এ বিষয়ে নরম্যান গেলের ধারণা জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলল, যে সে কিছুই দেখেননি এবং তার মনে হল কিছু দেখা উচিত ছিল। কিন্তু সে ব্যস্ত ছিল জেনকে দেখতে যাকে সে বিয়ে করতে চায়। তার মনে হল যে সাংবাদিকদের কথায় রাজি হলে ভালো হত। জেনেরও গেলকে খুব পছন্দ হয়েছিল। সেও মুগ্ধ চোখে তাকে দেখায় অন্য কিছু দেখার সুযোগ পাননি।
জেনকে জিজ্ঞাসা করায় কে খুন করতে পারে সে বলল, তার মনে হয় পরিচারক নয় আসলে গেল দুই ভদ্রমহিলাকে সন্দেহ করলেও মিস হরবেরিল জেনের মতে খুনী হতে পারেন না এবং মিস কার একেবারে গেঁয়ো, তিনি খুন করতে পারেন না। এ বিষয়ে গেল একমত, তার মতে গেঁয়ো লোক সন্দেহের উর্ধ্বে নয়। ডাক্তারটিকে তারা সন্দেহ করলেও সঠিক প্রমাণের অভাবে সেও ঠিক সন্ধিগ্ধ হল না।
জেন বলল, উনি যদি মহিলাটিকে খুন করতে চাইতেন, তাহলে এমন কিছু ব্যবহার করতেন, যার নাম পর্যন্ত কেউ কোনোদিন কানেও শোনেনি। নরম্যান এটা ঠিক একটু খুঁতখুঁতে ভাবে বলল, বেঁটে মতো ভদ্রলোক মিঃ ফ্ল্যান্সিকে সন্দেহ করেননি গেল। কিন্তু জেন মনে করেন যে তিনি যদি সত্যিই খুনী হতেন তাহলে তিনি বাঁকানলটি দেখাতেন না। এই কথায় গেল সম্মতি দিলেন। জেনের সন্দেহের তীর এবার রাইজ্যার এবং ফরাসি পিতাপুত্রের দিকে। তার মতে ফরাসি দুজনের মধ্যে যে ছোটো তাকে চিন্তিত দেখাচ্ছিল। গেলের মতে তারা দুজনে পৃথিবীর বিদঘুঁটে জায়গা ঘুরে এসেছেন যার জন্য তাদের প্রতি সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক এবং কেউ যদি কাউকে খুন করে তাহলে অবশ্যই তাকে চিন্তিত দেখাবে। জেন বলল যে তারা দুজনে যেন খুনী না হন তাহলে সে খুশী হবে।
গেল বলল, কাজটা সহজ হবে না। জেনের মতে মৃত মহিলার সম্পর্কে সবকিছু ভালোভাবে জানতে হবে। জেনের মতে আন্দাজে ঢিল ছোঁড়া হচ্ছে। জেনের মতে এর প্রয়োজন আছে। গেল বললো, এই খুন তাদের জীবনকে জড়িয়ে ধরেছে। এর কালো ছায়া তাদের ভবিষ্যত জীবনের ওপর কী প্রভাব বিস্তার করতে চলেছে তা অজ্ঞাত। জেন এটা শুনে অত্যন্ত ভীত হল। এবং এ কথা বলতে বারণ করল।
গেল বলল যে, সে নিজের সম্পর্কে ভীত হয়ে পড়েছে।
.
০৬.
শলাপরামর্শ
এরকুল পোয়ারো আবার বন্ধু ইনসপেক্টার জ্যাপের সাথে মিশলেন। পোয়ারোকে বললেন, যে অল্পের জন্য তিনি জেলে ঢোকার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। পোয়ারো নিজের পেশার প্রতি খুব চিন্তিত।
রোগা লম্বা মতন লোকটি ফরাসি গোয়েন্দা দপ্তরের একজন লোক, মঁসিয়ে ফার্মে এই খুনের মামলার সাহায্য করার জন্য এসেছেন।
ফার্নে করমর্দন করে বললেন যে বেশ কয়েকবছর আগে তার এরকুল পোয়ারোর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। মঁসিয়ে গিরাদের কাছে তার অনেক কথা শুনেছেন। পোয়ারো তাদের দুজনকে তার বন্ধু মেত্র নিয়োর সঙ্গে নৈশাহারের নিমন্ত্রণ করলেন। পোয়ারো বললেন একজন মহিলাকে তিনি বলেছেন তার চরিত্রের কলঙ্ক মোছর জন্য খুব উদ্বিগ্ন। জ্যাপ বললেন যে জুরী ভদ্রলোকের পোয়ারোর চেহারাটা পছন্দ হয়নি।
ফার্নে, থিবো, জ্যাপকে এরকুল পোয়ারো বেশ লোভনীয় খাবার খাওয়ালেন, তাতে সকলেই বেশ খুশী মনে হল। ইনসপেক্টার জ্যাপের সঙ্গে থিবো আলোচনা করে খুব তাড়াতাড়ি যে সিদ্ধান্তে এসেছিলেন তাতে তিনি মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ব্যাপারগুলি শুধু জানতে পেরেছিলেন। থিবো বললেন যে, মাদাম গিজেল সম্পর্কে তিনি খুব সামান্য জানেন, সারা দুনিয়া তাকে যেভাবে জানে, তাকে সেইসব সাধারণ মানুষ হিসাবেই জানেন, মঁসিয়ে ফার্নে বেশির ভাগ জানেন বলে তিনি বলেন যে, তার (গিজেল) এই চরিত্রের জুড়ি মেলা ভার, বয়সকালে তাকে দেখতে ভালোই ছিল। জলবসন্তের ফলে তার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। তিনি ছিলেন এমন একজন মহিলা, যিনি ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করেছেন, অগাধ ক্ষমতাও ধরতেন। ব্যাবসার ক্ষেত্রে তিনি খুবই বিচক্ষণ ছিলেন, তিনি ক্রমশই একজন কঠিন মনের ফরাসী মহিলা যিনি আবেগের বশবর্তী হয়ে কখনোই ব্যাবসার ক্ষতি হতে দিতেন না। কিন্তু যথাযথ সতোর সঙ্গে ব্যাবসা চালাবার বিরাট সুনাম তার ছিল।
ফার্মে বললেন, মাদাম গিজেল খুব সৎ ছিলেন অবশ্য তার সামর্থ্য অনুযায়ী যদিও সাক্ষ্য প্রমাণ পেলে অদূর ভবিষ্যতেই হয়তো আদালতে তার ডাক পড়তো। তিনি ব্ল্যাকমেল করে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতেন, মাদাম গিজেলের টাকা ধার দেওয়ার একটি বিশেষ রীতি ছিল, যাকে খালি হাতে টাকা ধার দেওয়া বলে তাই। অবশ্য কত টাকা ধার দেবেন এবং সেটা কি ভাবে শোধ দিতে হবে, সেটা তার ইচ্ছে অনুযায়ী ঠিক হতো, কিন্তু তার কর্মপদ্ধতি এমনই ছিল যে টাকা তিনি নিশ্চয়ই ঠিক ফেরত পেতেন।
মাদাম গিজেলের নিজস্ব একটা গোয়েন্দা দপ্তর ছিল। তার মক্কেলরা ছিল সমাজের উঁচুতলার লোক। যারা কুৎসা রটার ভয়ে ভীত থাকেন। তার দপ্তরের লোকজন তার মক্কেল সম্পর্কে খবর রাখত। মাদাম বিশ্বাসী লোকেদের প্রতি বিশ্বাস রাখতেন। টাকা উপায় করার জন্য কখনই গোপন অস্ত্র ব্যবহার করতেন না। যদি না আগে সেই টাকাটা কেউ তার কাছ থেকে ধার নিয়ে থাকতো। যদি টাকা না পাওয়া যেত তখন তিনি যে সমস্ত খবরাখবর জোগাড় করতেন সেগুলো ফাস করে দিতেন কিংবা এ ব্যাপারে জড়িত কোনো লোককে খবরটা জানিয়ে দিতেন। এর ফলে তার সরাসরি লাভ হত না বটে পরোক্ষভাবে হত, এতে অন্যরা ভয় পেয়ে ঠিকমতো টাকা মিটিয়ে দিত। জ্যাপ বললেন যে এর ফলে খুনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটা ধারণা পেতে পারি। তার পরই প্রশ্ন ওঠে টাকাকড়ি কে পাবে।