এঁদের মধ্যে দ্বিতীয় পার্টিতে ছদ্মবেশে বা নিজের পরিচয় গোপন রেখে হাজির থাকার সম্ভাবনা ছিল কার কার মধ্যে সেটা লক্ষ্যণীয়। দক্ষিণ ফ্রান্সে তখন ছিলেন স্যার চার্লস এবং শ্ৰীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট। শ্রীমতী মিলারি ছিলেন লণ্ডনে। শ্রীযুক্তা ব্যারিংটন ছিলেন লুমাউথে। এই দুজনের ছদ্মবেশে দ্বিতীয় পার্টিতে উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা ছিলো না। স্যাটার্থওয়েটের পক্ষে ছদ্মবেশ ধরা অসম্ভব নয়। কিন্তু নানা কারণে সেটা সম্ভব নয়। এবার বাকি রইলেন স্যার চার্লস। তিনি অভিনেতা। ছদ্মবেশ ধারণে অভ্যস্ত। চরিত্রাভিনয়েও তার দক্ষতার কথা সবাই জানেন। এবার দেখুন দ্বিতীয় পার্টিতে তিনি কোন চরিত্র রূপায়ণের জন্য অবতীর্ণ হয়েছিলেন?
….এবার আসি, এলিসের কথায়। এলিস নামের কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব কখনো ছিলো না। সে বানানো বাস্তব। অর্থাৎ এলিস বাস্তব নয়। তাছাড়া প্রতিটি পরিচারক বা পরিচারিকাই সাক্ষ্যে বলেছে, এলিসের চালচলন ছিলো ভদ্রলোকের মত। অন্য কোনো খানসামার সঙ্গে তার তুলনা হয় না।
…আরো প্রমাণ আছে। বিয়াত্রিচে তার সাক্ষ্যে জানিয়েছে যে এলিস যখন টেলিফোনে আসা একটা খবর বার্থালমিউকে খাওয়ার টেবিলে গিয়ে জানিয়েছিল তখন তিনি মজা করে বলেছিলেন–আচ্ছা কাজের লোক আমাদের এলিস…মোট কথা স্যার চার্লস এবং বার্থালমিউ দুজনে একটি গোপন ও কৌতুকজনক পরিকল্পনার প্রকৃত উদ্দেশ্য জানতেন।
..যাই হোক এরপর বার্থালমিউ মারা গেলেন। এলিস এবং অন্যান্য সকলকে পুলিস জিজ্ঞাসাবাদ করলো। তারপরেই এলিস হাওয়া হয়ে গেল। অতঃপর এলিস-ছদ্মবেশ ত্যাগ করে আপন রূপ ধারণ করে দক্ষিণ ফ্রান্সের সমুদ্রতীরে হাওয়া খেতে এবং বন্ধুর মৃত্যু সংবাদ পুরোনো খবরের কাগজে দেখে ব্যথিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন।
…এর পর এলিসের ঘর থেকে চিঠিগুলি আবিষ্কার করেছিলেন স্যার চার্লস স্বয়ং। বার্থালমিউয়ের নাম দিয়ে স্যার চার্লস-ই অলিভারকে রহস্যময় চিঠিটা পাঠিয়ে ছিলেন।
…শ্রীযুক্তা রাসব্রিজার একজন রোগিনী ছিলেন এবং স্যার চার্লসের অপরিচিতা। স্যার চার্লস চেয়েছিলেন আমাদের মনকে বার্থালমিউ ও এলিসের কাছ থেকে রাসব্ৰিজার রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট হোক।
…এরপর আসছি শ্ৰীমতী উইলসের ভূমিকায়। তিনি কুরূপা হলে বুদ্ধিমতী ছিলেন। আর আছে তার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। বার্থালমিউর পার্টিতে তিনিই একমাত্র খানসামাটিকে ভালো করে লক্ষ্য করেছিলেন এবং তাকে অসাধারণ মনে হয়েছিল। শ্রীমতী উইলস এলিসের হাতের জড়লটার উল্লেখ করায় খুব খুশী হয়েছিলেন স্যার চার্লস। কারণ ঐ চিহ্ন দেখে কোনোদিনই ঐ লোককে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু স্যার চার্লসের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তার মনে কেমন সন্দেহ জাগলো। তখন তিনি তরকারি পরিবেশন করার ছুতোয় স্যার চার্লসের হাতদুটি ভালো করে পরীক্ষা করেছিলেন। দেখতে চেয়েছিলেন, স্যার চার্লসের হাত দুটিই খানসামা এলিসের হাত কিনা সেটা চেপে রেখে দিলেন মনের মধ্যে। স্যার চার্লস তার বাঁকা হাসি লক্ষ্য করে কিছু একটা আন্দাজ করেছিলেন। কিন্তু কিছুটা কি সেটা উদ্ধার করতে পারেননি।
…এবার স্যার চার্লস নতুন একটি রহস্য সৃষ্টি করার জন্য আবার ছদ্মবেশ ধারণ করলেন। একটি ছোট ছেলেকে দিয়ে শ্রীযুক্তা রাসব্রিজারের নাম করে আমাকে একটি টেলিগ্রাম পাঠালেন এবং একটি কোকোর কৌটো ডাকযোগে তাকে পাঠালেন উপহার হিসেবে যাঁর সঙ্গে স্যার চার্লসের কোনো পরিচয় ছিল না। এবং তাকে কোনোদিন তিনি দেখেননি।
…তারপর আমার ডাকা পার্টিতে স্যার চার্লস মৃত্যুদৃশ্য অভিনয় করেছিলেন। আমি তখন শ্ৰীমতী উইলসকে খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করেছিলাম। ঐ সময় তার চোখে চরম বিস্ময় ফুটে উঠেছিল। তখনই আমার বুঝতে দেরী হলো না যে শ্রীমতী উইলস স্যার চার্লসকে হত্যাকারী হিসাবে সন্দেহ করতে শুরু করেছিলেন।
…ফলে শ্রীমতী উইলসের সমূহ বিপদ বুঝে আমি তাকে বাড়ি ছেড়ে কয়েক দিনের জন্য অন্যত্র থাকার উপদেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার আশঙ্কা যে ঠিক ছিল তার প্রমাণ পরের দিন সন্ধ্যায় শ্রীমতী উইলসের সঙ্গে বোঝাঁপড়া করার উদ্দেশ্য নিয়ে স্যার চার্লস তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। কিন্তু তাকে তিনি পান না।
..স্যার চার্লসের মতো বুদ্ধিমান লোক একটা ভুল করেছিলেন। তিনি শ্রীযুক্তা রাসব্রিজারের নামে আমাকে টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এই কেসটা যে আমি হাতে নিয়েছি সেটা শ্ৰীযুক্তা রাসব্রিজার জানতেন না কারণ সে সম্ভাবনা মোটেই ছিল না।
স্যার চার্লস গম্ভীর মুখে উঠে দাঁড়ালেন। ঘরের মধ্যে পায়চারি করলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন শ্রীযুক্ত পোয়ারো, আপনার কল্পনাশক্তি অপূর্ব। আপনার ধারণা আমিই হত্যাকারী। কিন্তু দয়া করে কি বলবেন, আমার আজীবনের বন্ধু বার্থালমিউকে কেন আমি হত্যা করলাম?
–আমি জানি, এ প্রশ্ন আপনি করবেন। উত্তরও আমার জানা আছে। স্যার চার্লস, বহু নারী সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা আছে যথেষ্ট। ফুলে ফুলে মধু খেয়েছেন অনেক। হারমিয়োন আপনার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, এটা আমার অজানা ছিল না। সে আসলে ভালোবেসেছিল আপনার খ্যাতিকে। আপনি হারমিয়োনকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বিয়ে করতে পারেননি। কারণ আপনি বিবাহিত ছিলেন। বিখ্যাত হওয়ার আগে আপনি বিয়ে করেছিলেন। তাই আপনি বিবাহ বিচ্ছেদ না করে বিয়ে করতে পারছিলেন না। আইন অনুসারে বিবাহ বিচ্ছেদ মঞ্জুর হয় না দুটি ক্ষেত্রে, এক, স্ত্রী যদি দীর্ঘ মেয়াদী কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে কারাগারে থাকে এবং দুই হলো, সে যদি পাগলা গারদে থাকে।