…আপনার ক্ষেত্রে এই দুটির একটি ঘটেছিল। একথা একমাত্র স্যার বার্থালমিউ জানতেন। তিনি এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলেননি, বলতেনও না। বহু মেয়ের সঙ্গে আপনার অতিরিক্ত মেলামেশা তিনি মুখ বুজে মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু হারমিয়োনের ক্ষেত্রে তিনি সেটা হতে দিতেন না। আমার ধারণা, তিনি এ ব্যাপারে আপনাকে সাবধান করে দিয়েছিলেন।
..তাই হারমিয়োনকে বিয়ে করার জন্য বার্থালমিউকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হন।
..ব্যারিংটনের মৃত্যু হলো দ্বিতীয় মৃত্যুর মহলা বা রিহার্সাল। স্যার চার্লস জানতেন অভিনয় মঞ্চস্থ করার আগে মহলা ফিরে নিতে হয়। মহলা নিখুঁত হলো। স্যার চার্লস ধরে নিলেন যে মঞ্চে নাটকটা উতরে যাবে!
…একজন কিন্তু স্যার চার্লসকে হত্যাকারী হিসাবে চিনতে পেরেছিলেন। তিনি হলেন শ্ৰীমতী মিলারি। তিনি মনে মনে স্যার চার্লসকে ভালোবাসতেন। কিন্তু তিনি জানতেন, তিনি কুরূপা। তাই মনের ভালোবাসা নিজের অন্তরের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলেন। তিনি জানতেন, রাসায়নিক জিনিসপত্র নিয়ে স্যার চার্লস পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেন। বাগানের গাছপালার জন্য নানারকম রাসায়নিক পদার্থ তিনি আনতেন। গোলাপ গাছের জন্য এক ধরনের স্প্রে আনতেন। শ্রীমতী মিলারি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে এই জিনিসটি নিকোটিন থেকে তৈরি হয়। তিনি সব কিছু আন্দাজ করে স্যার চার্লসকে বিপদমুক্ত করতে চাইলেন, হারমিয়য়ানকে বিয়ে করে তিনি যাতে সুখী হন এটা চেয়েছিলেন। তাই স্যার চার্লসের অপরাধের প্রমাণ লোপ করার জন্য শ্রীমতী মিলারি কাউকে কিছু না জানিয়ে লুমাউথে চলে যান। আমি তাকে অনুসরণ করি এবং বলা বাহুল্য, তাকে হাতে নাতে ধরে ফেলি।
..এছাড়া স্যার চার্লসের অপরাধের বিরুদ্ধে আরো প্রমাণ আছে। ইংল্যাণ্ড থেকে ফ্রান্সে আপনার আসা যাওয়ার হিসেব আপনার পাশ পোর্ট থেকে পাওয়া যাবে। এছাড়া এদেশের একপ্রান্তে একটি পাগলা গারদে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন শ্রীযুক্তা গ্ল্যাডিস মেরি মাগ। চার্লস মাগ নামের একটি লোকের স্ত্রী তিনি।
হারমিয়োন কাঁদতে লাগলো। সে থরথর করে কাঁপছে। পোয়ারার একটি হাত ধরে বললো আপনি ঠিক বলছেন?
–হ্যাঁ, হারমিয়োন, আমি সত্যি বলছি, হারমিয়োন অজ্ঞান হয়ে গেল।
স্যার চার্লস যেন হঠাৎ বুড়ো হয়ে গেছেন। তার মুখে সর্বস্ব হারানোর ছাপ ফুটে উঠেছে। শেষবারের মত হারমিয়োনের দিকে তাকালেন। তারপর পোয়ারোকে লক্ষ্য করে ধীর পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
ওঁর এখন মহাপ্রস্থানের পালা। কিভাবে সেটা সম্পন্ন হবে সেটা নিজেই উনি ঠিক করে নেবেন, পোয়ারো বললেন।
ইতিমধ্যে হারমিয়োনের জ্ঞান ফিরে এসেছে। পোয়ারো তাকে আরো কিছুক্ষণ শুয়ে থাকতে বললেন। নিচু গলায় কথাবার্তা বলছিলেন পোয়ারো এবং স্যাটার্থওয়েট।
এমন সময় দরজায় টোকা দিয়ে ভেতরে এসে ঢুকলো অলিভার।
হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, আপনার ফোন পেয়ে এসেছি। হারমিয়োনের কি হয়েছে?
–কিছু হয়নি। পোয়ারো হারমিয়োনের কাছে এগিয়ে গেলেন। তার চোখে জল টলটল করছে। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে পোয়ারো বললেন, হারমিয়োন, আমি চাই, তুমি শক্ত মাটির ওপর সুখের বাসা তৈরি করো।
অলিভারের বুঝতে বাকি রইলো না কিছু। সে পোয়ারোর কাছে এগিয়ে এসে বললো– আপনার কথার অবাধ্য হবো না আমি।
তারপর হারমিয়োনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। হারমিয়োন তার হাত শক্ত করে ধরলো। ওরা চলে গেল। পোয়ারো আর স্যাটার্থওয়েট মুগ্ধ দৃষ্টিতে শেষ দৃশ্যটি দেখলেন, মিষ্টি হাসি দেখা দিলো তাদের ঠোঁটের কোণে।