তিনি বললেন এ বিষয়ে যখন সন্দেহ করেন তখন নরম্যান গেল-এর পকেটে ব্রায়ান এন্ড মে কোম্পানির একটা ভাগ ছিল ও তার একটা কেসে একটা জিনিস পেয়েছে। নরম্যান হতভম্ব হলেন।
পোয়ারো বললেন, ওই কথা ছেড়ে তিনি অন্য চারকে সন্দেহ করেন। দুজন পরিচারক, ক্ল্যান্সি, গেল; তিনি বলেছেন খুনের উদ্দেশ্য ছিল। এবিষয়ে একমাত্র সেই মেয়েটিই খুনী হতে পারে যে তার মায়ের সম্পত্তির অধিকারিণী হতে পারত, প্রমিউস বিমানের মধ্যে একজন ছিলেন যিনি গিজেলের সঙ্গে মেলামেশা করতেন, তিনি হলেন লেডি হরবেরিল। লেডি হরবেরিলর ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যটি পরিষ্কার। তিনি আগের দিন গিজেলের সঙ্গে দেখা করে ও তার বন্ধু অভিনেতা ব্যারাক্রে অ্যামেরিকান সেজে বাঁকানল কেনেন। সেই হয়তো গিজেলকে বেলা বারোটায় প্লেনে ব্যবস্থা করার জন্য এয়ারলাইন্সে পাঠাবার জন্য ঘুষ দিয়েছিলেন।
আসলে ঘটনাটা ছিল অন্য। পোয়ারো নরম্যান গিজেলকেই খুনী বলে মনে করেছেন। কারণ সবসময়েই তিনি গিজেলের কন্যা বা উত্তরাধিকারিণীর কথা ভেবেছেন। প্রথমে তিনি মিস জেনকে তার উত্তরাধিকারিণী বলে মানলেন। পরে তিনি তার নাম জেনে তাকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেন। মিসেস গিজেলের মৃত্যুতে মিঃ গেলের সবথেকে ক্ষতি হয় কারণ এটা তিনি লেখা দেখিয়ে বলেছেন। তা হতে পারে কেননা পোয়ারো বলতে চান যে নিজের মধ্যে সবার প্রবণতা তাকে নিজেকে জাহির করা। তিনি নরম্যান গেলের সন্দেহভাজন যাতে না হন তাকে তিনি বিচারের কাজে নেন। এজন্য তাকে মিসেস হরবেরিলর বাড়িতে পাঠানোর জন্য ছদ্মবেশ নিতে বলেন। গেল প্রথমে এমন করে সেজে এসেছিলেন তা অবাস্তব, তাই এরপর যখন ভালো করে সাজে, লেডি চিনতে পারেননি। এই সময় পোয়ারো মাদাম জেনকে গেলের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাকে তার সেক্রেটারি নিযুক্ত করেন। প্লেনের সেই মেয়েটি যখন উত্তরাধিকারিণী হিসেবে এলো তখন তিনি চিনতে পারলেন এবং এটা সঠিক কিনা তা মাদাম হরবেরিলর ফার্নের মাধ্যমেই তিনি প্রমাণ পেলেন। তিনি বুঝলেন মেয়েটি তার কাছে সব মিথ্যে বলেছিল।
মেয়েটি যদি দোষী হয় তাহলে তার সহকারী কে এটা ভাবতে শুরু করে। নরম্যান অধৈর্য হয়ে বলেন যে তাহলে কখন তিনি সন্দেহ ত্যাগ করেন যে তিনি খুনী। পোয়ারো তিনিই যে খুনী সেটা জানিয়ে বলেন যে তিনি যে তার বাঁচার জন্য এই পেশায় এসেছেন এটা ঠিক, কিন্তু সেটা তার ব্যাবসায় নামেন তার পদবীটাই গ্রহণ করেন। তার আসল পদবী হল লিওস। গত শীতকালে নাইসে অ্যান মারিসের সঙ্গে দেখা হয়। তার মনে অ্যানের কথা শুনে লোভ জাগে। তিনি জানতে পারেন মাদাম গিজেলের সঙ্গে হরবেরিলর একটা যোগাযোগ আছে। এই খুনের পরিকল্পনা গেল এমনভাবে করলেন যাতে হরবেরিল ওপরের পক্ষে তার পরিকল্পনা সব ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু অ্যান মারিস যখন প্লেনে গেলেন তখন একটু গোলমাল হয়ে যায়। তখন তার পরিকল্পনা একটু জট পাকিয়ে গেল। তার মূল পরিকল্পনা ছিল অ্যান মারিসো যেহেতু তার উত্তরাধিকার দাবী করবে সুতরাং তার অজুহাতটা একেবারে পাকাঁপোক্ত হওয়া চাই। সে যখন ট্রেনে বা জাহাজে রয়েছে তখন খুনের সময় তার প্লেনে থাকার প্রশ্ন ওঠে না। সুতরাং অজুহাত পাকা এবং এরপরেই আপনি তাকে বিয়ে করলেন এবং শেষ পর্যন্ত তা আর হলো না। তিনি একটা ভুল করলেন। তিনি টাকা এবং ভালোবাসার পাত্রী দুটোকেই পেতে চাইলেন। তাই তিনি অ্যান মারিসোকে এই বলে ভয় দেখালেন সে যদি নিজের পরিচয় দিয়ে দাবী নিয়ে যায় তাহলে পুলিশ তাকে খুনী বলে সন্দেহ করবে। সুতরাং তাকে বুঝিয়ে রটারডামে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করলেন।
অ্যান মারিসো সেদিন প্যারিসে গিয়ে তার উত্তরাধিকার দাবী করবে বলে আপনি দিন ধার্য করে দিয়েছিলেন, সেটা আমার প্যারিসে যাওয়ার দিনের সঙ্গে আকস্মিক ভাবেই মিলে গেল। মিস গেল সঙ্গে গেছিল, এটা তার পরিকল্পনার সঙ্গে খাপ খেললো না। তিনি মাদামের সঙ্গে দেখা করতে চান কিন্তু তিনি সফল হননি। উনি দেখলেন যে অ্যান উকিলের সঙ্গে দেখা করে আবার পোয়ারোর সঙ্গে দেখা করেছে তখন তিনি খুব ভয় পেলেন। তার ইচ্ছে ছিল স্ত্রীর সম্পত্তি হস্তগত করা তাই বিয়ের পর দুজনের নামে উইল করা হল। এরপর তার কানাডা যাবার কথা ছিল এবং তার কিছুদিন পর ইংল্যান্ডে ফিরে যাবার কথা ছিল।
নরম্যান গেল এসব গাঁজাখুরি সম্পর্কে পাত্তা দিতে চাইলেন না। তখন পোয়ারো বললেন যে তার হাতে প্রমাণ আছে যে টাকা তিনি গিজেলের আমলের কাছে এসে কাজটা করেন। পোয়ারো বললেন যে তিনি একটা লিলেন ডাক্তারী কোট নিয়ে এসেছেন, এটার সঙ্গে পরিচারকের কোটের সাদৃশ্য ছিল। আসলে ঘটনা এরকম ঘটেছিল। কফি দিয়ে পরিচারক দুজন যখন সামনের কামরায় চলে গেলো, তখন তিনি এ ঘরে গিয়ে লিলেনের কোটটা এগিয়ে দিলেন, তারপর গালের উপর তুলো চামড়ে নিয়ে পাশের ভাড়ার ঘর থেকে একটা কফির চামচ হাতে নিলেন এবং চামচ হাতে পরিচারকের মতো ব্যস্ত পায়ে মাঝের রাস্তা ধরে গিজেলের টেবিলে এসে তার গলায় কাঁটা ফুটিয়ে ভীমরুলটা উড়িয়ে দিলেন। আবার দ্রুত পায়ে প্রসাধন ঘরে এসে কোট খুলে রেখে ধীরেসুস্থে নিজের আসনে ফিরে এলেন। তাকে কেউ নজর করেনি। জেন তাকে লক্ষ্য করেন কারণ সে তখন নিজের প্রসাধন করতে ব্যস্ত ছিল।