অতিথিরা এ ব্যাপারে কেউ কিছু বললো না। তারা এক এক করে বিদায় নিলেন।
–নিছক হাত সাফাইয়ের ব্যাপারটা পরীক্ষা করার জন্যেই কি আপনি আজকের অভিনয়ের আয়োজন করছিলেন, না কি অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল?
–আরো একটা উদ্দেশ্য ছিল। ঐ সময় আমি বিশেষ একজনের মুখের ভাব লক্ষ্য করতে চেয়েছিলাম।
–সে কে? হারমিয়োন বলে উঠলো।
–মাপ করো। এই প্রশ্নের উত্তর আমি এখন দিতে পারবো না। তবে এটুকু বলতে পারি। তার মুখে নিদারুণ বিস্ময়ের ভাব ফুটে উঠেছিল।
একটা টেলিগ্রাম পড়ে স্যার চার্লসকে দিলেন। তারপর আবার স্যাটার্থওয়েটের কাছ হয়ে পোয়ারোর কাছে ফিরে গেল।
বার্থালমিউয়ের মৃত্যু রহস্য সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য জানাতে চাই। শিগগির আমার সঙ্গে দেখা করুন। –মার্গারেট রাসব্রিজার।
.
১২.
গিলিংয়ে একদিন
শ্ৰীযুক্ত পোয়ারো, হারমিয়োন বললো, আপনার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইয়র্কশায়ারের নার্সিংহোমে গিয়ে ঐ ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা করা উচিত।
–কাল সকালের ট্রেনে যাবো বলে ঠিক করে রেখেছি। পোয়ারো বললেন, শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট, আপনিও আমার সঙ্গে চলুন।
স্যাটার্থওয়েট রাজী হয়ে গেলেন।
আরো কিছুক্ষণ ওদের মধ্যে কথাবার্তা চললো।
স্যার চার্লসের মোটর হারমিয়োনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো গিলিং-এর উদ্দেশ্যে। ভোরের বাতাসের মিষ্টি হাওয়া লাগছে তাদের গায়ে। বেলা এগারোটা নাগাদ ওংরা গিলিংয়ে এসে পৌঁছোলেন।
গ্রামের মধ্যে বাড়ি। শ্রীমতী মিলারির মা ওঁদের দেখে খুব খুশী হলেন। বয়েস হয়েছে। জানলার ধারে আরামকেদারায় বসে তার দিন কাটে।
কিছুক্ষণ এঁদের মধ্যে শ্রীমতী মিলারি সম্পর্কে আলোচনা হলো। স্যার চার্লসের মুখে শ্রীমতী মিলারির প্রশংসা শুনতে ভালো লাগছিল না হারমিয়োনের। তাই সে প্রসঙ্গ পাল্টে প্রশ্ন করলো–আপনি শ্রীযুক্ত ব্যারিংটনকে তো চিনতেন, তাই না? এখানে একসময় তিনি যাজক ছিলেন। তিনি মারা গিয়েছেন, এটা নিশ্চয়ই শুনেছেন।
নিশ্চয় চিনতাম। কি ভালো লোক ছিলেন। বৌটিও বেশ ভালো। ওঁদের এখানেই বিয়ে হয়েছিল। মেয়ে চিঠি লিখে জানিয়েছিল, খেতে গিয়ে বিষম লেগে তিনি মারা গিয়েছেন।
–না, ওটা ভুল। ওঁকে পানীয়ের সঙ্গে বিষ খাইয়ে…
শ্ৰীমতী মিলারির মা আঁৎকে উঠলেন।
–আমরা অপরাধীকে ধরার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে আপনি যদি সাহায্য করেন—
–কি সাহায্য করবো বলো তো। পনেরো বছর আগে আমি ওঁকে শেষবার দেখেছিলাম।
তিনি শ্রীযুক্তা রাসব্রিজারকে চেনেন কিনা বলাতে জানালেন এ নাম কখনো শোনেননি। অতিথিদের কয়েকজনের ফটো তাকে দেখানো হলো। কিন্তু বৃদ্ধা কাউকেই চিনলেন না।
অতঃপর ওঁরা বৃদ্ধার কাছ থেকে বিদায় নিলেন।
দুজনে ওখান থেকে বেরিয়ে একটা রেস্তোরাঁয় সামান্য কিছু খেয়ে নিয়ে গির্জার কাছে এলেন। ঘুরে ফিরে দেখলেন। তারপর গির্জার লাগোয়া বাগানে নির্জন দুপুরে দুজনে বেড়াতে লাগলেন।
–কি অদ্ভুত পদবী দেখুন। একটি সমাধি ফলকে উৎকীর্ণ একটি নামের প্রতি স্যার। চার্লসের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো হারমিয়োন–মেরি অ্যান স্টিকলপাথ।
–আমার আসল পদবী শুনলে তো তুমি এই ভাবেই হাসবে।
–কেন? আপনার পদবী তো কার্টরাইট। কত গুরুগম্ভীর সম্ভ্রান্ত পদবী বলুন তো।
না, ওটা আমার আসল পদবী নয়।
–তবে আসল পদবী কি? বলুন।
হারমিয়োন নাছোড়বান্দা, সে শুনবেই।
–এখনও যদি না বলেন তাহলে এমন মজা দেখাবো–হারমিয়োনের কণ্ঠে কৃত্রিম কোপ।
–শোন তাহলে। আমার আসল পদবী ছিল–মাগ।
মাগ? তা বদলালেন কেন?
–সে এক হাসির ব্যাপার। অভিনয় জগতে ঢুকেছি। কর্তৃপক্ষ আমার কাজ কর্মে খুব খুশী। একদিন ম্যানেজার ডেকে পাঠালেন। বললেন, অভিনয় করে তুমি যদি খেতে চাও তাহলে তোমার পদবী পালটাও। তিনি অভিধান খুলে ধরলেন আমার সামনে। দেখেছো, মাগ মানে কি? মাগ মানে বুন্ধু। বোকারাম নায়কের অভিনয় কেউ পয়সা খরচ করে দেখবে না। তোমার পদবী পাল্টে রাখা হলো কার্টরাইট।
একটুক্ষণ চুপ করে থেকে স্যার চার্লস বললেন, হারমিয়োন, আমি এতদিন দ্বিধার মধ্যে ছিলাম। কারণ তুমি আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট। ভেবেছি, তুমি অলিভারকেই বেশি ভালোবাসো। কাল প্রথম আমার মনে হলো যে তুমি আমাকেই, যখন তুমি আমাকে চার্লস বলে ডেকে উঠেছিলে।
-আপনি ঠিকই বলেছেন।
–হারমিয়োন আমার হারমিয়োন।
হারমিয়োন বাধা দিলো–এটা গির্জার জায়গা। এখানে নয়।
–যেখানে খুশী আমি তোমাকে আদর করবো।
গাড়ি গিয়ে থামলো স্যার চার্লসের ফ্ল্যাটে। চায়ের সময় হয়ে গেছে।
শ্ৰীমতী মিলারি ওঁদের অভ্যর্থনা জানালেন।
শ্ৰীমতী মিলারি, একটা সুখবর আছে। আপনাকে প্রথম জানাচ্ছি। খুব শিগগিরই আমি আর হারমিয়ান বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছি।
কথাটা শুনে শ্রীমতী মিলারি বিস্মিত হলেন। কিন্তু মুখে বললেন–খুব ভালো, আপনারা সুখী হোন।
তারপর তিনি একটা টেলিগ্রাম স্যার চার্লসের দিকে এগিয়ে দিলেন। পাঠিয়েছেন, শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট।
স্যার চার্লস হারমিয়োনের হাতে ওটি দিয়ে বললেন– দেখতে হারমিয়োন।
টেলিগ্রামটি পড়ে হারমিয়োনের চোখ নিদারুণ বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে উঠলো।
.
১৩.
শ্ৰীযুক্তা রাসব্রিজার
বেলা বারোটা নাগাদ এরকুল পোয়ারো শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েটকে সঙ্গে নিয়ে ইয়র্কশায়ারের স্যার বার্থালমিউয়ের আরোগ্য নিকেতনে এসে হাজির হলেন। একটি কার্ড বের করে স্যাটার্থওয়েট সেটি মেট্রনের কাছে পাঠিয়ে দিলেন।