–হ্যাঁ, পেয়েছি। পুলিস জানিয়েছে, নিকোটিন জাতীয় বিষক্রিয়ায়…বলতে বলতে শ্ৰীযুক্তা ব্যারিংটন চোখের জল মুছলেন। হারমিয়োন ওঁকে জড়িয়ে ধরলো।
— আর একটা কথা আপনাকে জানাই, এখান থেকে আমি চলে গিয়েছিলাম দক্ষিণ ফ্রান্সে। ওখানে বসে আমি খবরের কাগজ থেকে আমার বন্ধু ডাক্তার বার্থালমিউয়ের মৃত্যু সংবাদ জানতে পারি। তবে মৃত্যুটা স্বাভাবিক নয় এবং দুটি মৃত্যুর ঘটনা একই রকম। তারও মৃত্যুর কারণ হিসাবে পুলিস নিকোটিন জাতীয় বিষক্রিয়ার কথা উল্লেখ করেছে।
– শ্ৰীযুক্তা ব্যারিংটন, আপনার কাছে আমি প্রতিজ্ঞা করছি, এই রহস্য উদঘাটন করবোই।
–প্রার্থনা করি, আপনার চেষ্টা যেন সার্থক হয়।
— সেই জন্য আপনার সাহায্য প্রয়োজন।
— বলুন, কি ধরনের সাহায্য আশা করেন?
স্যার চার্লস একের পর এক প্রশ্ন করে জেনেছিলেন, শ্রীযুক্ত ব্যারিংটন সিগারেট খেতেন কিনা, কোনো শত্রু তাঁর ছিল কিনা, আর্থিক সঙ্গতি কেমন ছিলো ইত্যাদি ব্যাপারে।
শ্ৰীযুক্তা ব্যারিংটন, আপনার কি মনে পড়ে, ঘটনার আগের দিন পার্টির কোনো লোকের সঙ্গে আপনাদের দেখা হয়েছিল কিনা?
–তার আগের দিন হারমিয়োন আর অলিভার এসেছিল। হারমিয়োনের মা-ও এসেছিলেন। এটা তো প্রায়ই রোজের আসা। আর কেউ আসেনি।
— পার্টির কাকে কাকে চিনতেন?
–বিশেষ কাউকে চিনতাম না। তবে ডাক্তার বার্থালমিউ, অভিনেত্রী এঞ্জেলা সাটক্লিফ আর নাটক লেখিকা শ্ৰীমতী উইলসের নাম শুনেছিলাম।
– গিলিংয়ে, মানে যেখানে আপনাদের বিয়ে হয়েছিলো, সেখানেও খোঁজ খবর নিতে হবে। আসল রহস্য আমাকে জানতেই হবে।
.
০২.
লেডি মেরি
শ্ৰীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট স্যার চার্লসের অতিথি হিসাবে কুলায় অবস্থান করছিলেন, হারমিয়োন আর স্যার চার্লস বেরিয়ে যেতেই তিনি পায়ে পায়ে এসে হাজির হলেন হারমিয়োনদের বাড়িতে।
লেডি মেরি শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েটকে সাদরে অভ্যর্থনা জানালেন। চা পরিবেশন করলেন। ধীরে ধীরে দুজনে জমিয়ে গল্প শুরু করলেন। ওঁরা দুজনেই একই রকম জীবনদর্শনে বিশ্বাসী। তাই শ্ৰীযুক্ত স্যাটার্থওয়েটকে পারিবারিক বন্ধু হিসাবে মেনে নিতে লেডি মেরির দেরী হলো না।
কথায় কথায় হারমিয়োনের কথা উঠলো। লেডি মেরি বললেন– মেয়েটা কি যে রহস্যভেদের চেষ্টায় মেতেছে জানি না। বড্ড খেয়ালী মেয়ে। তবে স্যার চার্লস সঙ্গে আছেন জেনে একটু বাঁচোয়া।
স্যার স্যাটার্থওয়েট চুপ করে থেকে ভাবতে থাকেন, হারমিয়োন কি সত্যিই দুটি হত্যাকাণ্ডের রহস্যভেদেই ব্যস্ত রয়েছে?
–শ্রীমতী ব্যারিংটনের কথা ভেবে ভীষণ দুঃখ হয়। বলতে থাকেন লেডি মেরি। অবস্থা ওঁদের কোনোদিন ভালো ছিল না। যুদ্ধে ওঁদের একমাত্র ছেলে মারা যায়। তবু তাদের সংসারে সুখ ছিলো। সব সময় ওঁদের ঠোঁটে হাসি দেখেছি। হারিমযোনকে ওঁরা দুজনেই ভালোবাসতেন।
কথায় কথায় শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট জানতে পারলেন যে বিবাহিত জীবনে লেডি মেরি কিন্তু সুখী ছিলেন না। অবশ্য ভালোবেসে বাড়ির অমতে তিনি বিয়ে করেছিলেন।
এবার স্যাটার্থওয়েট অলিভার সম্পর্কে দু চারটি প্রশ্ন করলেন।
–ছেলেটি এমনিতে বুদ্ধিমান। তবে ও এমন সব কথাবার্তা বলে যাতে মনে হয় যে, ঐতিহ্য বলে কোনো কিছু জানতে সে রাজী নয়। স্বৰ্গত ব্যারিংটনকে সে কটু কথা বলতেও পেছপা ছিল না। ওর ধারণা ছিল, ধর্ম অতি বাজে জিনিস। গির্জাগুলোর প্রয়োজন নেই।
–সেকি ব্যারিংটন রেগে যেতেন না?
–না, একটু বিরক্ত হতেন না, বরং বলতেন, পৃথিবীর সমস্ত গির্জা যদি তুমি বন্ধ করে দাও, সব যাজকদের বন্দী করো, তারপরেও ঈশ্বর যেমন আছেন তেমনিই থাকবেন।
– সুন্দর কথা।
–হাঁ, তবে মনে হয় কাকা-কাকিমার বেশি আদরেই অলিভারের এই হাল হয়েছে। কারণ ও জন্মানোর পরেই ওর মা মারা যান। তারপর থেকে কাকার কাছে মানুষ হয়।
–আপনি তাহলে জামাই হিসাবে অলিভারকে নির্বাচন করছেন না? হেসে বললেন স্যাটার্থওয়েট।
— না, লেডি মেরি দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন। অবশ্য মেয়ে যদি মেনে নিতো তাহলে আমি হয়তো আপত্তি করতাম না। কিন্তু এখন আমার দৃঢ় বিশ্বাস, হারমিয়োন এমন করবে বলে মনে হয় না।
.
০৩.
পোয়ারোর পুনঃপ্রবেশ
কুলারের বৈঠকখানা ঘর। আরামপ্রদ উচ্চ। স্যার চার্লস, শ্রীযুক্ত স্যাটার্থওয়েট ও হারমিয়োনের মধ্যে কথা হচ্ছিল।
হারমিয়োন বললো –আমরা এখনো আপরাধী কে, জানতে পারিনি ঠিকই। কিন্তু রহস্যটা আমাদের কাছে আগের মত ঝাপসা আর নেই। এটাই আমাদের লাভ।
স্যার চার্লস ওর বক্তব্য বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইলেন।
–ব্যারিংটনের হত্যার পেছনে কয়েকটি কারণ আছে বলে আমরা ধরে নিয়েছিলাম। সেগুলি হতো, অর্থলাভ, প্রতিহিংসা এবং ত্রাস।
– হারমিয়োন, তুমি খুব ভালো বলেছো, স্যার চার্লস বললেন। এখন প্রথম দুটো আমরা বাদ দিতে পারি। তাহলে পরে যে কারণটি সেটি হলো ভয়। ব্যারিংটনকে না মেরে ফেলা পর্যন্ত কেউ একজন নিরাপদ বোধ করছিল না। এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে আমরা কিভাবে ধীরে ধীরে সত্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
— হ্যাঁ, এবার বুঝতে পারছি। স্যার চার্লস হেসে জবাব দিলেন।
ওঁদের কথার মাঝখানে সহাস্য বদনে শ্রীযুক্ত পোয়ারো এসে ঢুকলেন। তার আকস্মিক আবির্ভাবে ঘরের অন্যান্যরা মনে হয় বিস্মিত ও নির্বাক হয়ে গিয়েছেন।