না, কেউ গেলে আমার নজরে পড়তো।
–তুমি এখন আসতে পারো।
সকলকে অভিবাদন জানিয়ে টেম্পল ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
ময়না তদন্তে জানা গেছে যে মৃতদেহে বিষ ছিল, তাই সন্দেহ হয়, গ্লাসটায় নিশ্চয়ই কেউ বিষ দিয়েছিল। কখন সেই বিষ মেশানো হয়েছিল সেটা জানতেই হবে। বললেন স্যাটার্থওয়েট।
–ঠিক বলেছেন আপনি। পোয়ারো বললেন। তবে বিষ দেওয়ার ফলে আমাদের সন্দেহের চক্রটা ছোট হয়ে গেল। অর্থাৎ পার্টির বাইরের কাউকে এ ব্যাপারে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই।
– যদি নিকোটিন না হয়ে অন্য কোনো বিষ হতো তাহলে আপনি কি সন্দেহ করতেন?
–তাহলে ধরে নিতাম যে এমন কোনো বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে যেটা দেরীতে কাজ হয়। এমনভাবে সময় হিসেব করে সেটা দেওয়া হয়েছিলো যে পার্টিতে আসার পর বিষের কাজ শুরু হয়।
– তাহলে কাকে সন্দেহ করতেন?
–একজন্যকে সবচেয়ে আগে সন্দেহ করতাম। তিনি হচ্ছেন শ্রীযুক্তা ব্যারিংটন। হারমিয়োন খেঁকিয়ে উঠলো– আপনি আর গোয়েন্দাগিরি করবেন না। জানেন, ওঁদের সম্পর্ক কত সুন্দর ছিলো।
-হত্যা জিনিসটা এমনই বিশ্রী যে সত্য হলেও সুন্দর নয়। তবে হারমিয়োন, তুমি বৃথাই রাগ করছে। এক্ষেত্রে ব্যারিংটন যেভাবে মারা গিয়েছেন তাতে শ্রীযুক্তা ব্যারিংটনকে সন্দেহ। করা চলে না।
যাক, ওসর কথা বাদ দিন। হারমিয়োন বললো, এবার বলুন, আপনি কিভাবে কাজ করতে চান।
–যে ভাবে কাজ করলে শ্রীমতী হারমিয়োন আমার ওপর খুশী থাকবে সেই ভাবে আমি কাজ করতে চাই।
–বারে, আপনাকে আমি…হারমিয়োন ইতস্ততঃ করে জবাব দিল।
–শোনো, প্রধান ভূমিকায় থাকবে তুমি আর স্যার চার্লস। আর আমি থাকবো নেপথ্যে। বলা যেতে পারে, পরিচালকের ভূমিকায় থাকবেন স্যার চার্লস, আর তুমি ও স্যাটার্থওয়েট হবে সহকারী পরিচালক। আমার প্রতিজ্ঞা আমি কখনোও প্রকাশ্যে কাজ করবো না। আমার ধারণা, পৃথিবীতে এমন কোনো সমস্যা নেই যা চিন্তা দিয়ে সমাধান করা যায় না।
বুঝলাম না।
–সময় মত বুঝবে।
–আপনি ভীষণ হেঁয়ালি করে কথা বলেন। হারমিয়োন বললো। তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে লাফিয়ে উঠলো, বড্ড দেরী হয়ে গেছে।
হারমিয়োনকে সঙ্গে নিয়ে স্যার চার্লস বেরিয়ে গেলেন।
.
০৫.
শ্রমবিভাগ
অবশেষে আপনার জালে মাছ ধরা পড়লো। পোয়ারো বললেন, তার মানে আপনি চেয়েছিলেন যে এই কেসটা আমি তদারকি করি তাই তো?
–হ্যাঁ, স্যাটার্থওয়েট জবাব দিলেন।
–আর সেই উদ্দেশ্য নিয়েই আপনি সেদিন আমায় পুরোনো খবরের কাগজ থেকে স্যার বার্থালমিউয়ের মৃত্যু সংবাদ দেখিয়েছিলেন। ঠিক বলেছি?
–হ্যাঁ। কিন্তু এই দুটো হত্যা রহস্যের বা এই দুটো অপরাধ সম্বন্ধে আপনার ধারণা কি, শ্ৰীযুক্ত পোয়ারো?
এক্ষেত্রে রহস্য বা অপরাধ একটাই। একে অপরের পরিপূরক। এই দুটি হত্যাকাণ্ডের পিছনে কি উদ্দেশ্য আছে এবং অপরাধী কিভাবে সেই কাজ হাসিল করেছে সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে গ্লাস বা কাপ পরীক্ষা করে কোনো ক্ষেত্রেই বিষ পাওয়া যায়নি, অথচ মৃতদেহে বিষ ছিল। মজার ব্যাপার দেখুন, একই জিনিস সকলে খেয়েছিলেন, অথচ আর কারো কিছু হয়নি।
–প্রথম ও দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ডের মধ্যে একটু তফাৎ আছে শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট। পোয়ারো বলতে থাকেন, প্রথম ক্ষেত্রে মনে হয় না, যে কেউ ব্যারিংটনকে খুন করতে পারতো। ইচ্ছে করলে স্যার চার্লস যে কোনো একজন অতিথিকে হত্যা করতে পারতেন বা টেম্পল ইচ্ছে করলে শেষের গ্লাসটিতে বিষ মিশিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু ব্যারিংটন শেষ গ্লাসটি নেননি। যত ভাববেন তত মনে হবে ব্যারিংটনের মৃত্যু আকস্মিক এবং স্বাভাবিক। কিন্তু ময়না তদন্তের রিপোর্ট সব জট পাকিয়ে দিয়েছে।
..দ্বিতীয় ক্ষেত্রে যে কেউ বার্থালমিউয়ের কফির কাপে বিষ মিশিয়ে দিতে পারতো, এটা আপনাকে একটা পরীক্ষার সাহায্যে পরে বুঝিয়ে দেবো। তার আগে আপনি একটা কথা জেনে রাখুন। আপনি আমার কথাটা বুঝবেন কারণ আপনার মনস্তত্ত্ব ও সহানুভূতিপ্রবণ মন আছে।
–বুঝলাম। এখন কথাটা কি বলুন?
–এই কেসের অনুসন্ধানের ব্যাপারে মুখ্যভূমিকা আমি নিতে চাই না। ওটা স্যার চার্লসের মতো অভিনেতার জন্য থাক। এতে উনি অভ্যাস্ত। তাছাড়া আর একজনও খুশী হবে।
–বাঃ, ভারি চমৎকার বলেছেন। স্যাটার্থওয়েট হাসতে হাসতে বললেন।
–আসলে প্রেমিক-প্রেমিকাদের ওপর আমার একটু দুর্বলতা ও সহানুভূতি আছে। এ ব্যাপারে কাউকে সাহয্যে করতে পারলে খুশী হই। শ্ৰীমতী হারমিয়োনের মনোভাব আমার অজানা নয়। এবং তার প্রতি কার হৃদয় সমর্পিত, তাও আমি বুঝি।
তাই বলছি, এই রহস্যের সমাধান যখন হয়ে যাবে তখন আপনারা দেখবেন, স্যার চার্লসই এর সমাধান করেছেন। আমি মাঝে মাঝে দু-একটা কথা বলবো। ইঙ্গিত দেবো এই পর্যন্ত। আসলে জীবনে অনেক সম্মান ও যশ পেয়েছি। এই দুটির প্রতি আমার আর কোনো মোহ নেই।
পোয়ারোর কথা শুনে স্যাটার্থওয়েট ভাবলেন, ভদ্রলোক নিশ্চয়ই দাম্ভিক কিন্তু সত্যবাদী। মুখে বললেন, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো আপনাকে?
– বলুন।
— আপনি কেবল কৌতূহলের টানে এই পর্যন্ত ছুটে এসেছেন?
কৌতূহল তো আছেই। তাছাড়া আছে সত্যান্বেষণের নেশা। সত্যের মতো এমন কৌতূহলোদ্দীপক, এমন বিচিত্র, এমন সুন্দর আর কিছুই নেই।