আরামকেদারায় বসে আছেন এরকুল পোয়ারো ঐ চেয়ারের হাতলের ওপর বসেছিল হারমিয়োন। স্যার চার্লস এবং শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট কাছাকাছি চেয়ারে বসেছিলেন।
–অলিভারের অ্যাকসিডেন্ট সম্পর্কে আপনার ধারণা কি শ্রীযুক্ত পোয়ারো? স্যাটার্থওয়েট প্রশ্ন করলেন।
–আমি মনে করি, বার্থলমিউ এমন কোনো চিঠি পাঠাননি যেটি পেয়ে অলিভার তার বাড়িতে গিয়েছিল। কারণ এরকম বিচিত্র চিঠি স্যার বার্থালমিউয়ের পক্ষে পাঠানো অসম্ভব। আবার একথাও বিশ্বাসযোগ্য যে অলিভার ঐ ধরনের একটি চিঠি পেয়েছিল। আচ্ছা, শ্ৰীমতী উইলস একটা নতুন নাটক লিখছেন, তাই না?
–হ্যাঁ, রহস্য নাটক।
এরপর কিছুক্ষণ নীরবতার মধ্যে কাটলো।
এখন আমরা কি করবো বলুন? নিস্তব্ধতা ভেঙে হারমিয়োন বলে উঠলো।
–চিন্তা করতে পারো। আর কোনো কাজ নেই এখন। তবে তুমি গিলিংয়ে যেতে পারো। সেখানে শ্রীমতী মিলারির মা আছেন। তার সঙ্গে দেখা করতে পারো। হয়তো কোনো ভালো খবর পেয়ে যেতে পারো।
–আর আপনি কি করবেন? আপনি কি কেবল এই ঘরের মধ্যে বসে থাকবেন?
–ঠিকই বলেছে। আমি একটা পার্টি দেবো। সেখানে উপস্থিত থাকবেন শ্রীযুক্তা ডেকার্স, ক্যাপটেন ডেকার্স, শ্রীমতী উইলস, শ্রীমতী এঞ্জেলা, অলিভার আর তোমার মা লেডি মেরি। এছাড়া আমরা এখানে যাঁরা আছি তারাও থাকবেন।
উঃ, ভীষণ মজা হবে, হারমিয়োন খুশীতে উপছে উঠলো। ঠিক যেন ডিটেকটিভ গল্প। সবার মাঝখান থেকে আপনি খুনীকে ধরবেন।
–তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে নিঃসন্দেহে। কিন্তু বেশি আশা করে ফেলেছে। তারপর পোয়ারো স্যার চার্লসের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনার সঙ্গে একটু গোপন পরামর্শ আছে।
ইঙ্গিতটা বুঝতে পেরে হারমিয়োন আর স্যাটার্থওয়েট ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।
একটি সুন্দর সন্ধ্যা। সকলেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।
পরিচারক পানীয়ের ট্রে নিয়ে এলো। পোয়ারো নিজের হাতে প্রত্যেককে পানীয় পরিবেশন করলেন–আজ আমি নিতান্তই একটি সান্ধ্য সম্মিলনির আয়োজন করেছি। হালকা মনে কিছুক্ষণ একসঙ্গে সময় কাটাবো বলে। আজ আর কেউ খুন, হত্যা, বিষ, এসব আলোচনা করবেন না। এতে খিদেও নষ্ট হয়।
নাট্যকার শ্রীমতী উইলস গম্ভীর মুখে অন্যমনস্ক হয়ে একটু তফাতে বসেছিলেন। ঘরের আর এক কোণে বিষণ্ণ মুখে বসেছিলেন শ্রীমতী মিলারি।
সবাই কথা বলার মাধ্যমে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পোয়ারো ছিল এর ব্যতিক্রম।
সকলের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে কথা বলছিলেন স্যার চার্লস। হঠাৎ তার পা টলতে লাগলো। কথা যেন জড়িয়ে এলো। কার্পেটের ওপর পড়ে গেলেন তিনি, হাতের গ্লাস ছিটকে পড়লো।
ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমে সকলেই হকচকিয়ে গেল।
একসময় তীব্রকণ্ঠে আর্তনাদ করে উঠলো হারমিয়োন–চার্লস।
এঞ্জেলা ঝাঁপিয়ে পড়লেন স্যার চার্লসের বুকে। অজ্ঞান হয়ে গেলেন সঙ্গে সঙ্গে। শ্রীমতী মিলারি নিজের চেয়ারে বসে কাঁদছেন। চোখের জলে বুক ভেসে যাচ্ছে।
পোয়ারো এগিয়ে এসে স্যার চার্লসের নাড়ী দেখলেন। তারপর গম্ভীর মুখে উঠে দাঁড়ালেন।
বন্ধুগণ..কি যেন বলতে গিয়ে পোয়ারো থমকে গেলেন।
খবরদার, আপনি একটা কথাও বলবেন না। হারমিয়োন চিৎকার করে উঠলো। আপনাকে পুলিসে দেওয়া উচিত। আপনি চার্লসকে খুন করেছেন। আপনি….
পোয়ারো স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলেন–তুমি আমাকে খুনী বলে ঠিকই করেছে। তবে আমি সাধারণ খুনী নই।
এবার তিনি চার্লসের কাছে এগিয়ে গিয়ে বললেন স্যার চার্লস, আপনার অভিনয় অপূর্ব হয়েছে। আমার আন্তরিক অভিনন্দন গ্রহণ করুন।
স্যার চার্লস লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে মিষ্টি হেসে অভিনন্দন জানালেন।
হারমিয়োন হাঁ করে তাকিয়ে রইলো। শ্রীমতী মিলারির মুখে হাসি ফুটলো। শ্রীমতী এঞ্জেলার জ্ঞান ফিরে এলো।
–বন্ধুগণ…পোয়ারোর গুরু গম্ভীর আওয়াজে ঘরের সবাই সচকিত হয়ে উঠলো। স্যার চার্লস এবং আমি, দুজনে মিলে আমরা এই ছোট্ট সান্ধ্য অভিনয়ের আয়োজন করেছিলাম। এই অভিনয়ে স্যার চার্লসের কৃতিত্ব সবটুকু। এবং তার ভূমিকা কি ছিল তা-ও আপনারা বুঝতে পেরেছেন। এই পালায় আমারও একটি ভূমিকা ছিল। আপনাদের সেটা জানা দরকার। নাহলে আজকের এই আয়োজনের উদ্দেশ্য আপনারা বুঝতে পারবেন না।
এবার পোয়ারো মেঝেতে পড়ে থাকা গ্লাসটা হাতে তুলে নিলেন। তারপর বললেন, আপনারা বলছেন, এটি স্যার চার্লসের গ্লাস, তাই তো? কিন্তু আমি বলবো, না। কারণ, পকেট থেকে অন্য একটি গ্লোস বের করে বললেন, এটি হলো স্যার চার্লসের গ্লাস। যখন আপনারা সবাই স্যার চার্লসকে নিয়ে ব্যস্ত তখন খুনী অর্থাৎ আমি হাতসাফাই করে গ্লাসটা পাল্টে দিয়েছিলাম। আপনারা কেউ সেটা দেখতে পাননি।
–এতে কি প্রমাণিত হলো? হারমিয়োন জানতে চাইলো।
–এর ফলে বোঝা যাচ্ছে যে ব্যারংিটন এবং বার্থালমিউয়ের গ্লাসে বা কাপে কেন কোনো বিষ পাওয়া যায়নি অথচ তাঁদের দুজনের মৃতদেহে বিষ পাওয়া গেছে। তার মানে এই দুটি ক্ষেত্রেই হাতসাফাইয়ের ফলে কাজ বা গ্লাস বদল হয়েছিল। কিন্তু কে বদল করেছিল, সেটাই জানতে হবে।
পার্টি শেষ হলো। হতাশা, ক্লান্তি এবং বিরক্তি নিয়ে অতিথিরা ফিরে যাওয়ার উদ্যোগ করলো। পোয়ারো তাদের উদ্দেশ্যে শেষবারের মত অনুরোধ করলেন, যদি তারা দুটি হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সন্দেহজনক কিছু জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই তারা যেন বলেন। কারণ তার আশঙ্কা, হত্যাকারী তৃতীয় বার আঘাত হানার চেষ্টা করছে।