ফানে চিন্তিতভাবে মাথা নাড়লেন, একটা কারণ হলো যে মিসেস রিচার্ডস এতে খুব সাহায্য করতে পারবেন না। পোয়ারো একে নকল ভাবছেন না। তবে তার অন্য কারোর মুখ মনে পড়ছে। ফার্নে কৌতূহলী হয়ে তাকালেন। ফার্নের মতে পোয়রো হারানোনা মেয়েটিকে নিয়ে চিন্তা করছেন বলে তার একথা মনে হচ্ছে। পোয়ারো মনে করেন যে মাদাম মারা যেতে যার সবথেকে লাভ হবে তিনি ওই মেয়ে। এ ব্যাপারে সবথেকে বেশি জড়িত যদি এই মেয়েটি হয় তাহলে সন্দেহ কোথায়? ওই প্লেনে তিনজন মহিলা ছিলেন। তাদের একজন সুপরিচিত, কিন্তু আর দুজন মাদামের সহকারিণী যখন বলেছেন যে মাদামের স্বামী তখন তিনি নিশ্চিত যে বাকি দুজনের মধ্যে একজন তার কন্যা, মিস হরবেরিল একটু সন্দেহজনক ও মিস জেনকে বলেছেন যে তিনি অনাথ আশ্রমে মানুষ হয়েছেন। পোয়ারোর কথায় সহমত হলেন না ফানে, তবে পোয়ারোর মতে তিনি সহজ কল্পনার মধ্যে এগোচ্ছেন।
ফার্নে পোয়ারোর ডেস্কে একটা মিনিট পড়ে থাকতে দেখে বলেন যে তিনি লেডি হরবেরিল, ট্যুপের কুরলিশনল, ব্রায়ানের বাঁশি লক্ষ করেছেন তবে তার ব্রায়ানকে সন্দেহ হয় না। অভ্যর্থনা ডেস্কের দিকে চোখ পড়তেই দেখা গেল সেখানে ডাঃ ব্রায়ানের মুখটা।
ডাক্তার মিস্টার পোয়ারোর সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি তাকে জানালেন তার কোনো রোগী নেই। তিনি অসম্ভব শান্ত সংযত ভঙ্গিতে কথা বলছিলেন। তিনি পদত্যাগ করেছেন কারণ তার নাম কাটা যাওয়ার আগেই তার পেশা তাকে প্রচুর আনন্দ দিলেও তিনি নিজেই সেই পদ ছেড়ে দিয়েছেন। পোয়ারোকে ডাক্তার জানালেন তিনি তার এক রোগিণীকে বিবাহ করছেন যাকে তার স্বামী খুব দুঃখ দিয়েছেন। তারা বিয়ের পর ফিনিয়োত যেতে চান। তার বাঁশি হল তার বন্ধু যখন তিনি একা থাকেন। পোয়ারো তার জীবনের সৌভাগ্য কামনা করলেন।
পোয়ারো কুইবেকে একটা ট্রাঙ্কল করেছিলেন।
.
২২.
একটা ভালো নখ
ফার্নে বললেন যে, তিনি কি এবার উত্তরাধিকারী মেয়েটার পেছনে ঘুরবেন। পোয়ারো বললেন তা নয়। তিনি নিয়মে চলতে চান। পরের কাজে হাত দেওয়ার আগে তাকে আগের কাজ শেষ করতে হবে। জেন ও ফার্নেকে যেতে অনুরোধ করে তিনি অন্যত্র গেলেন।
ফার্নে জেনকে অ্যান রিচার্ডস সম্পর্কে জানালেন। সবই বলা হয়ে গেছে এমন সময় পোয়ারো এসে বললেন তিনি মাদাম অ্যার্তোলিকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি বলেছেন যে মাদামের মেয়ে ইনস্টিটিউট জ্যা মেরিতে মানুষ হয়েছে, তার মা এক মদ্য ব্যবসায়ীর সঙ্গে কুইবেক ত্যাগ করেন। মেয়ের উপর যাতে ঐ প্রভাব না পড়ে সেইজন্য ওই সময়ে তিনি চলে যান। তিনি টাকা নিয়মমাফিক পাঠালেও মেয়ের সঙ্গে দেখা করেননি। অ্যান মরিমে ইনস্টিটিউট ছেড়ে নখ পালিশের কাজ নেন। মাদাম অ্যাঞ্জেলি তিনি খুব বেশি চিঠিপত্র লিখতেন না। মাদাম দুবার নিজে খবর নিতেন। মাদাম বিচারবিভাগীয় তদন্তের কথা পড়ে ভেবেছিলেন এই মেরি মারিসোই খুব সম্ভবতঃ কুইবেকের মেরি মারসো।
মাদাম গিজেলের স্বামী নামক ইতর লোকটি জর্জ লেম্যান বিশ্বযুদ্ধের গোড়ার দিকে চিহ্নিত হয়। হঠাৎ জেনের একটা নখ ভেঙ্গে যেতে তিনি বলেন যে ওটা ঘষে নিতে হবে। পোয়ারো বললেন তার মনে পড়ে গেছে অ্যান মারিসের মুখটা, এত চেনা মনে হয়েছিল। কারণ লেডি হরবেরিলর তার সহচারিণীকে একটা উকো আনতে বলেছিলেন। অ্যান মারিসোই তার নাম ছিলো।
.
২৩.
আমার ভয় করছে
হঠাৎ এই ঘটনা আবিষ্কারে অ্যান মারিসো ঘটনাস্থল থেকে বহু দূরে ছিলো না বরং একেবারে ঘটনাস্থলে হাজির হলো।
জেনও মনে করতে পারলেন যে তার নাম ছিল ম্যাডেলিন যাকে প্লেনের কামরায় পেছনের দিক থেকে একটা লাল সাজের বাক্স আনতে বলেছেন। ফার্নে বললেন তার মা যেখানে বসেছিলো ঠিক তার পাশ দিয়েই গিয়েছিলো। ফার্নে বললো যে খুনের উদ্দেশ্য এবং সুযোগ সবকিছু থাকা সত্ত্বেও কেন মেয়েটিকে সন্দেহ করা হয়নি। চাকর দুটো, অন্য যাত্রীরা সেটা লক্ষ্য করেননি, প্লেনটা সবে ছেড়েছে, তার প্রায় ঘণ্টাখানেক পরেও গিজেল বেঁচেছিলেন।
ফার্নে বললেন যে, বিষের প্রতিক্রিয়া পরে হতে পারে। এটা হতে পারে যে মিঃর পোয়ারো স্বীকার করেন বিষের প্রতিক্রিয়া দেরিতে হওয়া অসাধারণ ব্যাপার। এর বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝ দরকার। ফার্নে বললেন, আমাদের ভবিষ্যত কর্মপন্থা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। তার মনে হয় এ মুহূর্তে অ্যান মারিসোকে সন্দেহ জাগানো ঠিক হবে না। তিনি যে তাকে চিনতে পেরেছেন এ কথা সে একেবারেই জানে না। তার সমস্ত কথাই সত্যি বলে মেনে নিয়েছি। দুটা জিনিস তার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে, সুযোগ এবং উদ্দেশ্য। আমাদের আরও একটা জিনিস প্রমাণ করতে হবে। অ্যান মারিসোর কাছে সত্যি কোনো সাপের বিষ ছিল কিনা। এরপর অবশ্য সেই আমেরিকান লোকটির ব্যাপার আছে যে বাঁকানল কিনেছিলো এর স্থলে পেরো ঘুষ দিয়েছিলো। এ নিশ্চয়ই তার স্বামী রিচার্ডস, যে কামরায় থাকে।
পোয়ারো খানিক চিন্তা করে বললেন যে অ্যান মারিসো হয় অপরাধী নয় একেবারে অজ্ঞ। যদি অজ্ঞই হন তাহলে মিথ্যা কেন বললেন, তিনি হরবেরিলর পরিচারিকা তা কেন গোপন করলেন। পোয়ারো বললেন, কেন যে তার অপরাধ তার মিথ্যের সঙ্গে খাপ খায় না। এতে ভিত্তি পাওয়া যাচ্ছে বটে। যদি ভিত্তি সত্যি হয় তাহলে অ্যান মারিসোর আদৌ ওই প্লেনে থাকার কথা নয়। একটা সহজ সমাধান হয় যে পরে যখন আবার জট পাকিয়ে গেল তখন ফানে আবার রেগে গেলেন। জেন ভাবলো যে, উনি কি বোঝাতে চাইছেন তার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। পোয়ারো এবার একটা টেলিফোন করলেন এখানে, স্কোয়ার্ডে লেডি হরবেরিলর বাড়িতে।