তিনি লেডি হরবেরিলকে একটা প্রশ্ন করতে চান তবে তা অ্যান মারিসো সম্পর্কে নয়। তিনি যখন লেডি হরবেরিলকে ফোনে জিজ্ঞাসা করলেন যে তিনি যখন কোথাও যান তার পরিচারিকা কি তার সঙ্গে প্লেনে যায় না ট্রেনে যায়। মাদাম জানালেন তার পরিচারিকা সাধারণত ট্রেনে বা জাহাজে যান। গিজেলের খুন হওয়ার দিন লেডি হরবেরিল একেবারে শেষ মুহূর্তে ঠিক করেন যে ম্যাডেলিন তার সঙ্গে প্লেনেই চলুক। কিন্তু সে ট্রেনে যায় এবং সে এখন কাজ ছেড়ে চলে গেছে।
লেডি মাদামের সব কথা শুনতে পেরে পোয়ারোর সব কথা জেনে ফার্নের সঙ্গে কোনো দেরি না করে অ্যান মারিসোর হোটেলের দিকে যেতে থাকে। এইজন্য ফার্নে অবাক হয়ে উঠতে তিনি বললেন তার ধারণা যদি ঠিক হয় তাহলে অ্যান মারিলো ভয়ানক বিপদের সম্মুখীন, পোয়ারো এ ব্যাপারে ভীত। তার ট্যাক্সিটা প্রায় ঘন্টায় ৪০ মাইল বেগে চলেছে। ফার্নে দুর্ঘটনার ভয় করলে এবং সেক্রেটারিকে কিছু না জানিয়ে আমার জন্য অভদ্রতা ভাবলেন কিন্তু পোয়ারো জীবন মরণের প্রশ্নে ভদ্রতা অভদ্রতার ধার ধারেন না।
অ্যান মারিসো হোটেলে তাড়াতাড়ি যেতে গিয়ে একজনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তিনি হলেন অভিনেতা রেমন্ড ব্যায়াকেল। ফার্নে পোয়ারো এই হটকারী সিদ্ধান্তে খুশী নয়। পোয়ারো তাকে এ ব্যাপারে অভয় দিলেন। তিনি বললেন, যে মাদাম রিচার্ডস এখানে আছে কিনা তা খোঁজ নিতে হবে। তাহলে বোঝা যাবে তার কোনো ক্ষতি হয়নি। তখন তারা পরবর্তী কর্মপন্থা স্থির করবেন। হোটেলে তারা জানতে পারলেন যে, মাদাম বেশ কিছুক্ষণ আগে (৩০ মিনিট) চলে গেছেন। ঠিকানা কিছু রেখে যাননি। তিনি আগে বলেছিলেন যে, সপ্তাহখানেক থাকবেন কিন্তু পরিকল্পনার বদলের জন্য তিনি চলে গেছেন।
আরো প্রশ্ন করা হল কুলী, লিফ্ট চালকদের। দারোয়ানের বক্তব্য অনুসারে জানা গেল এক ভদ্রলোক মহিলার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, তিনি ছিলেন না। তারপর যখন তাদের দেখা হয় তারা একসঙ্গে খেয়ে একটা ট্যাক্সিতে তার মালপত্র তুলে দিতে বলেন। দারোয়ান বলেন যে ভদ্রমহিলা একাই উত্তর দিকের স্টেশনে গেছেন।
ফার্নে আন্দাজ করলেন বেলা দুটোর গাড়িতে ইংল্যান্ডে যাচ্ছেন। এটা ধাপ্পাবাজি হতে পারে। তিনি তার আগে বুলেন স্টেশনে ফোন করতে চান।
বিকাল ৫টা হোটেল লাউঞ্জে জেন বই পড়ছিলেন। পোয়ারো এসে দাঁড়ালেন। বুলেন স্টেশনে একজন মহিলাকে প্রথম শ্রেণির কামরায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। তিনি অ্যান মারিসো। পুলিশ আত্মহত্যা মনে করে ও পোয়ারো তাই মনে করেন। তার মনে হয় বাঁচার জন্য সাহস পাননি বোধহয় তিনি। তিনি কেন আত্মহত্যা করলেন? কয়েকটি কাজ দিয়ে প্যারিসে ছেড়ে চলে গেলেন। জেন দুবার জা জ্যাপের সঙ্গে দেখা করেছে এবং জেন যে তার সঙ্গে প্যারিসে যাচ্ছে তা বলতে জেন তা এড়িয়ে গেছে। পাঁচদিন পর টেলিগ্রাম করে তাকে ইংল্যান্ড ফিরিয়ে আনা হল। নরম্যান গেল ভিক্টোরিয়া বিমানবন্দরে তার সঙ্গে দেখা করলেন।
নরম্যান বেশ ভীত। কাগজে মিসেস রিচার্ডস-এর মৃত্যুর সংবাদ ছাপানো হয়েছিল। তবে তার সঙ্গে খুনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। নরম্যানের মনে হয় খুনের ব্যাপারে মেয়েকে সন্দেহ করতে পারা যায় এক্ষেত্রে ব্যাপারটা যদি সাধারণ মানুষের মধ্যে ঠিকভাবে তুলে ধরা না হয় তাহলে তাদের মতো নির্দোষ লোকদের কি হবে তা অচিন্ত্যনীয়।
পোয়ারো, মিঃ ক্ল্যান্সি, জ্যাপ সকলকে ডিনারে নিমন্ত্রণ করা হলো। পোয়ারো নানা গল্প করছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে তিনি ঠিকভাবে এগোচ্ছেন। পোয়ারো বললেন তার কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে, বলতে গিয়ে গোড়ার কথায় নিয়ে যেতে চান। তিনি বললেন যে প্রমিউথিস বিমানে প্যারিস থেকে ক্রয়ডন যাবার দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় ফিরে যাচ্ছেন। তিনি ক্রয়ডন পৌঁছাবার আগেই যখন মাদাম খুন হয় তখন অপরাধ, মৃত্যু সম্পর্কে তার কেমন সন্দেহ হয়। এ বোধহয়। তার বলার জন্য, এই গুণ দুভাগে বিভক্ত। যেখানে মৃত্যুর ব্যাপারে করণীয় আছে। যেখানে মৃত্যুর ব্যাপারে করণীয় নেই, যদিও শেষের ব্যাপারটা খুব কম ঘটে। তবু তিনি দেখছেন মৃত্যুর গন্ধ তিনি পান। ডাঃ ব্রায়ান পরিচারকের কথা মেনে নিয়ে নিজে পরীক্ষা করে মৃত বললেন কিন্তু তখন জাপ বলছিলেন যে ভদ্রমহিলা ভীমরুমেলর কামড়ে মারা গেছেন। প্রমাণ হিসাবে তিনি ভীমরুল দেখিয়েছিলেন। প্লেনের মধ্যে ভীমরুল থাকা সত্ত্বেও ভদ্রমহিলার গলায় যে দাগটা ছিল তার সঙ্গে এই যুক্তি একেবারেই ঠিক যে তিনি ভীমরুলের কামড়ে মারা যান। আসলে ওটা একটা কাটা যা আদিবাসীরা ব্যবহার করে যাতে হলুদ কালো ফেসো জড়ানো থাকে।
মিঃ ক্ল্যান্সি এরপর কাটা সম্পর্কে তার জ্ঞান জানান। পোয়ারো এরপর বলেন যে, তিনি খুব অবাক হয়েছিলেন খুনীর দুঃসাহস দেখে। তাকে আরো দুটো জিনিস উৎসুক করেছিল। একটা ভীমরুল থাকার সুবিধা দুই বাঁকানল খুঁজে পাওয়া। শুধুমাত্র কাঁটাটা থাকলে সেটা খুঁজে বার করা অসুবিধে হত। কিন্তু দোকানের লেবেলের কিছু অংশ সমেত বাঁকানল থাকা এটা অন্য ব্যাপার। এতে বোঝা যায় খুনী চেয়েছিল বাঁকানল নজরে পড়ুক। কিন্তু কারণ হচ্ছে যদি একটা বিষাক্ত তীর একটা বাঁকানল একসঙ্গে পাওয়া যায় তাহলে স্বভাবতই এই ধারণা হয় বাঁকানল থেকে তীর ছুটে গিয়ে খুন হয়েছে সুতরাং আসলে ওইভাবে খুন করা হয়েছিল। এটা পরিষ্কার, বিষাক্ত তীর যখন মৃত্যুর কারণ সেটা গলায় লাগানোর বিশ্বস্ত উপায় হল হাত দিয়ে ফোঁটানো। তাই তিনি সবদিক বিচার করে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন মাদাম গিজেলের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ একাজ করেছে। প্রথমেই সন্দেহ যায় দুজন পরিচারকের উপর। তাছাড়া মিঃ ক্ল্যান্সি বলে গিয়েছিলেন। আর তার যতদূর মনে হয় মিঃ ক্ল্যান্সি প্রথমে বাঁকানলের কথা বলেন। মিঃ ক্ল্যান্সি ভয় পেলেন ও প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় পোয়ারো বলেন তার কথা এখনো শেষ হয়নি। পোয়ারো আবার বললেন, যে তিনজন সন্দেহভাজন মিবেল্য, ডেভিস ও ক্ল্যান্সি, কিন্তু তারা যে খুশী নন তা প্রমাণের জন্য তিনি ভীমরুল নিয়ে পড়লেন। তার মনে হয় কফি দেওয়ার আগে কেউ ওটাকে লক্ষ্য করেনি এটা কেমন অস্বাভাবিক! খুনী বোঝাতে চেয়েছে মাদাম গিজেল হার্টফেল করে মারা গেছেন। এটা প্রমাণ করার সাফল্য নির্ভর করবে। খুনী যদি ওই কথাটাকে ভীমরুলের মতো দেখতে কার এবং তাই করা হয়েছিল তা সন্দেহাতীত, তাহলে বোঝা যাচ্ছে খুনী মাদাম গিজেলের টেবিলের কাছে গিয়েছিলো, কাঁটাটা ফুটিয়ে দিয়েছিলো এবং সত্যিকারের ভীমরুল ছেড়ে দিয়েছিলো। এবং বিষের প্রভাবে ভদ্রমহিলার মৃত্যু সন্দেহ হয়। গিজেলের চিৎকার প্লেনের আওয়াজে শোনা যায়নি। ভীমরুল ভো ভো করায় মনে হয়েছে ভীমরুলের কামড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। এটাকে তিনি পরিকল্পনা বলে এটা বলেন যে খুনী বাঁকানলটা সরিয়ে দিতে চায়নি। কিন্তু কাটা সকলের চোখে পড়তে তার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এক্ষেত্রে তার তত্ত্ব অনুযায়ী তিনজন সন্দেহভাজন ভাবে, চতুর্থ আর যোজনকে ধরা যায় তিনি সঁসিয়ে জা দুপ তিনি ভীমরুলের কামড়ে মৃত্যুর তত্ত্ব খাড়া করেছেন। তিনি সন্দেহভাজন করেছেন কারণ তিনি মাদামের সামনে বলেছিলেন এবং তার খুন করার এত সাহস হবে না। তিনি ভীমরুলের সমস্যা নিয়ে লেগে পড়লেন। খুনী প্লেনে ভীমরুল নিয়ে এসে থাকে এবং বিশেষ মুহূর্তে সেটা ছেড়ে দেয় তাহলে তার কাছে এমন কোনো বাক্স ছিলো, যাতে সে এটা রেখেছিল। তাই সবার সঙ্গের জিনিসগুলো দেখার এত উৎসাহ।