থিবো বললেন তার মেযে মাদমোয়াজেল অ্যান মরিসে টাকাটা পাবেন। সে তার মায়ের কাছে থাকতেন না। তার মা তাকে একেবারে ছোট্টবেলার পর দেখেননি, কিন্তু বেশ কয়েক বছর আগের উইলে তিনি সমস্ত সম্পত্তি তার মেয়েকে দিয়ে যান। তার টাকার পরিমাণ আশি নব্বই লক্ষ ফ্রা হবে–যা এক লক্ষ পাউণ্ডের থেকে বেশি। উনি যদি প্লেনের মধ্যে না থাকতেন টাকার লোভে মাকে খুন করার জন্য ওই মেয়েকেই সন্দেহ করা যেত, জ্যাপ বললেন। মেয়েটির বয়স চব্বিশ-পঁচিশ হবে। মেয়েটিকে খুনের ব্যাপারে জড়ানোর কোনো কারণ আছে বলে মনে হচ্ছে না।
জ্যাপের মতে প্লেনের কেউ মিথ্যা কথা বলেছে। সেই লোকটাকে খুঁজে বার করতে হলে মাদাম গিজেলের গোপন নথিপত্র দেখলেই হবে। কিন্তু থিবো বললেন, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে জানা গেছে তার সমস্ত নথিপত্র সিন্দুকে থাকত, সব কাগজপত্র পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। তার মৃত্যুর আগে তিনি তার সহকারিণী এলিসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তার কত্রীর কোনে বিপদ-আপদ ঘটলে সে সিন্দুক খুলবে এবং সিন্দুকের সমস্ত জিনিস পুড়িয়ে ফেলবে। লানের বললেন যে মাদাম থিবো অত্যন্ত ক্রুর ছিলেন কিন্তু অবিশ্বাসের কাজ যারা করত তাদের কাছে। তিনি নিষ্ঠুর ব্যবহার করতেন অবিশ্বাসীদের প্রতি। মেত্র থিবো চলে যাচ্ছিলেন এবং যাবার আগে তিনি আশ্বাস দিলেন যদি আর কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায় তাহলে তার ঠিকানা অন্যদের জানাই আছে। এই বলে তিনি চলে গেলেন।
.
০৭.
সম্ভাবনা
মেত্র থিবো চলে যাবার পর অন্য তিনজনের মধ্যে আলোচনা চলতে থাকল। জ্যাপ বললেন, প্রমিথিউস বিমানে ১১ জন যাত্রী ছিলো শুধু পেছনের কামরায়। এই ১১ জন ছাড়া ২ জন পরিচারক। তার মধ্যে একজন নিশ্চয়ই খুন করেছে। ইংরেজের ব্যাপারটা উনি নিজেই দেখবেন। কিন্তু ফরাসি অনুসন্ধান করার কাজ ফার্নের, ফার্নের মতে গ্রীষ্মকালে মাদাম গিজেল ফ্রান্সের উপকূলের নানা জায়গায় যেমন দোভিশ, ল্যাপিনেত, উইমারো প্রভৃতি জায়গায় এলাহি কারবার খুলে বসতেন। দক্ষিণ দিকে অ্যালিটবগ, নাইস এসব জায়গায়। জ্যাপের মতে আসল খুনের ব্যাপারটা জানতে হবে, প্রমাণ করতে হবে বাঁকানল ব্যবহার করার মতো সুবিধাজনক জায়গায় কি ছিলো। প্রথমে একজন যাত্রীকে আলাদাভাবে বেছে নিয়ে যুক্তি প্রমাণ দিয়ে বিচার করা আরও প্রয়োজন–সম্ভাবনার দিকগুলো বিচার করে পোয়ারো মনে করেন তাকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হোক; জ্যাপও এতে গভীরভাবে অসম্মতি জানালেন। পরিচারক দুজনকে সন্দেহের উর্ধে রাখা হল। কারণ তারা দুজন মোটা টাকা ধার নিয়েছিল, তা বিচার্য নয়। কিন্তু সম্ভাবনার কথা বিচার করলে তারা খুন করেছে এটা হতে পারে। এদের পক্ষে এমন জায়গা ঠিক করে বাঁকানল ছোঁড়া যেতেই পারে। ডানদিকের এই কোণটা থেকে। কিন্তু এটা অসম্ভব, কামরাভর্তি সকলের চোখ এড়িয়ে এটা করা সম্ভব নয়। খুনীর পাগলামি ছাড়া আর কিছু নয়। এইরকম ঘটনা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়, খুনীকে আমরা ইতিমধ্যে চার-পাঁচবার ধরে ফেলেছি।
পোয়ারোর মতে এটা পাগলামি হলেও এটা ঠিক যে আর তিনজন যে আলোচনা করছে যে কে খুন করেছে। এটাতে খুনী সফল। তার যুক্তি হল সেই প্রবাদ ফলেন পরিচয়তে, অর্থাৎ খুনী এ ব্যাপারে সফল। পোয়ারো বললেন, আমরা ডাক্তারী প্রমাণ পেয়েছি, অস্ত্রটা আমাদের হাতে রয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন আগে ওটা এটা হাস্যস্পদ ব্যাপার হত।
ফার্নের মতে মনস্তত্ব বিচার করতে হবে খুনীর মনস্তত্ব বিষয়ে। জ্যাপের নাম দিয়ে ভোস ভোস শব্দ করলেন অর্থাৎ এ বিষয়ে তার পছন্দ নয় জ্যাপ বললেন, ফার্নের যা সন্দেহবাতিক তাতে এই ঘটনা হওয়া সম্ভব যে ভদ্রমহিলা এইভাবে খুন হননি, কিন্তু ফার্নে এতে অসম্মতি দিলেন, বললেন খুন যে বাঁকা নলের মাধ্যমে হয়েছে এটা ঠিক। জেন গ্রে-কে এরপর সবাই খুন করেছিল বাঁচাকে খুন করার জন্য সাপেরতে খরচ করেছে, তার মানে হতে শতকরা দুজনের আছে কিনা যায় না। এছাড়া সাপের বিষ রহে বুড়াটাকে সন্দেহ করেন। যে মেয়েটি লটারীতে টাকা পেয়ে লা পিনেতে খরচ করেছে, তার মানে মেয়েটি জুয়ারী। কিন্তু মেয়েটি বুড়ীকে খুন করার জন্য সাপের বিষ পাবে কোথা থেকে। সে যে বুড়ীটাকে খুন করেছিল বা টাকা ধার করেছিল তা জানা যায় না। এছাড়া সাপের বিষ ব্যবহার করার জ্ঞান পৃথিবীতে শতকরা দুজনের আছে কিনা সন্দেহ। পোয়ারো বললেন, অমি জিনিসটা এইভাবে দেখছি, খুনী নিশ্চয়ই এই দুই শ্রেণীর যেকোনো এক শ্রেণীতে পড়বে। হয় সে এমন লোক, যে পৃথিবীর সমস্ত বিদঘুঁটে জায়গায় ঘুরে এসেছে, এমন লোক যে সাপখোপ সম্পর্কে কিছু অন্তত জানে এবং অসভ্য উপজাতি লোকেরা তাদের শত্রুদের খতম করার জন্য কতো রকমের সাংঘাতিক বিষ ব্যবহার করে সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, অন্য শ্রেণী হল বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলে গেছোসাপের বিষ যা নিয়ে ভয়ানক উঁচু শ্রেণীর গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। যা উইন্টারশূনের থেকে জানা গেছে। সাপের বিষ, মানে কেউটে সাপের বিষ ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়, তবে দুটো শ্ৰেণীই গ্রে মেয়েটির সঙ্গে মেলে না। ওর সঙ্গে এ ব্যাপারে যেটুকু সম্পর্ক তাতে খুনের উদ্দেশ্য অবাস্তব বলে মনে হচ্ছে। বিষ জোগাড় করার সম্ভাবনাও খুবই কম এবং বাঁকানল ব্যবহার করা অসম্ভব!