পোয়ারো তার হোটেলে পৌঁছে দেখলেন জেন হলঘরে দাঁড়িয়ে সবেমাত্র জ্যা জ্যাপকে বিদায় জানাচ্ছেন। পোয়ারো জেনকে জানলেন যে আগামী বসন্তে জ্যাপের সঙ্গে পারস্যে যেতে হবে। জেন অবাক হলেন, বললেন, তিনি গেলের সঙ্গে নিউজিল্যান্ড সামন্তয়েল পাহাড়ে যেতে চান এবং পোয়ারোর সেক্রেটারি হওয়া সহজ কাজ নয়। কিন্তু পোয়ারোর মতে তিনি তা করতে চান বা এটা করতেই হবে কারণ তিনি তাদের এ প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে এখানে যে তারা এটা করতে রাজী তা নয়। তিনি এও জানালেন যে তিনি ওদের বলেছেন তিনি ভালো সেলাই করেন ও সোজা রিপু করতে পারেন।
২১. অ্যান মারিসো
২১.
অ্যান মারিসো
পরদিন সকালে মিঃ ফার্নে পোয়ারোর ঘর খুঁজে প্রাণোচ্ছলভাবে জানালেন যে, লন্ডনে থাকতে খুঁজে পাওয়ার তার বক্তব্যের শেষ পর্যন্ত বুঝতে পেরেছে। তিনি প্রথমে অসম্ভব মনে করলেন তার বাঁকানলের সম্পর্কে একটা যে সূত্র খুঁজে পেয়েছেন।
তিনি বলতে চান খুনী ফেলে দিতে চায়নি কারণ সে চেয়েছিল বাঁকানলটা আমাদের চোখে পড়ুক। চমৎকার, পোয়ারো বললেন, ফার্নে বললেন যে বিষাক্ত তীর ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু বাঁকানল ব্যবহার করা হয়নি। খুনী এমন কিছু ব্যবহার করেছেন যেটা মানুষ মুখে ঢোকায়। এখানে দুটো জিনিসের ওপর তার সন্দেহ। একটা লেডি হরবেরিলর সিগারেট হোল্ডার দুজনে যে টেবিলের ওপর কতকগুলো কুরদিপ নল ছিল।
মঁসিয়ে ফার্নে বললেন যে, তিনি দুটো জিনিসই কারো সন্দেহ না জাগালে বেঁধে রাখা যায়। পোয়ারো তাকে ঠিক পথে এগোচ্ছেন বললেন। ভীমরুলের কথা বলতে বললেন। ফার্নে হাকরে বললেন যে, এতো ভীমরুল কোথা থেকে আসছে তা বুঝতে পারছেন না।
হঠাৎ টেলিফোন বেজে উঠল, বললো যে তাকে জানানো হল ওখানে ফার্নে আছে। ফার্নে থিকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলেন মাদাম গিজেলের মেয়ে তার উত্তরাধিকার দাবী করতে সেখানে এসেছে। উনি বোধ হয় আমেরিকা থেকে এসেছেন। থিকের কথা মঁসিয়ে পোয়ারোকে জানালেন। তিনি তাকে সাড়ে এগারোটায় আবার আসতে বলেছেন। তিনি বলছেন, আমরা তার কাছে যাব। তাই পোয়ারো যাবার আগে মিস গ্রেকে চিঠি লিখে রেখে যেতে চান। তিনি লিখলেন জরুরী কারণে আমাকে বাইরে যেতে হচ্ছে। যদি জ্যা জ্যাপ কোনো কারণে দেখা করতে আসে একটু দেখবেন। বোম আর মোজার কথা বললেন, কিন্তু প্রাগৈতিহাসিক মৃৎশিল্প সম্পর্কে এখনও কোনো কথা বলবেন না। তিনি আপনার প্রশংসা করেন কিন্তু খুব বুদ্ধিমান তিনি।
পোয়ারো এবার উঠে সেই মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে চান। তিনি বললেন যে খুব শীঘ্রই তিনি সবকিছু বুঝতে পারবেন।
থিকো পোয়ারো ও ফার্নেকে আনন্দে অভিনন্দন জানালেন। থিকো বললেন, গতকাল একটা চিঠি পেয়েছি আজ সকালে ভদ্রমহিলা এসে হাজির, তার বয়স ২৪ বছর। নাম মিসেস রিচার্ডস। কারণ তিনি বিবাহিতা ভদ্রমহিলা তার পরিচয় প্রমাণ করার জন্য আর একটা বিবাহ চুক্তি অনুলিপি লেখা ছিল। জর্জ লেম্যান (অবিবাহিতা) আর মেরি মারসো দুজনেই কুইবেকের বাসিন্দা, তাদের মধ্যে বিবাহ চুক্তি। তারিখ ১৯১০ সালের মাথা তাদের মেয়ে অ্যান মারিসো লেম্যানের লেখা জন্মবৃত্তান্ত লেখা প্রমাণ পত্র এবং আরও নানারকম কাগজপত্র রয়েছে। ফার্নে বললেন যে এটা মাদাম গিজেলের প্রথম জীবনের উপর কিছুটা আলোকপাত করেছে।
থিকো বললেন যে, এর থেকে তিনি যা আন্দাজ করেছেন, মেরি মারিসোর সঙ্গে লেম্যান লোকটির সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তার বিবাহের পর দুশ্চরিত্র লোকটি তার স্ত্রীকে ফেলে পালায়। তিনি তখন কুমারী অবস্থায় নাম ব্যবহার করেন। কুইবেকের ইনস্টিটিউট এই শিশুটিকে পালন করে। মিসেস লেম্যান একটি লোকের সঙ্গে ফ্রান্সে চলে আসেন। তিনি শিশুটির জন্য প্রতি মাসে পঞ্চাশ টাকা পাঠাতেন এবং শেষকালে তিনি একটি মোটা অঙ্কের টাকা পাঠান। সেটা শিশুর ২১ বছর পূর্ণ হলে তাকে দেওয়া হবে। মেয়েটিকে জানানোর জন্য তারা বিভিন্ন কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। মনে হয় এর কোনো একটা ইনিস্টিটিউট দ্যা মেরী অধ্যক্ষার চোখে পড়ে। তিনিই মিসেস রিচার্ডসকে জানান। এই রিচার্ডস হলেন ডেট্রয়েট থেকে আসা একজন আমেরিকান যার যন্ত্রপাতি তৈরি করা পেশা। তিনি প্রখ্যাত ও আমেরিকাতে আছেন। মিসেস রিচার্ডস তার মায়ের মৃত্যুর সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন না। কারণ তার মায়ের কুমারী জীবনের নাম তিনি জানেন না।
ফার্নে এই ভদ্রমহিলার আসাতেই তদন্ত সম্পর্কে কিছু আশাবাদী নন। তিনি তার সন্দেহের তালিকায় তিনজনকে রেখেছেন। সেখানে পোয়ারো চারজনকে রেখেছেন।
তাদের দুজনের কথাবলার মাঝে তারা খবর পেলেন মাদাম গিজেলের কন্যা এসেছেন, তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল তাদের। গিজেলের গায়ের রঙ কালো হলেও তিনিও খুব সুন্দরী যুবতী। তিনি জানালেন যে, এ ব্যাপারে তার অনুমান ঠিক। মেয়ের শর্তময় কারণ তিনি নিজেকে অনাথ বলে মনে করেন। কারণ গিজেল তাকে করুণা করছেন বলে তার বিশ্বাস। তিনি বলেন যে তিনি আঠারো বছর বয়সে ইনস্টিটিউট ছেড়ে যান। তিনি নানা পেশায় ছিলেন। তার সঙ্গে স্বামীর প্রথম পরিচয় লাইনে। তাকে কানাডা যেতে হওয়ায় তিনি সেখানে যান। তিনি এখন সেখানেই যাচ্ছেন। তার ফরাসি উচ্চারণ বেশ সাবলীল, তাকে ইংরেজ না ভেবে ফরাসি বলে মনে হয়। তিনি কাগজে পড়েছিলেন কিন্তু জানতেন এটা তার মার মৃত্যু সংবাদ, মাদাম এঞ্জোলা তাকে বলেন এবং এরপর তিনি ফিকোর ঠিকানা জেনেছেন।