.
০২.
আবিষ্কার
হেনরি মিচেল নামক পরিচারক সবার কাছ থেকে বকশিশ নিচ্ছিল। সে সবার কাছ থেকে বকশিশ নিয়ে গোঁফওয়ালা বেঁটে লোকটি ও পিছনের বৃদ্ধা মহিলার কাছ থেকে সে বকশিশ আশা করে ছিল। কিন্তু ক্রয়ডন পৌঁছাবার আগে সে মাথা ঝুঁকিয়ে বৃদ্ধা মহিলাকে বলল, মাফ করবেন ম্যাডাম, আপনার বিল। সে কাঁধে হাত রাখার পর আস্তে নাড়া দেওয়ায় মাদামের দেহটা ধপ করে পড়ে গেল-খড়ির মতো সাদা দেহটা ছিল মৃতদেহ।
দ্বিতীয় পরিচারক অ্যালবার্ট ডেভিস বলল, তাই কখনো হয় নাকি? হেনরি বললো যে, সে ভদ্রমহিলাকে অজ্ঞান হতে দেখেছে। মিনিট খানেক তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারলো না– তারপর পরবর্তী কর্মসূচী ঠিক করে ফেলল। সকল যাত্রীর কানের কাছে তিনি ডাক্তার কিনা জিজ্ঞাসা করল। নরম্যান গেল দাঁতের ডাক্তার বলে কিছু করতে পারলেন না। ডাঃ ব্রায়ান নিজের পরিচয় দিয়ে পরিচারকের পেছনে পেছনে চললেন। ডাঃ ব্রায়ান আসনের সামনে ঝুঁকে পড়লেন এবং স্বাস্থ্যবতী মহিলাকে পরীক্ষা করে উনি মরে গেছেন বললেন, তিনি মিচেলকে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন কখন তাকে শেষ দেখেছে সে?
মিচেল ভেবে বলল, সে প্রায় ৪৫ মিনিট হবে। দুজনের আলোচনায় কৌতূহল জাগাতে লাগল। মিচেলের মতে তার স্বামীর মতো ভদ্রমহিলার তড়কা রোগ আছে। ডাক্তার ব্রায়ান হতবুদ্ধির মতো মাথা নাড়লেন।
গোঁফওয়ালা মাফলার জড়ানো লোক দুটি ভদ্রমহিলার গলায় একটা দাগ দেখতে পেলেন। সত্যিই তার মাথা একপাশে হেলে পড়ায় সূক্ষ্ম দুটি দাগ দেখা যাচ্ছিল। দা দ্যুপ নামে ছেলেটিকে বলল যে ভদ্রমহিলা ভীমরুলের কামড়ে মারা গেছেন। ডাঃ ব্রায়ান এ বিষয়ে তার সম্মতি জানালেন। পরিচারিকা জিজ্ঞাসা করল মিনিট খানেকের মধ্যে তারা ক্রয়ডন পৌঁছে যাবে, তার কিছু করার আছে কিনা, ডাক্তার দেহটা ওখান থেকে সরাতে বারণ করলেন।
ডাঃ ব্রায়ান সকলকে নিজের জায়গায় বসতে অনুরোধ করলেন। পরিচারক তার কথায় সম্মতি জানালেন। ক্ষুদে লোকটি কী যেন একটা পড়ে থাকতে দেখলেন। হলুদ আর কালো একটা জিনিস স্কার্টের কোণার আড়ালে মেঝেতে পড়ে রয়েছে। এরকুল পোয়ারো পকেট থেকে চিমটে বের করে মূল্যবান বস্তুটি আবিষ্কার করলেন। কমলালেবু আর কালো রঙের সিল্কের সেসা দিয়ে পাকানো একটা ছোট্ট আঁটির মতো জিনিস সঙ্গে একটা অদ্ভুত ধরনের কাটা লাগানো। কাটার ডগাটার রঙ চটে গেছে।
মিঃ ক্ল্যান্সির গলা দিয়ে বিস্ময়ের প্রকাশ হল। তিনি জিনিসটির অসাধারণত্ব স্বীকার করলেন। তিনি বললেন যে এটি এক ধরনের দেশী কাটা। বাঁকা নল থেকে ছোঁড়া হয় যার মুখের সামনে বিষ লাগানো থাকে। এটা যে একটা ছোটো বর্শা থেকে ছোঁড়া হয়েছে তা সন্দেহাতীত। মিঃ ক্ল্যান্সি নিজে জীবনে এটা প্রথম দেখলেন। প্লেনটা তখন ক্রয়ডন বিমান বন্দরে মাথার ওপর নামার জন্য চক্কর দিচ্ছে।
.
০৩.
ক্রয়ডন
ক্ষুদে লোকটি বিজ্ঞের মতো কথা বলছিল, তার হুকুম সকলে মানবে এরকম নিশ্চিন্ত ভাব দেখাচ্ছিল। মিচেলের কানে কানে সে কি বলল।
মিচেল সকলকে নিজের সামনে বসতে বলল, এবং বেশিক্ষণ তাদের আটকানো হবে না বলা হল। লেডি হরবেরিল, সিসিলি মড়া আটকে রাখতে চাইলেন না। ভেনেসিয়া কারও তাদের কথায় সম্মতি জানালেন এবং সিগারেট খেতে চাইলেন। ব্যতিব্যস্ত মিচেল তাতে সাড়া দিলেন। ডেভিস জরুরী অবস্থায় দরজা দিয়ে ওপরওয়ালার আদেশ আনতে গেছিল।
একটু পরেই একটা সাদা চেহারার লোক মিচেল ও ডাঃ ব্রায়ানের মন্তব্য শুনে মৃতদেহটার উপর চোখ বুলিয়ে নিয়ে সকল যাত্রীকে নামতে অনুরোধ করলেন। বিমানবন্দরের একটা নির্জন ঘরে তাদের বসানো হল।
মিঃ জেমস রাইজ্যার লন্ডনে ব্যবসায়িক জরুরী কাজ আছে বলে বসতে চাইছিলেন না। লেডি হরবেরিলও না। কিন্তু খুনের ঘটনা বলে ইনসপেক্টর তাদের বসতে বললেন। মিঃ ক্ল্যান্সির। সন্দেহ মিলল বলে তিনি খুশী হলেন।
ভেনেসিয়া কার শুধু বসতে সম্মতি জানালেন। ডাক্তার ব্রায়ানের সঙ্গে ইন্সপেক্টার কথা বললেন। ছোটোখাটো গোঁফওয়ালা লোকটিও সাহায্য করতে চাইল। মঁসিয়ে পোয়ারোকে নিয়ে ব্রায়ান ও তিনি দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন যা ঘরে সন্দেহের সৃষ্টি করল।
সিসিলি হরবেরিল আটকে থাকতে চাইছিলেন না। ভেনেসিয়া কার লোকটিকে ফরাসি পুলিশের চর বা শুল্ক বিভাগের চর বলে মনে করলেন। নরম্যান গেল জেনকে লা-পিনেত-এ দেখেছিলেন বলে দাবী করল। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা হচ্ছিল। দুপরা নিজেদের মধ্যে ফরাসিতে আলোচনা করছিল। সিসিলি হরবেরিল বলে অত্যন্ত রেগে গিয়ে ছিলেন, মিঃ রাইজ্যার ছোটো ছোটো বইয়ের হিসাব করছিলেন।
কাছের একটি ঘরে ইনসপেক্টার জ্যাপ ডাঃ ব্রায়ান এবং এরকুল পোয়ারোর সঙ্গে কথা বলছিলেন। এরকুল পোয়ারো বললেন, সে আশাতীত জায়গায় তিনি পৌঁছে যান, পোয়ারো জবাব চাইলেন ক্রয়ডন বিমান ঘাঁটি, আপনার ঠিক পথে পড়ে নাকি বন্ধু।
প্রথমে ইন্সপেক্টর পরে ডাঃ ব্রায়ান নাম ঠিকানা চাইলেন। নাক, কান, গলার বিশেষজ্ঞ ডাঃ রজার জেমস্ ব্রায়ান–৩২৯ নং হার্লে স্ট্রিটে তার ঠিকানা জানালেন। তাকে তিনি মৃত্যুর সময় জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি জানালেন যে মৃত্যুর প্রায় আধঘণ্টা পর তিনি যে মারা গেছেন ডাক্তার ধরতে পেরেছিলেন। তার পরিচারকটির কথা শুনেছিলেন যে তিনি প্রায় আধঘণ্টা খানেক আগে মারা গেছেন। ইন্সপেক্টার তিনি কোনো সন্দেহজনক কিছু জেনেছেন কিনা জিজ্ঞাসা করা উচিত মনে করলেন না। ডাক্তার সম্মতি জানালেন। এরকুল পোয়ারো তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বললেন। তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ওটা পোস্টমর্টেমে পরীক্ষা বিশ্লেষণের ব্যাপার।