয়ারো এই ব্যাপারটা খুঁজতে চান। তিনি বললেন, এ ব্যাপারটা খোঁজ করতে হচ্ছে। রাইজার বললেন, তারও সুদখোরদের পাল্লায় পড়েছি বলে তারা গুলিয়ে দেয়। সমাজের যতসব উঁচুতলার মহিলারা জুয়া খেলে দেনায় ডোবে। তারা এক শিকার হয়।
পোয়ারো ভুল খবর দেওয়ার জন্য ক্ষমা প্রদর্শন করলেন। তিনি বললেন, ডাঃ ব্রায়নকে ডাঃ হার্বার্ড কেন বলেছেন। রাইজার উত্তরে জানালেন এটা একটা কবিতা থেকে পেয়েছেন। তিনি মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিচার করতে চান।
.
১৯.
মিঃ রবিনসন এলেন আর গেলেন
হরবেরিল কাউন্টেস তার ৩১৫ নং গ্রসনেভর স্কোয়ারের বাড়িতে তার শোবার ঘরে সাজের টেবিলের সামনে বসেছিনে। তিনি একটা চিঠি পড়ছিলেন।
হরবেরিল কাউন্টেস মহাশয়া—
প্রিয় মাদাম,
বিষয়, মাদাম গিজেল, সম্প্রতি মৃত, আমি এই মৃত মহিলার কতগুলো দলিলের উত্তরাধিকারী। আপনি অথবা মিঃ রেমন্ড ব্যারাক্লো যদি এই ব্যাপারে উৎসাহী হন, তাহলে এই সম্পর্কে আলোচনার জন্য আপনাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে আমি খুশি হবো। কোনো জবাব না পেলে, বুঝবো, আপনি এই ব্যাপারটা আপনার স্বামীর সঙ্গে বোঝাপড়া করে নেবার জন্যই আমাকে বলেছেন।
আপনার একান্ত
জন রবিনসন।
তিনি চিঠিটা বারবার পড়তে লাগলেন। তিনি হাত বাড়িয়ে খামদুটো তুলে নিলেন ব্যক্তিগত ও একান্ত গোপনীয়, তার বলা ছিল হঠাৎ যদি মৃত্যু হয় তার খদ্দেররা যাতে বিপদে না পড়ে তার ব্যবস্থা করা আছে। তিনি ভাবছিলেন যে তার মোটেই ভালো ঠেকছে না। তিনি ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তিনি এই লোকটির সঙ্গে দেখা করাটাই মনস্থ করলেন।
তিনি লেখার টেবিলে গিয়ে আঁকাবাঁকা অক্ষরে বড়ো বড় করে লিখলেন।
হরবেরিল কাউন্টেস, মিঃ জন রবিনসনকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন এবং আগামীকাল সকাল ১১টায় তিনি যদি এখানে আসেন তাহলে তার সাথে দেখা করবেন।
নরম্যান কালো দাড়ি, পরচুলো ও দাঁতে আঠালো পাটি লাগিয়ে ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন তা দেখে এরকুল পোয়ারো রেগে উঠলেন। তিনি বললেন যে, নিজেকে কি মনে হচ্ছে, বাচ্চাদের হাসবার জন্য নিজেকে ভাড় ভাড় মনে হচ্ছে না…কিন্তু ওটা কি দাড়ি হয়েছে? দেখেই বোঝা যাচ্ছে বন্ধু, ওটা কাঁচা হাতে লাগানো আণ্ডাদাড়ি, তার উপরে আবার সুদ। আচ্ছা–আপনার পরচুলো পরার বদঅভ্যাস আছে নাকি? যে আঠা দিয়ে ওটা লাগিয়েছেন, তার গন্ধ তো দশ গজ দূরে থেকেও নাকে আসছে। আর দাঁতে যে একটা আঠালো পাটি লাগিয়েছেন এটা কেউ বুঝতে পারবে না মনে করবেন না। বন্ধু এ আপনার দ্বারা হবে না–এই অভিনয় করা আপনার কাজ নয়।
একসময় তিনি যে শখের থিয়েটার করতেন এটা তিনি জানালেন। পোয়ারো জানালেন যে তাকে তারা মেকআপ সম্পর্কে কিছু শেখাননি। এই ছদ্মবেশ মঞ্চের অন্ধকারে চেনা যাবে। গ্রসনেভর স্কোয়ারে দিনের আলোয় চেনা অবশ্যই সম্ভব। তিনি চান সেই ভদ্রমহিলা তাকে দেখে হেসে খুন না হয়ে ভয় পান। তিনি নরম্যানের হাতে কয়েকটা শিশি বোতল দিলেন, সেগুলি দিয়ে তিনি মিনিট পনেরো পর স্নানঘর থেকে যখন বেরিয়ে এলেন তখন তার মুখে ইট-রঙা চমৎকার লালচে ছাপ।
পোয়ারো বললেন যে বেশ হয়েছে, এগিয়ে যান, আপনার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হোক। পোয়ারো ভরসা দিলেন যে তাকে মারমুখো স্বামী আর কজোড়া পুলিশের মুখোমুখি পড়তে হবে না। গ্রসনেভর স্কোয়ারে দোতলায় একটা ছোট্ট ঘরে লেডি হরবেরিল এসে ঢুকলেন।
মিঃ রবিনসন রূপী নরম্যানকে লেডী হরবেরিল বললেন তার চিঠি পেয়েছেন। তিনি উদ্ভুতভাবে সিসিলিকে বললেন–পাবেন বইকি–তা এ ব্যাপারে কি করছেন লেডি হরবেরিল।
আপনি কি বলতে চাইছেন আমি বুঝতে পারছি না। আসছি আসছি, সে কথাতেই আসছি। তার কথায় সমুদ্রের ধারে ছুটি কাটাতে সবার ভালো লাগে। তিনি নিশ্চয়ই জানেন লেডি হরবেরিল যে ঠিকানাটা নিয়ে এই প্রমাণ তৈরি হয়েছে। বৃদ্ধা গিজেল চমৎকার মহিলা ছিলেন, সবসময়ে প্রমাণগুলো ধরে রাখতেন, হোটেলের সাক্ষ্য প্রমাণ ইত্যাদি খুবই উঁচুদরের হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কারণটা কার বেশি দরকার-আপনার না লেডি হরবেরিলর; হ্যাঁ, এটাই আমার জানার দরকার।
লেডি হরবেরিল খুব ভয় পেলেন। নরম্যান নিজেকে একজন বিক্রেতা হিসেবে বলতে চান, তার কাছে যে প্রমাণগুলো আছে সেগুলো দশহাজার পাউন্ডের বিনিময়ে মাদামকে দিতে চান। যদি তিনি লেনদেন করতে রাজি হন তাহলে তিনি সেটা দেখাতে রাজি। ভদ্রমহিলা বলতে চান তিনি এমন কিছু অন্যায় কাজ করেননি যার জন্য তাকে এত টাকা দিতে হবে।
মিঃ রবিনসন বললেন যে, যদি তাই তিনি না দিতে চান তাহলে লেডি হরবেরিল তিনি জানান, তিনি বলতে চান একটা কথা বললে বোধ হয় ভুল বলা হবে না একজন পরিত্যক্তা স্ত্রী কোনো ভাতা পান না। আর মিঃ ব্যারাক্লো যদিও বেশ সম্ভাবনাপূর্ণ অভিনেতা, কিন্তু তার এখনও বেশি টাকাকড়ি হয়নি। এখন এর বেশি একটাও কথা তিনি বললেন না। তাকে চিন্তা করার সুযোগ তিনি দিচ্ছেন আর এসব কথা তিনি সত্যি বলেছেন এটা দাবী করলেন।
মহিলাটি কোনো উত্তর দেবার আগে তিনি দ্রুত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। একবার রাস্তায় বেরিয়ে ঘাম মুছে সে বললো, কপাল ভালো যে ঝামেলা চুকাতে পেরেছি।
পরে এক সময়ে লেডি হরবেরিল বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, একজন চাকর একটা কার্ড নিয়ে হাজির হলে তাতে পোয়ারোর নাম লেখা ছিল।
এটা আবার কে বলে তিনি যখন কার্ডটা ছুঁড়ে ফেললেন তখন পরিচারক বললেন যে মিঃ রেমন্ড ব্যারাক্লোর কাছ থেকে আসছেন।
মাদামের কাছে বেশ সেজেগুজে পোয়ারো এসেছেন। তিনি মাদামকে বন্ধুর মতন ভাবতেন এবং আপনাকে পরামর্শ দিতে এসেছি। তিনি বললেন তিনি জানেন উনি বিপদগ্রস্ত। তিনি নিজেকে একজন গোয়েন্দা বলে পরিচয় দিলেন। ম্যাডাম তাকে চিনতে পারলেন। তিনি বললেন তিনি সব গোপন কথা জানেন। তাই তিনি কোনো গোপন কথা ফাঁস করতে বলছেন না। তিনি নিজেই যা বলার বলছেন। তিনি বললেন সকালে যে ভদ্রলোক এসেছিলেন তিনি আপনাকে ভয় দেখিয়ে কতকগুলো টাকা আদায় করতে এসেছিলেন, তার কাছে কতগুলো তথ্য প্রমাণ আছে। সেগুলি আগে মাদাম গিজেলের কাছে ছিলো। তিনি আপনার কাছ থেকে সাত আট হাজার টাকা চেয়েছেন।
কিন্তু আট হাজার টাকা যে মাদামের দেওয়া সম্ভব নয় তা তিনি বললেন কারণ উনি এখন দেনায় ডুবে আছেন, তিনি তাকে সাহায্য করতে এসেছেন, বলেন এরকুল পোয়ারো এবং তিনি মিঃ রবিনসনের সঙ্গে বোঝাপড়া করবেন।
রুক্ষভাবে মাদাম জানালেন এরজন্য তাকে কত দিতে হবে। তিনি বললেন যে মাদামের একটা সই করা ছবি দিতে হবে।
সিসিলি কেঁদে ফেললেন। তিনি এরকুল পোয়ারোর কাছে প্রশ্নের উত্তরে বললেন, তিনি আঠারো মাস আগে খুব বিপদে পড়েছিলেন। জুয়াখেলায় তিনি তখন মাদামের কাছ থেকে টাকা চান। মিঃ ব্যারাক্লো বলেছিলেন যে, তিনি উঁচুতলার মহিলাদের টাকা দেন। তিনি প্রথমে একশ টাকা ধার দেন। এর আগেই মিঃ ব্যায়োক্রোর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। তিনি তার স্বামীর প্রতি অসন্তুষ্ট এবং তিনি বিবাহ বিচ্ছেদ চান না; কারণ তিনি তার সম্মানের আসন কিছু টাকা দেবার প্রশ্ন নিশ্চয়ই উঠেছিল, মাদাম বললেন, হ্যাঁ এবং তিনি টাকা শোধ দিতে পারেননি। মাদাম ঘুরে খোঁজ নিয়েছিলেন।
তার নিজস্ব পদ্ধতিতে ছিলেন, পোয়ারো বললেন। তিনি শাসিয়েছিলেন যে যদি টাকা দিতে না পারেন তাহলে তা লেডি হরবেরিলকে বলে দেবেন। আসলে মাদামের মৃত্যু হরবেরিলর সুবিধা করে দিয়েছে। কিন্তু তিনি একমাত্র প্লেনে ছিলেন যার মৃত্যু কামনায় একটা উদ্দেশ্য ছিল তিনি একটু বিচলিত হয়েছেন।
লেডি হরবেরিল বললেন এটা খুবই অদ্ভুত। এ ব্যাপারে তিনি দারুণভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে যখন আপনি তার মৃত্যুর ঠিক আগের রাত্রে তার সঙ্গে বেশ খানিক বচসা হয়েছিল। তিনি মহিলাটির সম্পর্কে উত্মা প্রকাশ করলেন।
তবুও তিনি আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, যে তিনি মহিলাকে চেনেন না। এর কারণ ভদ্রলোককে তিনি কিছু বলেননি। আসলে তিনি নিজে জানার চেষ্টা করেছেন। আসলে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি ভেবেছেন যদি কিছু হবার থাকে সেটা ফাঁস হয়ে যেত। এমনকি গতকালের চিঠি পাওয়ার পরও তিনি একটু ভয় পাননি। কারণ তিনি তার মৃত্যু কামনা করলেও তাকে খুন করেননি। তিনি এই বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
তিনি (পোয়ারো) বললেন, তাকে তিনি সন্দেহ করেন না কারণ তিনি নারী। তাকে জিজ্ঞাসা করতে বললেন তিনি মিঃ ব্যারাক্লোর সঙ্গে ডিনার করেছেন, তার একবারই মহিলার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। তার আগে অভিসারী হিসাবে নাম ছিল সিসিলি ব্ল্যান্ড। তার আসল নাম মাথা জেব। তিনি টাকা পয়সার বিনিময়ে লেডি হরবেরিলকে বিচ্ছেদ করতে বলেন, পোয়ারো বললেন, যে মিঃ রবিনসন যেন তাকে বিরক্ত না করে তিনি তা দেখবেন।
গোয়েন্দা ইনসপেক্টর জ্যাপ হলে স্ট্রিট ধরে এগিয়ে গিয়ে একটা দরজার সামনে দাঁড়ালেন। ডাঃ ব্রায়ানের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি একটা কার্ডে দেখা করতে চাইলেন এবং বললেন যে সময় নেবেন। পরিচারক বললেন, ডাক্তারবাবু রোগী দেখতে ব্যস্ত তিনি যেন একটু অপেক্ষা করেন। ডাঃ ব্রায়ানোর অন্য রোগীরা তখন তার সম্পর্কে আলোচনা করছিল। এ থেকে জ্যাপ বুঝতে পারলেন তার পেশা বেশ ভালোই। তাই দেখে মনে হয় তার ধার করার দরকার হয় না। কিন্তু বদনাম হলে সব খান খান করে ভেঙ্গে পড়বে। ডাক্তার হবার এই মুশকিল।
১৫ মিনিট পর ব্রায়ান এলেন এবং তিনি দেরি করার জন্য মাপ চাইলেন। এবং প্লেনের সেই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছেন কিনা তা জিজ্ঞাসা করলেন। জ্যাপ বললেন, হ্যাঁ এবং বললেন যে কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্ন করার জন্যই আমি এসেছি। সেই মার্গের বিষের ব্যাপারটি। আমার ঠিক মাথায় আসছে না।
ডাঃ ব্রায়ান বললেন যে তিনি বিষ বিশেষজ্ঞ নয় এটা উইন্টারস্পুন একজন বিশেষজ্ঞ বিশেষজ্ঞ কেমন হন তা নিশ্চয় আপনার অজানা নয়। কিন্তু আমি যতদূর বুঝেছি তাতে মনে হয়েছে এ ব্যাপারে ডাক্তারের দিকটাও নেহাত কম নয়।
এ বিষয়ে ডাক্তারের ভাবনা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন খুন করার এক অভাবনীয় পদ্ধতি এবং খুনী খুব সাহসী নাহলে সে এমনভাবে খুন করল যে কেউ দেখতে পেলে না।
মিঃ পোয়ারো বললেন বুমস্যাভের নামের কোনো বস্তুর কথা হাজারে একজন লোকও শুনেছে। তার চেয়েও অনেক কমলোক এই মাপের বিষ নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। উনি নিজে ডাক্তার হলেও উনি কোনোদিনও জিনিসটা নাড়াচাড়া করেননি।
ডাক্তার বললেন তার এক বন্ধুর গবেষণাগারে অনেক রকম শুকনো মাপের বিষের নমুনা আছে। তার মধ্যে কেউটে সাপের বিষ আছে–কিন্তু বুম্যাঙের কোনো নমুনা আছে বলে তিনি মনে করতে পারছেন না। তিনি কয়েকজনের নাম ডাক্তারকে বললেন যে প্রথমে তিনি কেনেডিকে সামান্য চেনেন। হেইডসারকে ভালো করেই চেনেন এবং কারমাইকেন এডিনবরা, তার তিনি নাম শুনেছেন। চেনেন না। তার মধ্যে হেইডলার তাকে সাহায্য করতে পারেন।
জ্যাপ তার কাছ থেকে এগুলি জেনে খুব প্রীত হলেন। বাইরে বেরিয়ে তিনি নিজের কৌশলগুলি ভেবে খুবই হাসছিলেন।
.
২০.
তিনটি সূত্র
জ্যাপ যখন স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডে ফিরে আসলেন তখন তার জন্য এরকুল পোয়ারো অপেক্ষা করছিলেন।
পোয়ারো জানালেন সে প্যারিসের দোকানদার বাঁকানলটিকে সনাক্ত করেছেন। পরিচারকদের জেরা করে কোনো কিছু পাওয়া যায়নি কারণ তারা কোনো চমকপ্রদ ঘটনা ঘটতে দেখেনি। তিনি সব যাত্রীদের প্রশ্ন করেও কিছু মিথ্যা পাননি।
জ্যাপ বলছেন সকলেই মিথ্যে বলেছে। তিনি তার ওপরতলা থেকে ধমকানি খাচ্ছেন। তিনি ইচ্ছে করলে ফরাসিদের ঘাড়ে চাপতে পারেন–আমরা বলব ওটা ফরাসিদের কাজ। আর প্যারিস বলবে ওটা ইংরেজের কাজ। আসলে জ্যাপ ফরাসি উঁপ দুজনকে সন্দেহ করেন না। তারা তাদের নিজের জগৎ নিয়ে ব্যস্ত। ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদদের কেউ একাজ করেনি। তার মতে মিঃ ক্ল্যাণ্ডিন এটা করতে পারে না। ওনার কিছু মতলব থাকতে পারে। তার মনে হল সেই কালো বইয়ের সি২৫২ হচ্ছে লেডি হরবেরিল। ওই মহিলাটির বেশ কঠিন ঠাই। এ আপনাকে বলে রাখছি।
জ্যাপ ডঃ ব্রায়ান সম্পর্কে তিনি সন্দেহ করছেন। তার এক সুন্দরী মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক আছে। এর ক্ষেত্রে আর.টি, ৩৬২টা মিলে যাচ্ছে। তিনি কোথা থেকে সাপের বিষ জোগাড় করেছেন তা তিনি জানেন। তিনি তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। যাই হোক তখন সবটাই আমার অনুমান কোনোটাই ঠিক ঘটনা নয়। এই মামলাটির সঠিক ঘটনা খুঁজে বের করে সন্দেহ করাও চলে না। তিনি বলেছেন তিনি প্যারিস গিয়েছিলেন ধারের টাকা জোগাড় করতে, তিনি পাননি। যে নাম-ঠিকানা দিয়েছিলেন সবই পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন তার ব্যাবসা দেউলিয়া হতে চলেছিলো কিন্তু কোনোরকমে চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানেও আপনাকে হতাশ হতে হচ্ছে।
পোয়ারো বললেন, তিনি তার মত কিছু জানতে পারেননি। তিনি নিয়ম ও পদ্ধতি মেনে একটা পা বাড়িয়েছেন। তাকে অনেক দূর যেতে হবে। তিনি বলেছেন, খুন হচ্ছে এমনই একটা কাজ, যা নির্দিষ্ট কোনো ফলোভের জন্য করা হয়। তার মতে যদি কোনো টাকা যদি কারোর কাছে থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ার কথা থাকে তাহলে তাকে খুন করলে টাকা ও উত্তরাধিকার হিসেবে তার ফল দুই-ই পাওয়া যায়। পোয়ারো বলতে চান তার কাজের ফল হিসেবে যা তিনি পেয়েছেন তা হল ২১ শে জুনের ক্ষেত্রে এই ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। তিনি কাগজটি মেলে তা দেখালেন।
নিম সাময়িক উন্নতি। বেতনবৃদ্ধি নিম্ গেলকল যার হয়েছে। লেডি হরবেরিল ফল ভালো, যদি তিনিই সি-২৫২ হন। নিম কার ফল খারাপ যেহেতু সিমেলের মৃত্যুতে লেডি হরবেরিলর পক্ষে তার স্ত্রীকে ত্যাগ করার যথার্থ কারণ যোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়বে। মিঃ ক্ল্যাডিস বলে ভালো। এই খুনের ব্যাপারে বই লিখে কিছু রোজগারের আশা রাখেন। ডঃ ব্রায়ানকে ফল ভালো, যদি তিনি আর.টি. ৩৬২ হন।
মিঃ রাইজার ফল ভালো। এই খুনের উপর প্রবন্ধ লিখে কিছু টাকা পেয়েছেন যাতে তার ব্যাবসা একটা দারুণ দুঃসময় কাটিয়ে উঠেছে, রাইজার যদি এক্স-বি.আর.জি.জেড-৮ হন তবু ফল ভালো, বল কেমন প্রতিক্রিয়া হয়নি। মজা-একটাই।
মিচেল-ফল কোনো প্রভাব পড়েনি। ডেভিসফল একই। জ্যাপ সন্দেহভাবে বললেন, আপনি ভাবছেন এটা আপনাকে সাহায্য করবে। জ্যাপ মনে করেন, এর চেয়ে আমি কিছু বলতে পারি না লিখলে একই ব্যাপার হত। পোয়ারো বললেন যে, চারজন ক্ষেত্রে মিঃ ক্ল্যান্সি, মিঃ গ্রে, মিঃ রাইজার আর লেডি হরবেরিলর ক্ষেত্রে আমি বলতে পারি যে, ফলাফল জমার ঘরে বসেছে। নিম্নগোত্রীয় মিস কারের ক্ষেত্রে ফলাফল খরচের ঘরে। আর চারজনের ক্ষেত্রে যতদূর আমরা জেনেছি, জমাখরচ কোনো ফলই নেই, মানে ডাঃ ব্রায়ানের ক্ষেত্রে কোনো ফলই নেই। কিংবা পরীক্ষা লাভের পথ আছে। জ্যাপের মনে হয় বিটার কাছ থেকে ফার্নের চেয়ে বেশি খবর আদায় করতেন।
পোয়ারো মনে করেন যে, তার সব থেকে আকর্ষণ লাগে, যে মহিলা জীবনে প্রথম ভালোবাসার স্বাদ পেয়েছিলেন কিন্তু জীবন যন্ত্রণা পেয়ে জীবনের সমস্ত কোমলবৃত্তি বিসর্জন এলিয়ে এক কঠিন জীবনযাপন করেছেন।
জ্যাপ বললেন, আপনি কি ভাবছেন তার অতীত জীবনের কোনো সূত্র রয়ে গেছে?
তিনি বললেন যে মাদাম গিজেলের প্লেটে দুটো চামচ ছিলো, এটাকে বিয়ের সম্ভাবনা বলা হলেও তার ক্ষেত্রে এটা ছিল বিদায়।
জেন নতুন চাকরি নিলো।
নরম্যান গেল-এর সেই ব্ল্যাকমেল অভিযানের পরে নরম্যান, জেন এবং পোরারো নৈশভোজে মিলিত হয়েছেন। মিঃ রবিনসনের প্রয়োজন ফুরিয়েছে বলে মিঃ গেল আনন্দ পেলেন। নরম্যান বললেন, যে হরবেরিল গিজেলের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন, পোয়ারো আরো বেশি আশা করেছিলেন। তিনি বললেন যে অনেক কিছুই তিনি জানেন।
পোয়ারো বললেন যে বেশিরভাগ লোকই দেখবেন যা আপনাকে বলে তার চেয়ে নিজের মনের ইচ্ছাকে অনেক বেশি পছন্দ করে।
জেনের চুল কাটার চেয়ে বেশি বিদেশ ঘুরতে ইচ্ছে করে। পোয়ারো বললেন যে, আপনি এখনও অনেক যান। এটাই স্বাভাবিক যে, প্রতিটি লোকই জীবনে এটা ওটা পরখ করে দেখে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার পছন্দমতো একটা জীবনই বেছে নেয়।
গেল বললেন যে তার দাঁতের ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু তার কাকার ইচ্ছের জন্য তাকে এই জীবিকায় চলে আসতে হয়। তার নিজের দুনিয়াটাকে জানার ইচ্ছে ছিল।
তিনি (পোয়ারো) বললেন যে, আবার তিনি দাঁতের ডাক্তারি ছেড়ে যাচ্ছেন কেন। আসলে তাকে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে।
জেনকে পোয়ারো তার সেক্রেটারির কাজে নিযুক্ত করতে চান। কিন্তু জেন অ্যান্টোয়েনের চাকরি ছাড়তে চায় না। কিন্তু এর জন্য পোয়ারো বেশ ভালো টাকা দিতে চান। তিনি পরের সপ্তাহে প্যারিসে যাচ্ছেন তখন তাকে নিয়ে যেতে চান। প্রথমে জেন অসম্মতি দিলেও জেন পরে এটা করতে চান। তার কারণ সম্পর্কে জানালেন যে আইনটানের সঙ্গে ঝগড়া হয়ে যাওয়াই তার কারণ।
জেনের সাথে পোয়ারোর প্যারিস যাওয়া ঠিক হলো। ক্যালোক থেকে প্যারিস পর্যন্ত তাদের আলাদা কামরার ব্যবস্থা হল। এই সময়ে পোয়ারো জেনকে তার পরিকল্পনার কিছু আভাস দিল। প্যারিসে গিয়ে অনেক লোকের সঙ্গে আমাকে দেখা করতে হবে। সেখানে মাদামের উকিল থিকো আছেন। ফরাসি গোয়েন্দা বিভাগের মঁসিয়ে ফার্নে আছে। তারপর রয়েছেন মঁসিয়ে ট্যুপ। এখন দুজন, যখন আমি বাপের সঙ্গে কথা বলবো তখন আপনি ছেলেকে দেখবেন। আপনি খুব সুন্দরী আকর্ষণীয়া মহিলা–আমার ধারণা মঁসিয়ে উঁপ সেই তদন্তের দিন থেকে আপনাকে মনে রেখেছেন। পরেও জেনের সঙ্গে তার যে দেখা হচ্ছে একথা জেন বলল।
পোয়ারো খুব খুশী হলেন, তিনি বললেন যে মাদাম গিজেলের কথা জ্যাপ কাছে যেতে তিনি না জিজ্ঞাসা করেন, ওদের নিজেদের মাদাম গিজেলের কথা বলতে দিতে হবে। তাকে যেন বলা হয় মাদাম হরবেরিল এই খুনের জন্য সন্দেহভাজন, তার প্যারিসে আসার কারণ মূলতঃ মঁসিয়ে ফার্নের সঙ্গে আলোচনা এবং গিজেলের কথা বলতে দিতে হবে তাদের যেন বলা হয় মাদাম হরবেরিলর কোনো লেনদেন ছিল কিনা তার খোঁজখবর করতে এসেছেন এটাই পোয়ারো জেনকে জানালেন।
বেচারী লেডি হরবেরিল–আপনি তাকে একেবারে শিকারী বানিয়ে ছাড়লেন। তিনি মোটেই প্রশংসাযোগ্য মহিলা নন–তবু একটা ভদ্রলোকের জন্য যদি লাগে তবু ভালো। জেন বললেন যে তিনি জা দুপকে সন্দেহ করেন। আসলে পোয়ারো কিছু খবরের জন্য তাদের দুজনকে জেরা করতে চান।
পোয়ারো জ্যাপের সঙ্গে জেনকে নিয়ে একটু ইয়ার্কি করেন। জেনের মতে তিনি খুব সাধারণ এবং দরদীও। জানালেন নরম্যান কোনো স্বনামধন্য ব্যক্তি তার চেয়ারে এসে বসতে পেরেছে বলে তার মনে হয় না। জেন জানালে তিনি এখন কানাডা যাবার জন্য চেষ্টা করছেন।
পোয়ারো তাকে বললেন যে, তিনি নিউজিল্যান্ডে যাবার চেষ্টা করছেন। পোয়ারো বললেন যে তার মামলা একটি অজানা জিনিসের উপর নির্ভর করছে।
প্যারিসে পৌঁছে দু-দিন এরকুল পোয়ারো এবং তার সেক্রেটারি একটা রেস্তরাঁয় মিলিত হয়েছেন। জ্যাপরা বাপ ও ছেলে তার অতিথি।
জ্যাঁর সঙ্গে ঠিক সেই লন্ডনের মতোই আলাপ শুরু করা গেল। জার ছেলেমানুষী ভরা ব্যক্তিত্ব আগের মতোই তাকে আচ্ছন্ন করছে। জেন কথা বলছিলো, হাসছিলো, কিন্তু কান দুটো তার পোয়ারো কথার দিকে খাড়া ছিলো। পোয়ারো অন্য জিনিস আলোচনা করেছিলেন যাতে খুনের সম্পর্ক ছিল না। কারো ইচ্ছেয় জেন ও জার সিনেমা যাওয়া ঠিক হলো এবং পোয়ারোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হলো পিতার। তিনি মৃৎশিল্প সম্পর্কে অত্যন্ত উৎসাহী কিন্তু সে সম্পর্কে অনেকে উৎসাহী নয় বলে তিনি যুদ্ধ করলেন। পোয়ারো বললেন, যদি তার গবেষণায় কিছু উপকার করেন এতে তিনি খুব খুশী হবেন। তিনি বললেন এর বিনিময়ে তিনি মৃৎশিল্পের স্মারক দিতে চান, কিন্তু মঁসিয়ে পোয়ারো মিস জেনকে তাদের গবেষণার কাজে তাদের সঙ্গে দিতে চান। মঁসিয়ে উঁপ বললেন, যে এ বিষয়ে তিনি তার ছেলের সঙ্গে একটু পরামর্শ করতে চান, কারণ তার ভাগ্নে ও ভাগ্নে-বউ তার সঙ্গে যাচ্ছে। পোয়ারো বললেন গ্রে-র মৃৎশিল্প সম্পর্কে দারুণ আগ্রহ। এটা আমাদের খুব কাজে লাগবে একথা দুপকে বললেন।
পোয়ারো তার হোটেলে পৌঁছে দেখলেন জেন হলঘরে দাঁড়িয়ে সবেমাত্র জ্যা জ্যাপকে বিদায় জানাচ্ছেন। পোয়ারো জেনকে জানলেন যে আগামী বসন্তে জ্যাপের সঙ্গে পারস্যে যেতে হবে। জেন অবাক হলেন, বললেন, তিনি গেলের সঙ্গে নিউজিল্যান্ড সামন্তয়েল পাহাড়ে যেতে চান এবং পোয়ারোর সেক্রেটারি হওয়া সহজ কাজ নয়। কিন্তু পোয়ারোর মতে তিনি তা করতে চান বা এটা করতেই হবে কারণ তিনি তাদের এ প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে এখানে যে তারা এটা করতে রাজী তা নয়। তিনি এও জানালেন যে তিনি ওদের বলেছেন তিনি ভালো সেলাই করেন ও সোজা রিপু করতে পারেন।
২১. অ্যান মারিসো
২১.
অ্যান মারিসো
পরদিন সকালে মিঃ ফার্নে পোয়ারোর ঘর খুঁজে প্রাণোচ্ছলভাবে জানালেন যে, লন্ডনে থাকতে খুঁজে পাওয়ার তার বক্তব্যের শেষ পর্যন্ত বুঝতে পেরেছে। তিনি প্রথমে অসম্ভব মনে করলেন তার বাঁকানলের সম্পর্কে একটা যে সূত্র খুঁজে পেয়েছেন।
তিনি বলতে চান খুনী ফেলে দিতে চায়নি কারণ সে চেয়েছিল বাঁকানলটা আমাদের চোখে পড়ুক। চমৎকার, পোয়ারো বললেন, ফার্নে বললেন যে বিষাক্ত তীর ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু বাঁকানল ব্যবহার করা হয়নি। খুনী এমন কিছু ব্যবহার করেছেন যেটা মানুষ মুখে ঢোকায়। এখানে দুটো জিনিসের ওপর তার সন্দেহ। একটা লেডি হরবেরিলর সিগারেট হোল্ডার দুজনে যে টেবিলের ওপর কতকগুলো কুরদিপ নল ছিল।
মঁসিয়ে ফার্নে বললেন যে, তিনি দুটো জিনিসই কারো সন্দেহ না জাগালে বেঁধে রাখা যায়। পোয়ারো তাকে ঠিক পথে এগোচ্ছেন বললেন। ভীমরুলের কথা বলতে বললেন। ফার্নে হাকরে বললেন যে, এতো ভীমরুল কোথা থেকে আসছে তা বুঝতে পারছেন না।
হঠাৎ টেলিফোন বেজে উঠল, বললো যে তাকে জানানো হল ওখানে ফার্নে আছে। ফার্নে থিকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলেন মাদাম গিজেলের মেয়ে তার উত্তরাধিকার দাবী করতে সেখানে এসেছে। উনি বোধ হয় আমেরিকা থেকে এসেছেন। থিকের কথা মঁসিয়ে পোয়ারোকে জানালেন। তিনি তাকে সাড়ে এগারোটায় আবার আসতে বলেছেন। তিনি বলছেন, আমরা তার কাছে যাব। তাই পোয়ারো যাবার আগে মিস গ্রেকে চিঠি লিখে রেখে যেতে চান। তিনি লিখলেন জরুরী কারণে আমাকে বাইরে যেতে হচ্ছে। যদি জ্যা জ্যাপ কোনো কারণে দেখা করতে আসে একটু দেখবেন। বোম আর মোজার কথা বললেন, কিন্তু প্রাগৈতিহাসিক মৃৎশিল্প সম্পর্কে এখনও কোনো কথা বলবেন না। তিনি আপনার প্রশংসা করেন কিন্তু খুব বুদ্ধিমান তিনি।
পোয়ারো এবার উঠে সেই মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে চান। তিনি বললেন যে খুব শীঘ্রই তিনি সবকিছু বুঝতে পারবেন।
থিকো পোয়ারো ও ফার্নেকে আনন্দে অভিনন্দন জানালেন। থিকো বললেন, গতকাল একটা চিঠি পেয়েছি আজ সকালে ভদ্রমহিলা এসে হাজির, তার বয়স ২৪ বছর। নাম মিসেস রিচার্ডস। কারণ তিনি বিবাহিতা ভদ্রমহিলা তার পরিচয় প্রমাণ করার জন্য আর একটা বিবাহ চুক্তি অনুলিপি লেখা ছিল। জর্জ লেম্যান (অবিবাহিতা) আর মেরি মারসো দুজনেই কুইবেকের বাসিন্দা, তাদের মধ্যে বিবাহ চুক্তি। তারিখ ১৯১০ সালের মাথা তাদের মেয়ে অ্যান মারিসো লেম্যানের লেখা জন্মবৃত্তান্ত লেখা প্রমাণ পত্র এবং আরও নানারকম কাগজপত্র রয়েছে। ফার্নে বললেন যে এটা মাদাম গিজেলের প্রথম জীবনের উপর কিছুটা আলোকপাত করেছে।
থিকো বললেন যে, এর থেকে তিনি যা আন্দাজ করেছেন, মেরি মারিসোর সঙ্গে লেম্যান লোকটির সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তার বিবাহের পর দুশ্চরিত্র লোকটি তার স্ত্রীকে ফেলে পালায়। তিনি তখন কুমারী অবস্থায় নাম ব্যবহার করেন। কুইবেকের ইনস্টিটিউট এই শিশুটিকে পালন করে। মিসেস লেম্যান একটি লোকের সঙ্গে ফ্রান্সে চলে আসেন। তিনি শিশুটির জন্য প্রতি মাসে পঞ্চাশ টাকা পাঠাতেন এবং শেষকালে তিনি একটি মোটা অঙ্কের টাকা পাঠান। সেটা শিশুর ২১ বছর পূর্ণ হলে তাকে দেওয়া হবে। মেয়েটিকে জানানোর জন্য তারা বিভিন্ন কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। মনে হয় এর কোনো একটা ইনিস্টিটিউট দ্যা মেরী অধ্যক্ষার চোখে পড়ে। তিনিই মিসেস রিচার্ডসকে জানান। এই রিচার্ডস হলেন ডেট্রয়েট থেকে আসা একজন আমেরিকান যার যন্ত্রপাতি তৈরি করা পেশা। তিনি প্রখ্যাত ও আমেরিকাতে আছেন। মিসেস রিচার্ডস তার মায়ের মৃত্যুর সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন না। কারণ তার মায়ের কুমারী জীবনের নাম তিনি জানেন না।
ফার্নে এই ভদ্রমহিলার আসাতেই তদন্ত সম্পর্কে কিছু আশাবাদী নন। তিনি তার সন্দেহের তালিকায় তিনজনকে রেখেছেন। সেখানে পোয়ারো চারজনকে রেখেছেন।
তাদের দুজনের কথাবলার মাঝে তারা খবর পেলেন মাদাম গিজেলের কন্যা এসেছেন, তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল তাদের। গিজেলের গায়ের রঙ কালো হলেও তিনিও খুব সুন্দরী যুবতী। তিনি জানালেন যে, এ ব্যাপারে তার অনুমান ঠিক। মেয়ের শর্তময় কারণ তিনি নিজেকে অনাথ বলে মনে করেন। কারণ গিজেল তাকে করুণা করছেন বলে তার বিশ্বাস। তিনি বলেন যে তিনি আঠারো বছর বয়সে ইনস্টিটিউট ছেড়ে যান। তিনি নানা পেশায় ছিলেন। তার সঙ্গে স্বামীর প্রথম পরিচয় লাইনে। তাকে কানাডা যেতে হওয়ায় তিনি সেখানে যান। তিনি এখন সেখানেই যাচ্ছেন। তার ফরাসি উচ্চারণ বেশ সাবলীল, তাকে ইংরেজ না ভেবে ফরাসি বলে মনে হয়। তিনি কাগজে পড়েছিলেন কিন্তু জানতেন এটা তার মার মৃত্যু সংবাদ, মাদাম এঞ্জোলা তাকে বলেন এবং এরপর তিনি ফিকোর ঠিকানা জেনেছেন।
ফানে চিন্তিতভাবে মাথা নাড়লেন, একটা কারণ হলো যে মিসেস রিচার্ডস এতে খুব সাহায্য করতে পারবেন না। পোয়ারো একে নকল ভাবছেন না। তবে তার অন্য কারোর মুখ মনে পড়ছে। ফার্নে কৌতূহলী হয়ে তাকালেন। ফার্নের মতে পোয়রো হারানোনা মেয়েটিকে নিয়ে চিন্তা করছেন বলে তার একথা মনে হচ্ছে। পোয়ারো মনে করেন যে মাদাম মারা যেতে যার সবথেকে লাভ হবে তিনি ওই মেয়ে। এ ব্যাপারে সবথেকে বেশি জড়িত যদি এই মেয়েটি হয় তাহলে সন্দেহ কোথায়? ওই প্লেনে তিনজন মহিলা ছিলেন। তাদের একজন সুপরিচিত, কিন্তু আর দুজন মাদামের সহকারিণী যখন বলেছেন যে মাদামের স্বামী তখন তিনি নিশ্চিত যে বাকি দুজনের মধ্যে একজন তার কন্যা, মিস হরবেরিল একটু সন্দেহজনক ও মিস জেনকে বলেছেন যে তিনি অনাথ আশ্রমে মানুষ হয়েছেন। পোয়ারোর কথায় সহমত হলেন না ফানে, তবে পোয়ারোর মতে তিনি সহজ কল্পনার মধ্যে এগোচ্ছেন।
ফার্নে পোয়ারোর ডেস্কে একটা মিনিট পড়ে থাকতে দেখে বলেন যে তিনি লেডি হরবেরিল, ট্যুপের কুরলিশনল, ব্রায়ানের বাঁশি লক্ষ করেছেন তবে তার ব্রায়ানকে সন্দেহ হয় না। অভ্যর্থনা ডেস্কের দিকে চোখ পড়তেই দেখা গেল সেখানে ডাঃ ব্রায়ানের মুখটা।
ডাক্তার মিস্টার পোয়ারোর সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি তাকে জানালেন তার কোনো রোগী নেই। তিনি অসম্ভব শান্ত সংযত ভঙ্গিতে কথা বলছিলেন। তিনি পদত্যাগ করেছেন কারণ তার নাম কাটা যাওয়ার আগেই তার পেশা তাকে প্রচুর আনন্দ দিলেও তিনি নিজেই সেই পদ ছেড়ে দিয়েছেন। পোয়ারোকে ডাক্তার জানালেন তিনি তার এক রোগিণীকে বিবাহ করছেন যাকে তার স্বামী খুব দুঃখ দিয়েছেন। তারা বিয়ের পর ফিনিয়োত যেতে চান। তার বাঁশি হল তার বন্ধু যখন তিনি একা থাকেন। পোয়ারো তার জীবনের সৌভাগ্য কামনা করলেন।
পোয়ারো কুইবেকে একটা ট্রাঙ্কল করেছিলেন।
.
২২.
একটা ভালো নখ
ফার্নে বললেন যে, তিনি কি এবার উত্তরাধিকারী মেয়েটার পেছনে ঘুরবেন। পোয়ারো বললেন তা নয়। তিনি নিয়মে চলতে চান। পরের কাজে হাত দেওয়ার আগে তাকে আগের কাজ শেষ করতে হবে। জেন ও ফার্নেকে যেতে অনুরোধ করে তিনি অন্যত্র গেলেন।
ফার্নে জেনকে অ্যান রিচার্ডস সম্পর্কে জানালেন। সবই বলা হয়ে গেছে এমন সময় পোয়ারো এসে বললেন তিনি মাদাম অ্যার্তোলিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি বলেছেন যে মাদামের মেয়ে ইনস্টিটিউট জ্যা মেরিতে মানুষ হয়েছে, তার মা এক মদ্য ব্যবসায়ীর সঙ্গে কুইবেক ত্যাগ করেন। মেয়ের উপর যাতে ঐ প্রভাব না পড়ে সেইজন্য ওই সময়ে তিনি চলে যান। তিনি টাকা নিয়মমাফিক পাঠালেও মেয়ের সঙ্গে দেখা করেননি। অ্যান মরিমে ইনস্টিটিউট ছেড়ে নখ পালিশের কাজ নেন। মাদাম অ্যাঞ্জেলি তিনি খুব বেশি চিঠিপত্র লিখতেন না। মাদাম দুবার নিজে খবর নিতেন। মাদাম বিচারবিভাগীয় তদন্তের কথা পড়ে ভেবেছিলেন এই মেরি মারিসোই খুব সম্ভবতঃ কুইবেকের মেরি মারসো।
মাদাম গিজেলের স্বামী নামক ইতর লোকটি জর্জ লেম্যান বিশ্বযুদ্ধের গোড়ার দিকে চিহ্নিত হয়। হঠাৎ জেনের একটা নখ ভেঙ্গে যেতে তিনি বলেন যে ওটা ঘষে নিতে হবে। পোয়ারো বললেন তার মনে পড়ে গেছে অ্যান মারিসের মুখটা, এত চেনা মনে হয়েছিল। কারণ লেডি হরবেরিলর তার সহচারিণীকে একটা উকো আনতে বলেছিলেন। অ্যান মারিসোই তার নাম ছিলো।
.
২৩.
আমার ভয় করছে
হঠাৎ এই ঘটনা আবিষ্কারে অ্যান মারিসো ঘটনাস্থল থেকে বহু দূরে ছিলো না বরং একেবারে ঘটনাস্থলে হাজির হলো।
জেনও মনে করতে পারলেন যে তার নাম ছিল ম্যাডেলিন যাকে প্লেনের কামরায় পেছনের দিক থেকে একটা লাল সাজের বাক্স আনতে বলেছেন। ফার্নে বললেন তার মা যেখানে বসেছিলো ঠিক তার পাশ দিয়েই গিয়েছিলো। ফার্নে বললো যে খুনের উদ্দেশ্য এবং সুযোগ সবকিছু থাকা সত্ত্বেও কেন মেয়েটিকে সন্দেহ করা হয়নি। চাকর দুটো, অন্য যাত্রীরা সেটা লক্ষ্য করেননি, প্লেনটা সবে ছেড়েছে, তার প্রায় ঘণ্টাখানেক পরেও গিজেল বেঁচেছিলেন।
ফার্নে বললেন যে, বিষের প্রতিক্রিয়া পরে হতে পারে। এটা হতে পারে যে মিঃর পোয়ারো স্বীকার করেন বিষের প্রতিক্রিয়া দেরিতে হওয়া অসাধারণ ব্যাপার। এর বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝ দরকার। ফার্নে বললেন, আমাদের ভবিষ্যত কর্মপন্থা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। তার মনে হয় এ মুহূর্তে অ্যান মারিসোকে সন্দেহ জাগানো ঠিক হবে না। তিনি যে তাকে চিনতে পেরেছেন এ কথা সে একেবারেই জানে না। তার সমস্ত কথাই সত্যি বলে মেনে নিয়েছি। দুটা জিনিস তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে, সুযোগ এবং উদ্দেশ্য। আমাদের আরও একটা জিনিস প্রমাণ করতে হবে। অ্যান মারিসোর কাছে সত্যি কোনো সাপের বিষ ছিল কিনা। এরপর অবশ্য সেই আমেরিকান লোকটির ব্যাপার আছে যে বাঁকানল কিনেছিলো এর স্থলে পেরো ঘুষ দিয়েছিলো। এ নিশ্চয়ই তার স্বামী রিচার্ডস, যে কামরায় থাকে।
পোয়ারো খানিক চিন্তা করে বললেন যে অ্যান মারিসো হয় অপরাধী নয় একেবারে অজ্ঞ। যদি অজ্ঞই হন তাহলে মিথ্যা কেন বললেন, তিনি হরবেরিলর পরিচারিকা তা কেন গোপন করলেন। পোয়ারো বললেন, কেন যে তার অপরাধ তার মিথ্যের সঙ্গে খাপ খায় না। এতে ভিত্তি পাওয়া যাচ্ছে বটে। যদি ভিত্তি সত্যি হয় তাহলে অ্যান মারিসোর আদৌ ওই প্লেনে থাকার কথা নয়। একটা সহজ সমাধান হয় যে পরে যখন আবার জট পাকিয়ে গেল তখন ফানে আবার রেগে গেলেন। জেন ভাবলো যে, উনি কি বোঝাতে চাইছেন তার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। পোয়ারো এবার একটা টেলিফোন করলেন এখানে, স্কোয়ার্ডে লেডি হরবেরিলর বাড়িতে।
তিনি লেডি হরবেরিলকে একটা প্রশ্ন করতে চান তবে তা অ্যান মারিসো সম্পর্কে নয়। তিনি যখন লেডি হরবেরিলকে ফোনে জিজ্ঞাসা করলেন যে তিনি যখন কোথাও যান তার পরিচারিকা কি তার সঙ্গে প্লেনে যায় না ট্রেনে যায়। মাদাম জানালেন তার পরিচারিকা সাধারণত ট্রেনে বা জাহাজে যান। গিজেলের খুন হওয়ার দিন লেডি হরবেরিল একেবারে শেষ মুহূর্তে ঠিক করেন যে ম্যাডেলিন তার সঙ্গে প্লেনেই চলুক। কিন্তু সে ট্রেনে যায় এবং সে এখন কাজ ছেড়ে চলে গেছে।
লেডি মাদামের সব কথা শুনতে পেরে পোয়ারোর সব কথা জেনে ফার্নের সঙ্গে কোনো দেরি না করে অ্যান মারিসোর হোটেলের দিকে যেতে থাকে। এইজন্য ফার্নে অবাক হয়ে উঠতে তিনি বললেন তার ধারণা যদি ঠিক হয় তাহলে অ্যান মারিলো ভয়ানক বিপদের সম্মুখীন, পোয়ারো এ ব্যাপারে ভীত। তার ট্যাক্সিটা প্রায় ঘন্টায় ৪০ মাইল বেগে চলেছে। ফার্নে দুর্ঘটনার ভয় করলে এবং সেক্রেটারিকে কিছু না জানিয়ে আমার জন্য অভদ্রতা ভাবলেন কিন্তু পোয়ারো জীবন মরণের প্রশ্নে ভদ্রতা অভদ্রতার ধার ধারেন না।
অ্যান মারিসো হোটেলে তাড়াতাড়ি যেতে গিয়ে একজনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তিনি হলেন অভিনেতা রেমন্ড ব্যায়াকেল। ফার্নে পোয়ারো এই হটকারী সিদ্ধান্তে খুশী নয়। পোয়ারো তাকে এ ব্যাপারে অভয় দিলেন। তিনি বললেন, যে মাদাম রিচার্ডস এখানে আছে কিনা তা খোঁজ নিতে হবে। তাহলে বোঝা যাবে তার কোনো ক্ষতি হয়নি। তখন তারা পরবর্তী কর্মপন্থা স্থির করবেন। হোটেলে তারা জানতে পারলেন যে, মাদাম বেশ কিছুক্ষণ আগে (৩০ মিনিট) চলে গেছেন। ঠিকানা কিছু রেখে যাননি। তিনি আগে বলেছিলেন যে, সপ্তাহখানেক থাকবেন কিন্তু পরিকল্পনার বদলের জন্য তিনি চলে গেছেন।
আরো প্রশ্ন করা হল কুলী, লিফ্ট চালকদের। দারোয়ানের বক্তব্য অনুসারে জানা গেল এক ভদ্রলোক মহিলার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, তিনি ছিলেন না। তারপর যখন তাদের দেখা হয় তারা একসঙ্গে খেয়ে একটা ট্যাক্সিতে তার মালপত্র তুলে দিতে বলেন। দারোয়ান বলেন যে ভদ্রমহিলা একাই উত্তর দিকের স্টেশনে গেছেন।
ফার্নে আন্দাজ করলেন বেলা দুটোর গাড়িতে ইংল্যান্ডে যাচ্ছেন। এটা ধাপ্পাবাজি হতে পারে। তিনি তার আগে বুলেন স্টেশনে ফোন করতে চান।
বিকাল ৫টা হোটেল লাউঞ্জে জেন বই পড়ছিলেন। পোয়ারো এসে দাঁড়ালেন। বুলেন স্টেশনে একজন মহিলাকে প্রথম শ্রেণির কামরায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। তিনি অ্যান মারিসো। পুলিশ আত্মহত্যা মনে করে ও পোয়ারো তাই মনে করেন। তার মনে হয় বাঁচার জন্য সাহস পাননি বোধহয় তিনি। তিনি কেন আত্মহত্যা করলেন? কয়েকটি কাজ দিয়ে প্যারিসে ছেড়ে চলে গেলেন। জেন দুবার জা জ্যাপের সঙ্গে দেখা করেছে এবং জেন যে তার সঙ্গে প্যারিসে যাচ্ছে তা বলতে জেন তা এড়িয়ে গেছে। পাঁচদিন পর টেলিগ্রাম করে তাকে ইংল্যান্ড ফিরিয়ে আনা হল। নরম্যান গেল ভিক্টোরিয়া বিমানবন্দরে তার সঙ্গে দেখা করলেন।
নরম্যান বেশ ভীত। কাগজে মিসেস রিচার্ডস-এর মৃত্যুর সংবাদ ছাপানো হয়েছিল। তবে তার সঙ্গে খুনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। নরম্যানের মনে হয় খুনের ব্যাপারে মেয়েকে সন্দেহ করতে পারা যায় এক্ষেত্রে ব্যাপারটা যদি সাধারণ মানুষের মধ্যে ঠিকভাবে তুলে ধরা না হয় তাহলে তাদের মতো নির্দোষ লোকদের কি হবে তা অচিন্ত্যনীয়।
পোয়ারো, মিঃ ক্ল্যান্সি, জ্যাপ সকলকে ডিনারে নিমন্ত্রণ করা হলো। পোয়ারো নানা গল্প করছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে তিনি ঠিকভাবে এগোচ্ছেন। পোয়ারো বললেন তার কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে, বলতে গিয়ে গোড়ার কথায় নিয়ে যেতে চান। তিনি বললেন যে প্রমিউথিস বিমানে প্যারিস থেকে ক্রয়ডন যাবার দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় ফিরে যাচ্ছেন। তিনি ক্রয়ডন পৌঁছাবার আগেই যখন মাদাম খুন হয় তখন অপরাধ, মৃত্যু সম্পর্কে তার কেমন সন্দেহ হয়। এ বোধহয়। তার বলার জন্য, এই গুণ দুভাগে বিভক্ত। যেখানে মৃত্যুর ব্যাপারে করণীয় আছে। যেখানে মৃত্যুর ব্যাপারে করণীয় নেই, যদিও শেষের ব্যাপারটা খুব কম ঘটে। তবু তিনি দেখছেন মৃত্যুর গন্ধ তিনি পান। ডাঃ ব্রায়ান পরিচারকের কথা মেনে নিয়ে নিজে পরীক্ষা করে মৃত বললেন কিন্তু তখন জাপ বলছিলেন যে ভদ্রমহিলা ভীমরুমেলর কামড়ে মারা গেছেন। প্রমাণ হিসাবে তিনি ভীমরুল দেখিয়েছিলেন। প্লেনের মধ্যে ভীমরুল থাকা সত্ত্বেও ভদ্রমহিলার গলায় যে দাগটা ছিল তার সঙ্গে এই যুক্তি একেবারেই ঠিক যে তিনি ভীমরুলের কামড়ে মারা যান। আসলে ওটা একটা কাটা যা আদিবাসীরা ব্যবহার করে যাতে হলুদ কালো ফেসো জড়ানো থাকে।
মিঃ ক্ল্যান্সি এরপর কাটা সম্পর্কে তার জ্ঞান জানান। পোয়ারো এরপর বলেন যে, তিনি খুব অবাক হয়েছিলেন খুনীর দুঃসাহস দেখে। তাকে আরো দুটো জিনিস উৎসুক করেছিল। একটা ভীমরুল থাকার সুবিধা দুই বাঁকানল খুঁজে পাওয়া। শুধুমাত্র কাঁটাটা থাকলে সেটা খুঁজে বার করা অসুবিধে হত। কিন্তু দোকানের লেবেলের কিছু অংশ সমেত বাঁকানল থাকা এটা অন্য ব্যাপার। এতে বোঝা যায় খুনী চেয়েছিল বাঁকানল নজরে পড়ুক। কিন্তু কারণ হচ্ছে যদি একটা বিষাক্ত তীর একটা বাঁকানল একসঙ্গে পাওয়া যায় তাহলে স্বভাবতই এই ধারণা হয় বাঁকানল থেকে তীর ছুটে গিয়ে খুন হয়েছে সুতরাং আসলে ওইভাবে খুন করা হয়েছিল। এটা পরিষ্কার, বিষাক্ত তীর যখন মৃত্যুর কারণ সেটা গলায় লাগানোর বিশ্বস্ত উপায় হল হাত দিয়ে ফোঁটানো। তাই তিনি সবদিক বিচার করে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন মাদাম গিজেলের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ একাজ করেছে। প্রথমেই সন্দেহ যায় দুজন পরিচারকের উপর। তাছাড়া মিঃ ক্ল্যান্সি বলে গিয়েছিলেন। আর তার যতদূর মনে হয় মিঃ ক্ল্যান্সি প্রথমে বাঁকানলের কথা বলেন। মিঃ ক্ল্যান্সি ভয় পেলেন ও প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় পোয়ারো বলেন তার কথা এখনো শেষ হয়নি। পোয়ারো আবার বললেন, যে তিনজন সন্দেহভাজন মিবেল্য, ডেভিস ও ক্ল্যান্সি, কিন্তু তারা যে খুশী নন তা প্রমাণের জন্য তিনি ভীমরুল নিয়ে পড়লেন। তার মনে হয় কফি দেওয়ার আগে কেউ ওটাকে লক্ষ্য করেনি এটা কেমন অস্বাভাবিক! খুনী বোঝাতে চেয়েছে মাদাম গিজেল হার্টফেল করে মারা গেছেন। এটা প্রমাণ করার সাফল্য নির্ভর করবে। খুনী যদি ওই কথাটাকে ভীমরুলের মতো দেখতে কার এবং তাই করা হয়েছিল তা সন্দেহাতীত, তাহলে বোঝা যাচ্ছে খুনী মাদাম গিজেলের টেবিলের কাছে গিয়েছিলো, কাঁটাটা ফুটিয়ে দিয়েছিলো এবং সত্যিকারের ভীমরুল ছেড়ে দিয়েছিলো। এবং বিষের প্রভাবে ভদ্রমহিলার মৃত্যু সন্দেহ হয়। গিজেলের চিৎকার প্লেনের আওয়াজে শোনা যায়নি। ভীমরুল ভো ভো করায় মনে হয়েছে ভীমরুলের কামড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। এটাকে তিনি পরিকল্পনা বলে এটা বলেন যে খুনী বাঁকানলটা সরিয়ে দিতে চায়নি। কিন্তু কাটা সকলের চোখে পড়তে তার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এক্ষেত্রে তার তত্ত্ব অনুযায়ী তিনজন সন্দেহভাজন ভাবে, চতুর্থ আর যোজনকে ধরা যায় তিনি সঁসিয়ে জা দুপ তিনি ভীমরুলের কামড়ে মৃত্যুর তত্ত্ব খাড়া করেছেন। তিনি সন্দেহভাজন করেছেন কারণ তিনি মাদামের সামনে বলেছিলেন এবং তার খুন করার এত সাহস হবে না। তিনি ভীমরুলের সমস্যা নিয়ে লেগে পড়লেন। খুনী প্লেনে ভীমরুল নিয়ে এসে থাকে এবং বিশেষ মুহূর্তে সেটা ছেড়ে দেয় তাহলে তার কাছে এমন কোনো বাক্স ছিলো, যাতে সে এটা রেখেছিল। তাই সবার সঙ্গের জিনিসগুলো দেখার এত উৎসাহ।
তিনি বললেন এ বিষয়ে যখন সন্দেহ করেন তখন নরম্যান গেল-এর পকেটে ব্রায়ান এন্ড মে কোম্পানির একটা ভাগ ছিল ও তার একটা কেসে একটা জিনিস পেয়েছে। নরম্যান হতভম্ব হলেন।
পোয়ারো বললেন, ওই কথা ছেড়ে তিনি অন্য চারকে সন্দেহ করেন। দুজন পরিচারক, ক্ল্যান্সি, গেল; তিনি বলেছেন খুনের উদ্দেশ্য ছিল। এবিষয়ে একমাত্র সেই মেয়েটিই খুনী হতে পারে যে তার মায়ের সম্পত্তির অধিকারিণী হতে পারত, প্রমিউস বিমানের মধ্যে একজন ছিলেন যিনি গিজেলের সঙ্গে মেলামেশা করতেন, তিনি হলেন লেডি হরবেরিল। লেডি হরবেরিলর ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যটি পরিষ্কার। তিনি আগের দিন গিজেলের সঙ্গে দেখা করে ও তার বন্ধু অভিনেতা ব্যারাক্রে অ্যামেরিকান সেজে বাঁকানল কেনেন। সেই হয়তো গিজেলকে বেলা বারোটায় প্লেনে ব্যবস্থা করার জন্য এয়ারলাইন্সে পাঠাবার জন্য ঘুষ দিয়েছিলেন।
আসলে ঘটনাটা ছিল অন্য। পোয়ারো নরম্যান গিজেলকেই খুনী বলে মনে করেছেন। কারণ সবসময়েই তিনি গিজেলের কন্যা বা উত্তরাধিকারিণীর কথা ভেবেছেন। প্রথমে তিনি মিস জেনকে তার উত্তরাধিকারিণী বলে মানলেন। পরে তিনি তার নাম জেনে তাকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেন। মিসেস গিজেলের মৃত্যুতে মিঃ গেলের সবথেকে ক্ষতি হয় কারণ এটা তিনি লেখা দেখিয়ে বলেছেন। তা হতে পারে কেননা পোয়ারো বলতে চান যে নিজের মধ্যে সবার প্রবণতা তাকে নিজেকে জাহির করা। তিনি নরম্যান গেলের সন্দেহভাজন যাতে না হন তাকে তিনি বিচারের কাজে নেন। এজন্য তাকে মিসেস হরবেরিলর বাড়িতে পাঠানোর জন্য ছদ্মবেশ নিতে বলেন। গেল প্রথমে এমন করে সেজে এসেছিলেন তা অবাস্তব, তাই এরপর যখন ভালো করে সাজে, লেডি চিনতে পারেননি। এই সময় পোয়ারো মাদাম জেনকে গেলের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাকে তার সেক্রেটারি নিযুক্ত করেন। প্লেনের সেই মেয়েটি যখন উত্তরাধিকারিণী হিসেবে এলো তখন তিনি চিনতে পারলেন এবং এটা সঠিক কিনা তা মাদাম হরবেরিলর ফার্নের মাধ্যমেই তিনি প্রমাণ পেলেন। তিনি বুঝলেন মেয়েটি তার কাছে সব মিথ্যে বলেছিল।
মেয়েটি যদি দোষী হয় তাহলে তার সহকারী কে এটা ভাবতে শুরু করে। নরম্যান অধৈর্য হয়ে বলেন যে তাহলে কখন তিনি সন্দেহ ত্যাগ করেন যে তিনি খুনী। পোয়ারো তিনিই যে খুনী সেটা জানিয়ে বলেন যে তিনি যে তার বাঁচার জন্য এই পেশায় এসেছেন এটা ঠিক, কিন্তু সেটা তার ব্যাবসায় নামেন তার পদবীটাই গ্রহণ করেন। তার আসল পদবী হল লিওস। গত শীতকালে নাইসে অ্যান মারিসের সঙ্গে দেখা হয়। তার মনে অ্যানের কথা শুনে লোভ জাগে। তিনি জানতে পারেন মাদাম গিজেলের সঙ্গে হরবেরিলর একটা যোগাযোগ আছে। এই খুনের পরিকল্পনা গেল এমনভাবে করলেন যাতে হরবেরিল ওপরের পক্ষে তার পরিকল্পনা সব ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু অ্যান মারিস যখন প্লেনে গেলেন তখন একটু গোলমাল হয়ে যায়। তখন তার পরিকল্পনা একটু জট পাকিয়ে গেল। তার মূল পরিকল্পনা ছিল অ্যান মারিসো যেহেতু তার উত্তরাধিকার দাবী করবে সুতরাং তার অজুহাতটা একেবারে পাকাঁপোক্ত হওয়া চাই। সে যখন ট্রেনে বা জাহাজে রয়েছে তখন খুনের সময় তার প্লেনে থাকার প্রশ্ন ওঠে না। সুতরাং অজুহাত পাকা এবং এরপরেই আপনি তাকে বিয়ে করলেন এবং শেষ পর্যন্ত তা আর হলো না। তিনি একটা ভুল করলেন। তিনি টাকা এবং ভালোবাসার পাত্রী দুটোকেই পেতে চাইলেন। তাই তিনি অ্যান মারিসোকে এই বলে ভয় দেখালেন সে যদি নিজের পরিচয় দিয়ে দাবী নিয়ে যায় তাহলে পুলিশ তাকে খুনী বলে সন্দেহ করবে। সুতরাং তাকে বুঝিয়ে রটারডামে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করলেন।
অ্যান মারিসো সেদিন প্যারিসে গিয়ে তার উত্তরাধিকার দাবী করবে বলে আপনি দিন ধার্য করে দিয়েছিলেন, সেটা আমার প্যারিসে যাওয়ার দিনের সঙ্গে আকস্মিক ভাবেই মিলে গেল। মিস গেল সঙ্গে গেছিল, এটা তার পরিকল্পনার সঙ্গে খাপ খেললো না। তিনি মাদামের সঙ্গে দেখা করতে চান কিন্তু তিনি সফল হননি। উনি দেখলেন যে অ্যান উকিলের সঙ্গে দেখা করে আবার পোয়ারোর সঙ্গে দেখা করেছে তখন তিনি খুব ভয় পেলেন। তার ইচ্ছে ছিল স্ত্রীর সম্পত্তি হস্তগত করা তাই বিয়ের পর দুজনের নামে উইল করা হল। এরপর তার কানাডা যাবার কথা ছিল এবং তার কিছুদিন পর ইংল্যান্ডে ফিরে যাবার কথা ছিল।
নরম্যান গেল এসব গাঁজাখুরি সম্পর্কে পাত্তা দিতে চাইলেন না। তখন পোয়ারো বললেন যে তার হাতে প্রমাণ আছে যে টাকা তিনি গিজেলের আমলের কাছে এসে কাজটা করেন। পোয়ারো বললেন যে তিনি একটা লিলেন ডাক্তারী কোট নিয়ে এসেছেন, এটার সঙ্গে পরিচারকের কোটের সাদৃশ্য ছিল। আসলে ঘটনা এরকম ঘটেছিল। কফি দিয়ে পরিচারক দুজন যখন সামনের কামরায় চলে গেলো, তখন তিনি এ ঘরে গিয়ে লিলেনের কোটটা এগিয়ে দিলেন, তারপর গালের উপর তুলো চামড়ে নিয়ে পাশের ভাড়ার ঘর থেকে একটা কফির চামচ হাতে নিলেন এবং চামচ হাতে পরিচারকের মতো ব্যস্ত পায়ে মাঝের রাস্তা ধরে গিজেলের টেবিলে এসে তার গলায় কাঁটা ফুটিয়ে ভীমরুলটা উড়িয়ে দিলেন। আবার দ্রুত পায়ে প্রসাধন ঘরে এসে কোট খুলে রেখে ধীরেসুস্থে নিজের আসনে ফিরে এলেন। তাকে কেউ নজর করেনি। জেন তাকে লক্ষ্য করেন কারণ সে তখন নিজের প্রসাধন করতে ব্যস্ত ছিল।
গেল ব্যঙ্গ করলে তিনি বলেন যে, গেল একটা আখের খামারে কাজ করতেন। যেটা দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিল এটা পোয়ারো আবিষ্কার করে। সেখানে আসল নাম রিচার্ডস নামেই তিনি কাজ করতেন। তার ছবি রেডিও টেলিফোন ও রটারডামে পাঠানো হয়। দুই জায়গাতেই সনাক্ত হলেন।
নরম্যান এবার একটু ভয় পেয়ে গেলেন। পোয়ারো বললেন, তিনি অ্যান মারিসোকে টেলিগ্রাম করেন এবং পরিপ্রেক্ষিতে যখন অ্যান তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন তখন তিনি ভয় পেয়ে যান এবং তিনি ভয় পান এই ভেবে যে অ্যান তার সব কথা পোয়ারোকে বলে দিয়েছেন। তাই তিনি ট্রেনের কামরায় তাকে সাইট্রিক অ্যাসিড খাইয়ে দেন এবং খালি শিশিটা গুঁজে দিয়ে চলে আসেন এবং শিশির গায়ে আঙ্গুলের ছাপ ছিল। কিন্তু তখন হঠাৎ গেল বলে উঠলেন, তিনি দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। তখন প্রমাণ হয়ে যায় যে নরম্যান আসল খুনী।
ব্যাটা খুদে ভণ্ড, বলে উঠলেন গেল, তার পর গেলকে গ্রেপ্তার করা গেল।
পোয়ারোকে মিঃ ক্ল্যান্সি বললেন যে তার জীবনের সব থেকে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা এটা। এটাতে পোয়ারো জ্যাপকে তার কৃতিত্ব থেকে খাটো করতে চান। পোয়ারো বললেন যে কানাডাতেও এক মেয়েকে খুনের ব্যাপারে অভিযুক্ত গেল।
জেনের জন্য দুজনেই সমব্যথা প্রকাশ করলেন। নরম্যান গেলের লাফালাফিতে কতগুলো ছবি ছড়িয়ে গেছিল। মাদাম ভেনেসিয়া কার এবং লর্ড হরবেরিল ছবি দেখে পোয়ারো বললেন অচিরেই এদের দুজনের সম্পর্ক বিবাহের রূপ নেয়। তিনি মিস জেন গ্রে এবং মঁসিয়ে জ্যা জ্যাপকে বিবাহ দিতে চান।
এর একমাস পরে জেন পোয়ারোর সঙ্গে দেখা করতে এসে বলেন যে আপনাকে আমার ঘৃণা করা উচিত।
পোয়ারো বললেন যে তার ধারণা আপনি যে ধরনের মেয়ে; মূখের স্বর্গে বাস করার থেকে সত্যের মুখোমুখি হবার সাহস রাখে জেনের প্রেম ভালোবাসায় রুচি নেই।
পোয়ারো জ্যাঁ দ্যুপদের থেকে টাকা পাঠিয়েছেন এবং জেনকে তাদের সঙ্গে প্যারিসে পাঠাতে চান এবং এরজন্য তিনি জেনকে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি ছবি আঁকতে পারেন কিনা, জেন বললেন যে এই বিষয়ে তাকে তিনি করুণা করছেন না তো। তিনি স্কুলে বেশ ভালোই ছবি আঁকতেন।
জেন বললেন যে, প্রাগৈতিহাসিক মৃৎশিল্প দেখতে উৎসাহী। দরজার কাছে গিয়ে জেন ফিরে এলেন। ঠিক এই ব্যাপারে আপনি দয়ালু না হতে পারেন, কিন্তু আপনার আমার প্রতি তাও নেই। তার মাথার মাঝখানে একটা চুম্বন দিয়ে তিনি বেরিয়ে গেলেন।
লক্ষ্মী মেয়ে-পোয়ারো নিজের মনেই বললেন।