–লেডি মেরি সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
–ভদ্রমহিলার ব্যবহার যেমন সুন্দর, তেমনি মিষ্টি কথাবার্তা। ওঁর বাপের বাড়ির সঙ্গে আমাদের বাড়ির অনেককালের চেনা পরিচয়। তিনি সেদিন মুষড়ে পড়ে ছিলেন ঠিকই, কিন্তু সেটা প্রকাশ করেননি। আর তার মেয়ে তো ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলো। ছেলেমানুষ কিনা।
শ্ৰীমতী উইলস সম্পর্কে জানা গেল। তিনি কেবল হ্যাংলাপনা করে বেরিয়েছেন। কেমন একটা আদেখলাপনা ভাব।
–এবার বলুন, সেদিন স্যার বার্মালমিউয়ের আচার আচরণ কেমন ছিল?
— পার্টির আয়োজন নিয়ে হৈ হৈ চলছে। কর্তা খুব খুশী। এমন কি একবার এলিসের সঙ্গে রসিকতাও করে ফেললেন। কর্তার কাছে টেলিফোনে জানানো হয়েছিল হাসপাতাল থেকে যে একটি নতুন রোগী এসেছে। ফোনটা ধরেছিল এলিস। রোগী নয় রোগীনীর নামটা ছিল ভীষণ খটোমটো। শ্রীযুক্তা ডি. রাসব্রিজার। এই নামটা নিয়েই কর্তা ওর সঙ্গে মজা করছিলেন।
শ্ৰীমতী চার্চকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় দিলেন।
বছর তিরিশের সাধারণ চেহারার মেয়ে অ্যালিস। কিন্তু শরীরের যৌবনের যাদু প্রকটিত।
দেখা গেল, এলিস সম্পর্কে তার ধারণা ভালো।
–ও কেমন করে বিষ দেবে? টেবিলের দায়িত্ব ছিলো আমার ওপর। যদি সে বিষ দিতো তাহলে নিশ্চয়ই আমার নজরে পড়তো।
–তার মানে তুমি বলতে চাইছো, প্রত্যেকে যে পট থেকে কফি খেয়েছিলেন, তোমার কর্তাও ঐ একই পাত্রে কফি পান করেছিলেন?
–হ্যাঁ, তাই।
— তাহলে তোমার কর্তাকে কে খুন করেছে বলে তোমার মনে হয়?
–উনি তো খুন হননি। হঠাৎ হার্টফেল করে মারা যান।
– জানেন স্যাটার্থওয়েট, ব্যারিংটনের মৃত্যুর সঙ্গে টলির মৃত্যুর যোগ না থাকলেও টলির মৃত্যুর জন্য আমি অ্যালিসকেই সন্দেহ করতাম।
– কারণ?
–মেয়েটা যেমন উশৃঙ্খলা, ও অতি সহজেই নিজের শরীরের দিকে কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেই অবসরে কোনো কুমতলব হাসিল করা অসম্ভব নয়। তবে মেয়ে দেখে মজার মতো মন বা বয়স– কোনোটাই টলির ছিল না।
–কিন্তু নারীর আকর্ষণ মাথা খারাপ করার বিপদ এই বয়সেই সবচেয়ে বেশি নয় কি? –কি যে বলেন, আমতা আমতা করে বলেন স্যার চার্লস।
.
০৫.
খানসামার ঘর
–চলুন, খানসামার ঘরটা একবার ঘুরে আসি। স্যাটার্থওয়েট বললেন, তবে ভাবছি, পুলিস তো একবার ঘরটা দেখেছে। তারপর আর কিছু লাভ হবে?
–পুলিসের কথা আর বলবেন না। পাকা ডিটেকটিভের মত হেসে উঠলেন অভিনেতা স্যার চার্লস। ওরা খুঁজেছে অপরাধের প্রমাণ, আর আমরা খুঁজবো নির্দোষিতার প্রমাণ।
যে ঘরটিতে এলিস ছিলো সেখানে এসে ঢুকলেন দুজনে। বড় ঘর, এদিকে ফায়ার প্লেস। লোহার খাটে বিছানা পরিপাটি করে পাতা। আলনায় পোশাক সুন্দর করে সাজানো। একজোড়া জুতোও রয়েছে। কিন্তু খানসামার উদিটা আলনায় নেই। টেবিলের ওপর কালিভরা দোয়াত আছে কিন্তু কালি নেই। ঘরটা তন্ন তন্ন করে খুঁজলেন। তেমন কিছু নজরে পড়লো না। তবে ফায়ার প্লেসের কাছে দেওয়ালে একটু কালি ছিটকে পড়ার দাগ নজরে পড়লো।
–না, এখানে কিছু পাওয়া যাবে না। হাতাশার সুর স্যার চার্লসের কথায়।
– এরকম বেতালা কাণ্ডের মধ্যে গল্পের গোয়েন্দারা যদি পড়তেন, তাহলে দেখতাম তাদের কি হাল হতো।
শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েটের কথা শুনে স্যার চার্লস হেসে উঠলেন।
স্যার বার্থালমিউয়ের বাড়ির বাগানে ওঁরা দুজনে পায়চারি করতে করতে আলোচনা করছিলেন।
–শ্ৰীমতী চার্চ বলছিলেন, স্যার চার্লস খুশীর মেজাজে ছিলো। এলিসের সঙ্গে ঠাট্টাও করেছিল। রোগীনীর নাম কি যেন বলেছিল?
– শ্রীযুক্তা ডি. রাসব্ৰিজার।
– টেলিফোনের খবরটা কোনো সাংকেতিক ব্যাপার বলে আমার মনে হয়। ঐ সঙ্কেতের প্রকৃত অর্থ আমাদের জানতে হবে। হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিতে হবে যে ঐ নামে কোনো রোগিনী আমাদের জানতে হানে সাংকেতিক।
কয়েক মিনিটের মধ্যে ওঁরা দুজন আরোগ্য নিকেতনে এসে হাজির হলেন।
হাসপাতালের মেট্রনের সঙ্গে কথা বলছিলেন স্যার চার্লস।
–অনেক কষ্টে তিনি এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে দিয়ে গেছেন, মেট্রন বলেন, এর বিরাট সুনামের প্রায় সবটুকুই তাঁর দান।
— আপনাদের এখানে নার্ভ কেসের চিকিৎসাই বেশি হয় তাই না?
–হ্যাঁ।
— আচ্ছা, শ্রীযুক্তা ডি. রাসব্রিজার নামে কোনো ভদ্রমহিলা এখানে এসেছেন? মহিলা আমার চেনাজানা। ওঁর সম্পর্কে টলির সঙ্গে আমার আগে কথা হয়েছিল।
–হ্যাঁ, এসেছেন। স্যার বার্থালমিউ যেদিন মারা যান সেদিন বিকালেই উনি ওয়েস্টইণ্ডিজ থেকে এখানে এসে পৌঁছোন। ওঁর স্বামী একজন আত্মীয়ের সঙ্গে এখানে ওঁকে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
–এখন তিনি কেমন আছেন?
— খুব ভালো নয়। নার্ভাস ব্রেক ডাউন, বাইরের লোকজনের সঙ্গে দেখা করা বা চিঠি লেখা সব বন্ধ।
আরো দু একটা সাধারণ গ্রাম প্রকাশ করে ওঁরা আরোগ্য নিকেতন থেকে বেরিয়ে এলেন।
এরপর তারা হাজির হলেন স্থানীয় থানায়। অলিভার ম্যানডার্সের সেদিনের অ্যাকসিডেন্টে সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার জন্য।
থানায় খোঁজ খবর দিলেন। যেখানে অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে জায়গাটিও দেখলেন। দুধারে প্রায় দশ ফুট উঁচু পাঁচিল একেবারে সোজা এবং প্রায় ফাঁকা রাস্তা চলে গেছে। থানা থেকে আশাপ্রদ কোনো ফল পাওয়া গেল না।
স্যার চার্লসের হঠাৎ খানসামার ঘরের দেওয়ালে দেখা কালির দাগ কথা মনে পড়লো। ওটা ভালো ভাবে পরীক্ষা করে দেখা দরকার।