মিনিট পাঁচেকের মধ্যে মেট্রন এসে হাজির হলেন–আপনারা টেলিগ্রাম পেয়ে এসেছেন? সমস্ত ব্যাপারটাই কেমন রহস্যময় বলে মনে হচ্ছে। পুলিসও ঘণ্টা দুই আগে এসে পড়েছে।
–পুলিস? কেন? পোয়ারো প্রশ্ন করলেন।
–সেকি, আপনারা জানেন না? শ্রীযুক্তা রাসব্রিজার মারা গিয়েছেন।
-বলেন কি, আমরা তো তার তার পেয়ে এসেছিলাম। কয়েকটা কথা বলেই চলে যেতাম। স্যাটার্থওয়েট বললেন।
–তিনি কিভাবে মারা গেলেন?
পোয়ারো জানতে চাইলেন।
–কাল ডাকে ওঁর নামে একটা কোকোর কৌটো এসেছিল। আজ সকালে তিনি নিজের হাতে কোকো তৈরি করে চুমুক দেন। মনে হয় বিস্বাদ লেগেছিল। তাই তিনি কাপটা সরিয়ে রাখেন। কিন্তু মুখের জিনিস থু করে ফেলে দেওয়া শিষ্টাচার বিরোধী বলে হয়তো মনে করে গিলে ফেলেছিলেন। মিনিট দুইয়ের মধ্যে তার মৃত্যু হয়।
–কোকোর কৌটো এবং কাপ নিশ্চয়ই পরীক্ষা করা হয়েছে। কি পাওয়া গেছে?
–নিকোটিন জাতীয় বিষ।
শ্রীযুক্ত রাসব্ৰিজার যা বলতে চেয়েছিলেন সেটা যদি এখানকার কাউকে বলে যান এটা ভেবে আরোগ্য নিকেতনের সমস্ত নার্স এবং ডাক্তারদের সঙ্গে ওঁরা কথা বললেন। কিন্তু শ্ৰীযুক্তা রাসব্রিজার কাউকে কিছু বলে যাননি।
চুপ করে বসে আছে পোয়ারো। তার মুখ ভার।
হঠাৎ একসময় বলে উঠলেন পোয়ারো চলুন, স্যাটার্থওয়েট, এখানে বসে থেকে লাভ নেই। অনেক কাজ করার কাছে।
আরোগ্য নিকেতন থেকে বেরিয়ে স্যাটার্থওয়েট প্রশ্ন করলেন–কি কাজ করার আছে?
আর একটি হত্যাকাণ্ড যাতে না ঘটে সেদিকে প্রথমে নজর রাখতে হবে।
–মানে, আপনি জানেন…
–আমি অনেক কিছুই জানি। তবে বুঝতে পারিনি, হত্যাকারী এত ভয়ঙ্কর, এত বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।
ওঁরা থামার এলেন। তাদের পূর্ব পরিচিত সুপারিন্টেন্টে ক্রসফিল্ডকে সঙ্গে নিয়ে পোস্টঅফিসে এলেন? জানা গেল একটি ছোট ছেলে টেলিগ্রামটি করতে এসেছিল। সন্ধান করে সন্ধ্যার সময় ছেলেটিকে পাওয়া গেল। সে জানালো, একটি আধময়লা পোশাক পরা লোকের কথাতে টেলিগ্রামটি করেছে। পরিবর্তে চকোলেট খাওয়ার জন্য পাঁচটা টাকা পায়। টেলিগ্রাম করে রসিদটা সে পোস্টাফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে দিয়ে দেয়। লোকটি দেখতে লম্বা, অল্প দাড়ি, চোখে কালো চশমা, ছাই রঙের পোশাক। অনেকটা মোটরা কারখানার মিস্ত্রির মতো।
সুপারিনটেনডেন্ট ক্রসফিল্ড লোকটিকে সন্ধান করার নির্দেশ দিলেন।
প্রায় মধ্যরাত্রি।
এরকুল পোয়ারো ও শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট লণ্ডনে ফিরে এলেন। স্যার চার্লস ওঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
কিছুক্ষণ তিনজনের মধ্যে নতুন করে আলোচনা হলো।
–আপনারা বরং ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দিন। সমস্ত ঘটনাগুলো এখন গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। প্রকৃত ব্যাপারটা এইভাবেই জানা যাবে।
–বেশ, আপনার যেমন খুশী করুন। কিন্তু আমার কাছে অসম্ভব বলে মনে হয়। তবে কেবল চিন্তা করেই যদি আপনি রহস্যের জাল খুলতে পারেন তাহলে আপনাকে আমিই প্রথমে অভিনন্দন জানাবো।
ফিরে আসার জন্য স্যার চার্লস পা বাড়িয়েও থমকে দাঁড়ালেন–শ্রীমতী উইলসের জন্য আমি খুব চিন্তিত।
-কেন? পোয়ারো চমকে উঠলেন।
–তিনি কাউকে কিছু না বলে কোথায় চলে গিয়েছেন। আপনাদের ফোন পেয়ে আমি তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। উনি একটা কিছু চেপে যাচ্ছেন এটা প্রথম দিনই বুঝতে পেরেছিলাম। এতে তার বিপদ হতে পারে। আর একবার বোঝাবার চেষ্টায় তার বাড়ি গিয়ে শুনি, উনি আজ সকালে চলে গিয়েছেন। বিকেলে ওর পরিচারিকা একটা টেলিগ্রাম পেয়েছেন যে শ্রীমতী উইলস দুএকদিনের মধ্যে লণ্ডনে ফিরবেন না। তিনি কোথায় আছেন তার কোনো হদিস ছিল না টেলিগ্রামের মধ্যে। তাছাড়া কোনোদিন এভাবে তিনি কোথাও যান না বলে পরিচারিকাটি চিন্তিত হয়ে পড়েছে।
স্যার চার্লসের কথা খুব মন দিয়ে শুনলেন পোয়ারো। তারপর বললেন, আমি তাকে বার বার সাবধান করে দিয়েছিলাম। বার বার বলেছিলাম কোনো কিছু যেন গোপন না করে। আমার কথা তিনি শুনলেন না। যাই হোক, আমি একদিন সময় চাইছি আপনাদের কাছে।
–বেশ, আপনি নিরিবিলিতে বসে চিন্তা করুন। আমি এখন আসি। স্যার চার্লস বললেন।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে স্যার চার্লস বললেন– পোয়ারো নিজেকে একটা মস্ত মানুষ বলে মনে করেন, তাই না স্যাটার্থওয়েট?
–ভদ্রলোক একটু অদ্ভুত ধরনের মানুষ। স্যাটার্থওয়েট এবার প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন– আপনি তখন আপনার কোনো চিন্তার কথা বলছিলেন, জানতে পারি?
–মনে রেখেছেন সেটা। মানে…লজ্জাও পেলেন যেন স্যার চার্লস, আমি আর হারমিয়োন…
–এ তো সুখের খবর। আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি, স্যার চার্লস।
.
১৪.
শ্রীমতী মিলারি
পরের দিন সকালে পোয়ারোর ঘরে ঢুকে অবাক হলো হারমিয়োন। টেবিলের ওপর এক প্যাকেট তাস নিয়ে বাড়ি তৈরি করছেন।
–ভাবছো, আমি ছেলেমানুষ হয়ে গেছি। আসলে কি জানো হারমিয়োন, তাসের বাড়ি তৈরি করা খেলাটা আমার চিন্তায় ভীষণ সাহায্য করে। সামনের দোকান থেকে এক প্যাকেট তাস কিনে নিয়ে এলাম। কিন্তু এনে দেখছি, এগুলো কেবল মজার ছবিতে ভরা, এগুলোতে তাসের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। যাই হোক, এতেই কাজ চলে যাবে।
–দেখি ছবিগুলো, হারমিয়োন হাত বাড়িয়ে তাসগুলো নিলো। এগুলো দিয়ে একটা মজার খেলা হয়। খেলটার নাম সুখী পরিবার। কয়েকটা ছবি নিয়ে একটা পরিবার হবে। যেমন, দেখুন ডাক্তার কোয়াক, এই ছবিটা শ্ৰীযুক্ত মাগের। আর বিশ্রী চেহারার ভদ্রমহিলা হলেন শ্রীমতী মাগ। তার মানে আমি? হারমিয়োন হেসে লুটিয়ে পড়লো।