–আচ্ছা, আমরা চাই স্যার বাংলিমিউয়ের বাড়িটা একটু পরীক্ষা করে দেখতে। সেখানকার লেবেদের সঙ্গে কয়েকটা কথা বলবো আপনাদের আপত্তি নেই তো?
–আপত্তি নেই তবে নতুন কিছু পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না!
কর্ণেল জনসনের কাছ থেকে ওঁরা বিদায় নিয়ে ফিরে এলেন।
.
০৩.
কোন্ জন?
–আপনি তাহলে বিশ্বাস করেন যে দুটি মৃত্যুর মধ্যে একটি যোগসূত্র আছে? স্যাটার্থওয়েট প্রশ্ন করলেন।
–হ্যাঁ, সেই রকম তো আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে আবিষ্কার করতে হবে সেই যোগসূত্রটি কি?
ব্যাপারটা ভেবে দেখুন। দুটি পার্টিতেই উপস্থিত ছিলেন এমন লোকের সংখ্যা কিন্তু বেশি। এটাকে কি বলবেন?
–সমাগতন।
–না, আমি বলবো পরিকল্পনা। টলির, মানে আপনাদের স্যার বার্থালমিউয়ের পরিকল্পনা। আশা করি, আমি তাকে আপনাদের থেকে বেশি জানতাম। কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করলে গভীর ভাবে ভাবতো। কোনো কাজ শুরু করার আগে রীতিমত ছক করে কাজে নামতো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ব্যারিংটনকে হত্যা করা হয়েছিল। আমার সঙ্গে টলিও একমত ছিলো, কিন্তু মুখে কিছু প্রকাশ না করে আমাকে উল্টে সাবধান করে দিয়েছিলো। আমি জানি, সে ঐ হত্যা রহস্য উদঘাটন করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে সে ব্যারিংটনের মৃত্যুদৃশ্য পুনরাভিনয়ের আয়োজন করলো। কিন্তু দুঃখের বিষয় হত্যাকারী ধরা পড়লো না। বরং তার মৃত্যু হলো।
-কিন্তু খানসামাটা যদি দোষ না করে থাকবে তাহলে পালালো কেন?
–হতে পারে। ওর বিরুদ্ধে এর আগে ছোটখাটো কোনো অপরাধের জন্য পুলিসের খাতায় নাম লেখা আছে। তাই পুলিসের হাঙ্গামা এড়াতে সে পালিয়েছে।
–তাহলে আপনার ধারণা, অতিথিদের মধ্যে কেউ একজন এই জঘন্য কাজ করেছে? স্যার স্যাটার্থওয়েট জানতে চাইলেন।
–হুঁ!
কাকে সন্দেহ হয়?
–এর উত্তর দেওয়া মুশকিল। একটু চিন্তা করলে দেখা যায় কাউকেই সন্দেহ করা চলে না। আবার এটাও বোঝা যাচ্ছে, এঁদের মধ্যেই হত্যাকারী লুকিয়ে আছে।
অলিভার ম্যানডার্স সম্পর্কে আপনার কি মনে হয়?
–একথা বলেছেন নে? স্যার চার্লস বললেন। এ ব্যাপারে তাকে আমার সন্দেহ হয় না। কারণ সে সেদিন আচমকা এসে পড়েছিল। সে মোটেও উলির নিমন্ত্রিত ছিল না। আপাততঃ পেটে কিছু না পড়লে বুদ্ধি খুলবে না।
ওঁরা দুজনে একটা বেঁস্তোরায় গিয়ে ঢুকলেন।
.
০৪.
বার্থালমিউয়ের বাসভবন
ইয়র্কশায়ারের এই প্রাসাদের মত পুরোনো বাড়িটি কিনে নতুন করে সংস্কার করেন স্বর্গত বাথালমিভ। কাছাকাছি একটি আরোগ্য নিকেতন গড়ে তুলেছিলেন।
স্যার চার্লস আর শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট বার্থালমিউয়ের বাসভবনের বৈঠকখানায় বসে বাড়ির পাচিকা শ্রীযুক্তা মাহালেকির সঙ্গে কথা বলছিলেন। পনেরো বছর ধরে তিনি এখানে রান্না ছাড়া অন্যান্য কাজও করে চলেছেন। অন্যান্য পরিচারিকাদের চালনা করার দায়িত্ব ছিলো তার ওপর।
শ্রীযুক্তা লেকি কেঁদে চোখ ভেজালেন। বললেন–এমন মানুষটা চলে গেল। কোনোদিন কাউকে কড়া কথা বলতে শুনিনি। লোকের উপকার করেছেন অনেক।
–আচ্ছা, এলিস অর্থাৎ যে খানসামাটা পালিয়ে গেছে, তার সম্পর্কে আপনার কি ধারণা?
–ওর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানি না। পনেরো দিন আগে এসেছিল, মাত্র দুমাসের জন্য ওকে বহাল করা হয়েছিল। কারণ ও বেকারের পরিবর্তে কাজ করতে এসেছিল। বেকার সাত বছর ধরে এখানে কাজ করছে। হালে সে অসুস্থ হয়ে পড়ায় কর্তা ওকে হাওয়া বদলের জন্য পাঠিয়ে দেন। তাই এলিস এখানে কাজ করছিল।
এলিস সম্পর্কে আরো কিছু জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিস ওকে হত্যার দায়ে সন্দেহ করছে। কিন্তু আমার কোনো সন্দেহ হয় না ওর ওপর। তবে ও আমাদের সঙ্গে বেশি কথাবার্তা বা মেলামেশা করতো না। হয়তো নতুন বলে এরকম আচরণ করেছে।
তার চেহারার বৈশিষ্ট্য ছিল?
–একটু কুঁজো, লম্বা, চেহারা খারাপ নয়। বাইরে বেরোবার সময় কালো চশমা ব্যবহার করতো চোখের অসুখ আছে বলে।
ঘটনার দিন তার আচরণ কেমন ছিল? স্যার স্যাটার্থওয়েট জানতে চাইলেন।
–সেদিন আমরা সবাই ব্যস্ত ছিলাম। এলিসও তার ব্যতিক্রম ছিল না। কর্তার মৃত্যুতে আমরা ভীষণ ভেঙে পড়েছিলাম। কান্নাকাটি করেছিলাম। তবে ওকে তেমন মুষড়ে পড়তে দেখিনি। সে আমাদের সাধ্যমত সেবাযত্ন করেছিল।
–সেদিন রাত্রি থেকে সে উধাও তাই না?
–হ্যাঁ।
এবার আমরা অন্যান্য পরিচারিকাদের সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই, আপনার যদি আপত্তি না থাকে।
–আপত্তি করার কিছু নেই, শ্রীযুক্তা লেকি বললেন। তবে মনে হয় না নতুন কিছু খবর পাবেন। সেদিন খাওয়ার টেবিলের দায়িত্ব ছিল বিয়াত্রিচে আর অ্যালিগের ওপর। আপনারা বরং ওদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
শ্ৰীযুক্তা লেকির পর এবাড়ির সবচেয়ে পুরোনো পরিচারিকা হলেন বিয়াত্রিচে চার্চ। স্যার চার্লস তার কাছে জানতে চাইলেন, সেদিনকার ঘটনা কোন অতিথির ওপর কি রকম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল।
–রীতিমতো ভেঙে পড়েছিলেন এঞ্জেলা সাটক্লিফ। কিছুতেই রাতে কিছু খেলেন না। মাথা ধরার জন্য অ্যাসপিরিন খেলেন। তাঁর কিছুতেই ঘুম আসছিল না। সকালে গিয়ে দেখি, অকাতরে ঘুমুচ্ছেন।
শ্রীযুক্তা ডেকার্সের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখতে পায়নি। উল্টে তার ফিরে যেতে দেরী হয়ে যাবে ভেবে আপসোস করছিলেন। আর তাঁর স্বামী ব্রাণ্ডি গলায় ঢেলে নিজেকে সামলাচ্ছিলেন।