একসময় তিনি যে শখের থিয়েটার করতেন এটা তিনি জানালেন। পোয়ারো জানালেন যে তাকে তারা মেকআপ সম্পর্কে কিছু শেখাননি। এই ছদ্মবেশ মঞ্চের অন্ধকারে চেনা যাবে। গ্রসনেভর স্কোয়ারে দিনের আলোয় চেনা অবশ্যই সম্ভব। তিনি চান সেই ভদ্রমহিলা তাকে দেখে হেসে খুন না হয়ে ভয় পান। তিনি নরম্যানের হাতে কয়েকটা শিশি বোতল দিলেন, সেগুলি দিয়ে তিনি মিনিট পনেরো পর স্নানঘর থেকে যখন বেরিয়ে এলেন তখন তার মুখে ইট-রঙা চমৎকার লালচে ছাপ।
পোয়ারো বললেন যে বেশ হয়েছে, এগিয়ে যান, আপনার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হোক। পোয়ারো ভরসা দিলেন যে তাকে মারমুখো স্বামী আর কজোড়া পুলিশের মুখোমুখি পড়তে হবে না। গ্রসনেভর স্কোয়ারে দোতলায় একটা ছোট্ট ঘরে লেডি হরবেরিল এসে ঢুকলেন।
মিঃ রবিনসন রূপী নরম্যানকে লেডী হরবেরিল বললেন তার চিঠি পেয়েছেন। তিনি উদ্ভুতভাবে সিসিলিকে বললেন–পাবেন বইকি–তা এ ব্যাপারে কি করছেন লেডি হরবেরিল।
আপনি কি বলতে চাইছেন আমি বুঝতে পারছি না। আসছি আসছি, সে কথাতেই আসছি। তার কথায় সমুদ্রের ধারে ছুটি কাটাতে সবার ভালো লাগে। তিনি নিশ্চয়ই জানেন লেডি হরবেরিল যে ঠিকানাটা নিয়ে এই প্রমাণ তৈরি হয়েছে। বৃদ্ধা গিজেল চমৎকার মহিলা ছিলেন, সবসময়ে প্রমাণগুলো ধরে রাখতেন, হোটেলের সাক্ষ্য প্রমাণ ইত্যাদি খুবই উঁচুদরের হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কারণটা কার বেশি দরকার-আপনার না লেডি হরবেরিলর; হ্যাঁ, এটাই আমার জানার দরকার।
লেডি হরবেরিল খুব ভয় পেলেন। নরম্যান নিজেকে একজন বিক্রেতা হিসেবে বলতে চান, তার কাছে যে প্রমাণগুলো আছে সেগুলো দশহাজার পাউন্ডের বিনিময়ে মাদামকে দিতে চান। যদি তিনি লেনদেন করতে রাজি হন তাহলে তিনি সেটা দেখাতে রাজি। ভদ্রমহিলা বলতে চান তিনি এমন কিছু অন্যায় কাজ করেননি যার জন্য তাকে এত টাকা দিতে হবে।
মিঃ রবিনসন বললেন যে, যদি তাই তিনি না দিতে চান তাহলে লেডি হরবেরিল তিনি জানান, তিনি বলতে চান একটা কথা বললে বোধ হয় ভুল বলা হবে না একজন পরিত্যক্তা স্ত্রী কোনো ভাতা পান না। আর মিঃ ব্যারাক্লো যদিও বেশ সম্ভাবনাপূর্ণ অভিনেতা, কিন্তু তার এখনও বেশি টাকাকড়ি হয়নি। এখন এর বেশি একটাও কথা তিনি বললেন না। তাকে চিন্তা করার সুযোগ তিনি দিচ্ছেন আর এসব কথা তিনি সত্যি বলেছেন এটা দাবী করলেন।
মহিলাটি কোনো উত্তর দেবার আগে তিনি দ্রুত ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। একবার রাস্তায় বেরিয়ে ঘাম মুছে সে বললো, কপাল ভালো যে ঝামেলা চুকাতে পেরেছি।
পরে এক সময়ে লেডি হরবেরিল বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, একজন চাকর একটা কার্ড নিয়ে হাজির হলে তাতে পোয়ারোর নাম লেখা ছিল।
এটা আবার কে বলে তিনি যখন কার্ডটা ছুঁড়ে ফেললেন তখন পরিচারক বললেন যে মিঃ রেমন্ড ব্যারাক্লোর কাছ থেকে আসছেন।
মাদামের কাছে বেশ সেজেগুজে পোয়ারো এসেছেন। তিনি মাদামকে বন্ধুর মতন ভাবতেন এবং আপনাকে পরামর্শ দিতে এসেছি। তিনি বললেন তিনি জানেন উনি বিপদগ্রস্ত। তিনি নিজেকে একজন গোয়েন্দা বলে পরিচয় দিলেন। ম্যাডাম তাকে চিনতে পারলেন। তিনি বললেন তিনি সব গোপন কথা জানেন। তাই তিনি কোনো গোপন কথা ফাঁস করতে বলছেন না। তিনি নিজেই যা বলার বলছেন। তিনি বললেন সকালে যে ভদ্রলোক এসেছিলেন তিনি আপনাকে ভয় দেখিয়ে কতকগুলো টাকা আদায় করতে এসেছিলেন, তার কাছে কতগুলো তথ্য প্রমাণ আছে। সেগুলি আগে মাদাম গিজেলের কাছে ছিলো। তিনি আপনার কাছ থেকে সাত আট হাজার টাকা চেয়েছেন।
কিন্তু আট হাজার টাকা যে মাদামের দেওয়া সম্ভব নয় তা তিনি বললেন কারণ উনি এখন দেনায় ডুবে আছেন, তিনি তাকে সাহায্য করতে এসেছেন, বলেন এরকুল পোয়ারো এবং তিনি মিঃ রবিনসনের সঙ্গে বোঝাপড়া করবেন।
রুক্ষভাবে মাদাম জানালেন এরজন্য তাকে কত দিতে হবে। তিনি বললেন যে মাদামের একটা সই করা ছবি দিতে হবে।
সিসিলি কেঁদে ফেললেন। তিনি এরকুল পোয়ারোর কাছে প্রশ্নের উত্তরে বললেন, তিনি আঠারো মাস আগে খুব বিপদে পড়েছিলেন। জুয়াখেলায় তিনি তখন মাদামের কাছ থেকে টাকা চান। মিঃ ব্যারাক্লো বলেছিলেন যে, তিনি উঁচুতলার মহিলাদের টাকা দেন। তিনি প্রথমে একশ টাকা ধার দেন। এর আগেই মিঃ ব্যায়োক্রোর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। তিনি তার স্বামীর প্রতি অসন্তুষ্ট এবং তিনি বিবাহ বিচ্ছেদ চান না; কারণ তিনি তার সম্মানের আসন কিছু টাকা দেবার প্রশ্ন নিশ্চয়ই উঠেছিল, মাদাম বললেন, হ্যাঁ এবং তিনি টাকা শোধ দিতে পারেননি। মাদাম ঘুরে খোঁজ নিয়েছিলেন।
তার নিজস্ব পদ্ধতিতে ছিলেন, পোয়ারো বললেন। তিনি শাসিয়েছিলেন যে যদি টাকা দিতে না পারেন তাহলে তা লেডি হরবেরিলকে বলে দেবেন। আসলে মাদামের মৃত্যু হরবেরিলর সুবিধা করে দিয়েছে। কিন্তু তিনি একমাত্র প্লেনে ছিলেন যার মৃত্যু কামনায় একটা উদ্দেশ্য ছিল তিনি একটু বিচলিত হয়েছেন।
লেডি হরবেরিল বললেন এটা খুবই অদ্ভুত। এ ব্যাপারে তিনি দারুণভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে যখন আপনি তার মৃত্যুর ঠিক আগের রাত্রে তার সঙ্গে বেশ খানিক বচসা হয়েছিল। তিনি মহিলাটির সম্পর্কে উত্মা প্রকাশ করলেন।
তবুও তিনি আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, যে তিনি মহিলাকে চেনেন না। এর কারণ ভদ্রলোককে তিনি কিছু বলেননি। আসলে তিনি নিজে জানার চেষ্টা করেছেন। আসলে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি ভেবেছেন যদি কিছু হবার থাকে সেটা ফাঁস হয়ে যেত। এমনকি গতকালের চিঠি পাওয়ার পরও তিনি একটু ভয় পাননি। কারণ তিনি তার মৃত্যু কামনা করলেও তাকে খুন করেননি। তিনি এই বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন।