জ্যাপ বললেন যদি মেয়েটি তার জায়গায় থেকে না উঠে থাকে তাহলে মাদাম গিজেলের ঘাড় তাক করে কাটাটা ছোঁড়া সম্ভব নয়। তাহলে তাকে সন্দেহ থেকে বাদ দেওয়া যেতেই পারে।
নরম্যান গেল উল্টোদিকে ১২ নম্বর আসনে বসেছিল। ওর পক্ষে সাপের বিষ জোগাড় করার সম্ভাবনা বেশি। জ্যাপ বলে চললেন, তার ধারণা নরম্যান এমন জায়গায় যাতায়াত করে যেখান থেকে এই ওষুধপত্র জোগাড় করা সম্ভব, তার হয়তো কোনো বিজ্ঞানী বন্ধু আছে। কিন্তু যুক্তি প্রমাণের কথা বিচার করলে ওকে বাদ দেওয়া যায়। প্রসাধন কক্ষে ফেরার সময় সে মাঝখানে এই পর্যন্ত এই যে দেখুন এর বেশি এগোতে পারে না। আর ওখান থেকে বাঁকানল ছুঁড়ে মহিলার ঘাড়ে কাটা ফুটিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। এবং কাটা তার পোষমানা নয় সেটা বললেই সমকোণে ঘুরে গিয়ে বিধতে পারে না, তিনজন নকশার উপর এটি ঝুঁকে পড়ে দেখছিলেন।
এরপর ১৭ নম্বর আসনে মিসেস ভেনেসিয়ার প্রতি নজর পড়ল। এর পক্ষে মাদাম গিজেলের কাছ থেকে টাকা ধার নেওয়া অসম্ভব নয়। এর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া উচিত জ্যাপ বললেন, এর আগা থেকে তীর ছোঁড়া সম্ভব। তাহলে মাননীয়া ভেনেসিয়ার পক্ষে কোণাকুণি তীর ছোঁড়া সম্ভব, অবশ্য এতে সফল হওয়া অসম্ভব। কারণ তিনি একজন মহিলা যিনি বন্দুক ছুঁড়তে পারেন, অভ্যাস ঠিক থাকলে খুন করতে পারা যায়। পৃথিবীর অদ্ভুত জায়গায় বিরাট শিকার করার ফলে তার যেসব বন্ধু আছে তাদের থেকে সন্দেহজনক বলে জিনিস জোগাড় করেছেন। ব্যাপারটা আজগুবি মনে হচ্ছে এর পেছনে কোনো যুক্তি নেই। ফার্নে এতে সহমত। তবে তাকে ফার্নে খুনী মানতে রাজী নয়।
লেডি হরবেলি লা পিনেতে জুয়া খেলতে গিয়ে অগাধ টাকা খুইয়েছেন। তিনিও মাদাম গিজেলের মতো ঘুঘু মেরেছিলেন। ফার্নে এই খবর দিলেন। যাতে সকলেই একমত। তিনি নিশ্চয়ই তার সামনের ওপর হাঁটু গেড়ে বসে ২৩ নম্বর আসন থেকে এই কাজ করেননি। অতএব সন্দেহের তালিকা থেকে ইনিও বাদ।
নয় ও দশ নং আসনে মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো ও ব্রায়ান বসেছিলেন। এরকুল পোয়ারো বললেন, তার পেট ব্যথা করছিল।
এবার সন্দেহ হল ডাঃ ব্রায়ানের উপর। তিনি একজন হোমরাচোমরা ডাক্তার, তিনি ফরাসি মহিলার কাছ থেকে টাকা ধার করবেন এটা মনে হয় না। ডাঃ ব্রায়ানের পক্ষে এ কাজ করা অসম্ভব কিছু নয়। তার বড়ো বড়ো গবেষকদের সঙ্গে চেনাজানা খুব স্বাভাবিক। সেই সূত্রেই তিনি হয়তো সহজেই এক শিশি সাপের বিষ পাচার করেছেন।
পোয়ারো প্রতিবাদ করলেন, বাগানের ঝুমকো ফুল ভোলার মতো নয় এইসব জিনিস! তারা মিলিয়ে রাখেন।
জ্যাপ বললেন মিলিয়ে দেখলেও ক্ষতি নেই। যে কোনো চালাক লোকই ওই শিশির বদলে অন্য একটা ক্ষতিকারক বিষের শিশি রেখে আসতে পারে। একাজ সম্ভব শুধু একটি মাত্র কারণে। কারণ ডাঃ ব্রায়ান একটি মাত্র লোক যাকে কেউ সন্দেহ করতে পারে না, কিন্তু একটা খোচ থেকে যাচ্ছে, তিনি কেন বললেন না যে ব্যক্তির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি।
পোয়ারোর ধারণা ওটা ছিল ডাক্তারের প্রথম অনুমান। সত্যি কথা বলতে গেলে মনে হয় ব্যাপারটা স্বাভাবিক। সম্ভবতঃ ভীমরুলের কামড়ে…।
না, এই ভীমরুলের কথা আর ভুলবেনা দেখছি। প্রথম থেকে ভীমরুল ভীমরুল করে গেল। পোয়ারো বললেন ঘটনাচক্রে তিনি মেঝে থেকে কাটা কুড়িয়ে পেয়ে বুঝতে পারেন ঘটনাটা খুন। যেভাবেই হোক ঘটনাটা চোখে পড়তেই জ্যাপ বললেন। পোয়ারো বললেন, না এ সম্ভাবনাও ছিলো যে কেউ দেখার আগে কাটাটা তুলে নিত। সে ব্রায়ান বা অন্য কেউ হোক। ওটা দুষ্কর কাজ।
ফার্নে বললেন যে, খুন বলে ঘটনাটা যদি জানতে না পারা যায়, তাহলে কোনো ভদ্রমহিলার হার্ট ফেল হলে, সেই সময়ে কোনো লোক তার গায়ের পাশে একটা রুমাল ফেলে দিয়ে নিচু হয়ে সেটা কুড়িয়ে নেয়, তা কেউ লক্ষ্য করেছে কী।
জ্যাপ এটা মেনে নিলও। তার ধারণা ব্রায়ান সন্দেহজনক ব্যক্তি। একটু চেষ্টা করলেই তিনি মাথা ঘুরিয়ে খুব সহজেই কোণাকুণিভাবে বাঁকানল থেকে তীর ছুঁড়তে পারতেন।
ফার্নে বললেন, এর মধ্যে মনস্তাত্বিক কারণ আছে। যার মতানুযায়ী একটা ঘরে আছেন বলে কেউ যদি সেই সময়ে ছুরি বের করে কাউকে খুন করে, তখন কেউ তাকে লক্ষ্য করবে না।
পোয়ারো বললেন, বিষ খাইয়ে মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এই প্রশ্নটাই উঠেছিল। সেখানেও একটা মনস্তাত্বিক মুহূর্ত ছিল। আমরা যদি আবিষ্কার করতে পারি যে এমিথিউসের প্যারিস থেকে ক্রয়ডন আসার সময়টুকুর মধ্যে এমন কোনো মুহূর্ত এসেছিলো যাতে খুনীর হাত ছিলো, নিশ্চয়ই সে সঠিক চেষ্টার ফলে মুহূর্তটা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।
জ্যাপ বললেন ৮ নম্বর আসনে ড্যানয়েল মিচেল ক্ল্যাইন্স, যাকে সবচেয়ে সন্দেহ করা যায়। একজন রহস্য কাহিনীকারের চেয়ে আর কার পক্ষেই বা সাপের বিষ নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার, আর কার পক্ষেই বা একজন রসায়নবিদের সঙ্গে জানাশোনা থাকতে পারে, যে সমস্ত সাংঘাতিক জিনিস নিয়ে নাড়াচাড়া করে। ভুলে গেলে চলবে না উনি মাদাম গিজেলের সামনের পাশ দিয়ে একবার পেছনের দিকে গেছিলেন, অতগুলো যাত্রীর মধ্যে একমাত্র ইনিই।
পোয়ারো এটা ভোলেননি বললেন, জ্যাপ বললেন তিনি কাছ থেকে বাঁকানলটা খুঁজতে পারতেন। আর এ ব্যাপারে রেহাই পাবারও যথেষ্ট সুযোগ তার ছিলো, বাঁকানল সম্পর্কে সবকিছুই তিনি জানেন তাই বলেছিলেন তিনি।