.
০৬.
দেওয়ালে কালির দাগ
দেয়ালের কালির দাগ দেখে কি বোঝা যেতে পারে সেটা বোধগম্য হলো না স্যার স্যাটার্থওয়েটের কাছে।
মনে হয় স্যার চার্লস সেটা বুঝতে পেরেই জিজ্ঞেস করলেন, দেওয়ালের ঐ জায়গায় কালির দাগটা কেমন করে পড়লো বলে আপনার মনে হয়?
— মনে হয়, কলম পড়ার কালির দাগ। স্যাটার্থওয়েট বললেন। এ ঘরে অবশ্য কোনো কলম পাওয়া যায়নি। বুঝতে হবে এলিসের কিংবা তার আগের খানসামার কোনো ফাউন্টেন পেন ছিল।
–কিন্তু কলম পাড়লে টেবিলে বসেই পাড়বে। ফায়ার প্লেসের দেওয়ালে যাবে কি করে?
একটি লেখবার কাগজ আর পেনসিল মার্থা লেকির কাছ থেকে চেয়ে নিলেন স্যার চার্লস। এই ঘরে কি হচ্ছে সেটা জানা এবং দেখার জন্য অল্প বয়েসী পরিচারিকাদের কৌতূহলের শেষ নেই।
ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে কাগজ পেনসিল টেবিলের ওপর রাখলেন সার চার্লস। তারপর ফায়ার প্লেসের কাছে গিয়ে মন দিয়ে দাগটা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। তাঁর নির্দেশ মত স্যার স্যাটার্থওয়েট খাটের ওপর চুপ করে বসে রইলেন।
পাঁচ মিনিট পর স্যার চার্লস উঠে এলেন –আমি এখন এলিস। আর এই পেনসিলটি হবে আমার কলম। অভিনয় হবে বোবা। কয়েক মিনিট লাগবে।
সেই কয়েক মিনিটে স্যার স্যাটার্থওয়েট বুঝতে পারলেন যে স্যার চার্লস সত্যিই কতবড়ো অভিনেতা।
চোখে মুখে দারুণ উত্তেজনা নিয়ে এলিস ঘরে ঢুকলো। দরজা বন্ধ করলো। কি যেন ভাবছে। এখনই তাকে কি যেন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। একটা শব্দ? না কিছু নয়। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। টেবিলের কাছে দ্রুত পায়ে এসে চেয়ারে বসলো, কাগজ কলম এগিয়ে নিলো! কি যেন লিখছে দ্রুত হাতে। শব্দে কান খাড়া করে। দরজার কাছ থেকে শব্দটা আসছে। তবে কি পুলিস? ভাষণ ভয় পেয়ে দ্রুত ছুটে গেল ফায়ার প্লেসের কাছে। কাগজটা দলা পাকিয়ে ফায়ার প্লেসের আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে হাতের কলমটা ছিটকে গিয়ে দেওয়ালের গায়ে লাগলো। খুব স্বাভাবিক মুখে দরজার দিকে এগিয়ে গেল এলিস। দরজা খুলে দেখলো। না, কেউ নেই।
স্যার চার্লস, কালির দাগের রহস্যটা এবার আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে। উচ্ছ্বসিত হলেন স্যাটার্থওয়েট।
পেনসিলটা ঘুরিয়ে নেবার জন্য স্যার চার্লস নিচু হলেন।
–মনে হচ্ছে, যা চেয়েছিলাম তার থেকে বেশি কিছু পেয়ে গেছি। স্যাটার্থওয়েট শীগগির আসুন।
স্যাটার্থওয়েট এগিয়ে গিয়ে ঝুঁকে পড়লেন। খুব ভালো করে লক্ষ্য করলেন, — মনে হচ্ছে। একটা কাগজ।
– কাগজ নয়। দাঁড়ান একমিনিট।
স্যার চার্লস দরজা খুলে বাইরে বেরোলেন। একটু পরেই একটা বোনবার কাঁটা হাতে নিয়ে আবার ঢুকলেন।
ফায়ার প্লেসের নিচে থেকে দলা পাকানো কাগজগুলো বের করলেন স্যার চার্লস। কয়েকটা চিঠি! মন দিয়ে দুজনে পড়লেন। এগুলি একই চিঠির কয়েকটা খসড়া মাত্র। অতিশয় স্পষ্টভাবে পত্রলেখক এলিস তার বক্তব্যটি জানিয়েছে — ডাক্তার কিভাবে মারা গিয়েছেন সব জানি। পুলিসকে এখনও কিছু বলিনি। শিগগির আমার সঙ্গে দেখা করে….।
হঠাৎ কোনো কারণে লেখাটি অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। হঠাৎ এলিস আচমকা ভয় পেয়ে কাগজগুলো দলা পাকিয়ে ফায়ার প্লেসের দিকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
স্যার স্যাটার্থওয়েট অভিনন্দন জানালেন স্যার চার্লসকে।
–স্যাটার্থওয়েট, আমরা কিন্তু এখনো টলির আসল হত্যাকারী কে জানি না। এলিস নিজে খুন করেনি তবে কে করেছে সেটা সে জানে। ও চেয়েছিল হত্যাকারীর সঙ্গে ব্ল্যাকমেল করতে। কিন্তু গেল কোথায় সে?
— পুলিসকে তাহলে খবরটা জানাতে হয়। স্যাটার্থওয়েট জানালেন। পুলিশের ধারণা এলিসই খুন করেছে। অথচ আসল খুনী গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেটা পুলিস বুঝুক।
– পুলিসের ওপর আমার একটুও আস্থা নেই। তাছাড়া পুলিসের কাণ্ডকারখানায় আসল হত্যাকারী হুঁশিয়ার হয়ে যাবে। অতএব সেটা করা চলবে না।
–কিন্তু সৌজন্য বলেও তো একটা ব্যাপার আছে।
–বেশ, জানিয়ে দিন। ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্যার চার্লস সম্মতি জানালেন।
.
০৭.
মন্ত্রণা
চিঠিগুলোর কথা জানালেন ওঁরা লণ্ডনের পুলিস অফিসার কর্ণেল জনসনকে। তিনি তাদের ধন্যবাদ জানালেন। কিন্তু মনে মনে খুশী হতে পারলেন না এই ভেবে যে দুজন অপেশাদার লোক তাদের ওপর টেক্কা দিচ্ছে।
কালির দাগ লক্ষ্য করে তারা কেমন ভাবে চিঠিগুলো উদ্ধার করলো সেটা বিস্তারিত জানালেন স্যার চার্লস।
চিঠিগুলো পেয়ে পুলিসের কাছে একটা ব্যাপার স্পষ্ট হলো যে যাজক ব্যারিংটন এবং ডাক্তার বার্থলমিউয়ের মৃত্যু এক অভিন্ন সূত্রে গাঁথা। কর্ণেল জনসন জানালেন, তিনি লুমাউনের পুলিস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যারিংটনের মৃত্যু সম্পর্কে নতুন করে অনুসন্ধানের কাজ শুরু করবেন।
খবরের কাগজে যেন এখন চিঠিগুলোর কথা প্রকাশিত না হয় সে বিষয়ে পুলিসকে সাবধান করে দিয়ে স্যার চার্লস ও স্যাটার্থওয়েট থানা থেকে বেরিয়ে এলেন।
চেলাসায় শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েটের বাড়ি সাজানো গোছানো সুন্দর। বাড়ির মালিক যে শিল্প রসিক, তার পরিচয় ছড়িয়ে আছে সর্বত্র।
বৈঠকখানা ঘরে বসে আছেন তিনজন– স্যার স্যাটার্থওয়েট, স্যার চার্লস ও হারমিয়োন।
হারমিয়োনকে একটু রোগা লাগছে, কিন্তু তার ঠোঁটে লেগেছে প্রতিজ্ঞার কাঠিন্য, স্যাটার্থওয়েট লক্ষ্য করলেন।