–একথা বলছেন কেন?
–কারণ ওখানে রোগী নাম দিয়ে কতকগুলো সুস্থ মানুষকে নিয়ে আটকে রাখে। তাদের ওপর চলে মানসিক উৎপীড়ন। তারপর ধীরে ধীরে নিজেদের স্বাভাবিকত্ব হারিয়ে ফেলে। তারা মনে করে, তারা সত্যিই অসুস্থ। মেনে নেওয়া ছাড়া ওদের কিছু করার থাকে না। তুমি নিশ্চয় অবাক হচ্ছো? আরে আমি সব জানি, আমাকেও নার্ভের রোগী বলে আমার স্ত্রী আর ডাক্তার বার্থালমিউ মিলে ষড়যন্ত্র করে ঐ কয়েদখানায় আটক করতে চেয়েছিলো। কিন্তু আমি তো বোকা ছেলে নই।
তিনি কথা বলতে বলতে পানীয় পান করছিলেন। ক্রমশঃ তার দৃষ্টি হয়েছে লালবর্ণ, গলায় জড়তা।
—-আমার ওপর আবার মেয়ে গোয়েন্দা লাগিয়েছিল। নাটক লেখেন নাকি। খুব ভালো কথা। কিন্তু সেদিন বার্থালমিউয়ের বাড়িতে ভোর রাত্রে আমার ঘরে মরতে ঢুকেছিলিস কেন?
আরো কয়েকটা মামুলি কথাবার্তা বলে হারমিয়োন ওখান থেকে চলে এলো।
সে বাস ধরবে বলে হাঁটতে লাগলো। স্যার বার্থালমিউয়ের মৃত্যু রহস্য তখন তার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
বড়ো রাস্তায় হৈ চৈ শুনে হারমিয়োন সচকিত হলো। সাপ্তাহিক সংবাদপদ্র বিক্রি হচ্ছে। কানে এলো কয়েকটা শব্দ। সে একটা কাগজ কিনে নিলো। বার্থালমিউয়ের মৃত্যুর সঙ্গে ব্যারিংটনের মৃত্যু জড়িয়ে বেশ রসালো খবর পরিবেশন করেছেন কাগজের বিশেষ প্রতিনিধি।
বাসে উঠে এক মহিলার পাশে সে বসলো। তার চিনতে দেরী হলো না যে ইনি শ্ৰীমতী মিলারি। তার চোখে জল, কোলের ওপর ঐ কাগজ, বাইরে দৃষ্টি। হারমিয়োনকে দেখে তিনি চিনতে পারলেন। চোখ মুছে তিনি কৈফিয়ত হিসাবে জানালেন যে, স্বর্গত ব্যারিংটনকে আমি অনেকদিন ধরে জানি। আমার মা এখনও গিলিং-এ থাকেন। সেখান থেকেই ব্যারিংটনের যাজক জীবন শুরু হয়। সেই সূত্রে ওদের সঙ্গে আমাদের একটা সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
কিছুক্ষণ পর শ্রীমতী মিলারি বাস থেকে নেমে গেলেন।
নিশ্চয়ই এই কান্নার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে, হারমিয়োন ভাবে। নতুবা যা শক্ত প্রকৃতির মহিলা তিনি, তীব্র আঘাত না পেলে কাণ্ডজ্ঞান শূন্য হয়ে কেঁদে ফেলতেন না।
.
০৮.
এঞ্জেলা সাটক্লিফ
শ্ৰীমতী এঞ্জেলার চটুল চাউনি, হাস্য ও লাস্যে শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েটকে বড়ই অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিল। খাতির করে তাকে নিয়ে বসালেন বসার ঘরে।
–একটা দরকারে আপনার কাছে এসেছিলাম। স্যাটার্থওয়েট বললেন।
দরকারে? ব্যথা পেলাম মনে। ভেবেছিলাম, আপনি আমার চাঁদের মত মুখটি দেখার জন্য এসেছেন। খিল খিল করে হেসে উঠলেন এঞ্জেলা।
–একটা খুনের ব্যাপারে আপনাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করবো। অবশ্য এতে আপনার ভয়ের কোনো কারণ নেই।
-খুন? ভয় পাবো না? তার মানে? এখন বুঝতে পারছি, আপনি গোয়েন্দাগিরি করতে এসেছেন। হয়তো আমাকেই খুনী বলে ধরে নিয়েছেন, এঞ্জেলা অর্থপূর্ণ হাসি হাসলেন। তাছাড়া আপনার মত মানুষেরা ওপরে শান্ত আর ভালো। ভেতরে উদ্দাম, চঞ্চল।
লজ্জায় লাল হয়ে উঠলেন স্যাটার্থওয়েট। কফি খেতে খেতে ওঁরা স্যার চার্লসকে নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন।
–চার্লসের সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক দিনের। এঞ্জেলা বলতে থাকেন। মঞ্চের বাইরেও আমাদের প্রেম ছিল। কিন্তু সেদিন ওঁর মধ্যে সংসার করার ইচ্ছে দেখিনি। তবে তার যদি ইচ্ছে হতো তাহলে আমিও ঘর, বর, সন্তান পেতাম। ঐটুকু পুঁচকে মেয়ে হারমিয়োনের ওপর আমার সত্যিই হিংসা হয়। হারমিয়োনও আমাকে পছন্দ করে না সেটা ওর দৃষ্টি দেখে বুঝতে পারি। আমি ওর কাছে হেরে গিয়েছি। এঞ্জেলার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে।
খানিকবাদে নিজেকে সামলে নিয়ে এঞ্জেলা বললেন, বলুন, আপনি কি জানতে এসেছিলেন?
–যেদিন বার্থালমিউ মারা যান সেদিন ওঁর ঐ পার্টিতে আপনি উপস্থিত ছিলেন। সেদিন আপনার নজরে এমন কিছু কি পড়েছিলো যা থেকে তার মৃত্যু কাণ্ডের রহস্য বোঝা যায়?
–এ প্রসঙ্গে যা বলার পুলিসকে বলেছি। নতুন করে কিছু বলার দরকার নেই।
–বার্থালমিউয়ের মনমেজাজ সেদিন কেমন ছিল?
–খুব ভালো।
আরো কয়েকটি প্রশ্ন করলেন শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট। কিন্তু আশা করার মত জবাব তিনি পেলেন না এঞ্জেলার কাছ থেকে।
.
০৯.
শ্রীমতী জুরিয়েল উইলস
শহর থেকে দূরে ছোট একটা বাড়িতে থাকেন নাট্যকার শ্রীমতী উইলস। ব্যঙ্গ নাটক রচনা করে তিনি যথেষ্ট খ্যাতি ও অর্থ লাভ করেছেন।
কিন্তু তিনি দেখতে সুশ্রী নন। মুখে সর্বদা একটা বাঁকা হাসি। সংসার সম্পর্কে তিনি বীতশ্রদ্ধ। যে পৃথিবীকে তিনি ভালোবাসতে পারেননি এবং যে পৃথিবী তাকে ভালোবাসতে পারেনি তাকে তিনি ব্যঙ্গের চাবুক মেরে জর্জরিত করে দিয়েছেন তার নাটকগুলিতে।
স্যার চার্লসকে দেখে স্বাগত জানালেন তিনি। তাঁর হাড্ডিসার চেহারায় লালিত্যের অভাব। তার মধ্যে চোখে পড়েছেন প্যাসনে চশমা। ফলে তাকে আরো হাস্যকর মনে হচ্ছে।
আজকাল নতুন কোনো লেখা শুরু করেছেন নাকি?
–হ্যাঁ, একটা রহস্য নাটক লিখছি, সম্পূর্ণ নতুন ধরনের।
হঠাৎ এমন ইচ্ছে হলো কেন?
মনে হয় দু দুটো রহস্যময় মৃত্যু খুব কাছ থেকে দেখার জন্যে।
–কিন্তু ও দুটোর রহস্যের কোনো কিনারা তো এখনও হয়নি।
–তাতে কি হয়েছে? আমি যা দেখেছি ও জেনেছি সেইটুকু নাটক লেখার পক্ষে যথেষ্ট। তারপর বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার মিশেল ঘটবে। নাটক তার নিজস্ব ধারায় এগিয়ে যাবে।