শ্ৰীমতী উইলস, স্যার চার্লস গম্ভীর ভাবে বললেন, সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে আপনার এমন কিছু যদি জানাবার থাকে যা জানতে পারলে স্যার বার্থালমিউয়ের মৃত্যু রহস্যের কিনারার ব্যাপারে সাহায্য হয়, তা হলে তা জানালে খুশী হবো।
একটু চুপ করে থেকে শ্রীমতী উইলস বললেন–হ্যাঁ, কথাটা আগে মনে পড়েনি আমার। পুলিসকে তাই জানানো হয়নি। সেই খানসামাটা যে পরে পালিয়েছে–
–হ্যাঁ, এলিস।
–ওর হাতের কবজিতে একটা জডুল ছিল। সম্ভবতঃ বাঁ হাতে। ছোটো পয়সার মাপের মতো দাগটা।
সত্যি, আপনার পর্যবেক্ষণ শক্তিকে প্রশংসা করতে হয়। এই চিহ্নটার কথা আপনিই প্রথম বললেন। কোনো মানুষকে আমরা সত্যিই ভালো করে লক্ষ্য করি না। মনে করুন, স্বর্গত ব্যারিংটনের কথা। ওঁর মধ্যে কি এমন বৈশিষ্ট্য ছিল?
–স্বর্গত ব্যারিংটনের হাত দুটি ছিল পণ্ডিতের উপযুক্ত। বাতের জন্য ঈষৎ আড়ষ্ট। কিন্তু তার আঙুলের গড়নগুলি ছিল অপরূপ আর নখগুলি সুন্দর।
-কি অভাবনীয় আপনার পর্যবেক্ষণ শক্তি! আপনি নিশ্চয়ই আগে তাকে চিনতেন?
না।
–তাকে কি হত্যা করা হয়েছিল বলে মনে হয়?
–না, তা মনে হয় না।
অতিথিদের সম্পর্কে আপনি কিছু বলবেন? স্যার চার্লস একটা একটা করে নামগুলো বলতে থাকেন।
–না, আমার এ বিষয়ে আর কিছু বলার নেই। বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো তার ঠোঁটে।
শ্ৰীমতী উইলসের হাসিটা স্যার চার্লসের মোটেও সহ্য হয় না।
–ভালো কথা, শ্রীমতী উইলস বললেন, আপনার সেক্রেটারি শ্রীমতী মিলারি কেমন আছেন? ভারি ভালো ভদ্রমহিলা, তবে বড্ড বেশি আবেগপ্রবণ।
-আবেগপ্রবণ? ছিটে ফোঁটাও আবেগ নেই তার মধ্যে।
–মানুষ আমি চিনি। যা বলেছি তা ঠিক বলেছি। আবার বাঁকা হাসি খেলে গেল তার ঠোঁটে।
–আচ্ছা, আপনি ঠিক করে ভেবে বলুন তো, খানসামার কোন হাতে জডুলটা দেখেছিলেন?
অনেক ভেবে চিন্তে বললেন, ঠিক মনে পড়ছে না। হা, হা মনে পড়েছে, ডান হাতেই দাগটা দেখেছিলাম।
স্যার চার্লসের কাজ শেষ। তিনি এবার বেরিয়ে পড়লেন। একবার পেছন ফিরে তাকালেন। শ্ৰীমতী উইলসের ঠোঁটে সেই বাঁকা হাসি তবে তৃপ্তিপূর্ণ। মনে হয় কোনো কাজ হাসিল হয়েছে তাই তার মুখে প্রসন্নতার ছাপ। ওঁর বাঁকা হাসির একটা অর্থ আছে ঠিকই। কিন্তু সেটা কি?
.
১০.
অলিভার ম্যানডার্স
বিরাট অফিস বাড়ির লিফটে করে শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট তিনতলায় সে হাজির হলেন। অলিভারের কাকা এই অফিসের মালিক। ভবিষ্যতে অলিভার তার জায়গায় বসবে। অলিভারের সুসজ্জিত অফিস কামরায় এসে প্রবেশ করলেন স্যাটার্থওয়েট।
স্যাটার্থওয়েটকে যথোচিত শিষ্টাচারের সঙ্গে অলিভার স্বাগত জানালো।
–তুমি নিশ্চয়ই মানো যে ব্যারিটনের মৃত্যু বিষক্রিয়ার ফলেই হয়েছিল বলে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ বিষয়ে তোমার কি ধারণা?
কাগজে খবরটা দেখেছিলাম বটে। কিন্তু এ ব্যাপারে আমার রুচি স্কুল নয়। একটু কাঁধ ঝাঁকিয়ে অলিভার বললো, এসব বিশ্রী ব্যাপার।
–তা বটে। তবে সূক্ষ্ম ধরনের হত্যাকাণ্ডও যে হয়, এটা বোধ হয় জানবে। এবার তিনি গম্ভীর কণ্ঠে পোয়ারোর শেখানো কথাটা বললেন, সেদিন তুমি যে অ্যাকসিডেন্টটা বানিয়েছিলে সেটা মোটেও কিন্তু সূক্ষ্ম হয়নি।
নীরবতা নেমে এলো। অলিভারের হাত থেকে কলমটা পড়ে গেল মাটিতে।
পুলিস কি সন্দেহ করছে? ধরা গলায় অলিভার বললো।
তাতো করছেই। তবে আসল ব্যাপারটা কি খুলে বলো তো।
-বলবো, সত্যি কথাই বলবো। তবে বিশ্বাস করা না করা আপনাদের ওপর নির্ভর করছে। আপনারা ভাবছেন, আমি গল্পটা নিজেই বানিয়েছিলাম। কিন্তু না, স্যার বার্থালমিউয়ের নির্দেশে এবং অনুরোধে আমি একাজ করেছিলাম।
–আশ্চর্য। স্যাটার্থওয়েট রীতিমত অবাক হলেন।
-হ্যাঁ, তিনি আমাকে একটা চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন যে একটা বিশেষ গোপন কারণে আমাকে একাজ করতে বলছেন। কারণটা আমাকে পরে বলবেন জানিয়েছিলেন। গাড়ি কিভাবে অ্যাকসিডেন্ট হবে সেটাও তার পরিকল্পনা মাফিক হয়েছিল। তবে তিনি কারণটা আমাকে জানিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাননি।
–চিঠিটা কোথায়?
–সেটা পড়ে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম।
–এমন বিচিত্র নির্দেশ তুমি পালন করতে গেলে কেন?
–কৌতূহলের বশে।
—আর কিছু ঘটেছিল যা তোমার বিরুদ্ধে যেতে পারে?
–একটা তুচ্ছ ঘটনা। বার্থালমিউয়ের বাড়িতে যে ঘরে আমি রাতে ছিলাম পরের দিন সকালে ওখানে বসে আমার জিনিসপত্রগুলো গুছিয়ে নিচ্ছিলাম। একজন পরিচারিকা আমায় সাহায্য করছিল। এমন সময় আমার ডায়েরী থেকে একটা খবরের কাগজের কাটিং মেঝেতে পড়ে যায়। সেটি পরিচারিকাটি আমার হাতে তুলে দেয়। তবে সেটির একপিঠে মানুষের দেহে নিকোটিন জাতীয় বিষের ক্রিয়া সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ ছিল। এই দিকটা পরিচারিকাটি দেখে ফেলেছিল। আর অন্য পিঠে রাজনৈতিক বইয়ের বিজ্ঞাপন ছিল।
–সেটি কি আছে?
–আছে। এই দেখুন।
কাগজটি দেখলেন স্যাটার্থওয়েট তারপর ফিরিয়ে দিলেন।
–আপনি নিশ্চয়ই আমাকে সন্দেহ করছেন? আপনি না হলে আমার কাছে এসেছেন কেন? তবে বিশ্বাস করুন, আমি নিরাপরাধ। অলিভারের বিষণ্ণ মুখ।
–আমি এসেছি একজন বন্ধুর নির্দেশে, তিনি হলেন এরকুল পোয়ারো।
–তিনি কেন ফিরলেন?
–শিকারী তো শিকারের পেছনে ছুটবেই।
–অলিভারের মুখ দিয়ে আর কথা বেরোলো না।
.
১১.
পোয়ারোর পার্টি