.
০২.
দর্শকের ভূমিকায়
সন্ধ্যার সময় ছোট্ট নীড় সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। অতিথিরা একে একে আসছেন। তাদের পানীয় পরিবেশন করা হচ্ছে।
মানুষ দেখতে ভালোবাসেন শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট। পুরুষ-স্ত্রী দুই-ই। তিনি দেখছিলেন শ্ৰীযুক্ত ডেকার্সকে যার মধ্যে প্যারিসের কেশবিন্যাসের আধুনিকতম রীতির ছাপ লক্ষণীয়।
অভিনেত্রী এঞ্জেনা সাট ক্লিফের সঙ্গে কথা বলছিলেন স্যার চার্লস। এককালে এই জুটির নামে নাট্যমোদী জনতা পাগল হয়ে যেতো।
এঞ্জেলার বান্ধবী শ্রীমতী উইলস ঐদিকে বসে আছেন। এইসময়ে এসে ঢুকলেন সস্ত্রীক শ্রীযুক্ত ব্যারিংটন। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হলেন লেডি মেরি গোর। তিনি এককালে সুন্দরী ছিলেন। প্রৌঢ়ত্বে হাজির হয়েও তার মুখের ঔজ্জ্বল্যের ঘাটতি হয়নি। মেয়ে হারমিয়োন যখন তিন বছরের তখন তিনি স্বামীকে হারান। তারপর তিনি চলে আসেন এইখানে।
হারমিয়োন সুন্দরী না হলেও আকর্ষণীয়া। সাংবাদিক অলিভার ম্যানডার্সের সঙ্গে সে তখন কথা বলছিলো।
ওদের দুজনকে আরো একজন লক্ষ্য করছিলেন। তিনি হলেন এরকুল পোয়ারো। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তার মুখ একটু বিষণ্ণ। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি।
লম্বা চওড়া সৌম্য শান্ত চেহারা আট বছরের রেভারেণ্ড স্টিফেন ব্যারিংটনের। কিন্তু শ্ৰীযুক্তা ব্যারিংটন সুন্দরী হলেও সাজসজ্জায় অগোছালো ভাব।
পরিচারিকা ট্রে নিয়ে এসে প্রত্যেকের সামনে পানীয়ের গ্লাস ধরলো। সকলেই একটি করে পাত্র তুলে নিলেন। শ্রীযুক্ত ব্যারিংটন নিলেন না। স্ত্রীর অনুমতি না পেলে তিনি কোনো কাজই করেন না। অগত্যা শ্রীযুক্তা ব্যারিংটন স্বামীকে পানীয় নেওয়ার কথা বললেন। স্ত্রী আজ্ঞা শিরোধার্য করে শ্রীযুক্ত ব্যারিংটন পানীয়ের গ্লাস হাতে তুলে নিলেন।
ওদিকে শ্রীমতী হারমিয়োন ম্যানডার্সের সঙ্গে তুমুল তর্ক জুড়ে দিয়েছে। টুকরো টুকরো কথা শোনা গেল।
–আমার মতো সাধারণ একটা মানুষের জন্যে তোমাকে ভাবতে হবে না। তোমার অনেক জ্ঞানবৃদ্ধ বন্ধু আছেন, তাদের কাছে যাও।
জ্ঞান বৃদ্ধ। মানে জ্ঞানী এবং বৃদ্ধ। স্যার চার্লসের কথা বলছো?
–আমি কারো নাম করিনি।
করার প্রয়োজন নেই। তবে জেনে রেখো, ওঁর সঙ্গে তোমার তুলনা হয় না।
স্যাটার্থওয়েট ওদের দেখে খুব খুশী হলেন। হারমিয়োন মেয়েটি যে কি। এমন সুন্দর, শান্ত ছেলে ওর পছন্দ হয় না। আশ্চর্য, মেয়েদের মহিমা বোঝা যায়!
হঠাৎ একটা শব্দ শুনে স্যাটার্থওয়েট চমকে উঠলেন। শ্রীযুক্ত ব্যারিংটন চেয়ারের ওপর ঢলে পড়েছেন।
শ্ৰীযুক্ত ব্যারিংটন, ডাক্তার, শিগগির এদিকে আসুন।
স্যার বার্থালমিউ ধীরে ধীরে নামিয়ে রাখলেন শ্রীযুক্ত ব্যারিংটনের ধরে থাকা হাতটি। শ্ৰীযুক্তা ব্যারিংটনের দিকে বিষণ্ণ মুখে একবার তাকালেন। মুখ নিচু করে দ্বিধা কাটিয়ে বললেন। দুঃখিত। উনি মারা গেছেন।
–টলি, তুমি এইভাবে পায়চারি করছিলেন গাউনটা চাপিয়ে নিলেন
.
০৩.
স্যার চার্লসের সংশয়
এর পর কেটে গেছে কয়েকটা ঘণ্টা।
অন্ধকার সমুদ্রতীর। অবসাদের শান্তি ঘিরে আছে শান্ত কুলায়কে। লেডি মেরি শোকগ্রস্তা ব্যারিংটনকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন। অতিথিরা সবাই যে যার ঘরে বসে আছেন।
শ্ৰীযুক্ত স্যাটার্থওয়েটের শুতে ভালো লাগছিল না। মন ভারাক্রান্ত। আকস্মিক মৃত্যুর দৃশ্য মনকে ভীষণ খারাপ করে দেয়। এই বয়সে মৃত্যুর দৃশ্য সহ্য হয় না।
এমন সময় দরজায় টোকা দিয়ে ঘরে এসে ঢুকলেন চার্লস।
– আসবেন একটু ও ঘরে। কথা আছে। টলিও ওখানে আছে।
–বেশ তো চলুন। স্যাটার্থওয়েট গায়ে ড্রেসিং গাউনটা চাপিয়ে নিলেন।
অস্থিরভাবে ঘরের মধ্যে পায়চারি করছিলেন স্যার চার্লস।
— টলি, তুমি এইভাবে এত আকস্মিক ভাবে এত দ্রুত কাউকে মারা যেতে দেখেছো?
–আপনি কি এ ব্যাপারে কিছু সন্দেহ করছেন স্যার চার্লস? জিজ্ঞেস করলেন শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট।
স্যার চার্লসের হয়ে জবাব দিলেন স্যার বার্থালমিউচার্লসের ধারণা, শ্রীযুক্ত ব্যারিংটনের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়।
শ্রীযুক্ত ব্যারিংটনের মৃত্যুতে আমরাও কম দুঃখিত হইনি। কিন্তু তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে আপনার যে ধারণা সেটা আর কারো কাছে বলবেন না। সেটা বিলকুল হতে পারে। শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট বললেন।
স্যার বার্থলমিউয়েরও একমত এ ব্যাপারে। –দেখো চার্লস, স্যার স্যাটার্থওয়েট ঠিক কথাই বলেছেন। তোমার এই কথাটা নানান জনের কানে কানে পৌঁছে এমন একটা আকার ধারণ করবে ফলে তোমার শান্তি বিঘ্নিত হবে। তুমি চুপ করে থাকো। পুলিস যা বলে বলুক।
–বেশ, তবে এইবার কি একটা সবিনয়ে নিবেদন করতে পারি?
নিশ্চয়ই।
–কথাটা হলো শ্রীযুক্ত এরকুল পোয়ারো অতিথি হিসাবে এখানে এসেছেন। স্যার চার্লস বলতে থাকেন। এখন শ্রীযুক্ত ব্যারিংটনের মৃত্যু রহস্য সম্পর্কে ওঁর মতামত জানতে চাইলে সেটা কি শিষ্টাচার সম্মত হবে?
–আমার মনে হয় না, সেটা ঠিক কাজ হবে। শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট বলে উঠলেন, এমন সময় দরজায় মৃদু আওয়াজ।
–আসতে পারি?
–আরে এরকুল পোয়ারো। আসুন, আসুন, আমরা আপনার কথাই আলোচনা করছিলাম।
–আপনাদের গল্পের মাঝখানে এসে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করলাম না তো?
–মোটেই না, বসুন।
–এবার সরাসরি কাজের কথায় আসা যাক। স্যার চার্লস বললেন, আজকের সন্ধ্যেবেলার ঘটনার মধ্যে কোনো গোলমাল আছে বলে কি আপনার মনে হয়?