–আমি লণ্ডনে শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েটের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম যে উনি লুমাউনে আছেন। তাই দেরী না করে চলে এলাম। আপনাদের মধ্যে নিশ্চয়ই একটাই আলোচনা চলছিল, হারমিয়োন বললেছি। পোয়ারো কথাশ করেছিলেন। আনবে, কিন্তু
–কিন্তু আপনি, হারমিয়োন বললো, বিশেষ কোনো কারণে নিশ্চয়ই এসেছেন?
— হ্যাঁ, ভুল স্বীকার করতে এসেছি। পোয়ারো কথাটা বলে স্যার চার্লসের দিকে তাকালেন। ব্যারিংটনের মৃত্যু সম্পর্কে স্যার চার্লস সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। আমি সেটাকে গুরুত্ব দিইনি। কারণ আমি জানতাম ব্যারিংটনের মৃত্যু হয়েছে আকস্মিক ভাবে, কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু স্যার বার্থালমিউয়ের মৃত্যু আমার ধারণা পাল্টে দিয়েছে। আপনারা যদি অনুমতি করেন তাহলে আমি আপনাদের সাহায্য করতে রাজী আছি। আর আপনারা যদি আপত্তি করেন তাহলে আমি আবার ফিরে যাবো।
— ফিরে যাবেন কেন? হারমিয়োন বাদে বাকি দুজন একসঙ্গে বলে উঠলেন।
–তুমি কিছু বললে না? পোয়ারো হারমিয়োনকে জিজ্ঞেস করলেন।
সে চুপ করে মাথা নামিয়ে বসে রইলো। তার নীরবতা বুঝিয়ে দিলো যে সে পোয়ারোর সাহায্য চায় না।
স্যাটার্থওয়েট কারণটা বুঝলেন। রহস্যের টানে হারমিয়োন আসেনি। সে এই সুযোগে স্যার চার্লসের মন জয় করে নিতে চায়। এটা হারমিয়োনের সাধনা, তৃতীয় ব্যক্তি এসে তার সাধনায় ব্যাঘাত ঘটাবে সেটা সে হতে দিতে চায় না। অবশ্য সে জানে, স্যাটার্থওয়েট আছে দর্শকের ভূমিকায়। তার কাজে কোনো বাধা দেবে না। আসল ভূমিকা গ্রহণ করবে পোয়ারো, ফলে হারমিয়োনের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে।
ধীরে ধীরে একসময় মাথা তুললো হারমিয়োন। সে কি বলবে, আমার স্বপ্নকে সার্থক করে তুলতে দিন। আপনি এখনই চলে যান। কিন্তু সে কথা বলতে পারলো না। শিষ্টাচারে বাধলো। হেসে বললো, আমাদের সঙ্গে আপনি থাকলে আমি খুশী হবো।
.
০৪.
পোয়ারোর ভূমিকা
–এখন থেকে আমরা তাহলে পরস্পরের সহকর্মী হলাম। পোয়ারো বললেন। এবার হালের খবরগুলো আমার জানা দরকার।
শ্ৰীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট আপনাকে সব বুঝিয়ে বলতে পারবেন। হারমিয়োন বললো।
অতএব শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট সুন্দর ভাবে গুছিয়ে সব কিছু বললেন। কি কি জেনেছেন, কি কি দেখেছেন ইত্যাদি।
সব শুনে পোয়ারো খুব খুশী হলেন। স্যাটার্থওয়েটকে ধন্যবাদ জানালেন। বললেন, যদি আগে বার্থালমিউয়ের মৃত্যু হতো, পরে ব্যারিংটন মারা যেতেন এই রহস্য সমাধানের কাজ অনেক সোজা হয়ে যেতো।
–একথা বলার কারণ?
–কারণ হলো, স্যার বার্থালমিউ একজন নামকরা নার্ভ স্পেশালিস্ট ছিলেন। তাদের অজ্ঞাতসারে অনেক শত্রু সৃষ্টি হয়ে থাকে। ডাক্তারের একটি কথার ওপর রোগীর সবকিছু নির্ভর করে। কোনো রোগীর আকস্মিক মৃত্যুর পেছনে যদি কোনো রহস্য থাকে, তাহলে ডাক্তার সহজেই তা ধরতে পারেন। ফলে ডাক্তারদের অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠে। এবার ধরে নেওয়া যেতে পারে হত্যাকারী প্রথম পার্টিতে বার্থালমিউকে খুন করতে চেয়েছিল এবং সেই মত পানীয়তে বিষ মিশিয়েছিল। কিন্তু ঘটনাচক্রে ঐ গ্লাসটি তুলে নিয়েছিলেন ব্যারিংটন। ফলে তার মৃত্যু ঘটলো।
— আপনার ব্যাখ্যা অতি চমৎকার। স্যার চার্লস বললেন। কিন্তু এখানে একটা ব্যাপার লক্ষণীয়। পানীয়ের গ্লাস যখন পরিবেশন করা হয় তখন ট্রে থেকে অনেকেই খুশী মতো গ্লাস তুলে নেন। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌঁছনো কি সম্ভব?
একটু চুপ করে থেকে পোয়ারো বললেন– আপনার যুক্তি ঠিক। আচ্ছা, সেদিন পানীয় পরিবেশন কে করেছিলৈন?
পানীয় প্রস্তুত করেছিলাম আমি। আর টেম্পল নামে একজন পরিচারিকা পরিবেশন করেছিলো।
–পানীয় প্রস্তুতের কাজে, বলতে পারেন মিশ্রণের কাজে স্যার চার্লসের জুড়ি মেলা ভার। এই বিদ্যে রপ্ত করে এসেছেন তিনি ফ্রান্স থেকে। বললেন– শ্ৰীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট।
– আপনার কথা বিশ্বাস করতে পারলাম না শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট। গম্ভীর ভাবে পোয়ারো বললেন।
–তার মানে?
–স্যার চার্লস যে অতি সুন্দর পানীয় তৈরি করতে পারেন সেটা চোখে দেখে এবং চেখে দেখতে চাই।
সকলে একসঙ্গে হেসে উঠলেন।
–এবার বলুন টেম্পল নামের পরিচারিকাটি এ বাড়িতে কিভাবে বহাল হলো?
–আমার সেক্রেটারি শ্রীমতী মিলারি এ সব দেখাশোনা করেন। টেম্পলকে তিনিই কাজে নিযুক্ত করেছিলেন।
–সেদিন খাবার টেবিলে তিনি তো বসেছিলেন তাই না?
সাধারণতঃ উনি কি বসেন?
–না, তিনি সেদিন নিজে থেকেই টেবিলে বসতে চেয়েছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে টেবিলে অতিথির সংখ্যা হতো তেরো।
এবার টেম্পলের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাকে ডাকা হলো।
বাইশ-তেইশ বছরের ছিমছাম চেহারার টেম্পল ঘরে এসে ঢুকলো। সকলকে অভিবাদন জানিয়ে স্যার চার্লসের দিকে তাকিয়ে রইলো।
ইনি এরকুল পোয়ারো। স্যার চার্লস বললেন, তোমাকে কয়েকটা প্রশ্ন করবেন। পোয়ারো প্রথমে তাকে কয়েকটি মামুলি প্রশ্ন করলেন। তারপর তিনি জানতে চাইলেন, ট্রে থেকে স্বর্গত ব্যারিংটন নিজে হাতে গ্লাস তুলে নিয়েছিলেন কিনা?
–আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমিই তার হাতে গ্লাস তুলে দিয়েছিলাম। উনি গ্লাসটি হাতে নিয়ে সামনের টেবিলে নামিয়ে রেখেছিলেন।
–সেই টেবিলের কাছাকাছি তখন কেউ যায়নি?