জেন কথা প্রসঙ্গে জানালেন, তিনি অনাথআশ্রমে মানুষ হয়েছেন। তিনি আয়ারল্যান্ডে ডাবলিনের কাছে বাস করতেন।
পোয়ারো বাড়ি ফিরে এগারোজনের নামের একটা তালিকা বের করে চারজনের নামের পাশে দাগ দিলেন এবং বিড়বিড় করে বললেন তিনি জানতে পেরেছেন কিন্তু নিশ্চিত হতে হবে।
.
১৭.
ওয়ার্ডসওয়ার্থে
মিঃ হরবেরিল মিচেল নৈশাহারে বসতে যাবে এমন সময় এক অতিথি তার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তিনি মিঃ পোয়ারো। মিচেল বললেন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বোধহয় মামলা নিয়ে এগোতে পারছে না। এই মামলা নিয়ে মিচেল খুবই চিন্তিত। আসলে মিচেল মনে করে তার কোম্পানি ভালো বলেই, নইলে তার চারকি চলে যাবে। আসলে হেনরি ব্যাপারটি নিয়ে নিজেকে অপরাধী মনে করছে।
মিচেলের মত তার আগেই তার লক্ষ্য করা উচিত ছিল ভদ্রমহিলা মারা গেছেন। এতে কিছু হেরফের হত না পোয়ারো মনে করেন। আসলে মিসেস মিচেল মনে করেন ব্রিটিশ প্লেনে একটা নোংরা কেলেঙ্কারী করার জন্য এটা করেছে। মাদাম গিজেলের কথা প্রসঙ্গে জানালেন যে তিনি ডরমেন্টে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেখানে তার পূর্ব পুরুষরা প্রায় ২০ বছর ধরে বাস করছে।
মিচেলকে পোয়রো একটা কথা জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন যে মারা যাবার আগে মাদাম গিজেলের টেবিলে কাঁটা চামচ, নুন বাটি কি দেখেছেন। সে বলল, ওরকম কিছু সে দেখেনি তবে পুলিশ এ বিষয়ে বলতে পারে। তিনি এ বিষয়ে ডেভিসের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন।
মিচেল মনে করেন যে ডেভিসের সঙ্গী তার এই খুনে জড়িয়ে পড়াকে সমর্থন করবে না।
ডেভিসকে যখন জিজ্ঞাসা করা হল, সে বলল, যে সেরকম কিছু দেখেনি। তার দুটি কফির চামচ ছিল। একটি ডিসে দুটো চামচ থাকা মানে নাকি বিয়ের সম্ভাবনা।
পোয়ারো তাকে ফরাসি মেয়েদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। ডেভিস বললো, তার পক্ষে ইংরেজ মেয়েরাই ভালো। এটা তামাশা ছিল।
.
১৮.
রাণী ভিক্টোরিয়া স্ট্রিটে
মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো মিঃ রাইজারের সঙ্গে দেখা করল। তিনি বললেন যে, তিনি জানতেন না মাদাম ওই প্লেনে খুন হবেন নইলে তিনি ও প্লেনে যেতেন না। তিনি বলেন যে, তিনি এমনিই জ্বলে পুড়ে মরছেন। কেন পুলিশ ডাঃ হার্বার্ড বা ব্রায়ানকে জ্বালাতন করতে যাচ্ছে না। তার মনে হয় ডাক্তাররা সাংঘাতিক বিষ জোগাড় করতেন।
মিঃ পোয়ারোকে তিনি বললেন যে এর একটাই সুবিধে তিনি খবরের কাগজ থেকে কিছু টাকা পাচ্ছেন প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ হিসাবে। তবে তার দেখার থেকে সাংবাদিকের ভাবনা বেশি স্থান পচ্ছে।
পোয়ারো বললেন যে, এতে তিনি বেশ কিছু টাকা পেয়ে গেলেন। এতে তার সুবিধে হল কারণ এতে তিনি তার ধারের টাকাটা পেলেন।
এটা শুনে রাইজার রেগে উঠলেন। তিনি কি করে জানলেন এটা জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন যে যেমন করেই পান না কেন এটা ঠিক যে তিনি ব্যাপারটা গোপন রাখবেন। রাইজার পোয়ারো কেন দেখা করতে এসেছিলেন তাই জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন যে পেশার খাতিরে অনিচ্ছাসত্ত্বেও মাদাম গিজেলের সঙ্গে লেনদেন করতে হয়েছে। রাইজার তা জানতে চাইলেন না। তিনি বললেন মহিলার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। এটা একটা জঘন্য কুৎসা।
পোয়ারো এই ব্যাপারটা খুঁজতে চান। তিনি বললেন, এ ব্যাপারটা খোঁজ করতে হচ্ছে। রাইজার বললেন, তারও সুদখোরদের পাল্লায় পড়েছি বলে তারা গুলিয়ে দেয়। সমাজের যতসব উঁচুতলার মহিলারা জুয়া খেলে দেনায় ডোবে। তারা এক শিকার হয়।
পোয়ারো ভুল খবর দেওয়ার জন্য ক্ষমা প্রদর্শন করলেন। তিনি বললেন, ডাঃ ব্রায়নকে ডাঃ হার্বার্ড কেন বলেছেন। রাইজার উত্তরে জানালেন এটা একটা কবিতা থেকে পেয়েছেন। তিনি মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিচার করতে চান।
.
১৯.
মিঃ রবিনসন এলেন আর গেলেন
হরবেরিল কাউন্টেস তার ৩১৫ নং গ্রসনেভর স্কোয়ারের বাড়িতে তার শোবার ঘরে সাজের টেবিলের সামনে বসেছিনে। তিনি একটা চিঠি পড়ছিলেন।
হরবেরিল কাউন্টেস মহাশয়া—
প্রিয় মাদাম,
বিষয়, মাদাম গিজেল, সম্প্রতি মৃত, আমি এই মৃত মহিলার কতগুলো দলিলের উত্তরাধিকারী। আপনি অথবা মিঃ রেমন্ড ব্যারাক্লো যদি এই ব্যাপারে উৎসাহী হন, তাহলে এই সম্পর্কে আলোচনার জন্য আপনাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে আমি খুশি হবো। কোনো জবাব না পেলে, বুঝবো, আপনি এই ব্যাপারটা আপনার স্বামীর সঙ্গে বোঝাপড়া করে নেবার জন্যই আমাকে বলেছেন।
আপনার একান্ত
জন রবিনসন।
তিনি চিঠিটা বারবার পড়তে লাগলেন। তিনি হাত বাড়িয়ে খামদুটো তুলে নিলেন ব্যক্তিগত ও একান্ত গোপনীয়, তার বলা ছিল হঠাৎ যদি মৃত্যু হয় তার খদ্দেররা যাতে বিপদে না পড়ে তার ব্যবস্থা করা আছে। তিনি ভাবছিলেন যে তার মোটেই ভালো ঠেকছে না। তিনি ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তিনি এই লোকটির সঙ্গে দেখা করাটাই মনস্থ করলেন।
তিনি লেখার টেবিলে গিয়ে আঁকাবাঁকা অক্ষরে বড়ো বড় করে লিখলেন।
হরবেরিল কাউন্টেস, মিঃ জন রবিনসনকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন এবং আগামীকাল সকাল ১১টায় তিনি যদি এখানে আসেন তাহলে তার সাথে দেখা করবেন।
নরম্যান কালো দাড়ি, পরচুলো ও দাঁতে আঠালো পাটি লাগিয়ে ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন তা দেখে এরকুল পোয়ারো রেগে উঠলেন। তিনি বললেন যে, নিজেকে কি মনে হচ্ছে, বাচ্চাদের হাসবার জন্য নিজেকে ভাড় ভাড় মনে হচ্ছে না…কিন্তু ওটা কি দাড়ি হয়েছে? দেখেই বোঝা যাচ্ছে বন্ধু, ওটা কাঁচা হাতে লাগানো আণ্ডাদাড়ি, তার উপরে আবার সুদ। আচ্ছা–আপনার পরচুলো পরার বদঅভ্যাস আছে নাকি? যে আঠা দিয়ে ওটা লাগিয়েছেন, তার গন্ধ তো দশ গজ দূরে থেকেও নাকে আসছে। আর দাঁতে যে একটা আঠালো পাটি লাগিয়েছেন এটা কেউ বুঝতে পারবে না মনে করবেন না। বন্ধু এ আপনার দ্বারা হবে না–এই অভিনয় করা আপনার কাজ নয়।