তোতলামি করে কথা বলায় জ্যাপের একটু সন্দেহ হল। এরপর নরম্যান গেলকে ভাবা হল। যিনি দন্ত চিকিৎসক। তিনি প্লেনের মধ্যে সন্দেহজনক কিছু পাননি। কোনো ভীমরুল তার চোখে পড়েনি।
এরপর জেমস্ রাইজার রেগে সবার শেষে এলেন। তিনি কোনো চিৎকার শোনেননি। দুজন পরিচারক ছাড়া কাউকে আসতে দেখেননি। বাঁকানল তিনি চেনেন না। একজন কনস্টেবল ঘরে ঢুকে বললেন যে তিনি বাঁকানল খুঁজে পেয়েছেন যাতে কোনো আঙুলের ছাপ নেই, তবে সার্জেন্ট তাকে এটা সাবধানে মুড়ে রাখতে বলেছেন।মিঃ রাইজ্যার উৎসাহভরে দেখলেন এবং জিনিসটার অভিনবত্ব স্বীকার করলেন।
এটি কোথা থেকে পাওয়া গেছে এ প্রসঙ্গে জানা গেল ৯ নম্বর আসনের পিছনের থেকে এটি পাওয়া গেছে। পোয়ারো বললেন ৯ নম্বর আসনটা তার ছিল। মিঃ রাইজ্যার জ্যাপকে বললেন এটা জ্যাপের পক্ষে একটু অস্বাভাবিক। জ্যাপ মনে করলেন যে এটা দিয়ে কাজ সারা হয়েছে।
এরপর জেন গ্রে নামক একজন সুন্দরী তরুণীকে জেরা করা হল। সে বলল যে, তার বাড়ি বাটন স্ট্রিটে–ঠিকানা ২০ নং হারগেট স্ট্রিট, নর্থ ওয়েস্ট ৫, সে লা পিনেত থেকে ইংল্যান্ডে ফিরছে। পরের প্রশ্ন, সেই লটারীর টিকিট কেনার কথা ক্রমে মনে পড়লো, বাঁকানল মেয়েটি চেনে না। সেই মহিলাও তার অপরিচিত। তাকে লা বুর্জেত-এ লক্ষ্য করেছে। জেনের কাছ থেকে কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য বের করতে পারা গেল না। জ্যাপ বাঁকানলের চিন্তায় মন দিলেন। এ ব্যাপারে তিনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ চাইবেন বলে ঠিক করলেন। পোয়ারো বললেন, ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় এক টুকরো ছোটো কাগজ ওই নলটির গায়ে আটকানো আছে। দেখে মনে হয় নলটার দাম লেখা টিকিটের একটা ছেঁড়া অংশ। তার ধারণা এই বিশেষ জিনিসটা কোনো গ্রামাঞ্চল থেকে কোনো দুর্লভ শিল্পসংগ্রহকারী দোকান থেকে ঘুরে এসেছে। পোয়ারো মালপত্রের তালিকার কথা জিজ্ঞাসা করলেন। জ্যাপ তার প্রয়োজন নেই বললেন। দাম লেখা ছেঁড়া টিকিটটা ছিঁড়তে বলছিলেন। এই খুনের ব্যাপারটা এতই সোজা যে কোনো রদ্দিমার্কা লেখকও এটার সমাধান করে দিতে পারে।
.
০৪.
বিচার তদন্ত
চারদিন পর, মেরী মরিসের হত্যা সম্পর্কে বিচার বিভাগীয় তদন্ত বসলো। মৃত্যুর ধরন জনসাধারণের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করল।
প্রথম সাক্ষী মেত্র আলেকজাণ্ডার নিয়ো, ফরাসি ভদ্রলোক ইংরেজিতে উত্তর দিচ্ছিলেন। বিচারক জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি মৃতদেহ চেনেন কিনা। তিনি বললেন যে সেটি তার মক্কেল, মেরী অ্যাঞ্জেলিক মরিসোর। উনি আর কোনো নামে পরিচিত কিনা জানার জন্য তিনি বললেন, মাদাম গিজেল নামে যা তার ব্যবসায়িক নাম ছিল। তিনি একজন নামকরা মহাজন ছিলেন। তিনি ব্যবসা চালাতেন তিন নম্বর জুলিয়েন স্ট্রিটে, তার বাসভবনে। বিচারকের ধারণা তিনি প্রায়ই লন্ডনে যেতেন। জের আলেকজান্ডারের মতে তিনি ইংরেজদের উচ্চ পেশার মহিলাদের সঙ্গে বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যাবসা করতেন। তিনি বললেন যে, তিনি নিজেই ব্যবসা-বাণিজ্য চালাতেন, শুধু আইনগত দিকটাই আলেকজাণ্ডার নিজে দেখাশোনা করতেন। বিভিন্ন প্রশ্নের রেশ ধরে তিনি বললেন, তিনি ধনী মহিলা ছিলেন, তিনি শত্রহীনা ছিলেন কিনা তা তিনি বলতে পারেননি।
এরপর হেনরি মিচেল বললেন যে সে ইউনিভার্সাল এয়ারলাইন্স লিমিটেডে কাজ করে। সে বলল যে ছমাস আগে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের প্লেনে নিযুক্ত ছিল। তখন সে দু-একবার তাকে প্লেনে দেখেছে। মাদাম গিজেল নাম সে আগে শোনেনি। সে মারা যাওয়ার দিনের ঘটনা বলল সে কি কি দেখেছে।
এরপর তাকে (হেনরি) বাঁকা নল দেখানো হলে সে বলল, এ জিনিস সে দেখেনি। অ্যালবার্ট ডেভিস নামে পরিচারককে জেরা করতে গিয়ে জানতে চাইলেন সে কিভাবে মৃত্যু সংবাদ জানতে পারল। সে বলল, সে মিচেলের কাছ থেকে একজন যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছিল এটা শুনেছিল। সেও বাঁকানল নামক যন্ত্রটা দেখেনি এটা বলল।
রজার ব্রায়ান এরপর সাক্ষী দিলেন। তিনি বললেন যে, তিনি মৃত্যুর আধঘণ্টা পর পরীক্ষা করে দেখেছিলেন। তিনি গলার কাছে ফুটো লক্ষ্য করেছিলেন।
এরপর ডাঃ হুইগলার বলেন, গত মঙ্গলবার বিকাল তিনটার একটু পরে মাঝবয়সী মহিলার মৃত দেহ দেখানো হয়। ঘাড়ের পাশে এটা গোল ফুটো তার চোখে পড়ে। ঠিক গলার পাশে ধমনীর উপর ফুটোর সঙ্গে ভীমরুলের কাটা ফোঁটানোর দাগ অথবা যে কাটাটা দেখানো হয়েছিল সেই কাঁটা ফোঁটানোর দাগ ছিল। তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন রক্তের সঙ্গে ফীব বা গাছের কড়া বিষ মেশানোর ফলেই মৃত্যু হয়েছে। এই বিষ সম্পূর্ণ তার অজ্ঞাত।
এরপর মিস্টার উইন্টারশুন বললেন যে তিনি বিশ্লেষণ করে দেখেছেন মূলতঃ এই তীর একটা দেশীয় কিউবার বিষের মধ্যে ডোবানো হয়েছিল–যে বিষ কোনো কোনো উপজাতি তীরের বিষ হিসাবে ব্যবহার করে। দক্ষিণ আফ্রিকার বুম্মত নামে এক বিষাক্ত সাপের বিষ দেওয়া হয়েছে। এই বিষ চামড়ার নিচে সাংঘাতিকভাবে রক্তক্ষরণ করে। হৃৎপিণ্ডের প্রতিক্রিয়া হয়। মিঃ উইন্টারস্পুন বললেন, এইভাবে তিনি কাউকে খুন করতে দেখেননি।
ডিটেকটিভ সার্জেন্ট উইলসন তার সাক্ষ্যে বললেন, একটা আগুনের গণ্ডির পিছনে ওই বাঁকানল তিনি দেখতে পান, দেখা গেছে ওটা ছুঁড়লে প্রায় দশগজ পর্যন্ত যায়।