প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ ওরা উঠলো। শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট ওদের বারান্দা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন।
হারমিনে সমানে অলিভারের সঙ্গে বগড়া করে চলেছে! ঝগড়ার সুবিধার জন্য বোধ হয়, ওকে আরো নিজের কাছে টেনে আনলো! জোর করে অলিভারের মাথাটা নিজের দিকে নামিয়ে আনলো। অলিভার তার সাধ্যমত বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট আবার ঘরে এসে ঢুকলেন।
–স্যাটার্থওয়েট, স্যার চার্লসের কণ্ঠে বেদনার সুর। আমি ঠিক করে ফেলেছি। কাল ভোর হওয়ার আগেই, এই কুলায় এই সমুদ্রতীর ছেড়ে চলে যাবো। আপাতত দক্ষিণ ফ্রান্সে যাবো। কিন্তু কেউ জানে না, আমার কতখানি এখানে রেখে গেলাম।
প্রথমে খুব বিস্মিত হলেন শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট। পরক্ষণে সেটা কাটিয়ে বললেন, তাহলে আমিও ভোরের গাড়িতে লণ্ডনে ফিরে যাই।
না, আমার বিশেষ অনুরোধ, আপনি অন্ততঃ আর একটা দিন এখানে থাকুন! কুলায় ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় আমার বিদায় জানাবার কেউ তো তাহলে থাকবে না। এ আমি ভাবতে পারি না বন্ধু।
কাল রাতে ভালো ঘুম হয়নি। সকালে সমুদ্রের ধারে পায়চারি করছিলেন শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট, বাড়ির মালিক না থাকলেও পরিচারিকারা ঠিক মত কাজ করে চলেছে। মনে মনে ভাবছিলেন, বিকেলের গাড়িতে লণ্ডন ফিরে যাবে। জামার হাতায় টান পড়তেই পেছন ফিরে তাকালেন। বিষণ্ণ মুখে হারমিয়োন দাঁড়িয়ে।
–স্যার চার্লস নাকি এখান থেকে চলে যাচ্ছেন? হারমিয়োন প্রশ্ন করলো।
উনি চলে গিয়েছেন এখান থেকে!
অস্ফুটে একটা কাতরোক্তি তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো। পরক্ষণে সে খণ্ডিতা নায়িকায় অবতীর্ণ হলো।
–কোন কুত্তীটার সঙ্গে গেছে? সেই নাটক লিখিয়ে ধুমসীটার সঙ্গে না কি বেহায়া নটীটার?
–কি যা তা রলছো? উনি চলে গেছেন তোমার জন্য হারমিয়োন।
–আমি! আমার জন্য উনি চলে গেছেন! স্পল্পজড়িত কণ্ঠে সে বলে উঠলো। তারপর নিজের মনে বলতে থাকে, এখন কি করবো আমি? চিঠি লিখবো? পুরুষ মানুষের মতিগতি আমরা আধুনিকারা একটুও বুঝি না। ওদের মনে প্রেম সৃষ্টি করতে গিয়ে ঈর্ষা সৃষ্টি করি। ব্যর্থ, আমরা ব্যর্থ।
সে বড় বড় চোখে তাকালো, শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েটের দিকে।
–আপনার কথাই আমি ধরে নিচ্ছি। স্যার চার্লসের এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য আমি দায়ী। তবে আমি প্রতিজ্ঞা করছি, তাকে আমিই আবার এখানে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো। দেখবেন, আমার কথার খেলাপ হবে না।
২. দ্বিতীয় অঙ্ক–নিঃসন্দেহ
দ্বিতীয় অঙ্ক–নিঃসন্দেহ
০১.
একটি চিঠি
মাঝে মাঝে অবকাশ যাপন করতে শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট দক্ষিণ ফ্রান্সের সমুদ্রতীরের একটি শহরে আসেন। এবারেও তিনি সমুদ্রে কাছাকাছি ছোট্ট বাড়িটিতে উঠেছেন। বাগানে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন তিনি। হঠাৎ একজায়গায় তার দৃষ্টি আটকে গেল। পরলোকে স্যার বার্থালমিউ। তিনি সম্পূর্ণ খবর মন দিয়ে পড়লেন। কি নিদারুণ দুঃসংবাদ! হাত থেকে কাগজ পড়ে গেল। নানান কথা স্মৃতি হয়ে ফিরে এলো। বারে বারে খবরের কাগজের কয়েকটি কথা মনে পড়লোতর আকস্মিক জীবনাবসান, কফি পান করিতেছিলেন, চিকিৎসক আসিবার পূর্বেই তাহার মৃত্যু
আর একটি আকস্মিক মৃত্যুর সঙ্গে আশ্চর্য ধরনের মিল রয়েছে।
স্যার চার্লসকে আসতে দেখে শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট আশ্চর্য হলেন। জানা গেল তিনিও কাগজ থেকে এই দুঃসংবাদটি অবগত হয়েছেন।
সত্যি, এভাবে টলি যে চলে যাবে, ভাবতে পারি না শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট।
–স্বৰ্গত ব্যারিংটনের মৃত্যুর সঙ্গে এই মৃত্যুর বিস্ময়কর সাদৃশ্য আছে।
দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন।
একসময় চার্লস বললেন– হারমিয়োনের কাছ থেকে একটা চিঠি পেলাম। এর আগে অবশ্য একটা চিঠি পেয়েছিলাম। সেটার উত্তর দিইনি। সকলের পাগলামিতে তো সব সময় প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। তবে এই চিঠিটা একটু অন্যরকমের।
-কি রকম?
বলা যেতে পারে, এটি একটি সাহয্যের জন্য আবেদন। চার্লস পকেট থেকে চিঠিটা বের করে দিলেন। নিন, পড়ে দেখুন।
শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট চিঠিটা পড়লেন, তবে চিঠির সারমর্ম ছিলো–
বার্থালমিউয়ের মৃত্যুর দিন হারমিয়োন ও তার মা ইয়র্কশায়ারের বাড়িতে এক পার্টিতে উপস্থিত ছিলো। তাদের চোখের সামনে ঘটেছে সেই নিদারুণ ঘটনা। তার ধারণা, স্যার বার্থালমিউ এবং শ্রীযুক্ত ব্যারিংটনের মৃত্যু রহস্য একই সূত্রে গাঁথা। তার ধারণা, একমাত্র স্যার চার্লস এই রহস্য উদঘাটন করতে পারেন?
চিঠির প্রসঙ্গ নিয়ে আর কোনো আলোচনা হলো না।
–আচ্ছা, সেদিনকার পার্টিতে কারা কারা ছিলেন?
–কেন, কাগজেই সবার নাম ছিলো। স্যার চার্লস খবরের কাগজটা তুলে নিয়ে জায়গাটা দেখালেন।
লর্ড ও লেডি এডেন, লেডি মেরি লিটন গোর, স্যার জোসেলিন ও লেডি ক্যাম্বেল, ক্যাপটেন ও শ্রীযুক্তা ডেকার্স, শ্ৰীমতী এঞ্জেলা সাট ক্লিফ।
–অলিভার ম্যানডার্সের নাম নেই। স্যার চার্লস বললেন।
এমন সময়ে পরিচারক এসে খানকয়েক চিঠি এবং একটি অর্ধ সাপ্তাহিক সংবাদপত্র শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েটকে দিয়ে গেল। সংবাদপত্রটি স্যার চার্লস হাত বাড়িয়ে নিয়ে পড়তে শুরু করলেন।
একটু পরেই প্রায় চীৎকার করে বললেন–শুনুন শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট, কাগজ কি বলছে। বার্থালমিউর মৃতদেহ ময়না তদন্ত করে দেখা গেছে যে নিকোটিন জাতীয় বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।