না তো?
–আপনি গিলিংয়ে ছিলেন কখনো?
গিলিং? না।
–আচ্ছা, ডাক্তার বার্থালমিউয়ের মৃত্যুটাও আশ্চর্য রকমের তাই না?
–ঠিকই বলেছো।
–খবরের কাগজে বেরিয়েছিল কি কি কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আপনি নিশ্চয়ই পড়েছেন?
–না, সময় হয়নি। যা কাজের চাপ। কি বেরিয়েছিল কাগজে?
ডাক্তার বাথলমিউ বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছিলেন।
–বিষ!!! শ্রীযুক্তা ডেকার্স বড় বড় চোখ মেলে তাকালেন।
এমন সময় একজন প্রৌঢ় ভদ্রলোক স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে দোকানে ঢুকলেন। বোঝা গেল খুব ধনী এবং নিয়মিত এখানে আসেন। শ্রীমতী ডেকার্স ব্যস্ত হয়ে তার দিকে এগিয়ে গেলেন। হারমিয়োন ওখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে দোকান থেকে বেরিয়ে এলো।
সে ঐ বনেদী দোকান পাড়াতে শো কেস দেখে দেখে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে দিলো।
ঘড়ির দিকে তাকালে। একটা বাজতে পনেরো। তার মানে লাঞ্চ হতে এখনো পনেরো মিনিট বাকি।
এ তল্লাটের সবচেয়ে বড় অভিজাত রেস্টুরেন্ট রীজের উল্টোদিকের ফুটপাথে পায়ে পায়ে এসে দাঁড়ালো।
শ্ৰীযুক্তা ডেকার্সের দোকানে যে মেয়েটিকে কোকো দিয়ে যেতে দেখেছিল তাকে সে লক্ষ্য করলো। ডোরিস একটা সস্তা রেস্টুরেন্টের দিকে এগোচ্ছে।
হারমিয়োন তার সামনে এসে দাঁড়ালো।
–তুমি আমাকে চেনো না, ডোরিস। চলো রীজে যাই। পেট ভরে খাওয়া যাবে আবার পরিচয়ও হবে।
ডোরিস আপত্তি করলো না। বীজের মত রেস্টুরেন্টে খাওয়ার আকর্ষণ। এছাড়া কৌতূহল তো আছেই।
খেতে খেতে হারমিয়োন নিজেকে ডোরিসের মত খেটে খাওয়া সাধারণ মেয়ে বলে পরিচয় দিলো। একটু আধটু লেখে। দোকান কর্মচারিণীদের নিয়ে একটা লেখার ব্যাপারে সে ব্যস্ত। তাই ডোরিসের সাহায্য সে আশা করে।
আলোচনা অন্তরঙ্গতায় এসে পৌঁছোলে শ্রীমতী ডেকার্সের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে, ডোরিস জানালো, ভদ্রমহিলার মুখে মধু বুকে বিষ। সবসময় আমাদের পেছনে লেগে থাকবে। এক মিনিট দেরী করে ঢুকেছো তো কি রেগে আগুন। পয়সা করেছেন যথেষ্ট তবে
তবে কি?
তুমি আবার কাউকে বলে দিয়ো না। দোকানের মর্যাদা বাড়ানোর জন্যে ঘটা করে কয়েকটা নতুন বিভাগ খুলেছেন। ফলে আর্থিক ব্যাপারে টানাটানি পড়েছে।
–তাঁর স্বামীর সঙ্গে কেমন সম্পর্ক?
খুব খারাপ। পানদোষ তো আছেই। এছাড়া আর একটা দোষ আছে যা নিয়ে সম্প্রতি দুজনের মধ্যে অশান্তি চরমে উঠেছিল। তুমি কাউকে বলো না। তাহলে আমার চাকরি আর থাকবে না।
–তুমি এ নিয়ে একদম চিন্তা করো না ডোরিস। তুমি বল।
–কর্তার ওপর শোধ নেওয়ার জন্য কর্তী বেশ বড় ঘরের, বয়সে তাঁর চেয়ে ছোট এক বন্ধু জুটিয়ে ফেললেন। কর্তা মুখ ভার করে রইলেন। ভদ্রলোক রোজ বাড়িতে দোকানে আসতো। তারপর, আসা বন্ধ হয়ে গেল। শুনলাম নার্ভের অসুখে তিনি ভুগছেন। নার্ভ স্পেশ্যালিস্ট স্যার বার্থালমিউয়ের উপদেশ মতো তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি এ ডাক্তার মারা গিয়েছেন একটা পার্টিতে। আমাদের কর্তা ও কত্রী দুজনেই সেই পার্টিতে ছিলেন।
একসময় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ডোরিস বিদায় নিলো– তোমার সঙ্গে আলাপ করে খুব ভালো লাগলো। দোকানে এসো, এখন চলি।
হারমিয়োন তার নোট বইয়ে সংক্ষেপে সব লিখে নিলো। এইসব কিছু পোয়ারোকে জানাতে হবে। তার আগে ক্যাপ্টেন ডেকার্সের সঙ্গে দেখা করতে হবে।
.
০৭.
ক্যাপ্টেন ডেকার্স
সেন্ট জেমস হাউসের তিন নম্বর ফ্ল্যাটে থাকেন ডেকার্স দম্পতি।
সাড়ে পাঁচটা নাগাদ গাড়ি থেকে নেমে ক্যাপ্টেন ডেকার্সকে তার ফ্ল্যাটে ঢুকতে দেখে হারমিয়োন এগিয়ে গেলো।
হারমিয়োনকে ন্যাপ্টেন ডেকার্স চিনতে পারলেন। তাকে ঘরে ডেকে বসতে বললেন। তারপর তিনি ভেতরে গেলেন।
হারমিয়োন আপনমনে ভাবছিল, ভদ্রলোকের স্বরে মনে হচ্ছে উনি মদ্যপ। তার মানে মদ্যপানের কালাকাল নেই তাঁর কাছে। মাত্র দুবার তাকে তিনি দেখেছেন। তাতেই তাকে কি করে স্পষ্ট ভাবে মনে রাখলেন?
ছটা দশে তিনি হাত মুখ ধুয়ে সান্ধ্য পোশাক পরে বসার ঘরে এসে ঢুকলেন।
–ছটা বেজে গেছে। সিন্ধিয়া এখনো এলো না। আমি বরং ওকে একটা ফোন করি।
-না না, তাকে ব্যস্ত করে লাভ নেই। আমি বরং আর একদিন এসে ওঁর সঙ্গে দেখা করবো।
–বেশ, তবে তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। তুমি এই প্রথম আমাদের বাড়িতে এলে। এক কাপ চা-ও যদি না খেয়ে চলে যাও, তাহলে আমার ভীষণ খারাপ লাগবে। তাই যদি কিছু না মনে করো, তাহলে আমার সঙ্গে ক্লাবে যেতে পারো।
–অবশ্য খাওয়ার দরকার নেই আমার। তবে আপনার সম্মান রক্ষার জন্য আমি আপনার সঙ্গে ক্লাবে যেতে রাজি। হারমিয়োন হেসে জবাব দিলো।
ক্লাবের একটা ঘরে গিয়ে ওরা দুজনে বসলো। ক্যাপ্টেন ডেকার্স খাবার অর্ডার দিলেন এবং সেই সঙ্গে নিজের জন্যে কড়া এবং হারমিয়োনের জন্য ঠান্ডা পানীয় আনতে বললেন।
দুজনের নানাধরনের কথার মাঝখানে স্বাভাবিক ভাবে দুটি মৃত্যুর ঘটনা এসে পড়লো।
–যাজক ভদ্রলোকের মৃত্যুর ব্যাপারটা আকস্মিক হলেও বিস্ময়জনক বটে। ক্যাপ্টেন ডেকার্স বললেন।
–আর ডাক্তারের মৃত্যুও তো অবাক হওয়ার মত ছিল, তাই নাকি?
হারমিয়োন, ডাক্তারদের খুন হওয়াটা আশ্চর্যের নয়। অনেক কারণে ওদের অনেক শত্রু সৃষ্টি হয়। অন্যায় তারাও করে। আর ডাক্তার বার্থালমিউ মোটেও ভালোমানুষ ছিলেন না। আর ওর যে স্যাটেরিয়াম না হাসপাতাল, ওটা আসলে কি? ওটা একটা কয়েদখানা।