–এখন বসে থাকলে চলবে না। স্যার চার্লস বললেন। ইংলণ্ডে আপাততঃ ফিরে যাবো, তারপর কি করা যায় ভাবা যাবে।
তাহলে আমিও তাই করবো। ঐ অঞ্চলের পুলিসের বড়কর্তা কর্ণেল জনসন আমার বন্ধুস্থানীয় ব্যক্তি। আমি গেলে হয়তো আপনাদের কাজে লাগলেও লাগতে পারি।
শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট সমুদ্রতীরের কাছে একটা জায়গা বেছে নিয়ে বসে পড়লেন। একটু দূরে একজন মহিলা একটি সাপ্তাহিকী পড়ছেন। একটি শিশু বালি নিয়ে খেলা করছে। আরো একটু দূরে একজন ভদ্রলোক বসে আছেন পেছন ফিরে। তবে তাকে চেনা মনে হলো তার।
শিশুটির হাসি শুনে শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট ফিরে তাকালেন। ঐ ভদ্রলোকও মুখ ফেরালেন। দুজনে চোখাচোখি হলো।
–আরে এরকুল পোয়ারো, আপনি এখানে। উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন শ্রীযুক্ত। স্যাটার্থওয়েট। আধঘন্টা আগে স্যার চার্লসের সঙ্গে দেখা হলো। আবার এখন আপনার সঙ্গে। কি ব্যাপার বলুন তো?
স্যার চার্লস, এখানে আছেন নাকি?
হ্যাঁ, উনি বরাবরের জন্য লুমাউন ছেড়ে চলে এসেছেন। আপনার বোধ হয় জানা নেই।
–না, জানতাম না। তবে লুমাউনে তার থাকার একটা কারণ ছিলো। বলা যেতে পারে, একটি সুন্দরীই সেই কারণ। কিন্তু মেয়েটি সত্যিই স্যার চার্লসকে ভালোবাসতো। তাহলে কেন পালিয়ে আসা? অবশ্য কোনো মেয়েকে পিছু ধাওয়া করানোর শ্রেষ্ঠ উপায় হলো তার কাছ থেকে পলায়ন।
পোয়াবোর অনেক কথার মাথামুণ্ডু শ্ৰীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট বুঝতে পারলেন না। তিনি কি ভেবে স্যার বার্থালমিউয়ের মৃত্যু সংবাদ সম্বলিত সংবাদপত্রটি পোয়রোর হাতে এগিয়ে দিলেন।
গম্ভীরভাবে তিনি খবরটা পড়লেন। পলকের জন্য তার চোখে কাঠিন্য জ্বলে উঠলো। শান্ত ভাবে সংবাদপত্রটি ফিরিয়ে দিয়ে বললেন স্যার বার্থালমিউয়ের মৃত্যু একটু আশ্চর্যজনক, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
–স্যার চার্লসের অনুমানের কথা আপনার নিশ্চয়ই মনে পড়ছে শ্রীযুক্ত পোয়ারো।
–হতে পারে, তিনি শিল্পী মানুষ। শিল্পীদের কল্পনা ও অনুমানশক্তি একটু বেশিই থাকে। অবশ্য এর ফল সবসময় মঙ্গলজনক নাও হতে পারে। বেশ, স্যার চার্লসের খবর কি?
–তিনি আর আমি আজ রাতেই ইংলণ্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছি।
–তাহলে তিনি শৌখিন ডিটেকটিভ হতে চলেছেন। নাকি অন্য কোনো কারণ আছে?
–হারমিয়োন তাঁকে ফিরে যাওয়ার জন্য মিনতি জানিয়ে চিঠি লিখেছে।
–আমি ঠিক বুঝতে পারছি না, ভাবছি অন্য কথা…মানব প্রকৃতির জ্ঞান কি সাংঘাতিক।
আর ভালো লাগছিল না স্যার স্যাটার্থওয়েটের। লণ্ডনের ঠিকানাযুক্ত একটি কার্ড পোয়ারোকে দিয়ে তিনি ওখান থেকে বিদায় নিলেন।
পোয়ারো চুপ করে বসে থেকে একসময় উঠে দাঁড়ালেন। টিকিটঘরের দিকে এগোলেন।
.
০২.
পলাতক খানসামা
পুলিস অফিসার কর্ণেল জনসন ও তার সহকারী ক্রস ফ্রিল্ড সুবিখ্যাত অভিনেতা স্যার চার্লস কার্টরাইটকে তাদের অফিস ঘরে ঢুকতে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন। তাঁকে স্বচোক্ষে দেখতে পারবেন তারা তা স্বপ্নেও ভাবেননি।
শ্ৰীযুক্ত স্যাটার্থওয়েটকে সঙ্গে নিয়ে স্যার চার্লস গিয়েছিলেন স্যার বার্থালমিউয়ের মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্যাবলী সংগ্রহের উদ্দেশ্যে।
–আমরা তার হত্যাকারী কে জানতে পেরেছি। স্যার বার্থালমিউ মৃত্যুর দিন পনেরো আগে এলিস নামে এক খানসামাকে কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। কিন্তু ঐ ঘটনা ঘটার পরদিনই সে নিরুদ্দেশ হয়। সে পালিয়ে গিয়ে আমাদের সন্দেহকে আরো ঘন করে তুলেছে।
–সে পালালো কেন? আপনারা তো বলছেন, পুলিস তাকে সন্দেহ করেনি।
তার ধারণা ছিল, পুলিস তাকে সন্দেহ করছে। আমরা বাড়ির প্রত্যেকটি লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। স্যার জোনেলিন ক্যাম্বেল এবং ডাঃ ডেভিস স্যার বার্থলমিউয়ের মৃতদেহ পরীক্ষা করেছিলেন।
–খবরে প্রকাশ নিকোটিন জাতীয় বিষক্রিয়ায় স্যার বার্থালমিউয়ের মৃত্যু হয়, তাই তো?
-হ্যাঁ, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগে নিহত ব্যক্তি ঐ বিষ খেয়েছিলেন। যে সব কাপে অতিথিরা এবং স্যার বার্থলমিউ কফি পান করেছিলেন সেগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু কোনোটিতেই নিকোটিন পাওয়া যায়নি।
স্যার চার্লস এবার শ্রীযুক্ত ব্যারিংটনের মৃত্যুর কথা বিস্তারিতভাবে জানালেন কর্ণেল জনসনকে।
–আচ্ছা, কর্ণেল, আপনি স্যার বার্থালমিউয়ের সমস্ত কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখেছেন? শ্ৰীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট জিজ্ঞাসা করলেন।
–হ্যাঁ, আমরা তার সেক্রেটারি শ্রীমতী লিণ্ডনের সহযোগিতায় তার সমস্ত কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেছি। সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি, যার সঙ্গে এই মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক আছে।
-আচ্ছা, ঐ দিন ঐ সময়ে কারা কারা উপস্থিত ছিলেন, বলতে পারেন?
একটা নাম লেখা কাগজ এগিয়ে দিলেন কর্ণেল জনসন। দেখা গেল, সেক্রেটারি, পাচিকা, পরিচারিকা পাঁচজন, অতিথি সাত জনের নাম রয়েছে।
–দেখছি, ঐ দিন শ্ৰীমন অলিভার ম্যানভার্স হাজির ছিলেন। স্যার চার্লস বললেন।
-হ্যাঁ, সেদিন তিনি ওখান দিয়ে গাড়ি চালিয়ে আসতে গিয়ে একটা পাঁচিলে ধাক্কা মারেন। ফলে গাড়ি বিগড়ে যায় বাইমিউয়ের সঙ্গে ওর চেনা জানা ছিল। তাই তিনি তাকে তাঁর বাড়িতে থাকার আমন্ত্রণ জানান। তাই তিনি তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন দুর্ঘটনা ঘটার পর।