পরে হাসি থামিয়ে সে জানালো, স্যার চার্লসের সঙ্গে তার আসন্ন বিয়ের কথা এবং অভিনয় জগতে এসে স্যার চার্লসের পদবী পরিবর্তনের কথা।
–আপনাকে একটা কথা জানাতে এসেছিলাম। আপনারা অলিভারকে সন্দেহ করছেন। এমন কি পুলিসও। কিন্তু আপনি বিশ্বাস করুন, ও নির্দোষ।
–বিশ্বাস করলাম।
–আপনি আমাকে কথা দিন, অলিভার যেন কোনো বিপদে না পড়ে আপনি দেখবেন?
–দিলাম।
এবার আমি নিশ্চিন্ত। আমি এখন উঠি।
হারমিয়োন চলে যাওয়ার পর পোয়ারো আবার তাসের বাড়ি তৈরি করায় মন দিলেন। একসময় সুন্দর বাড়ি তৈরি হলো। তিনি বাচ্চা ছেলের মতো আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন কেসটা যে বিচিত্র; সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবে সমস্যার সমাধান আমি পেয়েছি। এবার চিন্তা ছেড়ে কাজ শুরু করার পালা।
চটপট পোশাক পরে পোয়ারো তৈরি হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এলেন। একটা ট্যাক্সি ধরলেন।
স্যার চার্লসের বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে চমকে উঠলেন পোয়ারো। শ্রীমতী মিলারি হাতে একটা ছোট সুটকেস নিয়ে বেরিয়ে আসছেন।
পোয়ারোকে সামনাসামনি দেখে একটু হকচকিয়ে গেলেন।
–আপনি। কিন্তু স্যার চার্লস তো শ্রীমতী হারমিয়োনকে নিয়ে কোথায় বেরিয়েছেন।
আমার ওঁকে দরকার নেই। কদিন আগে আমার ছড়িটা এখানে ফেলে রেখে গিয়েছিলাম। সেটা নিতে এসেছি।
–তা বেশ। আপনি তাহলে ভেতরে যান। আমি আর দেরী করতে পারছি না। কিছু মনে করবেন না যেন। আমি আমার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিলিংয়ে যাচ্ছি।
শ্ৰীমতী মিলারি দেরী না করে দ্রুত রাস্তায় নেমে একটা ট্যাক্সি ধরলেন। পোয়ারোও আর একটি ট্যাক্সি নিয়ে তাকে অনুসরণ করলেন।
প্যাডিংটন স্টেশনে নেমে শ্রীমতী মিলারি টিকিট ঘরে গেলেন। তারপর লুমাউথে যাওয়ার একটি গাড়িতে উঠে বসলেন।
পোয়ারোও প্রথম শ্রেণীর একটি টিকিট কেটে ঐ একই গাড়িতে উঠে বসলেন।
সন্ধ্যা ছটা নাগাদ লুমাউথে পৌঁছে শ্রীমতী মিলারি হেঁটে রওনা হলেন কুলার-এর দিকে। নিঃশব্দে পোয়ারো তার পেছন ধরলেন।
শ্রীমতী মিলারি কুলায় ঢুকলেন। পাঁচ মিনিট পর তিনি বেরিয়ে এলেন একটি টর্চ এবং একটা বেঢপ ধরনের চাবি হাতে নিয়ে। পোয়ারো একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে সব লক্ষ্য করতে লাগলেন।
একটা ছোট্ট ঘেরা মাঠে এসে ফটক খুলে ভেতরে ঢুকলেন। ঝোঁপঝাড়ে ভরা, পুরোনো ধরনের পাথরের মিনারের নিচে মস্তবড় দরজাটা চাবি দিয়ে খুললেন। ভেতরে ঢুকে আবার দরজা ভেজিয়ে দিলেন। টর্চ জ্বেলে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলেন।
ছোট্ট একটি ঘর। চারদিকে জানালা। এটিকে দেখলে মনে হবে ছোটখাটো একটি রাসায়নিক পরীক্ষাগার। তারপর অনেক খুঁজে পেতে একটা শিশি বের করলেন। আরো টুকিটাকি সব একজায়গায় জড়ো করে একটা পুঁটিলিতে বাঁধলেন। তারপর একটা হাতুড়ি দিয়ে পুঁটুলিটার ওপর
ঠিক সেই মুহূর্তে একটা বজ্রমুষ্টি শ্রীমতী মিলারির হাত ধরে ফেললো। চমকে ঘাড় ঘোরালেন শ্রীমতী মিলারি।
–আপনাকে আমি অপরাধের সাক্ষ্য প্রমাণ নষ্ট করতে দেবো না শ্রীমতী মিলারি, বললেন পোয়ারো।
.
১৫.
যবনিকা
একটি আরাম কেদারায় বসে আছেন এরকুল পোয়ারো। স্যার চার্লস, শ্ৰীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট আর হারমিয়োন বসে আছেন রহস্য সমাধানের প্রত্যাশায়।
আপনমনে পোয়ারো বলে চললেন–প্রথমে ব্যারিংটনের মৃত্যু দিয়ে শুরু করি। তিনি যে সন্ধ্যায় মারা যান সেদিনই স্যার চার্লস জানিয়েছিলেন যে এ মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমি সেদিন ভুল করেছিলাম। অর্থাৎ যে দৃষ্টিকোণ দিয়ে সেদিন দেখেছিলাম, সেটা ছিল ভুল। মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা আগে আমি সেই দৃষ্টিকোণটি খুঁজে পেয়েছি।
..তারপর দক্ষিণ ফ্রান্সে সমুদ্রতীরে যেদিন শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট স্যার বার্থালমিউয়ের মৃত্যু সংবাদ প্রকাশিত পুরোনো খবরের কাগজটি দেখালেন সেদিন বুঝেছিলাম, স্যার চার্লস ঠিকই বলেছিলেন। একই সূত্রে গাঁথা হয়েছে ব্যারিংটনকে, স্যার বার্থালমিউকে, এবং শ্রীযুক্তা রাসব্রিজারকে। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে, একই লোক আছে এই তিনটি হত্যাকাণ্ডের আড়ালে।
…রহস্য সম্পর্কিত অনুসন্ধানের ব্যাপার আমার নীতি হলো, সবচেয়ে সরল এবং সুস্পষ্ট ধারণা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রেও সেই নীতি প্রয়োগ করেছি। আপনাদের তৈরি করা সন্দেহভাজন নামের তালিকা থেকে আমি প্রথম চারজনকে একেবারেই বাদ দিয়েছিলাম। তারা হলেন, ডেকার্স দম্পতি, অভিনেত্রী এঞ্জেলা আর নাটক লেখিকা শ্রীমতী উইলস। এছাড়া তালিকায় আরো তিনটি নাম ছিল– লেডি মেরি, হারমিয়োন ও অলিভার। এদেরকে সন্দেহ করিনি ঠিকই আবার সন্দেহের বাইরেও রাখিনি। পরে অবশ্য প্রমাণের অভাবে সেই সন্দেহ থেকে ওঁরা মুক্তি পেয়েছিল।
…স্যাটার্থওয়েট অলিভারকে সন্দেহ করেছিলেন। অবশ্য তার সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ ছিলো, সেটা আপনারা জানেন।
হত্যাকারী জানতো যে ঐ সাতজনকে অনিবার্যভাবে সন্দেহ করা হবে। তাই সে বুদ্ধি খাঁটিয়ে দুটি পার্টিতেই এমনভাবে উপস্থিত ছিলো যাতে সে দুজায়গাতেই হাজির ছিলো সেটা ধরা না পড়ে যায়।
…এবার দেখা যাক, কারা কারা প্রথম পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু দ্বিতীয় পার্টিতে ছিলেন না। তারা হলেন, স্যার চার্লস, শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট, শ্রীমতী মিলারি, শ্রীযুক্তা ব্যারিংটন, এবং স্বর্গত ব্যারিংটন।