হরবেরিল কাউন্টেস-এর বক্তব্য থেকেও কিছু পাওয়া গেল না, মাদাম ভেনেসিয়া কারো বক্তব্য থেকেও কিছু পাওয়া গেল না।
এরপর জেমস বেল রাইজার নামক এলিস ভেন সিমেন্ট কোম্পানির ম্যানেজিং ডাইরেক্টার তিনি বাঁকানল দেখেননি, তিনি আসন উঁচু বলে কারোকে দেখতে পাননি। তিনি কারোকে বাঁকা নল তাক করতে দেখেননি। তিনি দুজনকে উঠে সামনে প্রসাধন ঘরের দিকে যেতে দেখেছেন কিন্তু তাদের হাতে কিছু ছিল না। দাঁতের ডাক্তার নরম্যান গেল নেতিবাচক সাক্ষ্য দিল, মিঃ ফ্ল্যান্সি সাড়া জাগাতে পারলেন না।
মিঃ ফ্ল্যান্সি তার নিজস্ব বাঁকানল আদালতে দেখালেন, তিনি যে খুন করেননি বা খুনে তার বাঁকানল ব্যবহার করা হয়নি এটা প্রমাণ করতে। কিন্তু তাতে তিনি বিচারকের কাছ থেকে নাস্তানাবুদ হলেন। তাকে ন্যায় বিচারে সাহায্য করার জন্য আনা হয়েছে। নিজের প্রতি সন্দেহের জবাবদিহির জন্য নয়।
জেন গ্রে সাংবাদিকদের কলমে কিছু বলতে পারলেন না। মঁসিয়ে আরম্যন্ত জ্যাপ মৃত মহিলাটির অপরিচিত এবং তিনি প্যারিসে খুব যান বলে মহিলার নাম জানেন না। তিনি পৃথিবীর অনেক জায়গায় ঘুরলেও তিনি বিষ বা ওই ধরনের কোনো জিনিস লক্ষ্য করেননি। দুপ-এর পুত্র বলেন, ভীমরুলটা তিনি মেরেছিলেন।
বিচারক এরপর রায় দিলেন যে, ঘটনাটি যখন প্লেনে ঘটেছে অতএব কোনো যাত্রীর দ্বারা হয়েছে। কেউ কিছু দেখতে না পেলেও এটা প্রমাণ হয় বাঁকা নলের মধ্যে বিষ তীর দিয়ে ভদ্রমহিলাকে খুন করা হয়েছে। পুলিশের কাজ এখন কোথায় খুনের সূত্র আছে তা খুঁজে বের করা, যেহেতু খুনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
একজন সদস্য বিচারককে জিজ্ঞাসা করলেন বাঁকানল কোথায় পড়েছিল। মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারোর সিটের তলা থেকে তা পাওয়া যায়। যিনি একজন সুপরিচিত ও শ্রদ্ধেয় গোয়েন্দা। বেসরকারী গোয়েন্দা শুনে অবিশ্বাসী নজর তার উপর স্থির হয়ে রইল। একজন আদালী বিচারকের হাতে কাগজ ঢুকিয়ে দিলেন যার ফলে রায় হল, বিষের প্রভাবে মহিলার মৃত্যু হয়েছে কিন্তু কে এই বিষ ঢুকিয়েছিল তা প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ হাতে নেই।
.
০৫.
খবর নিয়ে
নরম্যান গেল আদালীর কাগজে কি লেখা ছিল তাতে উৎসাহ প্রকাশ করতে এরকুল পোয়ারো বললেন ওটাতে তাকে খুনী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। জেন ও পোয়ারো দুজনে হেসে ফেললেন এবং পোয়ারো নিজেকে কালিমামুক্ত করবেন বলে আশ্বাস দিলেন। গেল পোয়ারো যে গোয়েন্দা সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করল। তিনি আশা করলেন ছদ্মবেশ পড়লেও তাকে চেনা যাবে। এ বিষয়ে জেন জানাল যে এখন গোয়েন্দারা আর ছদ্মবেশ ধরে না, এক জায়গায় বসে মনস্তাত্ত্বিক দিক চিন্তা করেন। কিন্তু মার্কফার মোড়া ভদ্রলোককে তারা দুজনেই ধর্তব্যের মধ্যে ধরলো না। এরপর দুজনে একসঙ্গে চা খেতে গেলেন।
জেনকে গেলের বেশ পছন্দ হয়েছিল। সে বলল যে খুনটুন যাচ্ছেতাই ব্যাপার। জেন তার এই সাক্ষ্য দেওয়ায় তার চাকরিতে অসুবিধে আসতে পারে, একথা বলল নরম্যান গেল। ব্যাপারটাতে তার কোনো দোষ নেই, তিনি খুবই চটে গেলেন। জেন বললেন, তাতে রাগ করার কিছু হয়নি, জেনের বক্তব্য যে তিনিও খুন করতে পারেন কারণ তিনিও সন্দেহের উর্ধ্বে নয়। গেল বললেন তিনি খুন করতেই পারেন না। জেন বললেন, তিনি এ ব্যাপারে এত নিশ্চিত নন কারণ তার একজন ঘ্যানঘেনে গলার খদ্দের আছে যাকে তার খুন করতে ইচ্ছে করে। মনে হয় এটা করলে তার সকাজ করা হবে। কিন্তু খুনটা তিনি করেননি এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। জেন বলল যে, দাঁতের ডাক্তার গেল খুন করেছেন। যদি রোগীরা ভেবে নেয় তাতে এতে কোনো সুরাহা হবে না। গেল বলেন, ওতে তার ভবিষ্যত ক্ষতিগ্রস্থ হবে। দাঁতের ডাক্তার বলে জেন তাকে অপছন্দ করেছেন এটা জানতে চাওয়ায় গেলকে জেন বললো, নিঃসন্দেহে সে একজন সহকারী, চুল বাঁধনেওয়ালীর থেকে অনেক উপরে। গেল জেনকে একদিন ডিনারে নিমন্ত্রণ করলেন, তিনি জেনের লা পিনেত কেমন লাগল জিজ্ঞাসা করায় জেন তাকে লটারী জেতার কথা জানাল। তাদের দুজনের কথাবার্তার মাঝে একজন লোক এসে দাঁড়াল, তিনি সাপ্তাহিক হাউস পত্রিকা থেকে আসছেন। তিনি টাকার বিনিময়ে খুনের ঘটনা লিখতে চান, পঞ্চাশ বা ষাট ডলারের বিনিময়ে। এই কাজে জেন আগ্রহী হল না। সে বলল, সে পারবে না। ভদ্রলোক তাকে অনুলিখনের আশ্বাস দিল। কিন্তু জেন তা করতে না চাওয়ায় ব্যক্তিটি গেলকে একশো ডলার দিতে চাইল। কিন্তু জেন তা করতে না চাওয়ায় ব্যক্তিটির অভিজ্ঞতা জানতে চাইল। কিন্তু তিনি সম্মত হলেন না। ব্যক্তিটি বলেন যে এই প্রচারের যুগে এতে তার পরিচিতি বাড়বে কিন্তু গেল তাতে ভয় পেলেন এবং তিনি তার রোগীদের কথা ভেবে একাজে রাজি হলেন না। তার মতে তার রোগীরা ভাববেন তিনিও খুনের মামলায় জড়িত। এরপর তিনি লোকটিকে যেতে বললেন।
বেশ খুশী মনে ব্যক্তিটি দোকান থেকে বেরিয়ে গেল। যাবার আগে সে তার উক্তিটি দিয়ে গেল।
সাপ্তাহিক হাউসের পরের সংখ্যাতেই মাঝ আকাশে হত্যা রহস্য শিরোনামে দুই সাক্ষীর বক্তব্য বেশ ফলাও করে ছাপা হলো। মিস্ জেন গ্রে কিছু বলেননি। নরম্যান গেল তার পেশার ক্ষতির জন্য কিছু বলতে চাননি। জেন ঘটনাটি পড়ে বলল যে, ওই লোকটা নামী লোকের কাছে কেন গেল না। গেলের বক্তব্য যে সম্ভবতঃ তার কাছে তারাই (জেন ও গেল) নামী লোক। জেনকে গেল জিজ্ঞাসা করলেন যে প্লেনের মধ্যে অন্য কেউ এটা করতে পারে, কিন্তু বিচারকের কথায় ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়। কিন্তু তার মতে গেল খুন করেননি। তবে অবশ্যই সে নিজেও করেনি। তবে তার কোনো ধারণা নেই।